Sunday, April 28, 2019

কবিতাঃআমার গুরু লেখকঃআজিজুল ইসলাম

কবিতাঃআমার গুরু
লেখকঃআজিজুল ইসলাম



 

স্বরবৃত্ত ছন্দঃ৪+৪+৪+২/৩/৪
তোরা আমায় যে যাই বলিস মম প্রাণের প্রিয়  ভাই,

গুরুদের যে আমি কোনো সময়  ভুলতে নাহি চাই!
সামনে চলার পথে তাদের অবদানের তুলনা নাই।
গুরু ছাড়া সুশিক্ষা ও ভালোবাসা  কার কাছে পাই!
গুরুদের কে সকল সময় আমি অনেক ভালোবাসি
সারাজীবন থাকতে আমি চাই যে তাদের পাশাপাশি।
গুরু হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার তারা জ্ঞানের চর্চা করে
তাইতো তাদের স্থান হলো  পিতামাতার   পরে
গুরুর মাঝে থাকে অশেষ শিষ্যের জন্যে মায়া প্রীতি
দুষ্টুমি যে করলে পরে দেখায় মোদের নানান ভীতি
আমার কাছে গুরু হলো সকল জ্ঞানের আঁধার
তারা হলো হাতিয়ার দুর করতে সকল বাধার

কবিতা শিরোনাম: মমতাময়ী মা কলমে: অমিত কুমার জানা তারিখ: 26/04/19

কবিতা
শিরোনাম: মমতাময়ী মা
কলমে: অমিত কুমার জানা

তারিখ: 26/04/19







মা গো আমার প্রাকজন্ম পৃথিবী সে তো মাতৃজঠর,
তুমি সেদিন হতেই গুনে চলেছ সহনশীলতার প্রহর।
শৈশবে যখন আমি নিতান্ত অসহায়,
মমতাময়ী তুমিই তখন একমাত্র সহায়।
আমার কান্নার কলোরোলে তোমার কম্পিত বুক,
বুকে আগলে রেখে মোরে কি অপার্থিব সুখ!
তোমার  থেকেই আমার প্রথম কথা বলা,
তোমার হাতটি ধরেই প্রথম হাঁটি হাঁটি পথ চলা‌।
ভুল পথে হেঁটেছি যখন পেয়েছি মধুর ভর্ৎসনা,
শুধরে দিয়ে কত ভুল দিয়েছ নিপট প্রেরণা।
পড়াশোনায় হাতে খড়ি সে তো তোমারই হাত ধরে,
কুকাজে নিষেধ করে আঁকড়ে ধরিয়েছ সদাচারে।
পরাজিত হয়ে যখনই পড়েছি হতাশার কবলে,
সুখকর সান্ত্বনা পেয়েছি তোমার আঁচল তলে।
তোমার কাছেই মন খুলে বলি সুখ দুঃখের কথা,
তোমার স্নেহের স্পর্শে পালায় সব কষ্ট ব্যথা।
যখনই যেখানে বিপদে পড়ি আঁতকে ওঠ তুমি,
তোমার সন্তান হয়ে সত্যিই ভীষণ ভাগ্যবান আমি।
শত কষ্ট বুকে নিয়েও সদা ব্যস্ত থাকো,
সবার সাথে সম্পর্কের বন্ধন অটুট রাখো।
আমার দুখে তুমি দুখী আমার সুখে তুমি হাসো,
এ জগতে তুমিই আমায় নিশর্ত ভালোবাসো।
তাইতো মা গো তুমি স্বর্গের চেয়ে মহতী,
চির ঋণী আমি,অকপটে স্বীকার করি নতি।
কেউ বলে আম্মা,কেউ মাম্মি,আমি বলি মা,
যে যা ডাকুক এ জগতে তোমার নেই তো উপমা।
                   ----------------





Amit Kumar Jana,
Address: Purushottam mess,
Nepalipara,
Medinipur Town
Dist: Paschim Medinipur
Pin-721101
West Bengal, India 
Mobile: 9679798079

Saturday, April 27, 2019

প্রাচীন বাংলার স্থাপত্য শিল্পে ঐতিহ্যবাহী টেরাকোটা শিল্প
   -নৃপেন্দ্রনাথচক্রবর্তী



একটি দেশ ও জাতির অভিজ্ঞান ধরা পড়ে তার সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে । সমাজ বদ্ধ মানুষের গৌরবগাথা তার সংস্কৃতি। সংস্কৃতির মধ্য দিয়েই দেশ ও জাতির পরিচয় ফুটে ওঠে। ব্যুৎপতি গত অর্থে সংষ্কার শব্দ থেকে সংস্কৃতি শব্দের উৎপতি। একটি সমাজের লোকসংস্কার, লোকনৃত্য, লোকসংগীত, লোকশিল্প, লোকআচার, লোকসাহিত্য প্রভৃতিকে ঘিরে লোক সংস্কৃতি তার স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ভাস্কর। দেহমন আত্মার অনুশীলনলব্ধ উৎকর্ষই হচ্ছে সংস্কৃতি। এর সঙ্গে “লোক” যুক্ত হয়েছে “লোকসংস্কৃতি” লোক বলতে সাধারণত গ্রামীণ সমাজের বা লোকায়ত সমাজের জনসাধারণকে বোঝনো হয়েছে। এ লোক সমাজের জনগন অনেকেই নিরক্ষর হলেও অশিক্ষিত নয়। অক্ষরজ্ঞানহীন হলেও পারস্পরিক যোগাযোগ ও ভাবের আদান প্রদানে তারা বেশ সমৃদ্ধ। এই লোকায়ত মানুষেরই সামগ্রিক মননের সার্থক অভিজ্ঞান লোকসংস্কৃতি। সংস্কৃতির একটি ধারা লোকশিল্প লোকায়ত সমাজ জীবনের বিচিত্র। ঐশ্বর্য বহুকাল থেকেই গৌরব ধন্য। টেরা কোটা তেমনি একটি লোক শিল্প। টেরা কোটা ইতালির শব্দ যুগল। টেরা অর্থ মাটি এবং কোটা অর্ধদগ্ধ তাই টেরাকোটা হচ্ছে পোড়ামাটির শিল্প। আমাদের বাংলাদেশের পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, ময়নামতি এসব স্থানে এ শিল্পের বহু নিদর্শন শিল্প রসিকদের প্রশংসা কুড়িয়ে আসছে বহুকাল থেকেই। এসব স্থানে যে শিল্প নিদর্শনগুলো দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে রাধাকৃষ্ণ, নারীমূর্তি, বলরাম, বৌদ্ধজাতক, রাম, গাড়ি, রামায়ন-মহাভারতের বিভিন্ন কাহিনীর দৃশ্যাবলী, করুক্ষেত্র যুদ্ধের কাহিনী, রাম-রাবনের কাহিনী, বিবাহের দৃশ্যাবলী, জলে ভেসে হাসসহ বিভিন্ন ধরণের খেলনা ইত্যাদি। এছাড়াও এসব টেরাকোটায় দৃশ্যমান রাম-রাবণ, রাধাকৃষ্ণ, শিব-দূর্গা, কালী-সরস্বতী, লক্ষ্মী-নারায়নসহ বিভিন্ন ফুল-ফল-পাতা, পালকি আর পশুপাখির মূর্তি। এগুলো বেশির ভাগই ছাঁচে তৈরি। কোন কোন মূর্তি আবার হাতের ও তৈরি। আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় মন্দির-মসজিদে এ সব নিদর্শন রসিকজনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমাদের দেশের রাজশাহী, দিনাজপুর, নাটোর, পাবনা ফরিদপুর, যশোহর, বরিশাল, কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, বাগেরহাট, রংপুর, কুমিল¬া, চট্রগ্রাম প্রভৃতি স্থানে এসব শিল্প নিদর্শনগুলো দেখা যায়। পোড়ামাটির এসব শিল্পকর্মে রঙের ব্যবহার খুবই চোখে পড়ে। পোড়ামাটির এসব শিল্প কর্মবাংলার লোক সমাজের লোকায়ত ভাবনা এক অনুপম অভিজ্ঞান হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। পোড়ামাটির প্রতœ নির্দশনগুলো সাধারণত তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে যথা ১. আদিপর্ব ২.মধ্যপর্ব ৩. সমকালীন পর্ব। আদি পর্বও মধ্যপবের্র নিদর্শনগুলোর সঙ্গে আধুনিক পর্বের নিদর্শনগুলির পার্থক্য বিদ্যমান। প্রাচীন ও মধ্য পর্বেও পোড়ামাটির কাজে স্থুল রুচির দেখা মিললেও আধুনিক পর্বে তা অনুপস্থিত। আধুনিক কালের শিল্পীদের শিল্পকর্ম সূক্ষ্ম ও মসৃণ। আমাদের দেশের নিদর্শন মেলে নবম শতাব্দীর পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহারে। দেশের অনেক জায়গায় পাথর দুষ্পাপ্য। ফলে লোক শিল্পীরা সহজ প্রাপ্য মাটির ওপর র্নিভর করেছে স্বাভাবিক ভাবেই। লোক শিল্পীরা হাতের কাছে পাওয়া মাটি দিয়ে বিভিন্ন মূর্তি তৈরি করে শুকানের পর তা রং করেছে এবং শিল্পকর্মগুলোকে স্থায়িত্ব দান করার জন্যই পরে পোড়ানো হয়েছে। এর ফলে পোড়ামাটির শিল্প কর্ম পেয়েছে দীর্ঘস্থায়ী এক রূপ। লোক শিল্পীরা প্রস্তর শিল্পকলানুগ রীতির অনুশাসনে আবদ্ধ না থেকে নিজেদের স্বাধীন ও মুক্ত চিন্তার আলোকে মনের তাগিদে তৈরি করেছে এসব পোড়ামাটির নানা পুতুল ও মূর্তি। মুসলিম শাসনের পূর্ব থেকেই বাংলায় এ শিল্পের প্রচলন ছিল। বাংলাদেশে মুসলিম অধিকারের পূর্ববতী পর্বেও পাহাড়পুর, মহাস্থানগড়, ময়নামতি ফলকগুলির মাধ্যমে এদেশের শিল্পীদের যে টেরাকোটা বা পোড়া মাটি শিল্পে পূর্ণ অধিকার ছিল তার সমর্থন মেলে। এপর্বের যে ক’টি ইটের মন্দির বা মসজিদ এখনো বর্তমান তার মধ্যে ফরিদপুরের মথুরাপুরের দেউল (১৭০০) একই জেলার ভাঙ্গা উপজেলার পাতরাইলের আউলিয়া মসজিদ (১৪০০) দিনাজপুরের কান্তনগরে কান্তাজীর মন্দির (১৭২২) বরিশালের কবি বিজয় গুপ্তের মনসা মন্দির (১৫০০) মাদারীপুরের খালিয়া রাজারাম মন্দির (১৭০০ ) সিরাজগঞ্জের নবরতœ মন্দির (১৭০০) কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহার (৮০০-১১০০) পাবনার জোড় বাংলা মন্দির (১০১৪) বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ (১৫০০) গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের নবরতœ মন্দির (১৪০০ ) গৌড়ের ছোট সোনা মসজিদ (১৪৯৪-১৫১৯), নড়াইলের কালিয়ার জগ্মনাথ দেবের রথ (১৬০০), বড়ই বাড়ি ঢোল সমুদ্র (১৩০০) কুটিলা মুড়া, পানজোরা গীর্জা (১৬৬৩), দিনাজপুরের নওয়াবগঞ্জ সীতা কোট বিহার, মুন্সিগঞ্জের শ্যাম সিদ্ধ মঠ ( ১৭৫৮) রাজশাহী বাঘা মসজিদ, বগুড়ার বিবিচিনি শাহী মসজিদ (১৭০০), বড় সোনা মসজিদ (১৫০০), বিক্রমপুরের বাবা আদম মসজিদ (১৬৭৯) মানিকগঞ্জের মওের মঠ (১৭০০) যশোরের চাচড়ার মহাবিদ্যা মন্দির, রাজশাহীর বিড়ালদহ মাজার, কুষ্টিয়ার ছোট আহুক মন্দির, নবাবগঞ্জের খেলারাম দাতার মন্দির (১৯০০) সোনার গায়ের ইব্রাহিম দানিশ মন্দের মাজার, চাপাই নবাবগঞ্জের ছোট সোনা মসজিদ (১৪০০) সিরাজগঞ্জের হাটি কুমরুলের দোল মঞ্চ, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার লসমা রাজবাড়ী, মাগুড়ার মোহাম্মদপুর উপজেলার রামঠাকুরের মন্দির, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বরের দেউল (৯৮০-১০৫৪) প্রভৃতি। চর্তুদশ থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলার বহু মসজিদে ও মন্দিরে টেরাকোটার শিল্পকর্ম দেখা যায়। এগুলোর মধ্যে আউলিয়া মসজিদ, গৌড়ের ছোট সোনা মসজিদ, বিবিচিনি শাহী মসজিদ, বাবা আদম মসজিদ, বাঘা মসজিদ, পাবনার জোড়বাংলা মন্দির, কাজে টেরাকোটার অলংকরণ দেখা যায়। বাংলার পোড়ামাটির মন্দির ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শিল্পরীতিকে তিন শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায় ষোড়শ-সপ্তদশ শতকের প্রথম যুগ, অষ্টাদশ শতকের মধ্যযুগ এবং উনিশ শতকের নব্যযুগ, প্রথম যুগের মুর্তিগুলোকে সরাসরি স্থাপন না করিয়ে পাশ থেকে দেখানো হয়। এসব মূর্তি অঙ্গ-প্রতঙ্গের সন্ধিস্থলগুলো গভীর ও সূক্ষ্ম ভাবে খোদাই করা। এগুলোর নির্দশন দেখা যায় উজান নগরীর উজানী রাজরাড়ী, মুকসুদপুরের নবরতœ মন্দির ইত্যাদি। মধ্যযুগের মূর্তিগুলোর রীতি অনেকটা শিথিল। আর নব্য যুগের দিকে দৃষ্টি দিলে এ শিল্পরীতিতে ইউরোপীয় প্রভাব দেখা যায়। ইউরোপীয় প্রভাব পড়ায় এ যুগের অনেক শিল্প লোকজ প্রভাব অন্তর্হিত। এখানে স্থান করে নিয়েছে সামরিক পোশাক-পরিচ্ছদ সাহেবিয়ানা এবং দৈনন্দিন জীবন-যাপনের চিত্র। খুব মজার বিষয় যে, এসব মৃৎ ভাস্কর্যে এখন পর্যন্ত কোন লোনা ধরেনি। এখান থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, লোক শিল্পীদের মাটি চিনে নেবার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। বিজ্ঞান সম্মত জ্ঞান না থাকলেও তাদের জ্ঞানদৃষ্টি সকলের প্রশংসা পাবার যোগ্য। মাটি ক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, ফেরিক ক্লোরাইড প্রভৃতি উদগ্রাহী যৌগের উপস্থিতি লোনা ধরায়। যে মাটিতে উক্ত যৌথ থাকে, সেখানে লোনা ধরতে পারে না। শিল্পীরা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন চোখ দিয়ে মাটি নির্বাচন করে তা দিয়ে শিল্প তৈরি করার পরে সেগুলোকে ভাটি বা পোনে একটি নির্দিষ্ট তাপ মাত্রায় পুড়িয়ে তৈরি করেছেন এসব নান্দনিক মূর্তি। মৃৎ-শিল্পীরা তাদের টেরাকোটায় মূর্তি নির্মাণ করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয়কে আশ্রয় করেছেন। এর মধ্যে পুরানকে কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে রামায়ন-মহাভারত ও রাধা কৃষ্ণের লীলা বিষয়ক রামায়ন ও কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের কাহিনীর নানান মূর্তি। লোকায়ত জীবনকে কেন্দ্র করে নির্মিত হয়েছে গৃহ সাজ-সজ্জার নানা উপকরণ ফল-ফুল, পুতুল, হাড়ি-কলসি, লতা পাতা, ঘট বিভিন্ন মুখোশ ইত্যাদি। বিভিন্ন ভঙ্গীতে নারী মূর্তি কর্মকেন্দ্রিক জীবনের নানা দৃশ্য, পশুপাখি কেন্দ্রিক নানা পুতুল হাতি, ঘোড়া, উট, ময়ুর, গরু, হরিণ, ভালুক, বিড়াল, বাঘ, সিংহ ইত্যাদি। এছাড়াও দেখা যায়, সংগীত কেন্দ্রিক নানা যন্ত্র হারমনিয়াম, তানপুরা, খোল-করতাল, তবলা-ডুগডুগি, বাঁশি-বেহালা ইত্যাদি। কোন কোন মূর্তিতে অসংস্কৃত ভঙ্গিমাও লক্ষণীয়। এসব মূর্তি তৈরির পিছনে শিল্পীরা আদিম যাদু বিশ্বাস দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে বলেই মনে হয়। শিল্পীরা অনেক সময় মনের তাগিতে তাদের শিল্প কর্ম তৈরি করেন। তাই অনেক ক্ষেত্রে সেই নির্দিষ্ট নিয়ম পালন করা যায় না। বাধা-ধরা কোন নিয়মই শিল্পীর স্বত:স্ফূর্ত আবেগকে নির্দিষ্ট পথে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ঐতিহ্যবাহী লোকায়ত জীবনের লোকজীবনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয়েছে গৌরবমন্ডিত টেরাকোটা শিল্প। শিল্প তার নিজস্ব গুণেই প্রাচীনকাল থেকে অদ্যবধি টিকে থাকবে ততকাল পৃথিবী টিকে থাকবে যতকাল।
লেখক : নৃপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, পুরাকীর্তি গবেষক /মুক্ত ফিচার লেখক ও কবি।
৪৫, বৃন্দাবন বসাক  স্টিট , কোলকাতা-৭০০০০১
ই- মেল-cb nripen 921@ gmail.com
                           হোয়াটস অ্যাপ –7718298921
                            ফোন-+91-7718298921

বিষয়: বাংলা বর্ষবরণ 1426 বিভাগ: গল্প গল্পের নাম: নৃত্যনাট্য লেখক: কবিরুল

বিষয়: বাংলা বর্ষবরণ 1426
বিভাগ: গল্প
গল্পের নাম: নৃত্যনাট্য
লেখক:  কবিরুল 






   15/04/19
     বালুরঘাটের যুবশ্রী মোরে তাতাইকে মেসটা পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। তবে এখানে আড্ডা মারার লোক তেমন নেই। মেসের ছেলেরা সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। তাতাইও একা একা থাকে। মেসে একমাত্র চাকুরীজীবী তাতাই। অফিস থেকে ফিরে ওর কেমন সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
   যদিও বেশ কিছু বছর আগে বিদিশা ছিল। তখন জীবনটা ছিল অন্যরকম। বিদিশা অনেক কিছুর খেয়াল রাখত। উৎসবের দিন গুলো বিশেষত বাংলা বর্ষবরণ, হোলি , পুজো বিদিশার সাথে ভালই কাটত। তাতাইয়ের জীবনে ও  একটা ছন্দ এনেছিল। ওর জীবনের মানেটাই পুরো বদলে দিয়েছিল। আজ বিদিশা নেই। তাই নিজের মন, মুখটাও কেমন বোবা হয়ে গেছে।
    তবে মেসের সামনেই একটা বৃদ্ধাশ্রম আছে। বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের তাতাই দেখে আর ওর খুব কষ্ট হয়। কারণ ওদের দেখলেই তাতাইয়ের দাদু ঠাকুমার কথা মনে পড়ে। তাতাই নিজে কোনদিন ওদের দেখেইনি। ওর জন্মের আগেই উনারা অমৃতলোকে চলে গেছেন।
    আজ তাতাই বৃদ্ধাশ্রমে ছুটে গেছে। কারণ একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ইমিডিয়েট ডাক্তার ডাকার দরকার ছিল তাই। একদিন ওখানে গিয়েই তাতাইয়ের বেশ ভাল লাগে ওখানকার পরিবেশ। সবাই কেমন আপণ করে নিয়েছে ওকে।
    তাতাই একটা সময় কাটানোর ভাল পরিবেশ পেয়েছে ওখানে। একটা প্রাঞ্জল ভাব রয়েছে ওখানে। বৃদ্ধাশ্রমে গেলেই মন ভাল হয়ে যায়।
    কদিন পরেই তো বাংলা নববর্ষ। ঐ দিন সবাই কেমন দামী পোষাক পড়ে ঘুরে বেড়াবে আনন্দ করবে। তাতাইয়ের মনটা তাই ভীষণ খারাপ। নববর্ষ আসলেই আকাশে বাতাসে একটা প্রেম প্রেম গন্ধ পাওয়া যায়। মনের গোপণ গহ্বরে যেন প্রেমের মৃদঙ্গ বেছে ওঠে। এমনিতেই বৈশাখ মাস মানেই রবি ঠাকুরের জন্ম মাস। তাই নববর্ষের দিন রবি ঠাকুরের গান কবিতা একটা আলাদা মর্যাদা পাই। পাঞ্জাবী আর পাট ভাঙ্গা শাড়ির সুতোই সুতোই যেন রবীন্দ্র চেতনা আল্পনা এঁকে যায়। 
    " বন্ধু হও, শত্রু হও ,
    যেখানে যে কেহ রও ,
    ক্ষমা করো আজিকার মতো
    পুরাতন বরষের সাথে 
    পুরাতন অপরাধ যত। "
   পুরানো দিন গুলো মনের অলিন্দে আজ তাতাইয়ের বড্ড ভিড় করছে। প্রতি বছর নববর্ষে ও আর বিদিশা একসাথে ছবি তুলত। মুভি দেখতে যেত। কবিতা , গল্পের নতুন নতুন ম্যাগাজীন বের করত। একসাথে কত আড্ডা , খুনসুটি।
    এই তো বেশ কিছু বছর আগে সেদিনও বিদিশা ছিল ওর জীবনে , মননে , চিন্তনে। দুজনে একসাথে বাংলা বর্ষবরণের দিন বোলপুর , শান্তিনিকেতন ঘুরে এল। সন্ধ্যে হয়ে আসলে দুজনে হাত ধরাধরি করে কোপাই নদীর তীরে হেঁটেছিল। মাদলের তালে মিলিয়েছিল পা। সেদিন চাঁদের রূপালী অহংকার ঝরে ঝরে , চুয়ে চুয়ে  পড়ছিল বিদিশা আর তাতাইয়ের  সারা শরীর বেয়ে। পরে সন্ধ্যে একটু গাঢ় হতেই বিদিশা তাতাইয়ের ক্লান্ত শরীরে গা এলিয়ে দিয়ে গুণ গুণ করে গেয়েছিল কবিগুরুর গান।  
   সেবার সোনাঝুরি থেকে ভাল ভাল জিনিস ওরা দুজনে কিনেছিল। বিয়ের পর ওদের নিজেদের ঘর সাজাবে বলে। তাতাই একটা দামী শাড়ি বিদিশাকে কিনে দিয়েছিল। আর বিদিশাও সোনার বাংলা হোটেলে একটা সুন্দর ডিনার দিয়েছিল। তাতাইয়ের আজও মনে আছে হোটেলে টেবিল নেওয়া নিয়ে এক দম্পতির সাথে বিশাল ঝামেলা হয়। পরে ওরা জানতে পারে ঐ দম্পতি বিদিশার কলেজ মেটের পেরেন্টস্। হোটেলের আলু পোস্তর স্বাদটা আজও তাতাইয়ের ঠোঁটে লেগে রয়েছে।যেমন লেগে রয়েছে তাতাইয়ের পাঞ্জাবীতে বিদিশার রঙীন , দামী লিপস্টিকের ছোঁয়া
  তবে তখন একটা আলাদা সুখ ছিল। তাতাই চাকরি পাইনি। টিউশন করত। বেশ হেসে খেলে দিন গুলো কেটে যেত। একটা ছন্দ ছিল জীবনের। বিদিশাকে কথা দিয়েছিল চাকরি পেলেই বিয়ে করবে।
    পুরানো দিন গুলো ভাবতে ভাবতে তাতাই অনেকটা সময় ব্যয় করল। নববর্ষের দিন একটা কিছু করার পরিকল্পনা ওর মাথায় ঘুরছে। বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের নিয়ে একটা কিছু করতে হবে। এমন কিছু যা ওদের মনে সারাজীবন দাগ কেটে যায়। ওরাও যেন কিছুটা আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। ওদের জন্য নতুন বছরের প্রথম দিনে কিছু করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবে তাতাই।
    বিদিশা ভালবাসলেও  তাতাইয়ের জীবন থেকে পরে চলে যায় পুরোপরি। ঈশান ওর জীবনে আসাতেই বিদিশা কেমন পালটে যায়। ঈশানের ফিউচার তাতাইয়ের থেকে অনেকবেশী উজ্জ্বল। বড় বিজনেসম্যানের ছেলে। বাড়ি , গাড়ি কোন কিছুর অভাব নেই। কলকাতাতেই গোটা পাঁচেক ফ্ল্যাট দিল্লীতেও বাড়ি আছে।    
    প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের দিন সন্ধ্যায় বিদিশাদের পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। ওখানে বিদিশা নাচ করত। আর তাতাই আবৃত্তি করত। সব শেষে নাটক দিয়ে শেষ হত অনুষ্ঠান। সেই সাথে চলত দেদার আড্ডা আর খাওয়া দাওয়া। সব কিছু পরিচালনার দায়িত্বে ছিল তাতাই। সেদিন ওর হিমগ্লোবিনে লোহিত রক্তকণিকা ছুটে ছুটে বেড়াত। সবাইকে নিয়ে কেমন যেন হৈ হৈ করে মেতে থাকত।
    আর সকালে তাতাই নিজের পাড়াতেও বর্ষবরণের আয়োজন করত। সুন্দর করে প্রভাতফেরী বার করত। তারপর গান , বাজনা , ছবি আঁকা আরো কত কি! সকাল থেকে অনুষ্ঠানের যেন বিরাম নেই। পাড়ার সকলে জড় হত সেখানে। কচি কাচারাও থাকত।
   আজ সেইসব দিন বড্ড ঝাপসা লাগে তাতাইয়ের। তবু মনের কোণে কোথাও যেন একটা হালকা মাদল আজও বাজে নববর্ষের। অনেক দূর থেকে তাতাই যেন একটা বর্ষবরণের ডাক শুনতে পাই। কে যেন ডাকছে পরম আদর আর আবেগে। কে যেন প্রদীপ জ্বালার আগেই সলতে পাকাতে শুরু করেছে। একটা শাড়ির খসখস শব্দ তার পাঞ্জাবীতে যেন বোহেমিয়ান শিহরণ তুলছে।
   অফিস থেকে আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে তাতাই। বৃদ্ধাশ্রমের এক আবাসিক আমের আঁচার বানিয়েছিল। তাতাইয়ের জন্য পাঠিয়েছে। আমের আঁচার খেতে ওর পুরানো দিন গুলো আবার মনে পড়ে যাচ্ছিল। একবার বর্ষবরণের সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঝড় হয়েছিল। আর সেই সাথে আম্রবৃষ্টি।
    তাতাই ক্যালেন্ডার দেখল। নববর্ষ এখনও দিন পনেরো কুড়ি দেরী আছে। বিকেলের  একটু আগেই বৃদ্ধাশ্রম থেকে রবীন্দ্র সংগীতের সুর ভেসে আসতে শুনল। রবি ঠাকুরের গান শুনলে তাতাই যেন কোথায় হারিয়ে যায়। বিদিশার কথা মনে পড়ে। তাতাই কাকাদের মুখে শুনেছে ঠাকূমা দাদু বর্ষবরণের দিন বাড়িতে নাচ গানের আসর বসাত। আর বাড়ির সকলে সেখানে মেতে উঠত। খুব মজা হত।
    তাতাই আর দেরী না করে মাউথ অর্গানে দুবার ফুঁ দিল। অনেকদিন বাজায়নি ওটা। সেই শেষ কবে বাজিয়েছে মনে করতে পারেনা। তাতাই বুঝল এবার ওটার সময় এসেছে বাজানোর।  তাতাই আর দেরী না করে মেসের সকল ছেলেকে নিয়ে ছুটল বৃদ্ধাশ্রমে। 
    বৃদ্ধাশ্রমে সকল আবাসিক আর পাড়ার ছেলে মেয়েদের নিয়ে তাতাই আর ওর মেসের বন্ধুরা সকলে মিলে ঠিক করল বর্ষবরণ পালন করবে। সকলে শুনে এক কথায় রাজী। আবাসিকদের ভাঙ্গা চোরা মনে যেন প্রেমের মাদল বেজে উঠল। মনেতে খুশীর উপচে পড়া পারদ।
    সব কিছুর রিহার্সালের দায়িত্বে ছিল তাতাই আর ওর মেসের বন্ধুরা। বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের মধ্যেও যেন একটা রঙীন বসন্তের বসন্তের ছোঁয়া আসল।
    তাতাইরা ঠিক করেছে পয়লা বৈশাখের দিন  সন্ধ্যায় দুটি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করবে একটা " চণ্ডালিকা " আর একটা " চিত্রাঙ্গদা "। ঐ দুটি বিদিশার খুব প্রিয় ছিল। আশে পাশের ফ্ল্যাটবাড়ির বৌদিমণি, দিদিমণিরাও রাজী। এক বিশাল কর্ম যজ্ঞ।
    এ কদিন তাতাই অফিস থেকে রোজই তাড়াতাড়ি ফেরে আর অনুষ্ঠান নিয়ে মেতে ওঠে। সব কিছু খুঁটিয়ে দেখছে তাতাই। যাতে কোথাও কোন খুঁত না থাকে। হাতে সময় এখন কম। মাত্র তিন দিন বাকি।
    মঞ্চটাও বেশ ভাল সাজিয়েছে। সাউণ্ড সিস্টেমও বেশ সুন্দর।
    রাত পোহালেই নববর্ষের নবীন ভোর উন্মোচিত হবে। আর আবাসিকদের মনেও ছড়িয়ে পড়বে নতুন ভোরের কমলা আবীর।
    আজ বাংলা নববর্ষ। বহুদিন পরে পয়লা বৈশাখের স্বাদ পেতে চলেছে তাতাই। বৃদ্ধাশ্রম ফুল আর আলোয় সুচারুভাবে সেজে উঠেছে। তাতাই আজ সবুজ রং এর একটা পুরানো পাঞ্জাবী পড়েছে। যেটা বিদিশা ওকে কিনে দিয়েছিল। পাঞ্জাবীর সুতোই ধরা পড়ছে পুরানো প্রেমের উপপাদ্য। বর্ষবরণের পরশ। আজ বারে বারে বিদিশা ফিরে ফিরে আসছে। চোখের জলটাও টপ টপ করে পড়ছে তাতাইয়ের।
    সকালেই শুরু হল উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে প্রভাত ফেরী। তারপর রবি ঠাকুরের গান আর কবিতা পাঠ। এরপর শুরু হল বক্তৃতা - " বাংলা নববর্ষ নিয়ে মানুষের আবেগ ও চিন্তাধারা "।  সকাল থেকেই চলছে হরেক রকম অনুষ্ঠান। একদম দম ফেলার সময় নেই। আজ বারে বারে তাতাইয়ের ঠাকুমা দাদুরাও ফিরে ফিরে আসছে।
    দুপুরে বেশ ভালই জমল ভুরিভোজ। সবার মুখে উপচে পড়ছে হাসি। আজ বহুদিন পরে তাতাই বাঙালী খাবারের স্বাদ পেল।
    সন্ধ্যায় শুরু হল বহু কাঙ্খিত নৃত্য নাট্য। বৃদ্ধশ্রমে পা রাখার জায়গা নেই। বাইরের আশেপাশের পাড়া থেকেও অনেকে জমায়েৎ হয়েছে। তাতাই নিজেও নৃত্যনাট্যে অংশগ্রহণ করেছে। আজ সত্যিই একটা মনোজ্ঞ স্বর্ণালী সন্ধ্যা পরিবেশন করতে পেরে তাতাই আর ওর মেসের বন্ধুরা তৃপ্ত।
     " চণ্ডালিকা " বহুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তাতাই নিজে এখানে ভিক্ষুকবেশী সন্ন্যাসীর পাঠ করেছে। 
  " ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না
    ও যে চণ্ডালিকা
       ..... .....  .....    "।
    সংলাপ শুরু হতেই তুমুল হাততালিতে গোটা চত্বর ফেটে পড়ল।
    আজ " চণ্ডালিকা " নৃত্যনাট্যে তাতাই যেন নতুন করে বিদিশাকে আবিষ্কার করল।
    আজ তাতাইয়ের মনে হল একটা বর্ষবরণ সে করতে পেরেছে। আজ পুরানো দিনের স্মৃতি গুলো ওকে অনেকটা অক্সিজেন জোগাল।
    রাত গভীর হতেই তাতাই দেখল সবাই ঘুমিয়ে গেছে। চারিদিক নিস্তব্ধ। বাইরে ঝিরঝিরে বৈশাখী বাতাস বইছে। বাঁকা চাঁদটা আকাশে একাই রাজত্ব করছে।
    তাতাই ছাদে উঠে মাউথ অর্গানে জল ভরা চোখে ফুঁ দিল। আজ বিদিশার কথা রিয়েলি বড্ড মনে পড়ছে তাতাইয়ের। কারণ আজ সমগ্র অনুষ্ঠানে বিদিশা না থেকেও যেন সাবলীল ভাবে বিদ্যমান। কোথায় যেন একটা ছায়ার মতন ও সব সময় তাতাইয়ের পাশে পাশে ছিল আজ। তাইতো অনুষ্ঠানটা সাফল্যমণ্ডিত হল। 
    ও আজ অনেক দূরে তারার দেশে চলে গেছে। ঘুমিয়ে আছে। আর কোন দিন ফিরবে না।
  অনেক কষ্টে বিদিশার ঠিকানা জোগাড় করে সকালে বিদিশাকে ইনভাইট করতে গিয়ে দুঃসংবাদটা তাতাই পাই। বিদিশা গত বছর এই নববর্ষের দিনেই দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়। আর আজ তার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী।
    অনেক কষ্টে চোখের জলটা মুছে তাতাই মাউথ অর্গানটাতে সুর দিল - 
    " এসো হে বৈশাখ
    ....   ....  ....  "
    তাতাই দেখল ঐ সুর বিদিশাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলছে। ও গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। তাতাইয়ের মধুর সুরে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে সারা আকাশে চাঁদের রূপালী আলো, অহংকার মেখে। 
    তাতাই অশ্রুসিক্ত নয়নে সত্যিই আজ দেখতে পাচ্ছে বিদিশা ওর কিনে দেওয়া শাড়িটা পড়ে, খোলা আকাশের বুকে, তারা ফোটা মঞ্চে নৃত্যনাট্য করছে পরম আনন্দে আর তৃপ্তিতে।
    বিদিশা সেই দিনও ছিল ওর পাশে। নববর্ষের সন্ধ্যায়,  কোপাই নদীর তীরে , চাঁদের রূপালী আলোর বন্যায় ভেসে। 
    আজও তাতাইয়ের সুরে সুরে দূর আকাশের তারাদের ভিড়ে সে এক মায়াবী কোপাই নদীর পাড় ছুঁয়ে ছুঁয়ে হেঁটে যাচ্ছে। নৃত্য করছে। নিজের চেনা ছন্দে , দুলে দুলে।

মো: 9932958615
85, Kalibari Road Nalta
Near Air Port Auto Stand
Kolkata : 700028

বিষয়: রঙয়ের উৎসব বিভাগ: গল্প গল্পের নাম: নতুন বসন্ত লেখক: রঞ্জিত মল্লিক( কবিরুল)

বিষয়: রঙয়ের  উৎসব
বিভাগ: গল্প
গল্পের নাম: নতুন বসন্ত
লেখক: রঞ্জিত মল্লিক( কবিরুল)

       20/03/19







     " বাতাসে বহিছে প্রেম
         .....   ..  নেশা
          .....  ....
       .....বসন্ত এসে গেছে
           ......  ....
     মাথা নত করে রব "
           ....   ..... 
     আর কত কাল বাসুদকে মাথা নত করে থাকতে হবে ও নিজেই জানেনা। সারাজীবন বাসুদ মাথা নতই করে গেল। পরিবারের সুখের জন্য, নিজের ভাই বোন দিদিদের কথা ভেবে বাসুদ একটা বিরাট মাপের ঝুঁকি নিয়েছিল। যেটা ওর জীবনকে তোলপাড় করে দিয়েছিল। মুছে দিয়েছিল মনের অলিন্দে উপচে পড়া বসন্তের সব রং।
     বসন্তের ফুল ফুটেও সব ঝরে গিয়েছিল। পাঞ্জাবীতে লেগে থাকা বসন্তোৎসবের রং ফিকে হতে শুরু করেছিল।
     আজ অনেক দিন পর ভিতরের অতৃপ্ত আত্মাটা রং খেলার জন্য পাগলামি শুরু করেছে আবার। হৃদয়ের অলিন্দ তোলপাড় করতে শুরু করেছে সে।
    রঙয়ের উৎসবের হারিয়ে যাওয়া মাতাল করা সুরটা বাসুদের লুঙ্গি আর পাঞ্জাবীর গা বেয়ে কেঁপে কেঁপে উঠে আল্পনা দিয়ে যাচ্ছে।
    যে কদিন জেলে ছিল সেখানে দু একবার বন্দীদের নিয়ে বসন্তোৎসবের আয়োজন করা হলেও, মন ভরেনি বাসুদের। কোথাও যেন একটা তাল কেটে গিয়েছে এমন ভাব!
      একটা রং খেলার অতৃপ্ত বাসনা মনকে বড্ভ পীড়া দিয়েছিল সেবার বাসুদকে। সেবার দুচোখ বেয়ে নেমে এসেছিল নোনা পানির রংয়ের ধারা। ও ভাবতেই পারেনি ওর এই সংশোধনাগারে সেবার দেবারতি বন্দীদের নিয়ে বসন্তোৎসবে আসবে।তবে দেবারতি বাসুদকে দেখে ঘাবড়ে যায়। ও বাসুদের একটা অশুভ খবর শুনেছিল।
    বাসুদকে এইভাবে এখানে দেখবে ভাবতে পারেনি। দেবারতির ছোঁয়ায় সেবার বসন্ত উৎসব সংশোধনাগারে একটা আলাদা ,  অন্য মাত্রা পেলেও বাসুদের মনের অলিন্দ সাদা আর কালোই থেকেই যায়। কোন রং লাগেনি। দেবারতিও অভিমান করে বাসুদের সাথে কোন কথা বলেনি।
    আজ আবার বসন্ত উৎসব দুয়ারে কড়া নাড়ছে। আকাশে  বাতাসে রং এর মাতলামি। বাসুদের চনমনে রক্তে হিমোগ্লোবিনের বোহেমিয়ান শিহরণ।
    বেশ কিছুদিন হল বাসুদ জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে। পুরানো দিনগুলো বাসুদ ভুলে যেতে যায়। হোলির রং এ নিজেকে রাঙিয়ে আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে চাই। ফিরে আসতে চাই দেবারতির প্রেমঘন কোলে। ও জানে একটা ভুল বোঝাবুঝির অবসান করতে হবে। হোলির রংয়ে ধুয়ে দিতে হবে সব কিছু। তবে সময় হয়ত কিছুটা লাগবে। আজ অনেক দিন পরে বাসুদ হোলি উৎসবের স্বাদ পেতে চলেছে। তাই এবারের দোলটা ও দেবারতির সাথে কাটাতে চাই।
    নিজের দোষ , আর করা ভুল গুলির জন্য পারলে দেবারতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবে।
     কথা গুলো ভাবতে ভাবতে অনেকটা সময় ব্যয় করে ফেলল বাসুদ। কালিয়াচক এসে গেছে।এখনও অনেকটা পথ।
     কপালের ঘামটা নিজের পাঞ্জাবীতে মুছেই বাসের জানালাতে বাসুদ আবার নিজের গাটা এলিয়ে দিল। আজ শুধু ঘাম নয় চোখ দিয়ে সমানে জলও পড়ছে। মাঝে অনেক কটা বছর ডানা মেলেছে ।
    পুরানো দিনগুলো ভালই ছিল। একটা সুন্দর ছন্দ ছিল , আনন্দ ছিল জীবনের মধ্যে।1
    বাসুদ তখন অটো চালাত। একদিন বৃষ্টির দিন প্যাসেঞ্জারের অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে রাস্তায়। অনেকক্ষণ পরে একজন খুবই সুন্দরী মহিলা তার অটোতে উঠল। চোখে কালো চশমা। চোখ কাটানোর পরে যে রকম চশমা পড়ে সেই রকম। মেয়েটা নেমে যেতেই বাসুদ লক্ষ্য করল ব্যাগটা ফেলে গেছে। অনেক খোজাখৢঁজির পর যখন ব্যাগটা দিতে যাবে তখন বৃষ্টি থেমে সোনাঝরা রোদ্দুর উঁকি মারছে। সেই শুরু.....
   বাসুদের মনেও বসন্ত ডালপালা ছড়াতে শুরু করল। নিজের অজান্তেই প্রেমের কোকিল ডেকে উঠেছিল সেদিন মনে। তারপর মাঝে মাঝেই দেখা। দু চারটে কথা। তারপর থেকেই দুজনের মধ্যে সম্পর্ক আরো নিবিড় হয়েছে। আপণি থেকে তুমিতে এসেছে। 
  দেবারতির চোখের অনেক সমস্যা ভাল দেখতে পাইনা। ডাক্তার বলেছে একদিন ও অন্ধ হয়ে যেতে পারে।
   ব্লাইন্ড স্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে ও সেবার শান্তিনিকেতন গিয়েছিল দোলে। একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। বাসুদও সাথে গিয়েছিল। 
    শান্তিনিকেতনের কোপাইনদীর তীরে পলাশের আর শিমূলের লাজুক আদরে হারিয়ে গিয়েছিল সেদিন দুজনের সবূজ মন। দেবারতির নেল পালিশ পরিশোভিত  ম্যানিকিউরড্ ফিঙ্গার  বাসুদের ঘামে ভেজা পরিশ্রমী হাতের স্পর্শে আরো জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। দেবারতি বাসুদের বুকের উপর ঢলে পড়ে সেদিন ওর গায়ের গন্ধ, শরীরের উত্তাপ নিয়েছিল। গোধূলির আলোয় দেবারতিকে সেদিন অসাধারণ লাগছিল।
   গোধূলি শেষ তুলির টান দিয়ে চলে যেতেই আকাশে চাঁদ উঠল। চাঁদের রূপালী অহংকার ঝরে ঝরে পড়েছিল বাসুদের সাদা পাঞ্জাবীর গা বেয়ে। তার কিছুটা ওর নিকোনো উঠোনের গাল বেয়ে নামতে শুরু করেছিল।
   সেদিন দেবারতি বাসুদকে একগোছা পলাশ ফুল উপহার দিয়েছিল। সেই ফুল বাসুদ আজও পরম যত্নে রেখে দিয়েছে। বাসুদ দেবারতির রঙীন ঠোঁটের আঁকাবাঁকা জ্যামিতিতে এনেছিল নিজের ভালবাসার ছোঁয়া।  
  সেইবার দেবারতি বাসুদকে আবীর মাখিয়ে দিয়েছিল। রাঙিয়ে দিয়েছিল ওর জীবন দোলের রংয়ে। বাসুদ পেয়েছিল একটা ফ্রেশ অক্সিজেন। সেদিন দুটি সম্প্রদায়ের দুই হৃদয় এক হয়ে গিয়েছিল। ফাগুন রংয়ে রেঙ্গেছিল দুই সবুজ মন। সেইবার দুজনে খুব দোল খেলেছিল। খুব মজা করে।সেই শেষ।
  তারপর বাসুদের আর রঙের উৎসব করা হয়নি। একটা বাজে কাজে জড়িয়ে গেল।
  বোনের কিডনির সমস্যা ও বড়দির বিয়ের জন্য প্রচুর টাকার দরকার হয়ে পড়ল। টাকাটা ভীষণ প্রয়োছন। তাই ওকে অবৈধ পথ বাছতে হল। এক দালালের পাল্লায় পড়ে বাংলাদেশ সীমান্তে গরু পাচার করতে শুরু করল।দেবারতি জানল অনেক পরে। ততদিনে বাসুদ অনেক দেরী করে ফেলেছে। ও খুব কষ্ট পেয়েছিল। সেই থেকে দুজনের রিলেশনের অবনতি হতে শুরু করে। মনের ভিতর বাসা বাঁধা পলাশ ফুল হারালো তার সকল রং।
    দেবারতি একসময় ইসলামপুরে চাকরি করত। বাসুদ মুসলমানের ছেলে। ওর সাথে মেলামেশা, বন্ধুত্ব করার ফলে দেবারতিকে অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। অনেক রকম অপমান হজম করে কাজ করতে হয়েছে। তবু ওদের সম্পর্কে কোন ভাঁটা পড়েনি। সময়ের তালে এগিয়ে চলেছিল ওদের দুজনের সমীকরণ।
     বাসুদ গরু পাচার করার ফলে দুজনের সম্শর্কের রসায়ন জটিল আকার ধারণ করে। দেবারতিকে আরো বাক্যবাণের সন্মুখীন হতে হয়। বাসুদের জেল হয়।
     রতি  ইসলামপুরে থাকেনা। যতদূর জানে বদলি হয়ে গেছে।  
     একটা অবৈধ কাছে লিপ্ত হবার জন্য বাসুদকে এখন আর কেউ পচ্ছন্দ করেনা।
     বাসুদ যখন ইসলামপুরের মাটিতে পা রাখল তখন বেলা প্রায় শেষ।
   দেবারতির পুরানো ঠিকানায় বাসুদ খুব ভয়ে ভয়ে ঢুকল। দেখা পেলনা। নতুন ঠিকানাটা পেল মাত্র। ওর শরীর খুব অসুস্থ। চোখের কর্নিয়ার প্রবলেম শুরু হয়েছে। চোখের শিরাও শুকোতে শুরু করেছে। ও  এখন কলকাতায় আছে। চিকিৎসা চলছে ওর। 
   কলকাতার ঠিকানাটা খুঁজে পেতে বাসুদকে একটু কষ্ট করতে হল বৈকি!
    কলকাতায় অনেক কষ্টে ওর ঠিকানায় দেখা করতে গেলে ওর অভিমানী মুখ বাসুদকে ভীষণ কষ্ট দেয়। মুখ ফিরিয়ে নেয় দেবারতি। বাসুদ বুঝতে পারে অনেক দেরী হয়ে গেছে.। বাসুদের চোখের জল টসটস করে নামছে সাদা কালো দাড়ির আঙিনা বেয়ে।
    আজ বসন্তোৎসব। বাইরে ঝিরঝিরে বাসন্তী বাতাসের বন্দিশ। চারিদিকে মাতাল করা বসন্তের গান ভেসে আসছে - 
    " ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল
    ...   .....   .....
..... ......   ..  ....
    
    রাঙা হাসি রাশি রাশি
     ....   .....   .....  "
    দ্বার অনেকদিন ধরেই বন্ধ ছিল। তাতে অনেক ধুলো জমে ছিল। বাসুদের মনের কোণে জমা ধুলো তার চেয়েও পুরু। বাসুদ শেষ চেষ্টা করেছিল বন্ধ দ্বারটা খোলার। পারেনি। চেয়েছিল অনুতাপের চোখের জলে হোলির রং মিশিয়ে বন্ধ দ্বারের চৌকাঠ ধুয়ে দিতে। অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল। দ্বার ধুয়েছিল অন্য লাল  রং এ।
    দোলের দিন এক মুঠো আবীর নিয়ে বাসুদ একটু বেলায়  দেবারতির কলকাতার বাসায় আসে ওর মনে রং এর ছোঁয়া  দেবার জন্য। দেবারতির শান্তিনিকেতনে কিনে দেওয়া সেই পাঞ্জাবীটা পড়েই ও এসেছে। চোখে মুখে খুশীর জ্যামিতি। ওর বিশ্বাস দেবারতি সাদরে ওর ভালবাসার আবীর প্রাণ ভরে গ্রহণ করবে। 
    ভুল প্রমানিত হল শেষে।
  দেবারতির অহংকারী আর অভিমানী মন বাসুদের জন্য সব দরজা বন্ধ করে দেয়। শতবার ডেকেও রতির মজবুত অভিমানের দুর্গ ভাঙতে পারেনি। ফিরে চলে যায় বাসুদ। তবে বেশীদূর  যেতে পারেনি।
    অভিমান ভাল তবে বেশী নয়। সেটা দেবারতি পরে যখন বুঝল তখন সব শেষ।
   ভগবান অতটা নিষ্ঠুর হননি, যতটা রতি পেরেছিল হতে।  উনি বাসুদের রং খেলার হ্যাংলামোর সাধ মিটিয়েছিলেন। তবে অন্যভাবে। বাসুদ রং খেলেছিল তবে একা।মৃত্যুর সাথে।
    দেবারতির বাড়ি থেকে ফেকাশে মুখ নিয়ে বাসুদ বড় রাস্তায় নামতেই কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। পিছন দিক থেকে আসা একটা ভারী গাড়ি বাসুদকে থেঁতলে দেয়। ওর নামাজী টুপি আর সাদা পাঞ্জাবী রক্ত আর লাল আবীরের পিপাসা মেটায়।
    বাসুদের বুকের ভিতর জমে থাকা হাহাকার, কান্না, ভীষণ ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠা আর্তনাদ বসন্তোৎসবের জোরালো প্রাণঢালা গানের আওয়াজে চাপা পড়ে যায়।
     বাসুদের রক্তের হোলি খেলা দেহটা যখন এম্বুলেন্সে চেপে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা  দেয়, ততক্ষণে দেবারতির অভিমানের মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে। তবে সেদিনও বৃষ্টি নেমেছিল যেদিন ও বাসুদকে প্রথম দেখে। 
        বাসুদের দুঃখ বিদীর্ণ প্রাণটা দুদিনের জন্য আটকে ছিল। আর তা দেবারতির জন্যে।   
         দেবারতির রংয়ের ছোঁয়ার স্বাদ অবশ্য মিটল এক্সিডেন্টের দুদিন পরে। মৃত্যু পথযাত্রী বাসুদ কাঁপা হাতে ভেজা চোখে  দেবারতির সাদা কালো চুলের ক্যানভাস ভরিয়ে তুলল সিঁদূরের লাজুক আদরে।
      এপোলো হসপিটাল স্বাক্ষী থাকল এক, নীরব , চাপা, ভিন্ন স্বাদের বসন্তোৎসবের।
    বাসুদ আখতার রসুল জীবনে অবৈধ কাজ করলেও একটা পুণ্য কাজ করেছিল। মরার আগে তার ভালবাসার দেবারতিকে চোখ দুটো দান করে গিয়েছিল।
    বাসুদের চোখ দেবারতির প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবনে আনল রঙীন আলো, নতুন বসন্ত। নব রংয়ের ছোঁয়া।
     দেখতে দেখতে বছর ঘুরে এল।
    এক বছর পর আবার বসন্তোৎসব। রঙের উৎসব।
   দেবারতি আজ  জানালা খুলে দিয়েছে। আজ সব কিছু স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। বাইরে বসন্তের ঝিরঝিরে মিষ্টি বাতাস বইছে। সেই বাতাস বসন্তের গানের ভেলায় ভেসে ওর হলুদ সবুজ  শাড়িতে এলো মেলো  আল্পনা এঁকে চলেছে।
     নীল দিগন্তে .... ....
     .....   .....  .... আগুণ
   ...  ....    ....গন্তে
   ....   ....   ....   "
    বাসুদ নেই। তবু ওর উপস্থিতি দেবারতি অনুভব করছে ওর শরীরে , শিরায় উপশিরায়, হৃদয়ের প্রতি স্পন্দনে।
    ছেলে মেয়েরা বাইরে রং আর আবীর খেলায় কি সুন্দর মেতে উঠেছে! 
  দেবারতি দেখল অবাক নয়নে,  রাতের ঝরো হাওয়ায় সামনের শিমূল গাছটার সব ফুল ঝরে গেছে। শুধু দুটি ফুল ফুটে আছে।
    দুটি পাখি ঐ ফুলের ডালে প্রেমালাপে মত্ত।
   দেবারতির মনে হল ওরা দুজন ও আর বাসুদের হারানো বসন্তেরই প্রতিচ্ছবি।
     বাসুদের চোখ দিয়ে দেবারতি আজ এক প্রেমঘন বসন্ত উৎসবের স্বাদ পেতে চলেছে। দেবারতির বহুদিনের সাদা কালো প্রায়ান্ধকারাচ্ছন্ন জীবন আজ বসন্তের রংয়ে রঙীন।
     শিমূল গাছের ডালে পাখি দুটি এখনও একে অপরকে সোহাগে ভরিয়ে তুলছে। ওদের দেখে দেবারতির তেরো বছর আগের কোপাই নদীর তীরের ঘটনা গুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। 
    বেলা বাড়তেই বাইরে শুরু হল জোর কদমে রং খেলা।
     পাখি দুটির দিকে একমনে চেয়ে দেবারতির মনের অলিন্দে কোকিল যেন পলাশের রাঙা লাজে নেচে উঠল। দেবারতি গান ধরল -
" পলাশ ফুলে.....
  .....     .....  মহুল বন
.... .....   ....  মান করেছে
 ....  ....   ....  "


মো: 9932958615
85 Kalibari Road , Nalta
Near Airport Auto Stand
Kolkata 700028

বলতে পারো দেবী? (কবিতা) গাজী রায়হান হাফিজ

বলতে পারো দেবী?

গাজী রায়হান হাফিজ



ধবধবে পূর্ণিমায় কখন ভেসেছিল হৃদয়ের কবিতা গুলো?
কোন সে বসন্তে গেয়েছিল কোকিল তার প্রথম গেয়ে ওঠা গান?
নয়নের রেখা পাতে কখন নেমেছিল বিনাশী শ্রাবন?
বলতে পারো দেবী!!
সেই অপেক্ষার নিশিতে কোনদিন বধূ এঁকেছিলো প্রথম চুম্বন,
জেগেছিল কুমারী শরীর করেছিল সতীত্বের শিরচ্ছেদ!!
আর কতটা বসন্ত বাঁকী?

চন্দনের মাটিতে মুখ ধুয়ে মসৃণ রুপ;
লাল সিদূরের আভায় এঁকেছিল ললাটে তীলক-
দারুণ সংকেত!!
কতবার ধর্ষিত হলে ধরণী তার সতীত্বের নাম ঘোচে?
কত পা হাঁটলে পথিক ক্লান্ত হয় কিংবা কত কষ্ট জমা হলে
পাহাড় কাঁদে??
বলতে পারো দেবী??
_______________________________________________
রচনা 25.04.19
হোসেনপুর-কালিগজ্ঞ
           সাতক্ষীরা
_______________________________________________

অণুকবিতা ।। আর একটু ভালোবাসা ------কাজী এনামুল হক

।। অণুকবিতা ।।

আর একটু ভালোবাসা

------কাজী এনামুল হক

আর একটু ভালোবাসো মোরে
আমি আরও ভালোবাসা পেতে চাই,
প্রচন্ড বহ্ণিতাপে আর একটু
দগ্ধ হতে চাই; জীবনের চোরাস্রোতে 
যদিওবা বিভীষিকা নামে,
গৃহহীন হই যদি যাযাবরসম, তবুও
একমুঠো প্রেম দিও আগুন-ঝরানো রাতে, বসন্তের ঘ্রাণ দিও মলয় বাতাসে।
শ্রাবণের দিনে থাকো যদি বসে
মেঘ-ভার মুখে, বাতায়ন পাশে,
 একরাশ হাসি তবু ধার করে নিও---
মুখ নেই? তবু যেন মুখোশেই হাসো।

Wednesday, April 24, 2019

বড় একা লাগে ( সুন্দর লেখা ) রাজু কর্মকার

বড় একা লাগে

             রাজু কর্মকার





বাইরে তখন সবিরাম জলধারা । তবে বিকালের ব্যালকনিতে উপবিষ্ট অশীতিপর বৃদ্ধার চোখের জলের সাথে তা যেন পেরে ওঠেনা । বিদেশিনী বৌমা আর অচেনা নাতিকে নিয়ে একমাত্র খোকা ততক্ষনে বিমানযোগে ক্যালিফোর্নিয়ার প্রায় কাছাকাছি । ছেলে বিদেশে চাকরি পাবার পর অনেকবারই এমনটি হয়েছে । বিদায় কালে বাঁধা না মানা অশ্রু , ক্ষনিকের ভারাক্রান্ত মন , তারপর অনোন্যপায় বুঝে সামলে নেওয়া __কিন্তু স্বামীর অবর্তমানে আজ যেন তিনি বড় একা । সুসজ্জিত দোতলা বাড়ি , দামী টিভি , রেফ্রিজারেটর , এ সি , দামী ফার্নিচার , পোষ্য টিয়া __ তবু যেন বড় একা তিনি ।
                             সজল ঝাপসা দুটি চোখ স্বামীর ব্যক্তিত্ববান ফটোতে আবদ্ধ হয় । আর তাতে হাত বুলাতে বুলাতে সপরিবারে পুত্র বিদায়ের সে বৃষ্টি ভেজা ক্ষণে স্মৃতি চারণায় ফিরে যান তিনি ..............
                               তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী চাকুরিজীবী স্বামী দেবেন্দ্রবাবু চেয়েছিলেন তাদের একমাত্র পুত্র ঋষভকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়াবেন , বাংলা মিডিয়ামে পড়াশুনা করে "কিচ্ছুটি" হবেনা গোছের মনোভাব তার । তিনিও স্বামীর সাথে সহমত পোষণ করলেন , কিন্তু "প্রয়োজনে বাইরে সেটেল্ড হয়ে যাবে "কথাটি শুনে কেঁদে ওঠে মাতৃ হৃদয় । স্বামীর প্রতি ব্যর্থ নিবেদন তার , "একমাত্র ছেলেকে ছেড়ে থাকবো কি করে ? " , দেবেন্দ্রবাবুরও চট জলদি জবাব, "ওসব আবেগে ভেসে ছেলেটার কেরিয়ার নিয়ে ছিনিমিনি খেলোনাতো । মোবাইলের যুগে দূরত্ব বলে কিছু নেই । "  পুত্রকে ঘিরে স্বামীর উচ্চাশাকে সেদিন মেরে ফেলতে পারেননি তিনি ।
               পরিকল্পনা অনুযায়ী ভালো ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করানো হলো ছেলেকে । সাথে ক্রিকেট , স্যাক্সোফোন আর ড্রয়িং এর প্রশিক্ষণ । লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ডিগ্রি লাভ হলো । তারপর সু প্রতিষ্ঠার চেষ্টা এবং অচিরেই তা পূর্ণতা পেলো । গর্বিত পিতা মাতার মুখে তখন চওড়া হাসি । ক্যালিফোর্নিয়াতে মোটা মাইনের চাকরির হাতছানি ।
                        তবে জয়েন ডেট নির্দিষ্ট হতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা । পিতৃ হৃদয়ও কেন জানিনা ডুকরে কেঁদে ওঠে । পূর্ব পরিকল্পনায় কোনো গলদ ছিল কি ? কেননা তিনি তো নিজে বাংলা মিডিয়ামে সফল এবং সুপ্রতিষ্ঠিত । তারা নিজেরাই কি নিজেদের বুক খালি করলেন না !  যাইহোক এসব প্রশ্ন এখন অবান্তর । ছেলের  সু প্রতিষ্ঠার জন্য তাকে মায়ার বাঁধন থেকে মুক্ত করতেই হবে । কিন্তু মায়ের মন যে বুঝেও বোঝেনা । ছেলেও আসরে নেমে পড়ে মাকে বোঝাতে _" ভালো চাকরি । প্রচুর স্যালারি । হাত ছাড়া করা ঠিক হবেনা মা । প্লিজ বাঁধা দিয়ো না , যেতে দাও । "
                অবশেষে রওনা হবার দিন এসে গেলো । পিতা -মাতা -আত্মীয় পরিজন সকলে মিলে রাজকীয় বিদায় জানালেন আদরের প্রিয়জনকে । রাতের বিমান আকাশে মিলিয়ে যেতেই পিতা মাতা বাকরুদ্ধ । মায়ের কান্না তখন গোঙানিতে পরিনত হয়েছে । কদিন তো একপ্রকার অভুক্ত আর অনিদ্রায় কেটেছে তাদের । তবে কিছুদিন পর  পারস্পরিক বাক্যালাপ আর vdo call এর দৌলতে অনেকটা ধাতস্থ তারা । কিন্তু মনের কোণে হতাশার পাহাড় জমতে শুরু করেছে একটু একটু করে ।
                     তবে দোষ তো আর সন্তানের নয় । কচি মাথায় কেরিয়ারের ভূত তারাই তো চাপিয়েছেন । ইংরেজি মিডিয়াম , খেলাধুলা , গান বাজনা , বিদেশ যাত্রা ..কিছুই নিজের ঠিক করা নয় । তারাই নিজের স্বপ্ন গুলোকে সন্তানের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন । নিজে যা হতে পারেননি , সন্তানকে দিয়ে তা পূরন করার ইঁদুর দৌড়ে নেমে এভাবেই নেমে পড়েন আজকের অভিভাবকরা ।যাইহোক , এখন ছেলের অনুপস্থিতি বড্ড বেশি তাড়া করে বেড়াচ্ছে তাদের । মন কি অত সব বোঝে !
                            নতুন চাকরিতে ধীরে ধীরে অভ্যস্ত হতে থাকে পুত্র সায়ক । বছরে একবার বাড়িতে আসার সুযোগ হয় । বাকিটা সময় সুযোগ অনুযায়ী ফোনালাপে । অপরদিকে অনোন্যপায় পিতা মাতা ধাতস্থ হতে থাকে একাকীত্বের জীবনে । এভাবেই কাটলো কয়েক বছর ।
                      হঠাৎ একদিন হতাশা আর বেদনার পারদটা চড়ে গেলো, ওপ্রান্তের   "IMO"তে তখন সুন্দরী বিদেশিনী রমণীর সহাস্য মুখখানি । আর ছেলে তখন গর্বিত স্বামী __"দ্যাখো তো মম অ্যান্ড ড্যাডি , কেমন হলো তোমাদের বৌমা ? বিয়েটা সেরেই ফেললাম ।সময় সুযোগের অভাবে তোমাদেরকে জানানো হলোনা । সরি । বাড়ি ফিরে পার্টি দেবো । " ওরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই অবিরাম বাক্য নিক্ষেপ ।  পিতা মাতার কেবল কম্পিত বুক আর বাঁধ ভাঙা চোখের জল । তার মাঝেও সব যন্ত্রণা ঢেকে "খুব ভালো হয়েছে বৌমা ","খুব খুশি হয়েছি রে ","কবে আসছিস বৌমাকে নিয়ে " ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি । ওপ্রান্ত থেকে এবার নিঃসংকোচ কন্ঠ " হাই মম , হ্যালো ড্যাডি । হাউ আর ইউ ? ইওর সন ইজ সো লভেবল ! ".. জোরপূর্বক হাসির মধ্যেই সমর্থিত হয় সে ইংরেজি বচন ।
                         নিজেদের পছন্দসই পাত্রী দেখে ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দেবার প্রবল ইচ্ছা আর তা অপূরণের ধাক্কা সামলিয়ে বড়সড় পার্টির ব্যবস্থা করলেন তারা , বছর দেড়েকের বিবাহিত জীবনের "নব দম্পতি "র জন্য । মনের আশ মেটাতে কোনো কিছুরই কার্পণ্য করেননি তারা ।দধিমঙ্গল থেকে সিঁদুরদান এবং মনের মতো নানা ভোজন _পদ ..সবেরই ব্যবস্থা ছিল । তবে নব "বাঙালী বধূ"র বর্ধিত অবয়ব কারও নজর এড়াতে পারেনি । আসলে ওদের জীবনে তখন নতুন অতিথি আসন্নপ্রায় ।
                   অবসরের পর সায়কের বাবার ভগ্ন শরীরটা আরও ভাঙতে লাগলো । দুশ্চিন্তা আর রোগে ধরা দেহ ক্রমশঃ পরপারে যেতে প্রস্তুত হয় । চিন্তা ভাবনা গুলো গ্রাস করতে থাকে ঋষভের মাকেও । সুগার , বি পি পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে । খুব অসুস্থতাতেও কাছে থাকার মতো কেউ নেই । আত্মীয় স্বজন খবর পেয়ে আসে , কিছুটা সময় কাটিয়ে চলে যায় । সবাই ব্যস্ত যে যার সংসারে । টাকা আছে , কিন্তু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার লোকের বড়ই অভাব । অপরদিকে নিরুপায় পুত্রও । বৌ _বাচ্চাকে নিয়ে অতিথির মতো ঘুরে যাওয়া ছাড়া তারও কিছু করার নেই । দুজনেরই অফিস আছে ।
                    বিছানায় অবসন্ন দুটি অসুস্থ  শরীর  । দুদিন রান্না হয়নি । পাশের বাড়ির বাপনকে দিয়ে চিড়ে আনিয়ে নিয়েছেন । পরিচিত ডাক্তার এসে দেবেন্দ্র বাবুর কিছু টেস্টের কথা বলে গেছেন _যেগুলি বাড়ি থেকে করানো সম্ভব নয় । বাইরে যেতে হবে , কিন্তু নিয়ে যাবে কে ?  ছেলেও তো প্রায় প্রায় আসতে পারেনা ..উপরন্তু তার "অফিসে খুব চাপ । প্রায় প্রায় যাওয়া সম্ভব নয় । এ তো আর বনগাঁ _শিয়ালদা নয় । কাউকে একটু ডেকে নাও । " বিরক্তির এই পরামর্শে অনেকটা সুস্থ হয়ে ওঠেন মা । তাই নিজের ভাইপোকে ডেকে পরেরদিনই কোলকাতার একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে ভর্তি করান স্বামীকে ।
                      কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । সেই রাতেই "নিষ্ঠুর " জীবন সাথী তাকে একা করে ওপারে পাড়ি দেন । বর্ণনাতীত কান্নায় ভেঙে পড়েন অশীতিপর বৃদ্ধা । অবশেষে ছেলে বৌ হাজির । কিন্তু অফিসের কাজ আর ভিসাগত সমস্যা মিটিয়ে প্রায় দিন দশেক পর । শ্রাদ্ধানুষ্ঠান মিটিয়ে নিয়ম ভংগের দিনই ফ্লাইট .."অফিসে খুব কাজের চাপ । "
                      তবে ফর্মালিটি মেইনটেন করতে ভোলেনি ঋষভ _"এখানে থেকে কি করবে ? আমাদের সাথে চলো । " যদিও বিদেশিনী বৌমা সে ঝামেলা পোহাতে নারাজ বলে হাত তুলে দিয়েছে । আর তাকে রাজি করানো গেলেও তিনি তার স্বামীর ঘর ছেড়ে কেনই বা যাবেন  ?
                          ...... ধীরে ধীরে বাস্তব জগতে ফিরে আসেন তিনি । কেন মানুষ সন্তান ধারন করে ! কাড়িকাড়ি টাকা খরচ করে লেখাপড়া শিখিয়ে সুপ্রতিষ্ঠিত করে , কেনই বা পরিকল্পনা করে বিদেশে পাঠায় .. তা কি শুধু গর্ব ভরে পাঁচটা মানুষকে শোনাবার জন্য ? .."আমার ছেলে অ্যাবরড থাকে । মোটা মাইনের চাকরি করে । "..বড় একা লাগে তার । কিন্তু এই একাকিত্বের জন্য তিনি বা তারাই দায়ী । তাই কারও বিরুদ্ধেই কোনো অভিযোগ নেই তার । আর এভাবেই ফলের আশা না করে অভিভাবকরা তাদের সন্তানের প্রতি কর্তব্য সম্পাদন করে যাবেন । তখনও সজল চোখে স্বামীর ফটোতে হাত বুলাতে বুলাতে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করেন তিনি ।
                 শেষ হলো ।
রাজু কর্মকার
বেড়গুম , হাবড়া , উ 24প , প :ব :
9775513785

আবদার (কবিতা ) রাম সরেন

আবদার

রাম সরেন


ওই সকালের স্নিগ্ধ বাতাসের মতো
তোমার ভালবাসার পরশে শুরু দিবস আমার,
কাঁচা মিঠে রোদের সোনালী ঝিলিকে
দেখি দুঃখ ভোলানো হাসি তোমার।

তোমার মায়াবী চোখের মায়া দেখি
পদ্মের ওই পাপড়ি মাঝে,
চাঁদের ন‍্যায় সৌন্দর্য তোমার
তাই পরিরাও লুকায় লাজে।

তোমার ওই দীর্ঘ কেশ দেখে মনে হয়
যেন বহমান নদী চলেছে মোহনায়,
সাগর যেন ব‍্যাকুল হয়ে
ডাকছে তাকে প্রতি সময়।

প্রজাপতির মতো ওই হৃদয় তোমার
যে উড়ে বেড়ায় শত বাগিচায়,
তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিও
জানি সে আগলে রাখবে আমায়।

নাম - রাম সরেন
গ্রাম+পোস্ট- পিন্ডিরা
জেলা- পূর্ব বর্ধমান
থানা- কালনা
পিন- ৭১২১৪৬
মোঃ ৯৬৭৯২৬২৪১৭


Tuesday, April 23, 2019

সবুজ ক্যাকটাস" সুজিত কুমার পাল (লাভপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ডাকঘর লাভপুর জেলা বীরভূম )

সবুজ ক্যাকটাস"
   সুজিত কুমার পাল
(লাভপুর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড
ডাকঘর লাভপুর

জেলা বীরভূম )

731303
মোবাইল 9932234330
 ********************



তুমি যখন অস্পষ্ট তারার মতো 
আমার আকাশ জ্বলে। 
অন্ধকারে সলতেটা উসকে দিই।
প্রদীপের নিচে জমাট ভাবটা থেকেই যায়। 
জোনাকিরা মিলিয়ে গিয়েছে দূর অন্ধকারে....
দুর্বোধ্য নীলিমায় খুঁজে পাই না মরূদ্যান।
অচেনা শব্দের ঝংকারে গদ্যময় কবিতার পাড়া। 
চেনা সুরে লেগেছে অচেনা মড়ক।
জানি না কি করে এড়াব তাকে।
কি করে এড়াব নিঃসীম শূণ্যতা?
কি করে সম্পৃক্ত হব সর্পিল বাঁকে? 
আজ কুয়াশার দিকচক্রবালে সবই অদৃশ্য।
তেলহীন হয়ে আসে বাতির গর্ভ... 
জানি না বাজবে কিনা মঙ্গল শঙ্খ!
তবু পথ চেয়ে রাত জাগে চোখ।
জানি না আছো কি না পুরাতন খাতে।
তবু দিন রাত্রির স্তব্ধ প্রহরে,
উন্মুক্ত থাকে দ্বার অবিশ্বাস্য বিশ্বাসে।
তবু পোড়া মন জীবন ভালোবাসো। 

Wednesday, April 17, 2019

বাঁচতে দাও

 সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।।







একটা ভুলভুলাইয়াতে ঢুকে গেছে আমাদের বোধ,
আর আমরা জীবনের সব মূল্যবান মুহূর্তগুলো
ভাসিয়ে দিয়ে কিনে আনছি মিথ্যে প্রতিশ্রুতি। বুঝতেই পারছি না এত অসূয়া,এত মিথ্যাচার
আর এত ক্রোধ কি করে দিক নির্দেশক হতে পারে!

আমরা নদী তীরের মানুষ,
আমাদের রক্তে কৃষি, আশরীর পলি,চেতনায় রবীন্দ্রনাথ, প্রজ্ঞায় নজরুল।
পলাশের পাপড়িতে আমাদের বসন্তোচ্ছ্বাস বাঁধা।
আমাদের সমস্ত সুর বাউলের একতারার
বোষ্টমীর সারা শরীরের রসকলিতে গাঁথা প্রেম।

দোহাই তোমাদের আমাদের অভিমন্যু বানিয়ে প্রবেশ মন্ত্র শিখিয়ে প্রস্থান মন্ত্রটুকু না শিখিয়ে
এমন ভুলভুলাইয়াতে ছেড়ে দিও না। জীবন তো
একটাই, তার রূপ-রস-শব্দ-গন্ধে নিবিড় ভাবে
নীরবে ডুবে থাকতে দাও। বুঝে নিতে দাও ধর্ম
আমাদের ধারণ করে কি না। ঘুলিয়ে দিও না।
বেদ-উপনিষদ-কোরান -বাইবেল-ত্রিপিটক-গীতা
থেকে তুলে নিতে দাও--মানব কল্যাণের মূল মন্ত্র।

তোমাদের দোদুল্যমান বজ্র আঁটুনি থেকে মুক্তি দাও। দোহাই তোমাদের, আমাদের বাঁচতে দাও!!


                            **********
SUDIPTA BANDYOPADHYAY.
7P/1, RAM ROAD, SARSUNA,
KOLKATA-700061.
PH.9432222463.

পলায়ন
দালান জাহান
ভিন্ন গ্রহী একজন মানুষ
গভীর রাতে রাস্তার নাক ধরে টানছে
এত আয়েশে শুয়ে আছিস কেন ?
রাস্তা রেগে গিয়ে বললো
কোথা থেকে এলে বোকা ?
সময় থাকতে শুয়ে পর রক্ত পাবি
লবনাক্ত মানুষের রক্ত।
হঠাৎ মাথায় অক্সিজেন নিয়ে
দৌড় দিল জৈবিক ক্ষুধা
সিগারেট ধরিয়ে ছুড়ে মারলো
পুড়িয়ে মারার দক্ষ শিকারি
দিনের মতো ফর্সা হলো রজনী।
ভিনগ্রহী চিন্তায় পড়ে গেল
এখানে দেখছি প্রদীপ জ্বলে না
বিদ্যুতের খুঁটি জ্বলে
মন জ্বলে না মানুষ জ্বলে
ইট জ্বলে না বিল্ডিং জ্বলে
দালান জাহান
নলুয়া সখিপুর
টাঙ্গাইল
01737421303

পলায়ন

দালান জাহান
ভিন্ন গ্রহী একজন মানুষ
গভীর রাতে রাস্তার নাক ধরে টানছে
এত আয়েশে শুয়ে আছিস কেন ?
রাস্তা রেগে গিয়ে বললো
কোথা থেকে এলে বোকা ?
সময় থাকতে শুয়ে পর রক্ত পাবি
লবনাক্ত মানুষের রক্ত।
হঠাৎ মাথায় অক্সিজেন নিয়ে
দৌড় দিল জৈবিক ক্ষুধা
সিগারেট ধরিয়ে ছুড়ে মারলো
পুড়িয়ে মারার দক্ষ শিকারি
দিনের মতো ফর্সা হলো রজনী।
ভিনগ্রহী চিন্তায় পড়ে গেল
এখানে দেখছি প্রদীপ জ্বলে না
বিদ্যুতের খুঁটি জ্বলে
মন জ্বলে না মানুষ জ্বলে
ইট জ্বলে না বিল্ডিং জ্বলে
দালান জাহান
নলুয়া সখিপুর
টাঙ্গাইল
01737421303
পলায়ন
দালান জাহান
ভিন্ন গ্রহী একজন মানুষ
গভীর রাতে রাস্তার নাক ধরে টানছে
এত আয়েশে শুয়ে আছিস কেন ?
রাস্তা রেগে গিয়ে বললো
কোথা থেকে এলে বোকা ?
সময় থাকতে শুয়ে পর রক্ত পাবি
লবনাক্ত মানুষের রক্ত।
হঠাৎ মাথায় অক্সিজেন নিয়ে
দৌড় দিল জৈবিক ক্ষুধা
সিগারেট ধরিয়ে ছুড়ে মারলো
পুড়িয়ে মারার দক্ষ শিকারি
দিনের মতো ফর্সা হলো রজনী।
ভিনগ্রহী চিন্তায় পড়ে গেল
এখানে দেখছি প্রদীপ জ্বলে না
বিদ্যুতের খুঁটি জ্বলে
মন জ্বলে না মানুষ জ্বলে
ইট জ্বলে না বিল্ডিং জ্বলে
দালান জাহান
নলুয়া সখিপুর
টাঙ্গাইল
01737421303

বাঁচতে দাও

 সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।।







একটা ভুলভুলাইয়াতে ঢুকে গেছে আমাদের বোধ,
আর আমরা জীবনের সব মূল্যবান মুহূর্তগুলো
ভাসিয়ে দিয়ে কিনে আনছি মিথ্যে প্রতিশ্রুতি। বুঝতেই পারছি না এত অসূয়া,এত মিথ্যাচার
আর এত ক্রোধ কি করে দিক নির্দেশক হতে পারে!

আমরা নদী তীরের মানুষ,
আমাদের রক্তে কৃষি, আশরীর পলি,চেতনায় রবীন্দ্রনাথ, প্রজ্ঞায় নজরুল।
পলাশের পাপড়িতে আমাদের বসন্তোচ্ছ্বাস বাঁধা।
আমাদের সমস্ত সুর বাউলের একতারার
বোষ্টমীর সারা শরীরের রসকলিতে গাঁথা প্রেম।

দোহাই তোমাদের আমাদের অভিমন্যু বানিয়ে প্রবেশ মন্ত্র শিখিয়ে প্রস্থান মন্ত্রটুকু না শিখিয়ে
এমন ভুলভুলাইয়াতে ছেড়ে দিও না। জীবন তো
একটাই, তার রূপ-রস-শব্দ-গন্ধে নিবিড় ভাবে
নীরবে ডুবে থাকতে দাও। বুঝে নিতে দাও ধর্ম
আমাদের ধারণ করে কি না। ঘুলিয়ে দিও না।
বেদ-উপনিষদ-কোরান -বাইবেল-ত্রিপিটক-গীতা
থেকে তুলে নিতে দাও--মানব কল্যাণের মূল মন্ত্র।

তোমাদের দোদুল্যমান বজ্র আঁটুনি থেকে মুক্তি দাও। দোহাই তোমাদের, আমাদের বাঁচতে দাও!!


                            **********
SUDIPTA BANDYOPADHYAY.
7P/1, RAM ROAD, SARSUNA,
KOLKATA-700061.
PH.9432222463.

পলায়ন কবিতা দালান জাহান

পলায়ন

দালান জাহান






ভিন্ন গ্রহী একজন মানুষ
গভীর রাতে রাস্তার নাক ধরে টানছে
এত আয়েশে শুয়ে আছিস কেন ?
রাস্তা রেগে গিয়ে বললো
কোথা থেকে এলে বোকা ?
সময় থাকতে শুয়ে পর রক্ত পাবি
লবনাক্ত মানুষের রক্ত।
হঠাৎ মাথায় অক্সিজেন নিয়ে
দৌড় দিল জৈবিক ক্ষুধা
সিগারেট ধরিয়ে ছুড়ে মারলো
পুড়িয়ে মারার দক্ষ শিকারি
দিনের মতো ফর্সা হলো রজনী।
ভিনগ্রহী চিন্তায় পড়ে গেল
এখানে দেখছি প্রদীপ জ্বলে না
বিদ্যুতের খুঁটি জ্বলে
মন জ্বলে না মানুষ জ্বলে
ইট জ্বলে না বিল্ডিং জ্বলে
দালান জাহান
নলুয়া সখিপুর
টাঙ্গাইল
01737421303

আবদুস সালাম এর দুইটা কবিতা



যন্ত্রণা মাপছি


আবদুস সালাম



উন্মাদনা ঘুমিয়ে গ্যাছে
 সীমাবদ্ধতার গন্ডি আষ্টেপিষ্টে বাঁধছে
 বেমালুম
অপলক ফুটপাত মুখ ভ্যাঙচায়

 পজেটিভ চিন্তার গলায় পড়েছে ফাঁস
 নপুংশক হলেই বোধ হয় উতরে যেতাম
ক্রমশঃ ভুলতে বসেছি রাস্তার গল্প

 প্রিয়জন আড় চোখে দ্যাখে
 রুট বদলে বাইপাস ধরছে সব
কুকুরের মতো রাস্তা মাপছি শুধু

যে বর্ণমালারা পাতা ছেড়ে আসতো মুখে
অভিমানে ঢুকে পড়ছে ফের পাতায়
বটের মতো ঝুরি নামিয়ে যন্ত্রণা মাপছি শুধু
-----------



 কবিতা দুই



---খেলা------


-আবদুস সালাম



ক্লান্ত অবসাদ গুলো মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

 ভিজে যায় ব্যক্তিগত সুখের বারান্দা
স্মৃতি মন্থনে উঠে আসে বিষাদ কলস
কলস ভর্তি শুধু ভ্রান্তির কয়েন

নদী জল কমে আসে
 চড়া জাগে দুষ্টু ব্রণের মতো
উচ্ছলতা গিলে খায় ভ্রান্তির অবসাদ

নি.সঙ্গ যাপনে ক্ষতবিক্ষত অন্তর
চাঁদ বাধ্য হয় অমাবস্যার কোলে মুখ গুঁজতে

রেফারী বাঁশি বাজায় খেলা শেষের
 -----------# # #

প্রিয় দিদি ভাই
 অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো নতুন বৎসরের ।সাহিত্য পত্রিকায় আপনার উদ‍্যোগে সামিল হতে কবিতা গুলো পাঠালাম ।সাহিত্যের পাতায় তাদের দেখা পেলে  খুশি হবো ।শুভেচ্ছান্তে আবদুস সালাম
 প্রয়াস ,শ্রীকান্তবাটি  মাদারল‍্যান্ড
 ডাক  রঘুনাথগঞ্জ মুর্শিদাবাদ 742225
  9734332656

উত্তর এর অপেক্ষায়

Monday, April 15, 2019

সা'দ বিন রেদওয়ান এর তিন টি কবিতা ।

মার্তন্ডের ঐক্য


সা'দ বিন রেদওয়ান





ও তপন দুল্কা তীক্ষ্ণ রওশন লাগি তৃষ্ণার্ত মুখে তাকায় তব তৃন লতা, স্পর্শ তরে প্রান্তর ঐ ঘাস অনুরাগী খোঁজে সদা তব দর্শন কৃষ্ণের পাতা।
হে ভাস্কর, নিসর্গ আজি উজ্জল তবে শিশির কন্য আদ্রতা থেকে শুষ্কতাময়, মহা আমোদে প্রান ভরে বিস্তৃত ভবে উদয়ে যে আজি শান্তির প্লাবন বয়।
দীপ্তে তোমার তটিনীর স্রোত বলন্তে নব প্রানের সঞ্ঝারে আজি মহিরুহ, তীক্ষ্ণে তব গগনের জীমূত চলন্তে নিদারুনতার বিরল চিত্তে কলহ।
সতত,তব সাথে মিলনে দিবা নিশী গ্রহ পুঞ্জ নক্ষত্র সবি আবদ্ধ রশি।
সা'দ বিন রেদওয়ান ফরিদগন্জ,চাঁদপুর
মোবা : 01745706103
& 01852917414












কোমলকাব্য


কবি সা'দ বিন রেদওয়ান

আমি কেউ নই মক্ষিকা ন্যয় ক্ষুদ্র বঙ্গ কবি,
সুদূর গগনে চিলরুপে উড়ে দেখি বাংলার ছবি।
ইশারা মনের লিখে যাই শুধু হাজারো পৃষ্ঠা ভরে, স্বপ্নের এক মহারানী রুপে সাজাই তুলে ধরে।
নিবৃতে চিত্র দেখে মোর লাগি লিখিতে যে তার ছবি, প্রবাহিত রুপ ক্ষয় করে মসি লিখেছে হাজারো কবি।
মাধুর্যে মাখা নমনীয় রুপ দৃক হীন মনুজ কেউ,
দৃষ্টিতে মোর এঁটে যায় শুধু সুশ্রী বিচিত্র ঢেউ।
শান্তির মরু প্রান্তর ভেদে আসে যে হিয়ারর মাঝে, প্রশমিত তরে ভরে দেয় প্রান ক্লেশহীনতার সাঝে।
অন্তঃকরন ভরে যায় সদা রুপ-রেখা-রেশ ধরে,
লিখে চলি সদা বাস্তব ছবি কোমলকাব্য তরে।
যামিনীকে কালি গোধূলীকে মসি বানিয়ে পরষ্পর,
অবিরাম লিখে চলে এসেছি যে চলছে লক্ষ বছর।
(সংক্ষেপিত)













নিশুতির মূর্তি

কবি সা'দ বিন রেদওয়ান.
তম নিশীর গগন রুপের সৌরভ
সুধাকর আলোর স্নিগ্ধমত্ত্ব গৌরব,
দেখিবার লাগি বারে বারে ফিরি দিকে কলুষিত মনে নাহি দেখা পাই তাকে।
শুভ্রালোকেরা নিজ চিত্তে মৃদু চলন্ত
নিশাপতিরা নির্মল শোভায় জলন্ত,
গগনের ঐ ঝুলন্ত রূপবতী তারা
দৃষ্টির লাগি মনুজ সদা দিশেহারা।
তার মাঝে তব অচেনা পরীর খেলা
দেখিবার ধীর আগ্রহে ফুরায় বেলা,
তটিনীর স্রোত দ্বিজরাজে ঝলমল
জোৎস্নার আলোয় সদা করে কল কল।
প্রাকৃতিস্থ তব গগনের রুপে দগ্ধ
বিধাতার নিরুপ সৃষ্টি শ্যমলে বদ্ধ।
সা'দ বিন রেদওয়ান
ফরিদগন্জ,চাঁদপুর
মোবা : 01745706103
& 01852917414

Sunday, April 14, 2019

কবিতা

অপেক্ষা 

আব্দুল্লাহ আল মামুন






একটুক্রো সাদা পাতায়. আষাঢ়ের স্নিগ্ধ সকালে।
 বর্ষার নির্বিত সন্ধ্যায়, মধ্য প্রভাতের মৌ মৌ জ্যোৎস্নায়। বেশে যাওয়া বেলীর গন্ধে, অনভা ছন্দে লিখিলাম কবিতায় ভালো বাসি--- হাঃ ভালো বাসি। একলা দাড়াও বাতাসে জখন, উড়িয়ে লাল শাড়ি । ভেঙ্গে শৃঙ্খল নিরব মনের নিংঢ়ানো এক মুঠো আবরীত প্রেম, বলে ভালো বাসি হা.... ভালোবাসি ভালোবাসি।
লেখা জমা দিন

Saturday, April 13, 2019


আপনি ভুলে গেছেন লেখিকা 


রুহি আক্তার
( সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি )



কোনো এক অশান্ত গ্রীষ্মের দিনে কোনো এক বিষন্ন বর্ষায়
কোনো এক অক্লান্ত শরৎ এ কোনো এক রোদেলা হেমন্তে কোনো এক ধূষর শীতে
কোনো এক মধুর বসন্তীরঙে
সে আনমনে ভাব ছিলো
আসলেই কি আপনি আমায় ভুলে গেছেন!
বছরের পর বছর পেরিয়ে
মাসের পর মাস পেরিয়ে মিনিটের পর মিনিট পেরিয়ে সেকেন্ডের পর সেকেন্ড পেরিয়ে দিনের পর দিন পেরিয়ে
সময়ের পর সময় পেরিয়ে
সে অসাময়িক দৃষ্টিতে ভাব ছিলো আসলেই কি আপনি আমায় ভুলে গেছেন!
হয়তো কতো যুগ পার হবে
হয়তো কতো সময় পার হবে
হয়তো মৃত্যু ডাক দিবে
তখন অব্দি সে ভাব ছিলো

বাবার সপ্ন (গল্প ) মো:মামুন শেখ

বাবার সপ্ন


মো:মামুন শেখ



আমি প্রত্তন্ত অঞ্চলের একজন কৃষক বাবার সন্তান।তিনি বুক ভরা সপ্ন নিয়ে প্রতিদিন ভোরে মাঠে চলে যান।তার সপ্ন গুলো যেন ফসলের মাঝে থেকে যায়।কিন্তু না!আমার ধারণা ভুল হওয়ার উপক্রম।কারণ মাঠে থাকা একটুকরো জমি ছিল তার সপ্নের ভিত্তি।যার উপর ভর করে তিনি সপ্ন দেখেছেন।সেই জমিতে যদি ফসল ভালো হয়,তার মুখটি হাসিতে ভরে ওঠে।তার এই অমৃত হাসির কারণ কি জানেন?
কারণ তিনি তার সন্তানকে লেখাপড়া করার জন্য পাঠাবেন স্কুলে।এই একটুকরো জমির উপর ভর করে।
আর তার সপ্ন কি জানেন?
তার সপ্ন একটাই।তিনি সমাজ,জাতি,দেশের জনগণকে একটি উপহার দিতে চান!
কি সেই উপহার জানেন?
উপহারটি হলো :তার প্রচেষ্টায় শিক্ষিত হওয়া সন্তান।
তিনি বলেন কি জানেন?
সে নাকি দেশের জন্য কিছুই করতে পারছে না!
তাইতো সে ভোরে মাঠে যায়।আর সন্ধ্যা রাতে ফিরে আসে।সে এটাও ভাবে,সে তো দেশের কোনো ক্ষতি করছে না!না সমাজের বোঝা মাত্র!
তিনি একদিন আমাকে ডাকলেন,বাবা কিসমত শোন তো।
আমি তার কাছে গেলাম।আমাকে তার কোলের উপর বসিয়ে কোপালে চুমু খেলেন।আমিও তার গালে চুমু খেলাম।
তখন আমার বয়স পাচঁ বছর।তিনি আমাকে বললেন তুই বড় হয়ে কি হতে চাস?
আমি বললাম তোমার সাথে কাজ করব?
তার মুখটি ভার হয়ে গেল।তিনি বললেন তুই আমার মতো না।তুই পড়াশোনা করবি।স্কুলে যাবি।তুই অনেক বড় আফিছার হবি।গ্রামের লোকেদের সেবা করবি।এই বলে তিনি আমাকে একটি প্রবাদ বাক্য শোনালেন:
"লেখা পড়া করে যে
গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে সে"
তারপর আমি যখন দিত্বীয় শ্রেণিতে পড়ি।একদিন ছড়া পড়ছিলাম:
"আমাদের দেশে সেই ছেলে হবে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে"
বাবা আমার পাশে বসে পড়া শুনছিলেন।তিনি বললেন এই ছেলে কে হবে জানিস বাবা?
আমি বললাম নাতো বাবা।
বাবা বললেন তোকেই হতে হবে সেই ছেলে।
আমি বললাম বাবা কেনো!
বাবা বললেন তোরা একুশে ফেব্রুয়ারিতে খালি পায়ে শহীদ মিনারে ফুল দিতে যাস কেনো?
আমি বললাম বাবা,যারা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে তাদের স্বরণে শহীদ মিনারে ফুল দেই।
বাবা আবার বললেন ষোলই ডিসেম্বর বিজয় দিবস বলে কেনো জানিস?
আমি বললাম হ্যা বাবা জানি।1971সালে নয় মাস যুদ্ধ করে এই দেশ ষোলই ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভ করেছে।এই জন্য16 ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালন করা হয়।
বাবা আমাকে বললেন যারা ভাষার জন্য আর মুক্তি যুদ্ধের জন্য জীবন দিয়েছে তাদের সপ্ন কি ছিল জানিস?
কেনই বাবা তারা যুদ্ধ করেছিল?
বাবা নিজেই বললেন তারা এই দেশকে ভালোবাসতো তাদের জীবনে চেয়ে বেশি।নিজের মতো করে গড়বে বলে,স্বাধীনভাবে বাচঁবে বলে। নিরিহ মানুষ গুলোকে বাচাবে বলে।
আমিও তো এদেশের নাগরিক।আমি তো যুদ্ধে অংশ নিতে পারিনি।আর তাদের জীবনের মুল্য দিতে পারব না।
তাই তাদের সপ্নটাকে আমার করে নিয়েছি।তুই পারবি বাবা আমার সপ্নটাকে পুরণ করত।
আর একটা কথা সারাজীবন মনে রাখবি।মুক্তিযোদ্ধের কখনো অসম্মান করবি না।
কারণ তারা তোর এই কৃষক বাবার থেকেও অধিক মহৎ গুণের অধিকারী ছিলেন।আর তাদের মতোই এই দেশকে ভালোবাসবি।কারণ এই দেশ তোর কৃষক বাবার থেকে বড় আশ্রয় দাতা।
Today at 2:20 AM · Sent from Messenger
Sheike Mamun Hossen
মো:মামুন শেখ
পাবনা কলেজ,পাবনা

কবিতা 



খুঁজেছি কতো পর্বতের চুড়ায়, খুঁজেছি তোমায় -- মেঘের অনন্যায় বৃষ্টির ফোটায় ফোটায়।
 খুঁজেছি রংধনুর অন্তরালে, থমকে পড়া নিঝুম রাতে --কিংবা ফাল্গুনের নিরালা দুপুরে।
 খুঁজেছি তোমায় শারাবের গ্লাসে গিটারের মাতাল সুরে, খুঁজেছি কতো গাংচিলের ডানায় ডানায়।
ঝর্নার অবলিলায়।
আমিতো কেবল ধুলোয় ঢাকা পুরোনো পাতায়,
তুমি আছো ছন্দে আমার আছো কবিতায়।

Wednesday, April 10, 2019

উত্তাল মেঘ ( কবিতা ) মো: মামুন শেখ

উত্তাল মেঘ

মো: মামুন শেখ




চারিদিকে উত্তাল মেঘ
ঘন কালো আকাশ
রক্তের আভায় কৃষকের চোখ,
পশ্চিমের দ্বার বেয়ে
আসছে ঝড়ো হাওয়া ধেয়ে।
তারা-হুড়া করেও তারা
বারবার তাকায় আকাশ প্রাণে,
এই বুঝি এলো প্রলয়
গুছিয়েনে থালা-বাটি বলয়।
বইছে যে ঝড়ো হাওয়া
ছিনিয়ে নেয় আমার চাওয়া
থাকো যদি একটু দূরে
যেতে পারি ঘরে ফিরে
সপ্নটারে সঙ্গে করে।
বিধি তুমি সপ্নের প্রতি
দিয়েছো মনে সপ্ন বুনে,
তবে কেনো মেঘের পাহাড়
ঝড়-বৃষ্টিতে হয় যে লোকসান।
শিলা বৃষ্টি পাথর ছুরে
মারছে তীর সপ্নের বুকে
যাই কেমনে ঘরে ফিরে
না নিয়ে সপ্নটারে।


মো: মামুন শেখ একাদশ শ্রেণি। পাবনা কলেজ,পাবনা।