Saturday, April 27, 2019

বিষয়: বাংলা বর্ষবরণ 1426 বিভাগ: গল্প গল্পের নাম: নৃত্যনাট্য লেখক: কবিরুল

বিষয়: বাংলা বর্ষবরণ 1426
বিভাগ: গল্প
গল্পের নাম: নৃত্যনাট্য
লেখক:  কবিরুল 






   15/04/19
     বালুরঘাটের যুবশ্রী মোরে তাতাইকে মেসটা পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। তবে এখানে আড্ডা মারার লোক তেমন নেই। মেসের ছেলেরা সবাই নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। তাতাইও একা একা থাকে। মেসে একমাত্র চাকুরীজীবী তাতাই। অফিস থেকে ফিরে ওর কেমন সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগে।
   যদিও বেশ কিছু বছর আগে বিদিশা ছিল। তখন জীবনটা ছিল অন্যরকম। বিদিশা অনেক কিছুর খেয়াল রাখত। উৎসবের দিন গুলো বিশেষত বাংলা বর্ষবরণ, হোলি , পুজো বিদিশার সাথে ভালই কাটত। তাতাইয়ের জীবনে ও  একটা ছন্দ এনেছিল। ওর জীবনের মানেটাই পুরো বদলে দিয়েছিল। আজ বিদিশা নেই। তাই নিজের মন, মুখটাও কেমন বোবা হয়ে গেছে।
    তবে মেসের সামনেই একটা বৃদ্ধাশ্রম আছে। বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের তাতাই দেখে আর ওর খুব কষ্ট হয়। কারণ ওদের দেখলেই তাতাইয়ের দাদু ঠাকুমার কথা মনে পড়ে। তাতাই নিজে কোনদিন ওদের দেখেইনি। ওর জন্মের আগেই উনারা অমৃতলোকে চলে গেছেন।
    আজ তাতাই বৃদ্ধাশ্রমে ছুটে গেছে। কারণ একজন অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ইমিডিয়েট ডাক্তার ডাকার দরকার ছিল তাই। একদিন ওখানে গিয়েই তাতাইয়ের বেশ ভাল লাগে ওখানকার পরিবেশ। সবাই কেমন আপণ করে নিয়েছে ওকে।
    তাতাই একটা সময় কাটানোর ভাল পরিবেশ পেয়েছে ওখানে। একটা প্রাঞ্জল ভাব রয়েছে ওখানে। বৃদ্ধাশ্রমে গেলেই মন ভাল হয়ে যায়।
    কদিন পরেই তো বাংলা নববর্ষ। ঐ দিন সবাই কেমন দামী পোষাক পড়ে ঘুরে বেড়াবে আনন্দ করবে। তাতাইয়ের মনটা তাই ভীষণ খারাপ। নববর্ষ আসলেই আকাশে বাতাসে একটা প্রেম প্রেম গন্ধ পাওয়া যায়। মনের গোপণ গহ্বরে যেন প্রেমের মৃদঙ্গ বেছে ওঠে। এমনিতেই বৈশাখ মাস মানেই রবি ঠাকুরের জন্ম মাস। তাই নববর্ষের দিন রবি ঠাকুরের গান কবিতা একটা আলাদা মর্যাদা পাই। পাঞ্জাবী আর পাট ভাঙ্গা শাড়ির সুতোই সুতোই যেন রবীন্দ্র চেতনা আল্পনা এঁকে যায়। 
    " বন্ধু হও, শত্রু হও ,
    যেখানে যে কেহ রও ,
    ক্ষমা করো আজিকার মতো
    পুরাতন বরষের সাথে 
    পুরাতন অপরাধ যত। "
   পুরানো দিন গুলো মনের অলিন্দে আজ তাতাইয়ের বড্ড ভিড় করছে। প্রতি বছর নববর্ষে ও আর বিদিশা একসাথে ছবি তুলত। মুভি দেখতে যেত। কবিতা , গল্পের নতুন নতুন ম্যাগাজীন বের করত। একসাথে কত আড্ডা , খুনসুটি।
    এই তো বেশ কিছু বছর আগে সেদিনও বিদিশা ছিল ওর জীবনে , মননে , চিন্তনে। দুজনে একসাথে বাংলা বর্ষবরণের দিন বোলপুর , শান্তিনিকেতন ঘুরে এল। সন্ধ্যে হয়ে আসলে দুজনে হাত ধরাধরি করে কোপাই নদীর তীরে হেঁটেছিল। মাদলের তালে মিলিয়েছিল পা। সেদিন চাঁদের রূপালী অহংকার ঝরে ঝরে , চুয়ে চুয়ে  পড়ছিল বিদিশা আর তাতাইয়ের  সারা শরীর বেয়ে। পরে সন্ধ্যে একটু গাঢ় হতেই বিদিশা তাতাইয়ের ক্লান্ত শরীরে গা এলিয়ে দিয়ে গুণ গুণ করে গেয়েছিল কবিগুরুর গান।  
   সেবার সোনাঝুরি থেকে ভাল ভাল জিনিস ওরা দুজনে কিনেছিল। বিয়ের পর ওদের নিজেদের ঘর সাজাবে বলে। তাতাই একটা দামী শাড়ি বিদিশাকে কিনে দিয়েছিল। আর বিদিশাও সোনার বাংলা হোটেলে একটা সুন্দর ডিনার দিয়েছিল। তাতাইয়ের আজও মনে আছে হোটেলে টেবিল নেওয়া নিয়ে এক দম্পতির সাথে বিশাল ঝামেলা হয়। পরে ওরা জানতে পারে ঐ দম্পতি বিদিশার কলেজ মেটের পেরেন্টস্। হোটেলের আলু পোস্তর স্বাদটা আজও তাতাইয়ের ঠোঁটে লেগে রয়েছে।যেমন লেগে রয়েছে তাতাইয়ের পাঞ্জাবীতে বিদিশার রঙীন , দামী লিপস্টিকের ছোঁয়া
  তবে তখন একটা আলাদা সুখ ছিল। তাতাই চাকরি পাইনি। টিউশন করত। বেশ হেসে খেলে দিন গুলো কেটে যেত। একটা ছন্দ ছিল জীবনের। বিদিশাকে কথা দিয়েছিল চাকরি পেলেই বিয়ে করবে।
    পুরানো দিন গুলো ভাবতে ভাবতে তাতাই অনেকটা সময় ব্যয় করল। নববর্ষের দিন একটা কিছু করার পরিকল্পনা ওর মাথায় ঘুরছে। বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের নিয়ে একটা কিছু করতে হবে। এমন কিছু যা ওদের মনে সারাজীবন দাগ কেটে যায়। ওরাও যেন কিছুটা আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। ওদের জন্য নতুন বছরের প্রথম দিনে কিছু করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবে তাতাই।
    বিদিশা ভালবাসলেও  তাতাইয়ের জীবন থেকে পরে চলে যায় পুরোপরি। ঈশান ওর জীবনে আসাতেই বিদিশা কেমন পালটে যায়। ঈশানের ফিউচার তাতাইয়ের থেকে অনেকবেশী উজ্জ্বল। বড় বিজনেসম্যানের ছেলে। বাড়ি , গাড়ি কোন কিছুর অভাব নেই। কলকাতাতেই গোটা পাঁচেক ফ্ল্যাট দিল্লীতেও বাড়ি আছে।    
    প্রতি বছর পয়লা বৈশাখের দিন সন্ধ্যায় বিদিশাদের পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। ওখানে বিদিশা নাচ করত। আর তাতাই আবৃত্তি করত। সব শেষে নাটক দিয়ে শেষ হত অনুষ্ঠান। সেই সাথে চলত দেদার আড্ডা আর খাওয়া দাওয়া। সব কিছু পরিচালনার দায়িত্বে ছিল তাতাই। সেদিন ওর হিমগ্লোবিনে লোহিত রক্তকণিকা ছুটে ছুটে বেড়াত। সবাইকে নিয়ে কেমন যেন হৈ হৈ করে মেতে থাকত।
    আর সকালে তাতাই নিজের পাড়াতেও বর্ষবরণের আয়োজন করত। সুন্দর করে প্রভাতফেরী বার করত। তারপর গান , বাজনা , ছবি আঁকা আরো কত কি! সকাল থেকে অনুষ্ঠানের যেন বিরাম নেই। পাড়ার সকলে জড় হত সেখানে। কচি কাচারাও থাকত।
   আজ সেইসব দিন বড্ড ঝাপসা লাগে তাতাইয়ের। তবু মনের কোণে কোথাও যেন একটা হালকা মাদল আজও বাজে নববর্ষের। অনেক দূর থেকে তাতাই যেন একটা বর্ষবরণের ডাক শুনতে পাই। কে যেন ডাকছে পরম আদর আর আবেগে। কে যেন প্রদীপ জ্বালার আগেই সলতে পাকাতে শুরু করেছে। একটা শাড়ির খসখস শব্দ তার পাঞ্জাবীতে যেন বোহেমিয়ান শিহরণ তুলছে।
   অফিস থেকে আজ তাড়াতাড়ি ফিরেছে তাতাই। বৃদ্ধাশ্রমের এক আবাসিক আমের আঁচার বানিয়েছিল। তাতাইয়ের জন্য পাঠিয়েছে। আমের আঁচার খেতে ওর পুরানো দিন গুলো আবার মনে পড়ে যাচ্ছিল। একবার বর্ষবরণের সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঝড় হয়েছিল। আর সেই সাথে আম্রবৃষ্টি।
    তাতাই ক্যালেন্ডার দেখল। নববর্ষ এখনও দিন পনেরো কুড়ি দেরী আছে। বিকেলের  একটু আগেই বৃদ্ধাশ্রম থেকে রবীন্দ্র সংগীতের সুর ভেসে আসতে শুনল। রবি ঠাকুরের গান শুনলে তাতাই যেন কোথায় হারিয়ে যায়। বিদিশার কথা মনে পড়ে। তাতাই কাকাদের মুখে শুনেছে ঠাকূমা দাদু বর্ষবরণের দিন বাড়িতে নাচ গানের আসর বসাত। আর বাড়ির সকলে সেখানে মেতে উঠত। খুব মজা হত।
    তাতাই আর দেরী না করে মাউথ অর্গানে দুবার ফুঁ দিল। অনেকদিন বাজায়নি ওটা। সেই শেষ কবে বাজিয়েছে মনে করতে পারেনা। তাতাই বুঝল এবার ওটার সময় এসেছে বাজানোর।  তাতাই আর দেরী না করে মেসের সকল ছেলেকে নিয়ে ছুটল বৃদ্ধাশ্রমে। 
    বৃদ্ধাশ্রমে সকল আবাসিক আর পাড়ার ছেলে মেয়েদের নিয়ে তাতাই আর ওর মেসের বন্ধুরা সকলে মিলে ঠিক করল বর্ষবরণ পালন করবে। সকলে শুনে এক কথায় রাজী। আবাসিকদের ভাঙ্গা চোরা মনে যেন প্রেমের মাদল বেজে উঠল। মনেতে খুশীর উপচে পড়া পারদ।
    সব কিছুর রিহার্সালের দায়িত্বে ছিল তাতাই আর ওর মেসের বন্ধুরা। বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের মধ্যেও যেন একটা রঙীন বসন্তের বসন্তের ছোঁয়া আসল।
    তাতাইরা ঠিক করেছে পয়লা বৈশাখের দিন  সন্ধ্যায় দুটি নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করবে একটা " চণ্ডালিকা " আর একটা " চিত্রাঙ্গদা "। ঐ দুটি বিদিশার খুব প্রিয় ছিল। আশে পাশের ফ্ল্যাটবাড়ির বৌদিমণি, দিদিমণিরাও রাজী। এক বিশাল কর্ম যজ্ঞ।
    এ কদিন তাতাই অফিস থেকে রোজই তাড়াতাড়ি ফেরে আর অনুষ্ঠান নিয়ে মেতে ওঠে। সব কিছু খুঁটিয়ে দেখছে তাতাই। যাতে কোথাও কোন খুঁত না থাকে। হাতে সময় এখন কম। মাত্র তিন দিন বাকি।
    মঞ্চটাও বেশ ভাল সাজিয়েছে। সাউণ্ড সিস্টেমও বেশ সুন্দর।
    রাত পোহালেই নববর্ষের নবীন ভোর উন্মোচিত হবে। আর আবাসিকদের মনেও ছড়িয়ে পড়বে নতুন ভোরের কমলা আবীর।
    আজ বাংলা নববর্ষ। বহুদিন পরে পয়লা বৈশাখের স্বাদ পেতে চলেছে তাতাই। বৃদ্ধাশ্রম ফুল আর আলোয় সুচারুভাবে সেজে উঠেছে। তাতাই আজ সবুজ রং এর একটা পুরানো পাঞ্জাবী পড়েছে। যেটা বিদিশা ওকে কিনে দিয়েছিল। পাঞ্জাবীর সুতোই ধরা পড়ছে পুরানো প্রেমের উপপাদ্য। বর্ষবরণের পরশ। আজ বারে বারে বিদিশা ফিরে ফিরে আসছে। চোখের জলটাও টপ টপ করে পড়ছে তাতাইয়ের।
    সকালেই শুরু হল উদ্বোধনী সংগীতের মাধ্যমে প্রভাত ফেরী। তারপর রবি ঠাকুরের গান আর কবিতা পাঠ। এরপর শুরু হল বক্তৃতা - " বাংলা নববর্ষ নিয়ে মানুষের আবেগ ও চিন্তাধারা "।  সকাল থেকেই চলছে হরেক রকম অনুষ্ঠান। একদম দম ফেলার সময় নেই। আজ বারে বারে তাতাইয়ের ঠাকুমা দাদুরাও ফিরে ফিরে আসছে।
    দুপুরে বেশ ভালই জমল ভুরিভোজ। সবার মুখে উপচে পড়ছে হাসি। আজ বহুদিন পরে তাতাই বাঙালী খাবারের স্বাদ পেল।
    সন্ধ্যায় শুরু হল বহু কাঙ্খিত নৃত্য নাট্য। বৃদ্ধশ্রমে পা রাখার জায়গা নেই। বাইরের আশেপাশের পাড়া থেকেও অনেকে জমায়েৎ হয়েছে। তাতাই নিজেও নৃত্যনাট্যে অংশগ্রহণ করেছে। আজ সত্যিই একটা মনোজ্ঞ স্বর্ণালী সন্ধ্যা পরিবেশন করতে পেরে তাতাই আর ওর মেসের বন্ধুরা তৃপ্ত।
     " চণ্ডালিকা " বহুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তাতাই নিজে এখানে ভিক্ষুকবেশী সন্ন্যাসীর পাঠ করেছে। 
  " ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না ছুঁয়ো না
    ও যে চণ্ডালিকা
       ..... .....  .....    "।
    সংলাপ শুরু হতেই তুমুল হাততালিতে গোটা চত্বর ফেটে পড়ল।
    আজ " চণ্ডালিকা " নৃত্যনাট্যে তাতাই যেন নতুন করে বিদিশাকে আবিষ্কার করল।
    আজ তাতাইয়ের মনে হল একটা বর্ষবরণ সে করতে পেরেছে। আজ পুরানো দিনের স্মৃতি গুলো ওকে অনেকটা অক্সিজেন জোগাল।
    রাত গভীর হতেই তাতাই দেখল সবাই ঘুমিয়ে গেছে। চারিদিক নিস্তব্ধ। বাইরে ঝিরঝিরে বৈশাখী বাতাস বইছে। বাঁকা চাঁদটা আকাশে একাই রাজত্ব করছে।
    তাতাই ছাদে উঠে মাউথ অর্গানে জল ভরা চোখে ফুঁ দিল। আজ বিদিশার কথা রিয়েলি বড্ড মনে পড়ছে তাতাইয়ের। কারণ আজ সমগ্র অনুষ্ঠানে বিদিশা না থেকেও যেন সাবলীল ভাবে বিদ্যমান। কোথায় যেন একটা ছায়ার মতন ও সব সময় তাতাইয়ের পাশে পাশে ছিল আজ। তাইতো অনুষ্ঠানটা সাফল্যমণ্ডিত হল। 
    ও আজ অনেক দূরে তারার দেশে চলে গেছে। ঘুমিয়ে আছে। আর কোন দিন ফিরবে না।
  অনেক কষ্টে বিদিশার ঠিকানা জোগাড় করে সকালে বিদিশাকে ইনভাইট করতে গিয়ে দুঃসংবাদটা তাতাই পাই। বিদিশা গত বছর এই নববর্ষের দিনেই দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায়। আর আজ তার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী।
    অনেক কষ্টে চোখের জলটা মুছে তাতাই মাউথ অর্গানটাতে সুর দিল - 
    " এসো হে বৈশাখ
    ....   ....  ....  "
    তাতাই দেখল ঐ সুর বিদিশাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলছে। ও গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। তাতাইয়ের মধুর সুরে যেন ভেসে বেড়াচ্ছে সারা আকাশে চাঁদের রূপালী আলো, অহংকার মেখে। 
    তাতাই অশ্রুসিক্ত নয়নে সত্যিই আজ দেখতে পাচ্ছে বিদিশা ওর কিনে দেওয়া শাড়িটা পড়ে, খোলা আকাশের বুকে, তারা ফোটা মঞ্চে নৃত্যনাট্য করছে পরম আনন্দে আর তৃপ্তিতে।
    বিদিশা সেই দিনও ছিল ওর পাশে। নববর্ষের সন্ধ্যায়,  কোপাই নদীর তীরে , চাঁদের রূপালী আলোর বন্যায় ভেসে। 
    আজও তাতাইয়ের সুরে সুরে দূর আকাশের তারাদের ভিড়ে সে এক মায়াবী কোপাই নদীর পাড় ছুঁয়ে ছুঁয়ে হেঁটে যাচ্ছে। নৃত্য করছে। নিজের চেনা ছন্দে , দুলে দুলে।

মো: 9932958615
85, Kalibari Road Nalta
Near Air Port Auto Stand
Kolkata : 700028

No comments: