Monday, July 15, 2019

প্রবন্ধ




লিখে রাখা কথাগুচ্ছ

রুদ্র সুশান্ত





আগেরকার দিনে গ্রামগুলো ছিলো ছবির মতোন, আর আজকাল গ্রামগুলোতে হিংসার প্রতিচ্ছবি,  মুহূর্তে মুহূর্তে হিংসার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে। নেভানোর চেষ্টা  কেউ করেনা বরং বর্ণচোরার মতোন মুখ লুকায়ে সবাই সেই জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালতে চায়, আবার কেউ কেউ পর্দার অন্তরালে থেকে উস্কানি দেয়। মানুষের চরিত্র বুঝার উপায় নেই। মানুষ ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র সময় সময় উন্মোচিত করে, পৃথিবী মানুষকে প্রাপ্য দিলেও মানুষ পৃথিবীকে প্রাপ্যটা দিতে বড্ডোই কৃপণতা করে। গ্রামগুলোতে বর্তমানে এমোন লোকের ভিড়ই বেশি, ভালো লোক নগণ্য আর এই নগণ্য সংখ্যারা-ই নির্যাতিত। 
এখানে সমাজপতি থেকে রাজনীতিবিদ,  ধর্মগুরু থেকে শিক্ষাগুরু সকলেই কেবল সু্যোগের অপেক্ষা করে। সুযোগ পেলেই ছোঁ মেরে সে সুযোগ নেয়, সুযোগ না পেলে চিপাচাপায় থেকে সুযোগ নিতে চায়। বড্ডো অসহায়ের  থাকে   গ্রামের সাধারণ জনগণ।  আর আজকাল ধর্মতন্ত্রীরা ধর্মের চে' পরনিন্দার চর্চা অধিক করে, এই নিয়ে কেউ দ্বিমত করলে তাঁকে দ্বিমত করার স্বাধীনতা আমি দিলাম তবে আমার তথ্য অসত্য নয়।  সাম্প্রতিককালের বহু উদাহরণ আমি দিতে পারবো, লেখাটা অনর্থক দীর্ঘায়িত করার অভিপ্রায় কম বলে আজ লিস্ট দিলাম না। 

আমাদের সোনার গ্রাম গুলোতে খুঁজলে এখন আর সোনা পাওয়া যাবে না। কারণ ধর্ম আমাদের কাছ থেকে মিলনাত্মক সোনা কেড়ে নিয়েছে, কারো ধর্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলার অধিকার আমি সংরক্ষণ করিনা, তবে আমার কথা আমি বলতে পারি সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই বলা। 

আগে বেশ মেলা হতো গাঁ'য়ে, লোকসমাগম হতো, কিন্তু এখন তেমনটা আর নেই, পাছে ধর্ম যাবার ভয় আছে। বাউলে মেলাকে বিতর্কিত করা হচ্ছে যদিও বাউলরা বাঙলির অস্তিত্ব বহন করে। আরো বহু মেলা অশ্লীলতার তকমা লাগিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একটি মেলা সব ধর্মের লোকদের একত্রিত হবার সু্যোগ করে দেয়। কিন্তু এখন মেলাগুলো তেমন আর দেখা যায় না। এমনকি  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পয়েলা বৈশাখের মঙ্গল শোভা যাত্রাকে শিরক ঘোষণা করতে একদল মুখোশধারী ধর্মতান্ত্রিক সদা উদ্যত। 

এখন গ্রামে যা চলে তা হলো সোজা বাঙলায় কামড়াকামড়ি। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে হিংসার বহুমাত্রিক বিকাশ ঘটেছে। আগেরকার সেদিনের মতোন "মানুষ ছিলো সরল" স্লোগান এখন মিথ্যা। বাপ-চাচারা এখন আর একসাথে বসে খাওয়া দাওয়া করেনা,  বাপ-চাচাদের ভিতর কোন্দল লাগিয়ে সুবিধা নিচ্ছে তৃতীয় কোন পক্ষ।  আর গ্রামে রাজনীতি আজকাল পঁচে গেছে। যারা রাজনীতি বানানটাও ঠিকমতো জানেনা, যাদের কোন আদর্শ নেই, যাদেরকে রাজনীতি কেন করেন জিজ্ঞেস করলে কোন উত্তর প্রদান করতে পারবেনা কিংসা যে দলের সমর্থক বা নেতা সে দলপতির আদর্শ এবং আদর্শিক দিক আদর্শগত দু'টো বাক্যও বলতে পারবে না তারা সবাই এখন গাঁ'য়ের নেতা (অবশ্য নেতা হতে এসবের অত্যবশকীয় কোন ধরা বাঁধা নিয়ন নেই, তবুও তো কোন না কোন কারণ থাকা চাই)।  
আর এসব নেতাদের দ্বারা নিয়মিতভাবে দলিত হচ্ছে গ্রামের দুর্বল সম্প্রদায়,  তিনবেলা খেয়ে শান্তিতে ঘুমাবো সেসব দিন এখন আর গ্রামে নেই, আপনি শান্তিতে থাকতে চায়লেও কেউ না কেউ আপনার উপর অশান্তিরজল  ছিটাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে আছে, তাদের নাকের ডগায় মাছি উড়লেও আপনি দোষী। এমনি তাদের বাড়ীর বউ পুকুরপাড়ে পা মছকালেও নিরীহ সম্প্রদায় দোষী। 

আর মাস্তানদের উপদ্রব তো বর্ণনাতীত।

আমাদের গ্রাম আমি জন্ম থেকে যা দেখেছি এখন আর তা নেই, হয়তো আপনাদের গ্রামেও। নেই কোন খেলার মাঠ, ছেলেরা বিকেলবেলা দল বেঁধে খেলতে যায়না, মেয়েরা দলে দলে কানামাছি খেলে না,একদল অবাধ্য বালক ধূলা উড়ায় না। আমরা জোছনার রাত্রিতে খড়ের গাধায় লুকোচুরি খেলতাম।  এখন ওসব গ্রামে আর নেই। পাড়ায় পাড়ায় ইট কংক্রিট আর লোহার দালান,  ছেলেমেয়েরা পড়তে যায় ঠিকই কিন্তু আর খেলতে যায়না। এই সময়টাতে তারা কেউ কেউ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত আবার কেউ কেউ নীল জগতে আবার কেউ কেউ দালালের ফাঁকফোকরে ছারপোকার মতোন লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করে। বাল্যকালের সে প্রম হয়ে দাঁড়ায় পরবর্তীকালের হতাশার কারণ। 

আমার গ্রামকে আমি এখন আর খুব কাছ থেকে দেখতে পাই না, দেখতে পাই কিছু পশু আর কিছু মানুষ।  আশ্চর্য হলেও সত্য পশুগুলোও দেখতে মানুষের মতো। তাই বলে মা মাটি আর গাঁ'য়ের প্রতি আমার প্রেম কমে যাইনি। আকাশসংস্কৃতি আর নীল জগতের কথা পরের অনুচ্ছেদে লেখার ইচ্ছা আছে। 

শিক্ষিত জনসংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু শিক্ষিত মানুষ বাড়েনি। জনসংখ্যা রাত্রির নিস্তব্ধ খেলায় বাড়ানো যায় কিন্তু প্রকৃতি বড়ই নিদারুণ, রাত্রির খেলায় মানুষ বাড়ানোর ক্ষমতা  প্রকৃতি দেয়নি।  মানুষ  হতে হয় ধাপে ধাপে, অনেকগুলো জীবনের স্তর পার করে মানুষ হতে হয়।

সকলের গ্রাম আবার সোনার মতোন হোক, ভালোবাসা হোক গ্রামের অন্তঃস্থলের পাথেয়। 


১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ইং

কবিতা







মানুষ গাছ ও নদী



অভ্রনিলয় বসু







চেনা মানুষগুলো খুব সহজেই
অচেনা হয়ে যায় । কষ্ট হয়না ,
ভয় হয় । নিজের প্রতি আস্থা হারায় । 

মানুষ গাছ হতে পারত , দাঁড়িয়ে 
থাকত । মেলে দিত শাখা প্রশাখা
শুন্য আকাশে । একই ভাবে অন্য 
গাছের মতো । তবু বদলে যেতনা । 
হাজারের মাঝে ঠিক চিনে নিতাম ।

আমিও রোজ বদলে যাচ্ছি ।
পাহাড়ের চূড়ায় জমে থাকা অভিমান 
গোলে নদী হয়েছি । স্রোতে ভাষার 
শব্দে অনেকেই আনন্দের সুর 
খুঁজে পায় । আমার চলার শেষ নেই ।
নাম বদলায় এক এক মানুষের কাছে ।

অচেনা মানুষের কাছে আমিও
সেই অচেনা মানুষ , ব্যতিক্রমী নই ।



অভ্রনিলয়  বসু

বিবেকানন্দ আপার্টমেন্ট
রাজা রাম মোহন রায় রোড
পূর্ব বিবেকানন্দ পল্লী
রবীন্দ্র সরণি
শিলিগুড়ি - ৭৩৪০০৬

Tuesday, July 9, 2019

কবিতা

"মানবিক"

         ঝন্টু দাস




চাই না কোন নোংরা খেলা;
শুনতে চাইনা নষ্ট মন গুলো,
সুন্দরের ধ‍্যানে মগ্ন হয়ে
নিজেকে নিঃশেষ করে
ছড়িয়ে দিতে হবে প্রতিটি হৃদয়ে
প্রতিটি দুঃখকে ভালোবাসার স্নেহে;
ফুটিয়ে তুলতে হবে এক কাব‍্য বাগিচা।
শুধু তাই নয়-
ছোট শিশুটি যখন ধর্ষিত হয়,
গৃহবধুর সর্বাঙ্গে মদ‍্যপায়ী স্বামীর
অগনিত আঘাতের চিহৃ,
এখোনো বৃদ্ধ বাবা মায়ের বুকে আঁচড় দেয়
একবিংশের হিংস্র নেকড়েগুলো-
বিপ্লবের মশাল হাতে দাঁড়াতে হবে
সেই সকল বিপন্ন মানবতার পাশে,
মুক্তির জন‍্য তুলতে হবে আওয়াজ।





কবি পরিচিতি : 

নাম - ঝন্টু দাস
ঠিকানা - 
গ্রাম + পোষ্ট - মেনকাপুর,
থানা - দাঁতন,
জেলা - পশ্চিম মেদিনীপুর, 
পিন নং - ৭২১৪৩৫
রাজ‍্য - পশ্চিমবঙ্গ

কবিতা



কবিতা :- আজব  প্রাণী


লেখক :মেহেদী  হাছান মোল্লা


দুর্মতি  কুমতি  মগজের  অধোগতি,

রঙ  মেখে  সং  সেজে  করে  ভণ্ডামি।

রঙিন  ভুবন রঙিন  মানুষ,

নিত্যনতুন  পরে  মুখোশ।

আপন  সেজে  বক্ষ  ছিঁড়ে,

বিশ্বাসের  চরম  মূল্য  দেয়  শেষে।

মায়ার  জালে  বন্দি  হয়ে,

অশ্রু  জল  সদাই  করে।

সকল  প্রাণি  পোষ  মানে,

মানব  শুধু  সুযোগ  খুঁজে।

ভুবন  গ্রহের  আজব  প্রাণী, 

হাজার  জনের  হাজার  ছবি!

( স  মা  প্ত )

গল্প




















মিউজিক্যাল চেয়ার

                                       জয়দেব সাঁতরা

================================================

      ঘোষক মাইকে ঘোষনা করে চলেছে– ভারত মাতা প্রতিবাদী সংঘের পরিচালনায় সারাদিনব্যাপী যে ক্রীড়া এবং সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা চলছে তা শেষ পর্বে এসে পৌঁছেছে। এই পর্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতাটি হল– সর্বসাধারণ মহিলাদের জন্য মিউজিক্যাল চেয়ার। অংশ গ্রহণকারী মহিলাদের অতিসত্বর ক্রীড়া প্রাঙ্গণে উপস্থিত হওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
                মাইকে ঘোষণা শুনে মেয়েরা একে একে ক্রীড়া প্রাঙ্গণে উপস্থিত হতে থাকে। এই একটা দিন তারা মিউজিক্যাল চেয়ার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে খুব আনন্দ পায়। নিস্তরঙ্গ গ্রাম্য জীবনে তাদের অন্তরে খুশির ঢেউ ওঠে। এই দিনটার জন্য তারা সারা বছর মুখিয়ে থাকে। বৃত্তাকার ট্রাকে সারি সারি করে সাজানো চেয়ারগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে পুরস্কার জেতার জন্য মনে মনে সংকল্প করে। তারা অধীর আগ্রহে মিউজিক বাজার জন্য প্রতীক্ষা করে।
              অবশেষে পড়ন্ত বিকালে শুরু হয় মিউজিক্যাল চেয়ার প্রতিযোগিতা। অস্তাচলগামী সূর্যের শেষ রশ্মি টুকু গায়ে মেখে মেয়েরা মিউজিকের তালে তালে বৃত্তাকার ট্রাকে ঘুরতে থাকে। মিউজিক থামার সঙ্গে সঙ্গে এক এক করে প্রতিযোগিনীরা খেলা থেকে ছিটকে যেতে থাকে। ছিটকে যাওয়া প্রতিযোগিনীরা হতাশ হয়ে অন্যের খেলা প্রত্যক্ষ করে। আর টিকে থাকা প্রতিযোগিনীরা  নতুন উদ্যমে খেলতে থাকে। জমে ওঠে প্রতিযোগিতা।
               অদূরে দাঁড়িয়ে ভূদেব প্রত্যক্ষ করে এই খেলা। খেলা দেখতে দেখতে আনমনা হয়ে পড়ে সে। কত কথায় তার মনে পড়ে স্মৃতির ক্যানভাসে। ভেসে ওঠে জপার মুখ। মিউজিক্যাল চেয়ার খেলতে খুবই ভালবাসত সে। অথচ ঈশ্বরের দুনিয়ায় ঠাঁই হলো না তার ।অকালে চলে যেতে হল তাকে। মিউজিক্যাল চেয়ারের দুনিয়া থেকে চিরতরে ছিটকে পড়ল সে ।
            ভূদেব এর বয়স তখন কতই আর হবে,সবে বিয়ে হয়েছে তার জপার সঙ্গে। চাকুরীরত ভূদেবের শ্বশুরবাড়িতে খাতির ছিল খুব ।চার ভাইয়ের এক বোন। বাড়ির একমাত্র জামাই সে। ফলে আদর-যত্নের কোন অভাব ছিল না।
             ভূদেব এর মনে পড়ে জপার মিউজিক্যাল চেয়ার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের কথা। ফাগুনের এগারো, বারো, তেরো–এই তিন দিন ধরে তার শ্বশুরবাড়ির গ্রামে বসে পীরের মেলা ।এই মেলায় পাশাপাশি চার পাঁচ খানা গ্রাম রীতিমত উৎসবের আনন্দে মেতে ওঠে। মেলা প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে হিন্দু-মুসলমানের মিলন স্থল। যদিও এটি পীরের মেলা, তবুও এই মেলার সমস্ত দায়– দায়িত্ব পালন করেন হিন্দু মুসলমান সকলেই। সাম্প্রদায়িক হিংসা বিদ্বেষ তাদের কাউকে স্পর্শ করতে পারেনি। হিন্দু মুসলমানের সম্প্রীতির জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠে এই পীরের মেলা।
           মেলার কদিন বাড়ি বাড়ি ভরে ওঠে কুটুম আত্মীয়-স্বজনদের সমাগমে। মেলাকে কেন্দ্র করেই তিন দিন ধরে বসে বিভিন্ন খেলাধুলার আসর। দৌড়, সাঁতার,স্লো সাইকেল রেস, যেমন খুশি সাজো, মিউজিক্যাল চেয়ার নানান– ধরনের খেলা এই মেলার মুখ্য আকর্ষণ। সকাল থেকে অনেক রাত্রি পর্যন্ত চলে এই মেলা। দূর দূরান্ত থেকে বহু দোকানদার আসেন তাঁদের জিনিস পত্রের পসরা নিয়ে। দোকানে দোকানে  ব্যস্ত মানুষ জনের কেনা কাটার ভিড় হয় দেখার মতো। এই মেলার মুখ্য আকর্ষণ মাটির তৈরি কালো কালসী। গ্রীষ্মের প্রারম্ভে মাটির তৈরি এই কালো কলসী কেনার জন্য লোকজনের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। নাগরদোলায় দোল খেতে খেতে আনন্দে হারিয়ে যায় প্রেমিক– প্রেমিকা ও নবদম্পতির দল।
               নির্দিষ্ট ক্রীড়াসূচী মেনে শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের খেলা। দৌড় প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে খেলার শুভ আরম্ভ হয়। তবে সাঁতার প্রতিযোগিতাটি এখানে দেখার মত। কেবলমাত্র স্থানীয় প্রতিযোগিরাই এই খেলায় অংশগ্রহণ করেন না, অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও সাঁতারুরা আসেন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে। যে সাঁতারু পরপর তিন বছর চ্যাম্পিয়ন হন তাকে একটি শিল্ড দিয়ে বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয়। সাঁতারুও শিল্ড পেয়ে পরম আনন্দে বাড়ি ফিরে যান।
           প্রতিদিনের ঘোষিত ক্রীড়া সূচি অনুযায়ী খেলা চলতে থাকে। প্রতিযোগিতার শেষ পর্বে অনুষ্ঠিত হয় মিউজিক্যাল চেয়ার। গ্রাম ও গ্রামান্তরের মেয়ে বউরা এই খেলায় অংশগ্রহণ করে। এবারের প্রতিযোগিতায় নববিবাহিতা জপাও নাম লেখায়। বরাবরই খেলাধুলার প্রতি তার আগ্রহ খুব বেশি। স্কুলে পড়ার সময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সে অংশগ্রহণ করেছে ।তাই নতুন উদ্যমে নতুন ভাবে খেলা শুরু করে সে। মিউজিক্যাল চেয়ার প্রতিযোগিতায় মিউজিক বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যায় খেলা। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মহিলারা বৃত্তাকার মিউজিকের তালে তালে ঘুরতে থাকে ।চতুরতার সঙ্গে সকলেই খেলতে থাকে। তবুও এক এক জনকে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে যেতে হয়। শেষ পর্যন্ত যে তিনজন প্রতিযোগিতায় নিজেদেরকে খেলার মধ্যে রাখতে পারে জপা তাদের একজন‌। কিন্তু জপার খেলাও আর বেশি দূর গড়ালো না। তিন নাম্বার পজিশনে তাকে খেলা শেষ করতে হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয় জিনিয়া আর দ্বিতীয় হয় ত্রিবেণী।
           তিনদিনের সমস্ত খেলা শেষ হবার পর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী সভা।সভা মঞ্চে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকেন এলাকার স্থানীয় বিধায়ক। বিশেষ অতিথির আসন অলংকৃত করেন জপার স্বামী ভূদেব। শুরু হয় একে একে পুরস্কার বিতরণ। বিজয়ী প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার গুলি তুলে দিতে থাকেন মঞে উপবিষ্ট গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। পরপর পুরস্কার গুলি তুলে দেবার পর আসে জপার পুরস্কার নেওয়ার পালা। জপা একবার উপস্থিত দর্শকদের দিকে আর একবার মঞ্চে উপবিষ্ট ভূদেব এর দিকে তাকাতে থাকে। ঘোষক মাইকে ঘোষণা করেন এবার মিউজিক্যাল চেয়ারে তৃতীয় স্থান অধিকারী জপার হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন আজকের বিশেষ অতিথি মাননীয় ভূদেব বাবু।
                ঘোষণার পর জবা পুরস্কার নিতে মন চাচ্ছে চোখে মুখে তার একটা আলাদা তৃপ্তির হাসি ভূদেব হাসি হাসি মুখে জবার হাতে পুরস্কার তুলে দেয় পুরস্কার নিয়ে জবা হাত বাড়িয়ে দেয় ভূদেব এর দিকে করমর্দন করতে করতে ভূদেব জবার দিকে তাকিয়ে দেখে চোখ দুটো তার আনন্দে জ্বলজ্বল করছে। এই স্মৃতি ভূদেব ভুলতে পারে না কোনদিন।
              ঢাকের আওয়াজে ভুতের সম্বিৎ ফিরে পায় ক্রেটা প্রাঙ্গণে দিকে তাকিয়ে দেখে তখন মিউজিক্যাল চেয়ার প্রতিযোগিতাটি সবেমাত্র শেষ হয়েছে খেলায় পুরস্কার বিজয়ী মেয়েরা হৈ হুল্লোড় করতে করতে সরস্বতী পূজা মন্ডপ এর দিকে যেতে থাকে আলোয় ঝলমল করছে পূজা মন্ডপ ঢাকি তার ধাকে সন্ধ্যারতির বোল তুলেছে ছেলে মেয়ের দল দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে ঢাকের তালে ব্রাহ্মণের সন্ধ্যারতি।
             শূন্য মিউজিক্যাল চেয়ার প্রাঙ্গণে ভূদেব একাকী দাঁড়িয়ে থাকে। শূন্য চেয়ারগুলোর দিকে তাকিয়ে আজ শুধু সে একজনকেই যেন দেখতে পায়। জপা যেন শেয়ারগুলোর চারিদিকে একাকী ঘুরছে। কোন চেয়ারটা দখল করবে সে ভেবে ঠিক করতে পারছে না। অথচ ভূদেব তাকে কিছু বলতেও পারছে না। সবই যেন তালগোল পাকিয়ে যায় তার। হৃদয়টা তার দুমড়ে মুচড়ে ওঠে। খেয়াল করেনি কখন তার 
চোখ দুটো জলে ভরে গেছে।




•••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••••
গ্রাম– কাঁটাগোড়িয়া
পোস্ট– সিংড়াপুর
থানা– গোঘাট
জেলা– হুগলী
পিন কোড– 712 614

Monday, July 8, 2019

কবিতা





বর্ষা দিনেবিপ্লব গোস্বামী






বর্ষা দিনের বাদল হাওয়া
নূপুর বেঁধে পায় ;
কলশি কাঁখে পল্লী বালা
জল আনতে যায়।
মাঠে ঘাটে অথই বারি
মাঝি উজান যায়।
মাঠে যেতে কৃষাণ বালক
বাউল গান গায়।
দোয়েল কোয়েল ডাহুক  ডাকে
বাগে ফোটে ফুল ;
জোড়ায় জোড়ায় মননা উড়ে
চড়াই শালিক বুলবুল।








বিপ্লব গোস্বামী
প্রযত্ন বাবুলাল গোস্বামী
ভেটারবন্দ,করিমগঞ্জ
আসাম।ভারত

Sunday, July 7, 2019

কবিতা







অভিমানী 

ঋতুদীপা সরকার

"""""''''''''''''''''""'''''""
উজ্জ্বল আকাশ, উষ্ণ বাতাস
নিঠুর দাবানলে,
নির্বাক ওই পরিবেশ যেন
জ্বলছে আপনমনে

চাতক টাও আজ হাঁপিয়ে গেছে,গাইতে বারির গান,
ফিরলো ঘরে,একলা হয়ে ভীষণ অভিমান।

ঋতু গুলো যে দিশেহারা,মানুষের প্রয়োজনে,
আষাঢ় যে তাই মুখ ফেরালো, নামবে ইচ্ছে হলে।

পাল্টে যাচ্ছেদিনগুলো সব,পাল্টে যাচ্ছে সময়,
দুর্বিসহ জীবন হচ্ছে,ভরছে বিষের কনায়।



ফেরার পথে দেখা হয়েছিল
কলমে - দীপা সরকার
"""""'''''''’'""""""""""'''''
ফেরার পথে দেখা হয়েছিল
আমাদের সেই চেনা পথের সাথে,
যেই ফাঁকা পথে,তোর হাত ছিল আমার হাতে।
প্রথম প্রেমের পরিচয়ে।

দেখা হয়েছিলো সেই বেঞ্চটার সাথে,
যেখানে ,তুই আমি পাশাপাশি বসা,
আর কোনো আবদার ছিলোনা,
শুধু ছিল দুজনের কথা শোনার পালা।

দেখা হয়েছিল সেই গাছটার সাথে
যার মহিরুহ ঢেকেছিল ভালোবেসে
আমাদের আলিঙ্গন,খুনসুটি ভরা
আমার অভিমান,তোর ভাঙানোর চেস্টা।

ফেরার পথে দেখা হয়েছিল,
সেই রাজপথ টার সাথে,
যে পথের অন্ধকারে তোর
ঠোঁট ছুঁয়েছে আমার ঠোঁট,চোখ,
মন দিন দিন বারংবার।।B

ফেরার পথে দেখা হয়েছে 
সেই স্টেশনের সাথে,
যার প্রতিটা ইট জানে অবুঝ-
আমার অপেক্ষার ইতিহাস,
তোর ছেলেমানুষির মানে।

কোথাও দাঁড়াই নি আজ,
ফিরে এসেছি সেই ডানাহীন-
প্রেম পতঙ্গ ট্রেনটা ধরে।
যার কোনো কামরায় তুই-আমি দুজন দুজনের তরে।।

কবিতা -: তোর অভিমান
কলমে : দীপা সরকার 

মেঘের কাছে চিঠি দিয়েছি
 পড়িস খুলে একবার,
যত্ন করে লিখতে গিয়ে
মোছা মুছি অনেকবার।

তোকে চিঠি লিখতে বসে
বারেক ভেবেছি আমি,
তোর ভালোবাসার চেয়ে
অভিমানটাই দামী।

ভালোবাসা অমর নাকি!
মৃত্যু নেই তার।
অভিমানটা ই আসল।
করে দেয় ছারখার।


কবিতা : প্রত্যাখ্যান
কলমে : দীপা সরকার

""""""""'''''''''''"'"'''''''
উজাড় করে দিয়েছি যতটুকু,
শুষে নিতে পারোনি সবটুকু।

মনে পরে আমার যা কিছু,
ভুলতে পারিনা তার সবটুকু।।

অপেক্ষারত হয়ে হাঁপিয়েছি যত,
আজ ব্যস্ততার ফাঁকে বিশ্রাম পাই তার বেশি।

প্রত্যাখানের যে আগুন চোখে জ্বলেছিল,
ক্ষমার স্নিগ্ধতায় নিভে গেছে আজ প্রহরে।

চোখের জলে যে তুলো গুলো ভিজে গিয়েছিলো!
মনের তাপে, তা আজ খড়খরা শুকনো।

যেটুকু চেয়েছিলাম তোমার কাছে,
আজ পেয়েছি তার অনেক বেশি।

ভালোবাসতে শিখিয়েছিলে  ঠিকই,
কিন্তু!
পূর্নতা দিতে পেরেছি আমি এক।।

আলোর অভিমুখে ॥ -অতনু নন্দী

আলোর অভিমুখে
              -অতনু নন্দী 


নীরবতাও একটি আবেগ প্রবণ ধুলো,  
দিক শূন্য করে দেয় আমাদের! 

মায়া ভাঙলে দেশ ও একদিন 
  বৃদ্ধ প্রজাপতি হয়ে যায়..

পেন ডাউন করলাম , 
ওহে অর্ধসমাপ্ত রাক্ষুসে কবিতা 
কিছুদিন ঘুমিয়ে থাকো । 

ছায়াপথ  সরে গেলে 
আবার তোমায় রামধনু দেখাবো  ..

ATANU NANDI
VILL & POST -PANCHRA
PS-JAMALPUR
DIST -PURBA BARDHAMAN
PIN-713401

Wednesday, July 3, 2019

কবি অনিন্দ্যের একটি কবিতা ।




কবিতায় পোঁচ



অনিন্দ্য আনিস




বিস্তারিত : www.banglasahittos.blogspot.com

ধার করা জ্ঞান লজ্জাবতি লতার মতো
প্রশ্ন শুনলেই নুয়ে পড়ে।

ইদানিং সাহিত্য পাতার কবিতা সদ্যরোপা ওলকপি
ব্যাপক সমালোচিত।

সম্পাদক ভাবের ঢেঁকুর তুলে ক্রস দেয়
একের পর এক
হাইতোলে লাল কালির---
টেবিল লড়তে থাকে দুপায়ের কম্পণে।

প্রাণ বন্ধু? ডাস্টবিনে দিয়েছো ফেলে
সোনার বরণ
কবিতার রাজপাতা।

আহ! কি সুখ!
অকবির  কবিতায় পাতা ভরে যায়
সম্পাদক হাসে পকেট ভরা টাকায়। 

কবিতার ভাণ্ডার শূণ্য হতে থাকে
কালে কালে প্রশ্ন জাগে?

লেখক: উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা, শ্যমনগর, সাতক্ষীরা৷

Monday, July 1, 2019

সত্যিকারের প্রেমিক প্রমিকা চেনার উপায় । real lover chenar upay. প্রতারক প্রেমিক প্রেমিকা চেনার উপায় ।

সত্যিকারের প্রেমিকা চেনার উপায়:



ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ানোর পরও অনেককে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতে দেখা যায়। কারণ, প্রায় প্রত্যেকের মনে থাকে একই প্রশ্ন, যার সাথে সম্পর্কে জড়ানো হলো তিনি কি আদৌ সঠিক মানুষ? এই সঠিক বেঠিকের হিসাব মেলাতে ব্যস্ত থাকার দরুন সম্পর্কে আসে টানাপোড়ন। অনেকেই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন কিছু না বোঝা চেষ্টা করেই।

পরবর্তীতে ভুল ভাঙলেও কিছু করার থাকে না। কারণ সময় তো ফিরে আসে না। তাই না বুঝেই কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ নয়। ছেলেদের মনে এই দ্বিধাদ্বন্দ্ব অনেক বেশিই দেখা যায়। আর তাই তাদেরকে একটু বেশি সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। ছেলেরা ১৫ টি লক্ষণে বুঝে নিতে পারেন আপনার প্রেমিকা কতোটা সঠিক আপনার জন্য। চলুন তবে আজকের ফিচারে দেখে নেয়া যাক লক্ষণগুলো।

আপনাদের পছন্দের অনেক মিল রয়েছে

বিপরীত জিনিসের প্রতি আকর্ষণ সকলেরই রয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে একটু উল্টোটাই দেখা ভালো। আপনার প্রেমিকার সাথে আপনার পছন্দের মিল থাকলে সে আপনার জন্য সঠিক মানুষ। তবে ১০০% মিল খুজলে চলবে না। আপনাদের পছন্দের মধ্যে ৭০-৮০% মিল থাকলেই হলো।

তিনি আপনার কাজে হস্তক্ষেপ করেন না

একজন অপরজনের কাজে হস্তক্ষেপ করলে প্রকৃতপক্ষে কোনো লাভই হয় না। তিনি যদি আপনাকে আপনার কাজে হস্তক্ষেপ না করে উৎসাহ দেন তবেই তিনি একজন সঠিক প্রেমিকা।

তিনি যদি নিজের মনের কথা বলে দেন

অনেকে মেয়েই চান যে তার প্রেমিক তার মুখ ও কথা বলার ধরণ দেখে তার মনের খবর জেনে নিক যা একেবারেই উচিৎ নয়। যে প্রেমিকা নিজে থেকেই তার মন খারাপ, ভালোলাগা সব বলে দেবেন, আপনার ওপর এই অযথা অত্যাচার করবেন না তাকে কখনোই হারাতে দেবেন না।

আপনার প্রেমিকা যদি আপনি কি ধরণের মানুষ তা দেখে আপনাকে পছন্দ করেন

আপনার প্রেমিকা যদি আপনার ভেতরের মানুষটা এবং আপনি কোন ধরনের মানুষ তা দেখে আপনার সাথে সম্পর্কে জরায় তবেই তিনি পারফেক্ট। আপনি কি করেন এবং আপনি কে তা তার কাছে কোনো ব্যাপারই নয়। এটিই সত্যিকারের ভালোবাসা।

যে আপনাকে পরিবর্তনের চেষ্টা করেন না

আপনার প্রেমিকা যদি আপনাকে পরিবর্তনের চেষ্টা করেন তবে সে সম্পর্কে এগোনো উচিৎ নয়। কারণ তিনি যদি আপনাকে পরিবর্তনই করতে চান তবে তিনি আপনার কি দেখে পছন্দ করেছিলেন। আপনার পেমিকা যদি আপনাকে পরিবর্তন করতে না চান তবে বুঝে নেবেন তিনি পারফেক্ট একজন মানুষ, কারণ তিনি আপনাকে পারফেক্ট ভাবেন।

তিনি নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট

অনেক প্রেমিকাই আছেন যারা নিজেকে নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন। সব সময়েই তারা নিজের মুটিয়ে যাওয়া কিংবা ত্বকের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এই ধরণের প্রেমিকা মোটেও উপযোগী নন। যিনি নিজেকে নিয়ে সন্তুষ্ট এবং নিজেকে পারফেক্ট ভাবেন তিনিই একজন পারফেক্ট প্রেমিকা।

সব সময় আপনার সাথে আঠার মতো লেগে থাকেন না

প্রেমিক ও প্রেমিকা দুজনেরই নিজস্ব একটি জগত রয়েছে। পরিবার ও বন্ধুবান্ধব রয়েছে। তাই প্রত্যেকরই নিজস্ব সময়ের প্রয়োজন। এই ব্যাপারটি বুঝে যিনি আপনার সাথে সব সময় আঠার মতো লেগে থাকবেন না তিনিই একজন সত্যিকারের প্রেমিকা।

মানসিকতার মিল

পছন্দ অপছন্দের মিল অনেকের সাথেই থাকতে পারে। এর পাশাপাশি আরও যে জিনিসটির মিল থাকা প্রয়োজন তা হলো মানসিকতার মিল। মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলা উচিৎ, সততার প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি নৈতিক দিক থেকে মিল থাকাও একজন পারফেক্ট প্রেমিকার লক্ষন।

তিনি আপনার সাথে সব কিছু নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে পারেন

নিজের সকল ধরণের সমস্যা, ছোট বড় দোষগুণ সব কিছু নিয়ে যদি আপনাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয় যেমনটা হয় খুব ভালো বন্ধুত্ব থাকলে তবে তিনি আপনার জন্য খুব ভালো একজন প্রেমিকা।

তিনি একজন ভালো শ্রোতা

মেয়েরা কথা শোনার থেকে বলতেই বেশি পছন্দ করেন। আপনার প্রেমিকা যদি আপনাকে নিজের সব কিছু বলার পাশাপাশি আপনার সব কিছু ভালো করে শোনেন এবং শুনতে উৎসাহী হন তবে তিনিই পারফেক্ট প্রেমিকা।

আপনার তার সাথে সময় কাটাতে অনেক ভাললাগে

যতোটা সময় আপনারা একেঅপরের সাথে কাটান প্রতিটি মুহূর্তই আপনার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগার মুহূর্ত হয়। ছোটোখাটো সকল বিষয়েই মজা করা, অদ্ভুত অদ্ভুত কিছু কাজ একসাথে করে ফেলা এবং ছেলেমানুষি করতে পারা শুধুমাত্র একজন পারফেক্ট প্রেমিকার সাথেই সম্ভব।

তিনি আপনার পরিবার ও বন্ধু বান্ধবের সাথে ভালো ভাবে মিশতে পারেন

নিজের বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার পর যখন দেখবেন আপনার প্রেমিকা তাদের সাথে অতি আপনজন এবং অনেক আগের বন্ধুদের মতো মিশে যেতে পারছেন তবেই বুঝবেন তিনি আপনার জন্য সঠিক মানুষ।

তিনি ন্যাকামি একবারেই করেন না

অনেক মেয়েই আছেন যারা নিজের প্রেমিককে ‘কি রঙে আমাকে মানায়, কি পোশাক পরবো, আমাকে কেমন দেখাচ্ছে, আমি কি মোটা হয়ে গিয়েছি’এই ধরনের ন্যাকামি প্রশ্নে জর্জরিত করেন। এই ধরণের স্বভাব যদি আপনার প্রেমিকার মধ্যে না থাকে তবে তিনি পারফেক্ট।

তিনি জানেন কিভাবে আপনাকে সারপ্রাইজ দেয়া যায়

তিনি আপনার সম্পর্কে সব কিছুই জানেন। এবং কিভাবে আপনাকে চমকে দেয়া যায়, সারপ্রাইজ করা যায় সবই তার জানা। তিনি আপনার বোরিং সময়গুলো মুহূর্তের মধ্যে আনন্দদায়ক করে ফেলতে পারেন তবে তিনিই আপনার জন্য সঠিক প্রেমিকা।

তিনি আপনাকে কখনোই বিরক্ত করেন না

‘তুমি ওখানে যাবে না, ওর সাথে কথা বলবে না, তোমার ওই বন্ধুতা ভালো না, অদের সাথে মিশবে না, আমার সাথে এখনই কথা বলো, তুমি এখন এটা করবে না’এই ধরণের বিরক্তিকর কথাগুলো অনেক প্রেমিকাই নিজের প্রেমিককে বলে থাকেন। এই স্বভাব যদি আপনার প্রেমিকার মধ্যে না থাকে তবে আপনি অনেক ভাগ্যবান। তাকে কখনোই ছাড়তে যাবেন না।



প্রতারক প্রেমিক প্রেমিকা চেনার উপায়:

  


ধরুন মেয়েটির নাম অনামিকা। প্রেম করে সম্পর্ক গড়েছিল নিজেরই সহপাঠীর সাথে। বিয়ের মিথ্যা ওয়াদা থেকে যৌন সম্পর্ক হতেও দেরি হয়নি। এখন সেই ছেলেটিই ব্ল্যাক মেইল করে টাকা দিতে বাধ্য করছে অনামিকাকে। ভয় দেখাচ্ছে নিজেদের ব্যক্তিগত ছবি প্রকাশ করে দেয়ার।


কিংবা ধরুন ছেলেটির নাম শাহেদ। অনলাইনে পরিচয়, তারপর প্রেম ও বিয়ে। বিয়ের কয়েক মাস যেতে না যেতেই নববধূ অর্থ-সম্পদ-গহনা নিয়ে পালিয়ে গেলো নিজের প্রেমিকের সাথে। উল্টো মিথ্যা অভিযোগে কেস করে শাহেদকে মোটা অংকের দেনমোহর দিতে বাধ্য করলো। সংসার, সম্মান, শান্তি সব হারিয়ে শাহেদ এখন নিঃস্ব।


হ্যাঁ, এগুলো আজকাল খুবই সাধারণ কাহিনী। প্রথমে প্রেম, তারপর যৌন সম্পর্ক উপভোগ করে ছেড়ে দেয়া। কিংবা প্রেমের নামে বড় অংকের টাকা ও মূল্যবান গিফট হাতিয়ে নিয়ে কেটে পড়া। বিয়ের মিথ্যা ওয়াদা করা, নিজের সত্যিকারের পরিচয় গোপন করে মিথ্যা সম্পর্ক গড়ে তোলা, ব্ল্যাক মেইলিং ইত্যাদি সবই দিন দিন খুবই সাধারণ বিষয়ে পরিণত হচ্ছে। কেবল পুরুষেরাই নন, বিপুল সংখ্যক নারীও এই প্রতারণার সাথে যুক্ত। মানুষকে ঠকিয়ে চলাই যেন এক শ্রেণীর মানুষের কাজ এখন। যখন আমরা প্রতারিত হই, তখন কিন্তু বিন্দুমাত্র আন্দাজ করতে পারি না যে প্রতারকের খপ্পরে পড়েছি। তারপর সময় পেরিয়ে গেলে সব হারিয়ে আফসোস করতে হয়। কী করতে পারেন নিজের নিরাপত্তার জন্য? জেনে রাখুন খুব জরুরী কিছু তথ্য। এই ব্যাপারগুলো আপনাকে একজন প্রতারককে চিনে নিতে ভীষণ সহায়তা করবে আপনাকে।


১) একজন প্রতারক প্রেমিক বা প্রেমিকার মূল আগ্রহ থাকবে যৌন সম্পর্কের দিকে। আপনার রূপ ও সৌন্দর্যের দিকেই বেশী আগ্রহ দেখায়, এমন পুরুষ থেকে দূরেই থাকুন। অন্যদিকে যা নারী নিজে থেকেই আপনার সাথে যৌন সম্পর্কে আগ্রহী, তার থেকেও দূরে থাকবেন অবশ্যই।


২) আপনাকে স্বার্থপরের মত নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে, এমন কাউকে ভালোবাসার ভুল করবেন না।


৩) নানা প্রয়োজনের কথা বলে টাকা নেয় বা চায়, এমন মানুষকে প্রশ্রয় দেবেন না।


৪) যে নিজের পরিবারের সাথে আপনার পরিচয় করিয়ে দিতে পারে না, নিশ্চিত থাকুন সে ধোঁকা দেবেই। বন্ধুদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া কোন বড় ব্যাপার নয়।


৫) আপনার অলক্ষ্যে অন্য নারী/পুরুষদের সাথে অহেতুক ঘনিষ্ঠতা প্রতারণারই লক্ষণ।


৬) একান্ত মুহূর্তের ছবি তুলতে চাওয়া বা ভিডিও করা মোটেও ভালো উদ্দেশ্য হতে পারে না।


৭) প্রতারক পুরুষ কখনো আপনার জন্য কিছু করবেন না। আপনি তার জন্য কী করছেন সেটাই তার জন্য জরুরী।


৮) প্রতারক নারী হয় মুডি, আপনার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতি উদাসীন। অতিরিক্ত মিষ্টি বা অতিরিক রুক্ষ্ম ব্যবহার দুটিই প্রতারণার লক্ষণ।


৯) প্রকারকেরা কেবল নিজের ব্যাপার নিয়েই ভাবেন। কেবল আপনার নয়, অন্য কারো আবেগের বা সম্মানের মূল্য যে দেয় না, তার কাছ থেকে অবশ্যই দূরে থাকুন।

         






🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄


চাই  আমি


                  শেখ মোঃ মামুন হোসেন 



বিস্তারিত : www.banglasahittos.blogspot.com


                   রাতের বেলায় অন্ধ ঘর
                     দিনে আমার বন্ধ ঘর
                   দরজাটি খুলতেই দেখি,
              শত মায়ের অবুঝ আহাজারি।

                  রাস্তার মাঝে চলার সময় 
                    একটু যদি চোখ খুলি,
                   হঠাৎ করে দেখি আমি,
          মাথা ছাড়া দেহ নিয়ে পড়ে আছি আমি।
    
                   বন্ধ ঘরের জানালাটি খুলে
                 চোখ মিলায়ে দেখি পাড়া-ঘরে,
                     হঠাৎ করে জানতে পারি
                   আমি নেইতো আমার ঘরে!

                   মুখটি খুলে বলতে গেলেই
                    আমার চেপ্টে ধরে গলা
                  দেখতে চাইনা এমন বেলা
                  চাই আমি,আমার স্বাধীনতা 
               
                    রুপবতী না হয়েও আমি 
               সমাজের চোখে হয়েছি কলঙ্কিনী!
                মা-বাবার সপ্নটাকে উড়িয়ে দিল
                 একদল কালো মনের বাহিনী।

                  শাসন-বাসন হারিয়ে আমি 
                হয়ে আছি বিকল মনের মানুষ!
                লিখতে গেলেও হাত পুড়ে যায় 
                 আমার এটাইতো ছিল নিষেধ !                                      প্রকৃতির মাঝে দুখের  ছায়া
                  চাই আমি,আমার স্বাধীনতা।
                  
                   বিকেল বেলার স্বাধীন চেতা
                     লিখতে পারি কিছু কথা
                      খুলে দাও বন্ধী দুয়ার
             চাই আমি,আমার স্বাধীনতার পাহাড়।




শেখ মোঃ মামুন হোসেন 


পারভেজ আলীর কবিতা ।

"বঙ্গবন্ধু "


__পারভেজ আলী


[২৮/০৬/১৯ ]

বিস্তারিত :  www.banglasahittos.blogspot.com


যেখানেই হাটি আমি,
            সেখানেই দেখি,
পথে-ঘাটে তোমার ছবি;
     তুমি আসলেই একজন ~
                মহান কবি,
তুমি সেই বাঙালী'র কবি।
তুমি ছিলে এক মহান নেতা,
              বঙ্গবন্ধু তুমি আমাদের ~
সেই বাঙালী'র পিতা!
          যতদিন ছিল তোমার হাতে এ দেশ,
পথ হারায় নি মোদের এ বাংলাদেশ।
সারা জীবন তুমি করেছিলে সংগ্রাম,
           ছিলে ন্যায় নীতির পক্ষে!
দিয়েছিল তারা তোমাই কতইনা আঘাত,
        তবুও করনি কখনো তুমি প্রতিঘাত।
তুমি ছিলে সেই বাঙালী'র কবি,
            তুমি ছিলে সেই মুক্তির কবি!
তুমি আমাদের সেই প্রতিচ্ছবি,
          যদি আজ তুমি থাকতে বেঁচে!
খুন, খারাপি হতো না এ বাংলাদেশে।
তুমি ছিলে সেই বাঙ্গালী'র ছবি,
         তুমি ছিলে সেই রাজনীতি'কবি,
তোমার ভালোবাসা জাগ্রত থাকবে,
       শত কোটি বাঙালী'র মাঝে,
তুমি সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী,
       বঙ্গবন্ধু তুমি সেই মহান কবি,
তোমারই হাতে গড়ে উঠেছে শত বাঙালী জাতি;
      বঙ্গবন্ধু তোমাকে মোরা কি ভুলতে পারি?
শত কোটি বাঙালী জাতি!
     তুমি যে ছিলে আমাদের সেই ভালবাসা'র ছবি।
তুমি ছিলে আমাদের সেই মহান কবি।

_________________________________মোঃ পারভেজ আলী ইংরেজি বিভাগ, ২য় বর্ষ;পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবন।

সিদ্ধার্থ সিংহ এর একটি বড় গল্প ।


একটি রিয়্যালিটি উপাখ্যান 

কণিকা


সিদ্ধার্থ সিংহ 








হাওড়া স্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের সামনে ঋজু আর পরমার্থ অপেক্ষা করছিল। ওরা একটু আগেই এসেছে। গত কাল রাত সাড়ে বারোটায় অফিস থেকে বেরিয়ে নীচে যখন ড্রপ কারের জন্য অপেক্ষা করছে ঋজু, তখন হঠাত্‌ই পরমার্থ ওর কাছে এসে বলল, এই রে, আশিস তোমাকে বলতে বলেছিল। একদম ভুলে গেছি। কাল দাঁতনে একটা উত্‌সব আছে। সেখানে কবিতা পাঠেরও ব্যবস্থা আছে। ও তোমাকে বারবার করে যেতে বলেছে। তুমি যাবে?
ঋজু কী ভাবছিল। ও কিছু বলছে না দেখে পরমার্থ ফের বলল, কাল তো তোমার অফ ডে। চলো না।
— কখন?
— কাল সকালে। সাতটার সময়। হাওড়া থেকে। 
হাওড়া থেকে ঋজুর বাড়ি খুব একটা দূরে নয়, চেতলায়। ওখান থেকে একটাই বাস। সতেরো নম্বর। কখন আসে কোনও ঠিক নেই। তাই হাতে একটু সময় নিয়েই ও বেরিয়েছিল। কিন্তু রাস্তা পার হওয়ার আগেই দেখে বাস আসছে। ফলে সাতটা নয়, তার অনেক আগেই ও চলে এসেছে। এসে দেখে, অফিস থেকে অত রাতে বাড়ি গিয়েও এই সাতসকালেই সেই বিরাটি থেকে পরমার্থও এসে হাজির। ঘড়িতে তখনও সাতটা বাজতে মিনিট দশেক বাকি।
ও সামনে আসতেই পরমার্থ বলল, চা খাবে?
— ওরা আসুক না। একসঙ্গে খাব। ট্রেন ক’টায়?
— তা তো জানি না। আশিস তো বলল, সাতটার সময় এখানে দাঁড়াতে।
— এখানেই বলেছে তো?
— হ্যাঁ রে বাবা...
— সাতটা তো প্রায় বাজে।
— এখনও বাজেনি। আসবে তো সেই সল্টলেক থেকে। সবার বাড়ি তো আর তোমার মতো হাওড়া স্টেশনের পাশে নয়, যে বাসে উঠলাম আর হাওড়ায় পৌঁছে গেলাম। চা খাবে? ওই তো আশিস...
ঋজু দেখল, শুধু আশিস নয়, ট্যাক্সি থেকে একে একে নামছে আরও তিন জন। তার মধ্যে দু’জন মহিলা।
আশিস কাজ করে আকাশবাণীতে। পরের সপ্তাহে রেডিওতে কী কী অনুষ্ঠান হবে, সেই অনুষ্ঠান-সূচি আনতে প্রত্যেক সপ্তাহে পরমার্থকে যেতে হয় ওর কাছে। আনন্দবাজারের যে দফতরে ও কাজ করে, সেখানে প্রুফ দেখা ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে ওই অনুষ্ঠান-সূচি এনে কম্পোজ করে দেওয়া ওর কাজ।
এই কাজ করতে করতেই আশিসের সঙ্গে ওর বেশ বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। সেই সূত্রেই পরমার্থ যেমন জেনেছে, ও লোকসঙ্গীত গায়। কবিতা লেখে। দুটো কবিতার বইও বেরিয়েছে। শুধু ও একাই নয়, ওর বউ রিনাও কবিতা লেখে। তেমনি আশিসও জেনেছে, পরমার্থও ইদানিং কবিতা লিখতে শুরু করেছে। অনেক কবির সঙ্গেই ওর আলাপ আছে। ওর মুখেই ঋজুর নাম শুনে আশিস বলেছিল, উনি কি আপনাদের অফিসে কাজ করেন নাকি?
— কেন, আপনি চেনেন?
আশিস বলেছিল, না, আলাপ নেই। তবে ওর অনেক কবিতা পড়েছি। উনি তো প্রচুর লেখেন। এত লেখেন কী করে? আপনার সঙ্গে ওনার কী রকম সম্পর্ক?
পরমার্থ বলেছিল, ভালই। ও তো আমাদের ডিপার্টমেন্টেই আছে।
— তাই নাকি? পারলে এক দিন নিয়ে আসুন না, জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে। 
ঋজুকে সে কথা বলতেই ঋজু বলেছিল, ঠিক আছে এক দিন যাবখ’ন। কিন্তু আজ নয়, কাল নয়, করে আর যাওয়া হচ্ছিল না। তাই পরমার্থ এক দিন ওকে বলল, আরে বাবা চলো না, গেলে তোমার লাভই হবে। ও এখন অভিজ্ঞানটা দেখে। কবিতা পড়ার জন্য ওর পেছনে কত লোক ঘুরঘুর করে, জানো? আর ও নিজে থেকে তোমাকে ডাকছে, তুমি যাবে না? ওখানে কবিতা পড়লে পাঁচশো টাকা দেয়।
তাতেও খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছিল না দেখে ঋজুকে প্রায় জোর করেই ও একদিন নিয়ে গিয়েছিল আকাশবাণীতে। সেই আলাপ। তার পর এই।
ট্যাক্সির ভাড়া মিটিয়ে কাঁধের ব্যাগটা সামলাতে সামলাতে লম্বা লম্বা পা ফেলে ওদের সামনে দিয়ে যেতে যেতেই আশিস বলল, চলে আসুন, চলে আসুন। দেরি হয়ে গেছে।
ও আগে আগে। পেছনে ঋজুরা। তারও পেছনে ট্যাক্সি থেকে নামা বাকি তিন জন।
কাউন্টারে তেমন ভিড় ছিল না। টিকিট-ফিকিট কেটে ওরা ট্রেনে উঠে পড়ল। না। ট্রেনেও খুব একটা ভিড় নেই। ছুটির দিন। তাই ফাঁকা ফাঁকা। একটা খোপেই ওরা সবাই বসার জায়গা পেয়ে গেল। এ দিকের সিটে ঋজু, পরমার্থ আর ট্যাক্সি থেকে নামা কোর্ট-প্যান্ট পরা ওই ভদ্রলোক। বাকিরা উল্টো দিকের সিটে। ট্রেন ছাড়ার আগেই আশিস সবার সঙ্গে সবার আলাপ করিয়ে দিল। কোর্ট-প্যান্ট পরা ভদ্রলোকটাকে দেখিয়ে বলল, ইনি মহাদেব মোশেল। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন। বিবাহের ইতিহাস নিয়ে গবেষণামূলক একটা বই লিখেছেন। এ ছাড়া ছড়া-টাড়াও লেখেন। আর ইনি হচ্ছেন কণিকা রায়। কলকাতা টেলিফোন্‌সে কাজ করেন। এখন টেলিফোন ভবনে, না? কণিকার দিকে তাকিয়ে নিজেই যেন তার কাছে জানতে চাইল। তার পরে বলল, ক’দিন আগে ওর একটা সুন্দর কবিতার বই বেরিয়েছে। আর এর পরিচয় কী দেব, ইনি আমার গিন্নি, রিনা গিরি।
ঋজু মহাদেববাবুর দিকে তাকাল। মহাদেববাবু আর কণিকার কথাবার্তা দেখে হঠাৎ কেন জানি ঋজুর মনে হল, ওদের মধ্যে কোনও একটা সম্পর্ক আছে।
বেশ কিছু দিন আগে স্কটিশ চার্চ কলেজের সামনে জটলা দেখে ও দাঁড়িয়ে পড়েছিল। জটলার মধ্যমণি মধ্যবয়স্ক এক ভদ্রমহিলা। তাঁর অভিযোগ, তাঁর স্বামী এই কলেজে পড়ান। তাঁরই এক ছাত্রীর সঙ্গে তিনি প্রেম করেন। তাঁকে বহু বোঝানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। তাঁর বড় বড় ছেলেমেয়ে আছে। তারা স্কুলে পড়ে। স্কুলের মাইনে পর্যন্ত উনি দিচ্ছেন না। সংসার খরচা তো নয়ই। সব ওই মেয়েটার পেছনে ঢালছেন। তাই শেষ পর্যন্ত উনি নাকি থানায় গিয়েছিলেন। থানা থেকেও ভদ্রলোককে ডেকে বলে দিয়েছে, যাতে তিনি ঠিকঠাক মতো সংসার করেন। বউয়ের গায়ে যেন হাত না তোলেন। অথচ তার পর থেকেই তিনি আর বাড়ি ফিরছেন না। তাই তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য উনি কলেজে এসেছিলেন। কিন্তু টিচার্স রুমের সামনে যেতেই উনি তাঁকে দেখতে পেয়ে যান। অমনি ঘর থেকে বেরিয়ে তাঁকে ধাক্কা মেরে এক দৌড়। ভদ্রমহিলা এখন বলছেন, উনি এ দিকেই এসেছেন, আপনারা কেউ কি দেখেছেন? ঘিয়ে রঙের জামা পরা। কালো প্যান্ট। চোখে চশমা। মাথায় পাতলা-পাতলা চুল...
ওই দৃশ্যটা মনে পড়ে গেল ঋজুর। মহাদেববাবু আবার সে রকম নন তো! ঘরে বউ-ছেলেমেয়ে সব আছে। আর বাইরে এর সঙ্গে... এরা নিশ্চয়ই স্বামী স্ত্রী নন। ওঁর পদবি তো রায়। আর এঁর মোশেল।
টুকটাক কথা হচ্ছিল। ঋজু কথায় কথায় মহাদেববাবুকে জিজ্ঞেস করল, আপনি কোথায় থাকেন?
উনি বললেন, সল্টলেকে।
— সল্টলেকে কোথায়?
— তেরো নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে।
— আর আপনি? কণিকার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল ঋজু।
— আমিও সল্টলেকে।
— সল্টলেকে কোথায়?
— তেরো নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে।
— ও। দু’জনেই কাছাকাছি থাকেন?
হঠাত্‌ মহাদেববাবু বলে উঠলেন, কাছাকাছি নয়, খুব কাছাকাছি। একই বাড়িতে। একই ঘরে। আসলে আমি ওর বাড়িতে থাকি।
কথাটা শুনে একটু থতমত খেল ঋজু। এত দিন ও শুনেছে, ছেলেরা মেয়েদের রক্ষিতা রাখে। এ তো উল্টো কেস। মেয়েটা এঁকে রেখেছে! নাকি মেয়েটা তাঁর বাড়িতে পেয়িং গেস্ট চালায়! ঋজু ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ব্যাপারটা কী? ও তখন মনে মনে ওর মতো করে দুই আর দুইয়ে চার করার চেষ্টা করছে।
তখন আশিসই বলল, এখনও বুঝতে পারলেন না, ওরা কর্তা-গিন্নি। ওদের আনতে গিয়েই তো এত দেরি হয়ে গেল।
কণিকা বলল, আমার কোনও দোষ নেই। আমি তো আসব না বলেই দিয়েছিলাম। কিন্তু রিনা গত কাল রাতে এত বার করে বলল যে, না এসে থাকতে পারলাম না। আর তা ছাড়া ছুটির দিনে এত তাড়াতাড়ি ওঠার অভ্যাস নেই তো...
ওকে মাঝপথে থামিয়ে মহাদেববাবু বললেন, আমি কিন্তু তোমাকে সাড়ে পাঁচটায় ডেকে দিয়েছিলাম। 
ট্রেন চলছিল। কথা হচ্ছিল। জানালা দিয়ে হুহু করে হাওয়া আসছে। কণিকার কপালের দু’দিক দিয়ে নামানো দুটো লকস বারবার ওর চোখের উপরে এসে পড়ছে। হঠাৎ মহাদেববাবু তাঁর কোর্টের ভিতর পকেট থেকে একটা ছোট্ট পকেট-বুক বার করে ঋজুর দিকে এগিয়ে দিলেন— এটা বহু দিন আগে বেরিয়েছিল। তখন ছড়াই লিখতাম। এখন আর সময় পাই না।
ঋজু উল্টেপাল্টে দেখছে। একটা পড়তে গিয়েই হুচোট খেল। প্রচ্ছদ দেখে মনে হয়েছিল ছোটদের বই। কিন্তু এ কী! বইটা বন্ধ করে আশিসের দিকে এগিয়ে দিল। আশিস বলল, এটা আমি আগেই দেখেছি।
শব্দ ক’টার মধ্যে বইটা হাতে নেবার সামান্যতম সম্ভাবনা না দেখে রিনার দিকে বাড়িয়ে দিল ঋজু। বইটা হাতে নিয়ে রিনা বলল, এটা আমার পড়া। যখন বেরিয়েছিল, তখনই উনি দিয়েছিলেন। এখনও বোধহয় বাড়িতে আছে।
পরমার্থ বলল, ঋজুর কিন্তু অনেকগুলো বই আছে। তার পর ঋজুর দিকে তাকিয়ে বলল, সঙ্গে আছে নাকি?
— হ্যাঁ, আছে বোধহয়। বলেই, কাঁধের ব্যাগ থেকে দুটো বই বার করল ঋজু। একটা গল্পের আর একটা কবিতার।
পরমার্থ গল্পের বইটা নিয়ে আশিসের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, জানো তো, এই গল্পটা যখন সানন্দায় বেরোয়, তখন বিশাল হইচই হয়েছিল। ওর বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি টাকার মামলা হয়েছিল।
ঋজু একটু লজ্জার ভান করে বলল, না না। আমার একার নামে নয়। আমাদের পাঁচ জনের নামে পাঁচ কোটি। আমার নামে শুধু এক কোটি।
— তাই নাকি? কী হয়েছিল? মহাদেববাবু জানার জন্য উৎসুক হয়ে উঠলেন।
পরমার্থ বলল, সে সময় তো সমস্ত খবরের কাগজের প্রথম পাতায় এটা বেরিয়েছিল...
— তাই নাকি? ঋজুর দিকে তাকিয়ে মহাদেববাবু বললেন, কী হয়েছিল?
ঋজু বলল, আসলে আমি তখন সানন্দায় ফ্রিল্যান্স করি। মানে, লেখা ছাপা হলে টাকা পাই। না হলে, নয়। তো, সানন্দায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে সিদ্ধার্থ সরকার আর অনিরুদ্ধ ধর ছিলেন আমার খুব কাছের মানুষ। তা, ওঁরা ঠিক করলেন, উত্তমকুমারকে নিয়ে একটা টিভি সিরিয়াল বানাবেন। তো, আমিও ভিড়ে গেলাম ওঁদের সঙ্গে। লেখালিখি তখন মাথায় উঠেছে। কিন্তু না লিখলে আমার চলবে কী করে? অনিরুদ্ধদাকে সে কথা বলতেই উনি বললেন, গল্প লিখতে পারবি? আমি তখন কবিতা ছড়া লিখি। তবু বললাম, পারব। উনি বললেন, তা হলে আজকে রাতের মধ্যেই একটা গল্প লিখে ফেল। কাল বারোটা-সাড়ে বারোটার মধ্যে পিটিএসে ধরিয়ে দিস। পিটিএস মানে, যেখানে কম্পোজ হয়। আমি বললাম, তুমি দেখবে না? উনি বললেন, তোর লেখা আবার দেখার কী আছে? ঠিক আছে, প্রুফে দেখে নেব। তার পর যখন লেখাটা ছেপে বেরোল, স্টলে খোঁজ করতে গিয়ে দেখি, আশপাশের কোনও স্টলে সানন্দা নেই। সে দিনই বেলার দিকে লোকাল কাউন্সিলারের সঙ্গে আমার বাড়িতে এসে হাজির সৌগত রায়।
— কোন সৌগত রায়? আমাদের সৌগত রায়? অধ্যাপক?
পরমার্থ বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ, কংগ্রেসের এমএলএ।
— তার পর? বলেই, সামনের দিকে আর একটু ঝুঁকে এলেন মহাদেববাবু।
— তার পর আর কী? আমাকে বাড়ি থেকে ডেকে রাস্তায় নিয়ে গিয়ে চড়চাপড়, ঘুষি।
— সোজা কথায় বলো না, উত্তম মধ্যম। পরমার্থ ফোড়ং কাটল।
— হ্যাঁ, তার পর? নড়েচড়ে বসলেন তিনি।
— আমাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেল লোকাল কাউন্সিলারের ডেরায়।
— কোন কাউন্সিলার?
— আমাদের ওখানকার।
— কী নাম?
— দেবু ঘোষ।
— ও। তার পর?
— আবার চড়চাপড়। সিগারেটের ছ্যাঁকাট্যাকা। তার পর হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে আমাকে ওরা নিয়ে গেল তিন তলায়। চিলেকোঠার ঘরে আমাকে ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে ছিটকিনি তুলে দিল।
— তার পর?
দম নিয়ে ঋজু বলল, আমার বাড়িতে তখন রাজু ছিল। রাজুকে মনে আছে? সুদীপার সঙ্গে যার বিয়ে হয়েছিল। সেই সুদীপা পাল, যে মা-বাবা-ঠাকুমাকে কালোজামের সঙ্গে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছিল। পরে রাজসাক্ষী হয়ে রেহাই পায়। যার জন্য ওর মাস্টার মশাইয়ের যাবজ্জীবন জেল হয়েছিল। মনে আছে?
— আপনি ওকে চিনলেন কী করে? উল্টো দিকের সিটে বসে প্রশ্ন ছুড়ে দিল আশিস।
— আসলে বারুইপুরে আমাদের একটা বাগানবাড়ি আছে। তার পাশেই থাকত রাজু। ছেলেটা এমনি কাজটাজ কিছু করত না। মাঝেমধ্যে ডাকাতি-টাকাতি করত। ধরাও পড়ত। ও তখন জেলে। সুদীপাও জেলে। একই দিনে ওদের ডেট পড়ত। জেল থেকে একই ভ্যানে করে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হত ওদের। ওই যাতায়াতের পথেই ওদের আলাপ। তা থেকে প্রেম। এবং বিয়ে। বিয়ে করে থাকবে কোথায়? রাজুর মা অমন একটা খুনি মেয়েকে কিছুতেই বউ হিসেবে মেনে নেবে না। ওরা তখন আমার মাকে এসে ধরল। আমাদের ওই বাড়িতে অনেকগুলো ঘর তালা বন্ধ হয়ে পড়ে ছিল। মা ওদের থাকার জন্য একটা ঘর খুলে দিল। এমনিতে আমরা ওখানে খুব একটা যেতে-টেতে পারি না। ফাঁকা ঘর পড়ে থাকলে কে কখন কোথা থেকে দখল করে নেবে, তার কোনও ঠিক আছে? তাই কয়েকটা ঘর ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। রাজুকে বলা হল, বাড়ি ভাড়ার টাকা কেউ দিলে, তুই তোর কাছে রেখে দিবি। যখন সময় পাবি, ওই বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসবি।
যে দিন এই ঘটনা ঘটে, তার আগের দিনই বাড়ি ভাড়ার টাকা দেওয়ার জন্য ও আর ওর বউ আমাদের আলিপুরের বাড়িতে এসেছিল। গল্পে গল্পে রাত হয়ে গিয়েছিল। তাই মা ওদের বলেছিল থেকে যেতে।
তা, ওই লোকগুলো আমাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দেখে রাজু নাকি পেছন পেছন এসেছিল। আমাকে যে ওই বাড়িতে জোর করে ঢুকিয়েছে, সেটা ও দেখেছিল। কিন্তু অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও আমি বেরোচ্ছি না দেখে ওর কেমন সন্দেহ হয়। হাঁটতে হাঁটতে ও সেই বাড়িটার পেছন দিকে চলে যায়। ওকে কেউ চেনে না। ফলে কেউ কোনও সন্দেহও করেনি। ওই বাড়িটার পেছনেই ছিল একটা পরিত্যাক্ত পুরনো ভাঙাচোরা বাড়ি। গাছগাছালিতে ভর্তি। কেমন যেন জঙ্গল জঙ্গল। কোনও লোকজন নেই। ওখানে সাপখোপ থাকতে পারে জেনেও ও কিন্তু এতটুকু ভয় পায়নি। আমাকে যে বাড়িতে ঢুকিয়েছিল, সেই বাড়ির জলের পাইপ বেয়ে তরতর করে ও ছাদে উঠে গিয়েছিল। সেখানেও নাকি কেউ ছিল না। চিলেকোঠার ঘরে তখন আমি একা। দুমদাম করে দরজা ধাক্কাচ্ছি। সেই আওয়াজ শুনেই ও ছিটকিনি খুলে দেয়। আমি বেরিয়ে এসে ওর সঙ্গেই পাইপ বেয়ে নীচে নেমে আসি। প্রথমেই ফোন করি সুদেষ্ণাদিকে। সুদেষ্ণাদি তখন সানন্দায় কাজ করেন। উনি বললেন, লোকাল থানায় একটা ডায়রি করে এখানে চলে আয়। কিন্তু লোকাল থানা আমার ডায়রি নিলে তো। অগত্যা সুদেষ্ণাদির কথা মতো সানন্দার অফিসে চলে যাই। আমাদের মতোই ওখানে লেখালিখি করত, আমাদেরই বন্ধু গৌতম চক্রবর্তী। ও তখন ওখানে ছিল। সুদেষ্ণাদি ওকে নিয়ে ফের থানায় যেতে বলল।
আমরা গেলাম। এবং অবাক কাণ্ড, ও.সির ঘরে ঢোকার পরে আমার নাম শুনেই ও.সি বললেন, আপনি তো আমাকে নিয়েও লিখেছেন। আমি তো অবাক। কিছুতেই মনে করতে পারছি না, ওঁকে নিয়ে আমি আবার কী লিখলাম! তখন উনি তাঁর টেবিল থেকে কালো ফোনটা সরিয়ে বললেন, দেখুন, ফোনের নীচে লোকনাথ বাবার ছবি। মনে পড়ে গেল, গল্পের এক জায়গায় ছিল, লোকাল থানার ওসি লোকনাথ বাবার খুব ভক্ত। কিন্তু সেটা যাতে কেউ বুঝতে না পারে, সে জন্য উনি টেবিলের কাচের তলায় লোকনাথ বাবার ছবি রেখে ফোন দিয়ে ঢেকে রাখেন। বুঝতে পারলাম, আমার অবস্থা শোচনীয়। যতই বানিয়ে বানিয়ে লিখে থাকি না কেন, সব কিছুই কেমন যেন কাকতালীয় ভাবে মিলে যাচ্ছে।
— তার পর কী হল? আশিসের পাশে বসে ছিল রিনা। সে উদগ্রীব হয়ে উঠল।
— তখন লালবাজারের ডিসিডিডি ওয়ান ছিলেন গৌতমমোহন চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে দীপান্বিতাদির খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। দীপান্বিতাদি কাজ করতেন সানন্দায়। ফাটাফাটি দেখতে ছিলেন। যেমনি লম্বা, তেমনি ফর্সা। টানা-টানা নাক-চোখ। যে কোনও পুরুষকে ঘায়েল করার পক্ষে যথেষ্ট। তখন সানন্দার সম্পাদক ছিলেন অপর্ণা সেন। প্রথম প্রথম তো অপর্ণা সেনের সঙ্গে আমি ওনাকে গুলিয়ে ফেলতাম। উনি আগে ছিলেন ভট্টাচার্য। পরে আনন্দবাজারের ফোটোগ্রাফার অশোক মজুমদারকে বিয়ে করে হন মজুমদার। সেই বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। পরে আরও অনেকের সঙ্গেই ওঁর ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল। শোনা যায়, সমরেশ বসুর সঙ্গেও নাকি ওঁর একটা সম্পর্ক ছিল। সেটা এত দূর গড়িয়েছিল যে, বিয়ে হয়-হয় আর কী। তখন তো মোবাইল ছিল না। চিঠি আর হাত-চিঠিই ছিল সম্বল। কত চিঠি যে সমরেশবাবু ওঁকে লিখেছিলেন! অনিরুদ্ধদার সঙ্গেও ওঁর যথেষ্ট মাখামাখি ছিল। ওঁদের প্রেম যখন তুঙ্গে, তখন নাকি দীপান্বিতাদি একদিন সোজা গিয়ে হাজির হয়েছিলেন অনিরুদ্ধদার বাড়িতে। অনিরুদ্ধদার বউ মিতা বউদিতে বলেছিলেন, তুমি ওকে ছেড়ে দাও। আমরা বিয়ে করব।
না। সে কথা শুনে মিতা বউদি এতটুকুও বিস্মিত হননি। বরং খুব ঠান্ডা মাথায় ওঁর কানের দুলটা দেখিয়ে বলেছিলেন, কোথা থেকে কিনেছ গো? দারুণ তো ডিজাইনটা...
তো, অনিরুদ্ধদার সঙ্গে ওঁর যেমন প্রেম ছিল, তেমনি ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে ঝগড়াও হত খুব। এক বার সমরেশ বসুকে নিয়ে ওঁদের মধ্যে খুব ঝামেলা হয়। দীপান্বিতাদি এত রেগে যান যে, তক্ষুনি বাড়ি গিয়ে আলমারির গোপন দেরাজ থেকে তাঁকে লেখা সমরেশবাবুর সব চিঠি বার করে এনে, সোজা হাওড়া ব্রিজের ওপর থেকে গঙ্গায় ফেলে দেন। ওগুলো থাকলে তরুণ গবেষকেরা নিশ্চয়ই সমরেশ বসুর পত্রসাহিত্যের উপরে ডক্টরেট করতে পারতেন! অনিরুদ্ধদার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পরে উনি ফের আর একজনকে বিয়ে করেন। তখন হন নায়ার।
— তার পর কী হল? মহাদেববাবু প্রশ্ন করতেই ঋজু বুঝতে পারল, কথা বলতে বলতে ওর যেটা হয়, সেটাই হয়েছে। মূল বিষয় থেকে সরে গেছে ও। তাই তড়িঘড়ি নিজেকে শুধরে নিয়ে বলল, হ্যাঁ, কী যেন বলছিলাম, ও হ্যাঁ, মনে পড়েছে, তো, সেই দীপান্বিতা ফোন করে দিলেন গৌতমবাবুকে। সঙ্গে সঙ্গে উনি স্টেপ নিলেন। পর দিন খুব ভোরে, পাঁচটা-সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আমাদের বাড়িতে এসে হাজির মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে আমাদের এলাকার আর এক কংগ্রেস নেতা বাবলা আইচ। তখনও তৃণমূল হয়নি। উনি বললেন, তুমি আমার ভাইয়ের মতো। একদম ভয় পাবে না। আমি যা বলার দেবুদাকে বলে দিয়েছি। উনি আর তোমাকে ডিসটার্ব করবে না। তোমার যদি কোনও দরকার হয়, আমাকে বলবে। যদি চাও, আমার ছেলেরা তোমার বাড়ি গার্ড দেবে।
কিন্তু তার আর দরকার হয়নি। সে দিনই আনন্দবাজার আর টেলিগ্রাফের প্রথম পাতায় বড় বড় করে ছাপা হয় সেই খবর। তার পর থেকে লোকাল কাউন্সিলার, তাঁর চেলাচামুণ্ডা, এমনকী সেই এম এল একেও আমাদের বাড়ির ত্রিসীমানার মধ্যে আর কখনও দেখা যায়নি।
ঋজু থামতেই পরমার্থ বলল, ওই গল্পের জন্যই তো ওর চাকরি হল।
কণিকা এতক্ষণ গোগ্রাসে ওর কথা শুনছিল। হঠাৎ বলল, তাই নাকি?
পরমার্থ ফের বলল, তার পর কত কাণ্ড, তার দিন কতক পরেই ছিল ফাইফোঁটা। আমি নিজে দেখেছি, অফিসে এসে মমতা ওকে রাখী পরিয়ে গেছে। শুধু ওকে নয়, ওর আশপাশে যারা ছিল, তাদেরও।
কণিকা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনছিল। শুধু বিড়বিড় করে বলল, তাই?
কথা বলতে বলতে কখন ট্রেন ঢুকে পড়েছে খড়্গপুরে, ওরা বুঝতে পারেনি। সেখানে অপেক্ষা করছিল উৎসব কমিটির দুটি গাড়ি। তাতে উঠে ওরা রওনা হয়ে গেল দাঁতনের দিকে। 
দুই 
ফোন বাজলেই সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে রিসিভার তোলে ঋজু। ওর ছেলে বাবি ক্লাস ফোরে পড়ে। ক’দিন হল ছেলেকে নিয়ে ও আর স্কুলে যাচ্ছে না। বউকে পাঠাচ্ছে।
সপ্তাহখানেকও হয়নি ওর অফিসে একটা ফোন এসেছিল। ও-ই ধরেছিল। ফোনটা একটি মেয়ের। সে লেখালিখি করতে চায়। তাদের কাগজে লেখা দিতে হলে কী ভাবে পাঠাতে হবে, কাকে পাঠাতে হবে, মনোনীত হল কি না, ক’দিনের মধ্যে জানা যাবে, এই সব টুকিটাকি কথা সে জানতে চাইছিল। প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর ঋজুই দিচ্ছিল। হঠাত্‌ মেয়েটি ওর ফোন নম্বর চায়। ও বলে, এই নম্বরেই করবেন। সন্ধের দিকে করলে আমাকে পেয়ে যাবেন। কিন্তু মেয়েটি নাছোড়বান্দা। সে ওর অফিসের নয়, বাড়ির নম্বর চায়। ঋজু দেখেছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কিংবা দূরে ও যখন কোথাও যায়, কবি নয়, খবরের কাগজে কাজ করে শোনার পরেই অনেকে ওর কাছ থেকে টেলিফোন নম্বর নেয়। কিন্তু কস্মিনকালেও কেউ ফোন করে না। এই মেয়েটিও সে রকমই একজন ভেবে, ও ওর বাড়ির টেলিফোন নম্বরটা দিয়ে দিয়েছিল। আর তখনই ও জেনেছিল, মেয়েটির নাম শালিনী। তার পর থেকে দু’-একদিন ছাড়া ছাড়াই মেয়েটা ফোন করে।
গলার স্বর খুব নরম। বাচ্চা বাচ্চা। মনে হয় ইলেভেন-টুয়েলভে পড়ে। গত পরশু যখন ফোন করেছিল, ঋজু ঘুমোচ্ছিল। ধড়মড় করে উঠে ফোন ধরতেই ও প্রান্ত থেকে শালিনী বলেছিল, কী মশাই ঘুমোচ্ছেন নাকি?
— এই উঠলাম। হ্যাঁ, বলো। এত সকালে?
— না, এমনিই করলাম। কোনও দরকার নেই। আসলে ভাইয়ের সঙ্গে দুধ আনতে বেরিয়েছি তো, দুধের ডিপোর পাশে নতুন একটা এসটিডি বুথ হয়েছে। দেখেই মনে হল আপনাকে একটা ফোন করি। তাই করলাম। কিছু মনে করলেন না তো?
কেউ যে তাকে এমনি এমনি ফোন করতে পারে, এই ফোনটা না এলে সে জানতেই পারত না। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে খুব খুশি হয়েছিল সে। আর সেই খুশিতেই সারাটা দিন তার খুব ভাল কেটেছিল।
লোকে বলে, কারও কারও মুখ দেখলে নাকি দিন খারাপ যায়। আবার কারও কারও মুখ দেখলে দিন ভাল যায়। কারও মুখ নয়, তার দিন ভাল করে দিয়েছিল শালিনীর ফোন। তাই তার পর দিন, মানে গত কাল একটু সকাল সকাল উঠে সে তার ফোনের জন্য অপেক্ষা করছিল। যদি আজও করে! কিন্তু না। সাড়ে সাতটা-আটটা-সাড়ে আটটা বেজে গেল। সে ফোন করল না। এমনকী সারা দিনে অফিসেও একটা না। রাতে শোবার সময় ভেবেছিল, কাল সকালে নিশ্চয়ই ও ফোন করবে। তাই সকাল থেকে যত বার ফোন বেজে উঠেছে, ও প্রায় লাফিয়ে গিয়ে ফোন ধরেছে। এবং দেখেছে, সবই এর ওর তার ফোন। কিন্তু যার ফোনের জন্য ও অপেক্ষা করে আছে, তার কোনও পাত্তা নেই। ঘড়িতে তখন ন’টা বেজে গেছে। নাঃ, ও আজ আর ফোন করবে না! ঋজু স্নানে ঢুকে পড়ল।
বেরিয়ে শোনে, একটা ফোন এসেছিল।
— কার?
ওর মা বললেন, রিনা গিরি বলে একটা মেয়ে ফোন করেছিল।
— ও, রিনা গিরি! মানে আশিসের বউ। কী বলল?
— কিছু বলেনি। শুধু বলল, কখন পাওয়া যাবে? তা আমি বললাম, আধ ঘণ্টা পরে করুন। ও স্নানে গেছে।
ঋজু একটু বেলা করেই ব্রেক ফাস্ট করে। দুধ-মুড়ি খেতে খেতে ও শুনল, ফোন বাজছে। ফোনের কাছে মা। তাই ও আর উঠল না। এটা নিশ্চয়ই শালিনীর ফোন না!
ফোন ধরেই মা বললেন, ঋজু, তোর ফোন।
— আমার! এত দেরিতে ফোন করল! পড়ি কি মড়ি করে ছুটে গেল ও— হ্যাঁ, ঋজু বলছি।
ও প্রান্ত থেকে একটা কোকিল কণ্ঠি ভেসে এল— আমি কণিকা রায় বলছি। চিনতে পারছেন? কাল আমরা একসঙ্গে দাঁতনে গিয়েছিলাম...
— আরে, হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন। কাল ফিরতে কোনও অসুবিধে হয়নি তো? কেমন আছেন? এখন কোথায়?
— আমি তো অফিসে।
— এত সকালে?
— সকাল কোথায়? পৌনে দশটা বাজতে চলল...
— আপনাদের ক’টা থেকে?
— আমাদের তো সাড়ে ন’টার মধ্যে ঢুকে পড়তে হয়। আমরা ডাইরেক্ট সিজিএমের সঙ্গে কাজ করি তো...
— তাই নাকি?
— আমরা তো আর আপনাদের মতো সাংবাদিক নই যে, বিকেল বেলায় অফিস।
— বিকেলে শুরু হয় ঠিকই, কিন্তু থাকতে হয় ক’টা পর্যন্ত, সেটা দেখুন। আপনারা তখন ঘুমোন।
— অনেকে হয়তো ঘুমোয়, কিন্তু সবাই ঘুমোয় না। খুব ধীরে ধীরে কেটে কেটে কথা ক’টা বলল কণিকা।
— কেন? আপনি কি জেগে থাকেন?
— একদিন বেশি রাতে ফোন করে দেখবেন।
— হ্যাঁ, আপনাকে বেশি রাতে ফোন করি, আর আপনার কর্তা সন্দেহ করা শুরু করুক, এত রাতে আমার বউকে ফোন করছে কে!
— সন্দেহ করবে না।
— কনফার্ম?
— জানলে তো করবে।
— মানে?
— উনি অন্য ঘরে শোন।
— ও। বলেই, একটু থেমে, অন্য প্রসঙ্গে যাবার জন্যই ঋজু বলল, একটু আগেই রিনা ফোন করেছিল।
— কখন?
— এই তো, মিনিট দশ-বারো আগে।
— রিনা নয়, আমিই করেছিলাম।
— আপনি? মা যে বললেন, রিনা গিরি...
— হ্যাঁ, আমি রিনার নামই বলেছিলাম। আসলে আপনার বাড়ির কে কী রকম, আমি জানি না তো। কে আবার কী ভাববে, তাই রিনার নাম বলেছিলাম। এক দিন চলে আসুন না আমাদের বাড়িতে।
— ওরেব্বাবা, আপনাদের বাড়ি তো সেই তেপান্তরের মাঠে। যেতে আসতেই সারা দিন লেগে যাবে।
— মোটেও তা নয়।
— আমি তো দু’-এক বার এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে গেছি, জানি।
— লাস্ট কবে এসেছেন?
— বছর পনেরো আগে।
— প... নে... রো...  ব... ছ... র... আগে! এখন এক বার এসে দেখুন...
— আসলে সল্টলেক শুনলেই না গায়ে জ্বর আসে। লোকে যে কী ভাবে ওখান থেকে ডেলি প্যাসেঞ্জারি করে, কে জানে!
— ঠিক আছে, আপনাকে আমাদের বাড়িতে আসতে হবে না। আপনি একদিন আপনার সময় সুযোগ মতো আমাদের অফিসে আসুন।
— আপনার অফিসে যাবার জন্য আমার কোনও সময় সুযোগ লাগবে না। রোজই যেতে পারি। আমাদের অফিস থেকে টেলিফোন ভবন তো একটুখানি।
— তা হলে আজকেই চলে আসুন।
— আজকে!
— হ্যাঁ, আজকে।
— ঠিক আছে, দেখছি।
— দেখছি না। চলে আসুন। নীচে এসে আমাকে একটা ফোন করে নেবেন।
— আপনার নম্বরটা যেন কত?
কণিকা শুধু অফিসের নম্বরই নয়, তার মোবাইল নম্বর, এমনকী বাড়ির ফোন নম্বরটাও দিয়ে দিল। ঝটঝট করে লিখে নিতে নিতে ঋজু বলল, বাড়ির নম্বরটা পেয়ে ভালই হল। রাতের দিকে অনেক সময় কাজের চাপ কম থাকে। তখন কথা বলা যাবে। আপনি ক’টা অবধি জেগে থাকেন?
— করুন না। যখন খুশি করতে পারেন।
— রাত বারোটায়?
— বারোটা কেন? একটা, দুটো, তিনটে... যখন খুশি।
— ফোন ধরবেন তো?
— করেই দেখুন না...
সে দিন সকালে শালিনী ফোন করার পর সারাটা দিন অদ্ভুত এক আনন্দে সারা শরীর যেমন চনমন করে উঠেছিল, আজও তেমনই এক আনন্দে ঋজুর মনপ্রাণ খুশিতে ভরে উঠল। 
তিন 
কয়েক সপ্তাহ আগে বিধান দত্তের সঙ্গে সুন্দরবন গিয়েছিল ঋজু। বিধানদা কবিতা লেখেন। গল্প লেখেন। ফিচার লেখেন। বিখ্যাত লেখকের উত্তরসূরি হিসেবে নিজেকে দেখানোর জন্য অনেকে যেমন এক-দেড়শো বছর আগেকার কোনও বিখ্যাত লেখকের মেয়ের দিকের অমুক ঘরের তমুক হিসেবে নিজের মিথ্যে মিথ্যে পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করেন, কেউ কেউ আবার আরও এক ধাপ এগিয়ে, নমস্য কোনও লেখকের চোদ্দোতম বা ষোড়শতম বংশধর হিসেবে নিজেকে দেখিয়ে একটা ভুয়ো বংশ তালিকা তৈরি করে ফেলেন। ঠিক তেমনি, উনি কোন ঘরানার লেখক, তা বোঝানোর জন্য, দু’-চার পুরুষ আগের তেমন কোনও বিখ্যাত কবি বা লেখক না পেয়ে, শুধুমাত্র পদবির মিল দেখেই উনি আকড়ে ধরেছেন স্বয়ং মাইকেল মধুসূদন দত্তকে। তাঁর নামে একটা আকাদেমিও ফেঁদে বসেছেন। সেই আকাদেমি থেকে প্রতি বছর এক ঝাঁক কবি-লেখক-সাংবাদিককে পুরস্কার দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে তেমন লোককেই বাছা হয়, যার যোগাযোগ খুব ভাল। তার যোগাযোগের সূত্র ধরেই যাতে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ওই অনুষ্ঠানের খবর ফলাও করে ছাপা হয়। ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ারা আসে।
গত বছর যখন এই অনুষ্ঠান হয়, তার কিছু দিন আগে বিধানদা ঋজুকে বলেছিলেন, কয়েকটা পার্টি জোগাড় করে দাও না।
ঋজু অবাক। — পার্টি মানে?
উনি বলেছিলেন, তোমার তো বহু লোকের সঙ্গে জানাশোনা আছে। একটু বলেকয়ে দেখো না, কেউ যদি রাজি হয়।
তখনই ঋজু জেনেছিল, মাইকেল মধুসূদন আকাদেমি থেকে প্রতি বছর মহাধুমধাম করে কখনও গ্রেট ইস্টার্নে, কখনও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ শতবাষির্কী ভবনে, আবার কখনও টাউন হলে যে অনুষ্ঠান হয়, সেখানে প্রচুর টাকা খরচ হয়। বিদেশ থেকে যাঁরা আসেন, তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। কাউকে কাউকে তো যাতায়াতের বিমান ভাড়াও দিতে হয়। তার উপর আছে হল ভাড়া। অনুষ্ঠানের দিন অত লোকের জন্য খাবারের প্যাকেট। আমন্ত্রিতদের জন্য স্পেশ্যাল প্যাকেট। কিন্তু আকাদেমির তো অত টাকা নেই। তাই, উনি যাঁদের পুরস্কার দেবেন বলে ভাবেন, তাঁদের সঙ্গে আরও কিছু লোককে উনি পুরস্কার দেন। অবশ্যই একেবারে এলেবেলে লোককে নয়, যাঁর কিছু অবদান আছে, এবং আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট স্বচ্ছল, তেমন লোককে। তাঁদের সঙ্গে আগেই উনি কথা বলে নেন, আপনাকে আমরা পুরস্কার দিচ্ছি, কিন্তু এই অনুষ্ঠানের যে বিপুল খরচ, তার অন্তত কিছুটা আপনাকে ডোনেট করতে হবে। এই শর্তে নাকি বহু লোকই রাজি হয়ে যায়।
দু’-এক দিন পর পরই বিধানদা ফোন করেন, কাউকে পেলে? ঋজুর ভাল লাগে না। ভাবে, কাকে বলব! কী ভাবে বলব! এমন সময় মনে পড়ে গেল গৌর মিত্রের কথা।
ঋজু এক দিন কথায় কথায় ওর অফিসের দেবদূতদাকে বলেছিল, ওর বউয়ের অর্থপেডিক সমস্যার কথা। সেই কবে, বিয়েরও আগে, বড় নালা টপকাতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল সে। গোড়ালি থেকে সরে গিয়েছিল হাড়। তিন-চার বার প্লাস্টার করা হয়েছে। বহু ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। এখনও রাতের দিকে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। পেন কিলার খেয়ে দিন কাটায়।
দেবদূত কোনও কথা বলেননি। খসখস করে দু’লাইন চিঠি লিখে দিয়েছিলেন এনআরএসের সুপারিনটেন্ডকে। বলেছিলেন, কালই চলে যাস। ও সব ব্যবস্থা করে দেবে।
বউকে নিয়ে পর দিনই ও গিয়েছিল হাসপাতালে। সুপারিনটেন্ড তখন একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিঙে ব্যস্ত। কখন ফাঁকা হবে কেউ বলতে পারছে না। ঋজু তাই বেয়ারাকে দিয়ে দেবদূতের লেখা চিঠিটা সুপারিনটেন্ডের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে ভিতরে ডেকে নিয়েছিলেন তিনি। ওখানকারই একজনকে সঙ্গে দিয়ে বলেছিলেন, আমি এখন একটু ঝামেলার মধ্যে আছি। কিছু মনে করবেন না। ইনি হচ্ছেন গৌরবাবু। আপনাকে নিয়ে যাচ্ছেন। উনিই সব ব্যবস্থা করে দেবেন। দেবদূতবাবু ভাল আছেন তো?
করিডর দিয়ে যেতে যেতে গৌরবাবু নানান প্রশ্ন করছিলেন। কী নাম? কোথায় থাকেন? সুপারকে চিনলেন কী করে? কী করেন?
যে-ই শুনলেন, ঋজু আনন্দবাজারের লোক, অমনি তাঁর চেহারা পাল্টে গেল। কাঁচুমাচু হয়ে বলতে লাগলেন, আচ্ছা, আপনাদের রবিবারের পাতায় গল্প দিতে গেলে কী করতে হয়?
তার পর থেকে আর সঙ্গ ছাড়েননি উনি। ডাক্তার দেখানোর পর নিজের ঘরে নিয়ে গিয়েছিলেন ওদের। চা খাইয়েছিলেন। উনি নাকি বহু দিন ধরে গল্প লিখছেন। উপন্যাসও লিখেছেন। দশ-বারো বছর আগে তাঁর একটা বই বেরিয়েছিল। এ বছর বইমেলাতেও একটা বই বেরিয়েছে। লাস্ট বইটার একটা কপিও তিনি সে দিন ওদের উপহার দিয়েছিলেন। বইটার মলাটে লেখকের নাম দেখেই ঋজু জেনেছিল, লোকটার পদবি মিত্র। গৌর মিত্র। বাসে ফেরার সময় উল্টেপাল্টে দেখেওছিল বইটা। না। আহামরি নয়। তবে খুব একটা খারাপও নয়।
এ দিকে বিধানদা বারবার তাকে তাগাদা দিচ্ছেন। অনুষ্ঠানের দিন এগিয়ে এসেছে। হাতে আর সময় নেই। যে যা দেয়, দেখো না... ঋজু বুঝতে পারছে, যতক্ষণ না ও কাউকে জোগাড় করে দিচ্ছে, এই লোকটা ততক্ষণ ওকে জ্বালাবে। অথচ তাঁকে কিছু বলতেও পারছে না ও। তাই একদিন গৌরবাবুকে ফোন করে ওই বইটার ভূয়সী প্রশংসা করল সে—  খুব ভাল বই। এই বইটার একটা পুরস্কার পাওয়া উচিত।
গৌরবাবু তো খুশিতে ডগমগ। তিনি বলতে লাগলেন, আমি ভাই নিজেকে একদম নিংড়ে দিয়েছি। আমার লেখায় কোনও ফাঁকি পাবেন না। কিন্তু জানেনই তো, পুরস্কার-টুরস্কার সব লবির ব্যাপার। ও সব আমি করতেও পারি না। যোগাযোগও নেই। চাইও না।
কিন্তু ঋজু যে-ই মধুসূদন আকাদেমির কথা বলল এবং পুরস্কার পাওয়ার শর্তের কিছুটা আভাস দিল, গৌরবাবু যেন হাতে স্বর্গ পেলেন। নিজে থেকেই বললেন, দেখুন না যদি হয়, যা লাগে দেব। জীবনে তো কিছুই পাইনি। শেষ বয়সে যদি কিছু পাই।
ও বিধানদার সঙ্গে গৌরবাবুর আলাপ করিয়ে দিল। অনেক দর কষাকষির পর দু’হাজার টাকায় রফা হয়ে গেল মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কারের।
না। আর কোনও পার্টি জোগাড় করে দিতে পারেনি ও। তবে তার পর থেকেই, বয়সের বিস্তর ফারাক থাকলেও বিধানদার সঙ্গে ওর বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। সেই সখ্যতার সূত্র ধরেই ঋজুকে সুন্দরবন যাওয়ার কথা বলেছিলেন বিধানদা। যদিও এর আগে ঋজু এক বার সুন্দরবন গিয়েছিল। ওর বন্ধু হাননান আহসান একটা মেডিকেল টিম নিয়ে এক বার কুমিরমারি যাচ্ছিল। সুন্দরবনের নাম শুনেই আগ্রহ দেখিয়েছিল ঋজু। হাননান বলেছিল, তা হলে চলুন না আমাদের সঙ্গে।
সে বার সুন্দরবনে গিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কিছুই দেখা হয়নি তার। ট্রেনে করে ক্যানিং। তার পর মাতলা নদী পেরিয়ে ডকঘাট। সেখান থেকে ট্রেকারে করে সোনাখালি। সোনাখালি থেকে ভটভটি চেপে সোজা কুমিরমারি। খুব ভোরে রওনা হয়েও পৌঁছতে পৌঁছতে বেলা গড়িয়ে গিয়েছিল ওদের। রোগী দেখতে দেখতে রাত। রাতটা কোনও রকমে কাটিয়ে পর দিন ভোর বেলাতেই কলকাতার উদ্দেশে বেরিয়ে পড়েছিল ওরা। তাই বিধানদা যখন বললেন, উদ্যোক্তারা সুন্দরবনটা ঘুরিয়ে দেখাবে বলেছে, তখন এক কথায় রাজি হয়ে গেল ও।
শ্যামবাজারের মেট্রো স্টেশনের কাছে অপেক্ষা করছিল উদ্যোক্তাদের পাঠানো সাদা আম্বাসাডর। ঋজু গিয়ে দেখে, শুধু বিধানদাই নয়, বিধানদার সঙ্গে তাঁর মেয়েও আচ্ছে। বছর তেইশ-চব্বিশ বয়স। গোলগাল চেহারা। ফর্সা। গড়পরতা বাঙালি মেয়েদের মতোই হাইট। ও যেতেই গাড়ি ছেড়ে দিল।
চুটিয়ে ঘুরেছিল ওরা। বিধানদা ওর দাদার মতো। তাই তাঁর মেয়ে শ্বেতাকে ও আর আপনি-আজ্ঞে করেনি। আলাপের সঙ্গে সঙ্গেই একেবারে তুমি দিয়েই শুরু করেছিল কথাবার্তা। তখনও বাসন্তীর ওই ব্রিজটা হয়নি। গাড়ি নিয়ে ও পারে যাওয়া যেত না। তাই নৌকো করে ও পারে গিয়েই সারা দিনের জন্য ওরা একটা ভ্যানরিকশা ভাড়া করে নিয়েছিল। যিনি ওদের ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন, তিনি আর বিধানদা বসেছিলেন সামনে। ঋজু আর শ্বেতা বসেছিল রিকশার পেছনে পা ঝুলিয়ে, পাশাপাশি। উল্টো দিকে মুখ করে।
সন্ধ্যা নামছিল। ফুরফুর করে হাওয়া দিচ্ছিল। ঋজু হঠাত্‌ শ্বেতাকে বলল, এখন যদি আচমকা একটা বাঘ সামনে এসে পড়ে, কী করবে?
একটু ঘাবড়ে গিয়ে সে বলল, এই, সন্ধেবেলায় একদম এই সব কথা বলবেন না।
— কেন?
— এটা সুন্দরবন না! জানেন না, এখানে ডাঙায় বাঘ আর জলে কুমির।
— জানি। সেই জন্যই তো বললাম।
ওরা যখন কথা বলছে, ও দিকে বিধানদা আর ওই সঙ্গী ভদ্রলোক একনাগাড়ে কী সব বকর বকর করে যাচ্ছেন। কিছু একটা আলোচনা করছেন ঠিকই, কিন্তু কী যে আলোচনা করছেন, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। দমকা বাতাস হঠাৎ হঠাৎই কানের কাছে ফরফর করে কানের লতি শীতল করে দিয়ে যাচ্ছে।
সুনসান সরু রাস্তা। বেশ অন্ধকার-অন্ধকার হয়ে এসেছে চারপাশ। কোথাও কিছু নেই, হঠাত্‌ বাঘের গর্জন। ঋজুর পাশে বসেছিল শ্বেতা। সে ওকে জাপটে ধরল। ঋজু বলল, ভয় পেয়ে গেলে?
— সত্যি, আপনি না, উফ্, এই ভাবে কেউ ভয় দেখায়?
— আবার দেখাব?
— কেন?
— তা হলে আবার এই ভাবে আমাকে...
— ধ্যাত্‌, আপনি না...
বিধানদা আর ওই লোকটা তখন হো হো করে হাসছেন। কেন হাসছেন, ওরা বুঝতে পারল না। এর মধ্যেই এত ঘুরঘুট্টি অন্ধকার নেমে এসেছে যে, নিজেদের হাত পা-ই দেখা যাচ্ছে না। সেখানে উল্টো দিকে মুখ করে বসা, বিধানদারা নিশ্চয়ই এক মুহূর্ত আগে ঘটে যাওয়া ওদের এই ব্যাপারটা দেখতে পাননি। কী ঘটেছে বুঝতেও পারেননি। নাক দিয়ে তার বাঘের গর্জন করাটা হয়তো শুনলেও, শুনে থাকতে পারেন!
অন্ধকারের মধ্যে চালক হয়তো খেয়াল করেনি। যেতে যেতে ভ্যানরিকশার চাকাটা হঠাত্‌ গর্তে পড়ে গেল। ভ্যানরিকশাটা ঝাঁকুনি দিয়ে লাফিয়ে উঠল। অতশত না ভেবে ঝপ করে পেছন থেকে শ্বেতার কাঁধটা চেপে ধরল ঋজু। যাতে পড়ে না যায়।
— এই ছাড়ুন। পিছনে বাবা আছে। খুব চাপা গলায় বলল শ্বেতা। ঋজু বলল, উনি এখন গল্পে মশগুল। আমরা যে এখানে আছি, উনি হয়তো ভুলেই গেছেন।
— যদি পেছনে তাকায়?
— তা হলেও দেখতে পাবে না। এত অন্ধকার...
— আপনি না...
— হ্যাঁ আমি। বলে, ওকে আরও কাছে টেনে নিল ঋজু। 
যখন হোগল নদী পার হবার জন্য ভ্যানরিকশা থেকে নেমে ওরা খেয়াঘাটের দিকে যাচ্ছে, ও দিক থেকে একটা লোক ঋজুর সামনে এসে দাঁড়াল, আপনি এখানে?
— ও পারে, ওই কুলতলিতে, নারায়ণতলা রামকৃষ্ণ বিদ্যামন্দিরের একটা অনুষ্ঠানে এসেছিলাম। তা, এই দ্বীপটাও একটু ঘুরে গেলাম।
— আমাকে চিনতে পেরেছেন?
— না, ঠিক, আসলে...
— আমি প্রভুদান হালদার। ব-দ্বীপ বার্তায় লিখি। বাংলা আকাদেমিতে আপনার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল...
— ও, আচ্ছা আচ্ছা। তাই বুঝি? আলাপ করিয়ে দিই, ইনি হচ্ছেন বিধান দত্ত...
— আপনি বিধান দত্ত? আরিব্বাশ। আপনি তো বিখ্যাত মানুষ। লাফিয়ে উঠল সে। মুখের মধ্যে ঝলমল করে উঠল এক ঝলক আলো। বিধানদার হাত দুটো ধরে সে বলতে লাগল, আমি ভাবতেই পারছি না, আপনার মতো একজন লোকের সঙ্গে এখানে এই ভাবে দেখা হয়ে যাবে। আমি আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানি। আপনার নাম তো গত বছর নোবেল প্রাইজে উঠেছিল, তাই না?
বিধানদা কী বলবেন বুঝে উঠতে পারছেন না। এক বার ঋজুর দিকে তাকাচ্ছেন আর এক বার লোকটার দিকে। তার পরেই লোকটাকে বললেন, আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে খুব ভাল লাগল। একটু কথা বলতে পারলে আরও ভাল লাগত। কিন্তু আমাদের আবার তাড়া আছে। অনেকটা যেতে হবে তো... ও পারে গাড়ি নিয়ে ড্রাইভার অপেক্ষা করছে। আপনার সঙ্গে পরে আবার কথা হবে, কেমন?
লোকটার চোখমুখ পাল্টে গেছে। আনন্দে আপ্লুত। যে-কোনও দিন নোবেল পুরস্কার পেয়ে যেতে পারেন, এমন একটা লোকের সঙ্গে যে এই জায়গায়, এই ভাবে তার দেখা হবে যাবে, তা বুঝি সে কল্পনাও করতে পারেনি। তাই, যাবার জন্য বিধানদা উসখুশ করলেও লোকটা কিছুতেই তাঁকে ছাড়তে চাইছিল না। ঠিকানা নিল। ফোন নম্বর নিল। তার পর কোনও রকমে রেহাই দিল। 
পর দিন কলকাতায় ফেরার সময় গাড়িতে আসতে আসতে ঋজুকে বিধানদা বললেন, কলকাতায় গিয়ে কিন্তু কালকের রাতের ব্যাপারটা আবার কাউকে বলে দিও না। যা সব লোকজন। এই নিয়ে আবার হাসাহাসি করবে। ও, ভাল কথা। সামনেই তো আমাদের অনুষ্ঠান। হাতে আর সময় নেই। ম্যামেনটো-ফ্যামেনটো সব হয়ে গেছে। না হলে কবিতার জন্য এ বারই তোমাকে একটা পুরস্কার দিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু কী করব! তুমি বরং একটা কাজ করো, অনুষ্ঠানের দিন পুরস্কার পর্ব মিটে যাওয়ার পরে তুমি তোমার পছন্দের লোকজন নিয়ে একটা কবিতা পাঠের আসর করে দাও। কী, কেমন হবে? 
বিধানদা বলে দিয়েছেন। আর কোনও চিন্তা নেই। ঋজু উঠে পড়ে লেগেছে। একে ফোন করছে। তাকে ফোন করছে। কে কোন পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত, কার সঙ্গে কার গাঁটছড়া, কাকে নিলে আখেরে তার লাভ, এই সব সাত-পাঁচ ভেবে, হিসেব-নিকেশ করে সে তালিকা তৈরি করছে। কাকে নেওয়া যায়! কাকে নেওয়া যায়! কাকে নেওয়া যায়!
তালিকা তৈরি। কিন্তু আজ সকালে কণিকার অমন একটা ফোন পাওয়ার পর তাকে না রাখলে হয়! তাই, সেই তালিকার প্রথমেই লেখা হয়ে গেল কণিকার নাম। পরমার্থকে এক বার দেখিয়েও নিল সে, কোনও অসুবিধে নেই তো? এক ঘণ্টার ওপর সময়। সাতাশ জন কবি। তিন মিনিট করে এক-একজন পড়লেও, সবাই তো আর ঘড়ি দেখে পুরো তিন মিনিট করে পড়বে না। কেউ কেউ ছোট কবিতাও পড়বে। আবার দু’-একজন নাও আসতে পারে। হয়ে যাবে না? 
ফোন করে কবিদের তালিকাটা শুনিয়েও দিল বিধানদাকে। তিনি কোনও উচ্চবাচ্চ্য করলেন না। শুধু বললেন, এত জন! অত সময় হবে! সবাইকে একদম ছোট্ট ছোট্ট কবিতা পড়তে বলবে, কেমন? না হলে কিন্তু সময়ে কুলোবে না। সাড়ে ন’টার মধ্যে হল ছেড়ে দিতে হবে। না হলে কিন্তু কশন মানি থেকে ওরা পাঁচশো টাকা কেটে নেবে।
ঋজু বলল, আপনি চিন্তা করবেন না। সব হয়ে যাবে। বলেই, ফোন করল কণিকাকে। একটা বাচ্চা মেয়ের গলা, মা এখনও আসেননি।
— এখনও আসেননি! দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাল ঋজু। আটটা বেজে গেছে। ঠিক আছে, পরে করব, বলেই, তালিকায় নাম লেখা কবিদের একটার পর একটা ফোন করতে লাগল সে। আর কথা হওয়ামাত্রই সেই নামের পাশে বসিয়ে দিতে লাগল একটা করে টিক চিহ্ন।
পরে, মেলাতে গিয়ে দেখে সবাইকেই ফোন করা হয়েছে। শুধু কণিকাকে ছাড়া। রাত তখন এগারোটা বেজে গেছে। ও মনে মনে ভাবল, এত রাতে ফোন করাটা কি ঠিক হবে! তার পরেই মনে পড়ল, ও তো বলেছিল, যখন খুশি ফোন করতে পারেন। একটা, দুটো, তিনটে। সেই তুলনায় তো এখন সবে সন্ধে।
ও ফোন করল। দেখল, এনগেজড। খানিকক্ষণ পর আবার করল। তখনও তাই। তার আধ ঘণ্টা পরেও, ওই একই। শুধু এনগেজড আর এনগেজড। আর একটা নম্বর ছিল। মোবাইলের। সেখানেও করল। ও প্রান্ত থেকে ভেসে এল রেকর্ডেট গলা, আপনি যে নম্বরে ফোন করেছেন, সেটি এখন পরিষেবা সীমার বাইরে।
দু’মিনিট পর আবার করল। এ বার ভেসে এল— এই নম্বরের কোনও অস্তিত্ব নেই। ঋজু অবাক। একটু আগেই বলল, পরিষেবা সীমার বাইরে, এখন আবার বলছে এই ফোনের কোনও অস্তিত্ব নেই! এই নম্বরটা তো ও-ই দিয়েছিল। তা হলে কি ও ভুল নম্বর দিল! কিন্তু খামোকা ভুল নম্বর দিতে যাবে কেন! তা হলে কি আমিই টুকতে ভুল করেছিলাম! আর এক বার দেখি তো, ফের ফোন করল ও। শুনতে পেল সেই একই কথা। তার পরেও বেশ কয়েক বার ল্যান্ড লাইনে ফোন করেছে ও। এমনকী, অফিস থেকে যখন বেরোয়, সেই রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ, তখনও তার ফোন ব্যস্ত। 
চার 
ট্রেনে উঠেই কণিকার মোবাইল থেকে সাকিলকে ফোন করল ঋজু— সাকিল, দশটা পাঁচের লোকালটা ধরতে পারিনি। এগারোটা সতেরোটা ধরলাম। এখন পার্ক সার্কাস ক্রশ করছে। তুই তো জানিস যেতে কতক্ষণ লাগবে, হিসেব করে সেই মতো তুই কিন্তু স্টেশনে থাকিস। না হলে সমস্যায় পড়ে যাব।
সাকিল ওর বন্ধু। আজকালে কাজ করে। থাকে ডায়মন্ড হারবারে। পুলিশ মহলে খুব খাতির। মগরাহাট থানার ওসি অরিন্দম আচার্য কী ভাবে মাছওয়ালাদের সঙ্গে জেলে সেজে ওখানকার কুখ্যাত ডাকাতকে ধরেছিল, সে খবর ফলাও করে ছেপে সবার নজর করেছে। ওর সম্পাদিত ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘কুসুমের ফেরা’-র তরফ থেকে প্রতি বছর অনুষ্ঠান করে। এ বছর করেছিল ডায়মন্ড হারবার থানার নীচে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে একশো জনেরও বেশি গুণিজনকে ও সংবর্ধনা দিয়েছিল। তাতে যেমন ছিল নাট্যকর্মী, গায়ক, সমাজসেবী, উপন্যাসিক থেকে শুরু করে ওর বস্‌ কবি মৃদুল দাশগুপ্ত, তেমনি সংবর্ধিত হয়েছিল আর পাঁচ-ছ’জন কবির সঙ্গে ঋজুও।
সেখানেই ঋজু দেখেছিল, পুলিশরা কী ভাবে ওকে খাতির করে। স্থানীয় হোটেল-রিসর্টের মালিকরা প্রায় সকলেই সেখানে হাজির। তাদের কেউ স্পনসর করেছে স্মারক, কেউ ফুলের তোড়া, কেউ আবার উত্তরীয়।
সেই অনুষ্ঠানেই সাকিল ঘোষণা করেছিল, খুব তাড়াতাড়ি দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার সাংবাদিকদের জন্য একটা প্রেস ক্লাব তৈরি করতে যাচ্ছে তারা। জমি পাওয়া গেছে। কিছু আর্থিক সাহায্যও এসে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।
সে দিন অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত হয়ে গিয়েছিল। তাই ঋজু আর ফিরতে পারেনি। শুধু ঋজু নয়, কলকাতার আরও কয়েক জনের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা ওখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একটা ফোনেই করে ফেলেছিল সাকিল। তাই, তার দু’দিন পরেই সাকিলকে ফোন করে ঋজু বলেছিল, তোর তো ওখানে খুব দাপট দেখলাম। শোন না, বলছিলাম কি, ওখানকার কোনও একটা হোটেলে ব্যবস্থা করে দে না, কয়েক ঘণ্টার জন্য।
— ব্যবস্থা করার কিছু নেই। যে দিন খুশি চলে আয়।
— না, আগে থেকে না বললে...
— ধুর, চলে আয় না।
— না, মানে, আমি একজনকে নিয়ে যাব তো, তাই বলছিলাম...
— যখনই হোটেলের কথা বলেছিস, তখনই বুঝে গেছি। কত লোক আসে। তোর কোনও চিন্তা নেই। চলে আয়।
— বলছিলাম কি, পুলিশের কোনও ঝামেলা-টামেলা হবে না তো?
— আমি তো আছি, না কি? চলে আয়।
— কী রকম নেয়-টেয় রে?
— তোকে ও সব ভাবতে হবে না। যে দিন আসবি, তার আগের দিন শুধু একটা ফোন করে দিবি, ব্যাস। আমি স্টেশনে থাকব। 
ঋজু এর আগে কখনও কোনও মেয়েকে নিয়ে শহরের বাইরে যায়নি। ফোনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে শুধু এক বার হেদুয়ার কাছে সান ফ্লাওয়ার নার্সিংহোমের সামনে দেখা করেছিল শালিনীর সঙ্গে। তাকে দেখে ওর একদম পছন্দ হয়নি। যেমনি গায়ের রং, তেমনি দেখতে। তেমনি তার পোশাক-আশাক। ওই রকম একটা ছেঁড়া ছেঁড়া রং-চটা স্যান্ডেল পরে কেউ প্রেম করতে আসে? ছিঃ। কিন্তু সে কথা তো আর বলা যায় না। গিয়ে, হুট করে চলেও আসা যায় না। তাই ট্যাক্সিতে নয়, সেখান থেকে ওকে নিয়ে বাসে করে দেশবন্ধু পার্কে গিয়েছিল ও। ইচ্ছে না থাকলেও শালিনীর সঙ্গে একটা গাছের তলায় বসেছিল। শালিনীই আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিল, কিছু দিন আগে ওই ঝোঁপের আড়ালে কারা খুব খারাপ অবস্থায় ধরা পড়েছিল। বলেছিল, এই, জানো তো, কলেজ স্ট্রিটের কাছে বাটা আছে না, তার পাশ দিয়ে রাজাবাজারের দিকে খানিকটা গেলেই ডান হাতে একটা সিনেমা হল আছে— জহর। চেনো?
ঋজু ‘না’ বলাতে ও বলেছিল, ওখানে না, এ মার্কা বই দেখানো হয়। আমি কোনও দিন দেখিনি। যাবে?
— মেয়েটির কথা শুনে বড় অস্বস্তি হচ্ছিল ওর। প্রথম সাক্ষাতেই কোনও মেয়ে এ রকম কথা বলতে পারে! ভরদুপুরে শুনশান পার্কে চারপাশ ফাঁকা পেয়েও চুমু তো দূরের কথা, তার হাতটাও ছুঁতে ইচ্ছে করেনি ওর। বসার খানিকক্ষণের মধ্যেই ‘আজ একটু তাড়াতাড়ি অফিস যেতে হবে’ বলে তড়িঘড়ি উঠে পড়েছিল সে।
তার পর দিনই ছিল বিধানদার অনুষ্ঠান। মহাজাতি সদনে। আগের দিন অনেক রাত পর্যন্ত বারবার ফোন করেও না পেয়ে, পর দিন সকালেই অফিসের ফোনে কণিকাকে ধরেছিল ঋজু। ওখানে কবিতা পাঠ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল সাড়ে পাঁচটায়। বিধানদা ওকে বলে দিয়েছিল সাড়ে চারটের মধ্যে হলে ঢুকে পড়তে। প্রচুর কাজ আছে।
ঋজু এসে দেখে, বিধানদারা তারও আগে চলে এসেছেন। মঞ্চে চেয়ার পাতা হচ্ছে অতিথিদের জন্য। ফুল দিয়ে সাজানো হচ্ছে টেবিল। হঠাত্‌ ওর চোখ চলে গেল শ্বেতার দিকে। ও আজ হলুদ শাড়ি পড়ে এসেছে। এ শাড়িতে ও এর আগেও ওকে দেখেছে। ময়দানের বঙ্গ-সংস্কৃতি মেলায়। সেখানে ও শুধু একা নয়, ও যেখানে গান শেখে, সেই স্কুলের এক ঝাঁক মেয়ে এই রকম শাড়ি পরে গান গেয়েছিল, আমার দিন ফুরালো ব্যাকুল বাদল সাঁঝে...
মাথার উপরে তখন গনগন করছে সূর্য। দর্শক বলতে যারা গান গাইছে তাদের অভিভাবক আর উদ্যোক্তাদের কয়েক জন। সঙ্গে বিধানদা ছিলেন। তাই, সুন্দরবনের ভ্যানরিকশায় অমন নিবিড় একটা ঘটনার পরেও ‘কী, কেমন আছ’, ‘ভাল তো?’, ‘তোমার তো দারুণ গলা’ ছাড়া তার সঙ্গে আর কোনও কথা হয়নি ঋজুর।
আজ তৃতীয় বার, তার সঙ্গে ওর দেখা হল। হল চোখাচোখিও। কয়েক মুহূর্ত মাত্র। তার পরেই একটু লাজুক হেসে চোখ নামিয়ে নিল শ্বেতা।
কিন্তু শ্বেতা নয়, ঋজুর তখন মন ছটফট করছে কণিকার জন্য। ও আসবে তো! একে একে তখন অনেকেই এসে গেছে। এসে গেছে তারাও, ও যাদের কবিতা পড়ার জন্য আসতে বলেছে।
ওকে উদ্বিগ্ন দেখে গণেশ জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে? মিহির বলল, একটু ধীরস্থির হয়ে বসো। অত টেনশন করার কিছু নেই। রিনা বলল, শুনলাম, কণিকাকেও ফোন করেছিলেন?
ও বলল, হ্যাঁ। তার পরেই জানতে চাইল, আশিস আসেনি?
রিনা বলল, এসে যাবে। মহাদেববাবুকে বলেছেন নাকি?
— মহাদেববাবুকে? কই, না তো। যাঃ, একদম ভুলে গেছি। দেখেছেন... মুখে এ কথা বলল ঠিকই, আসলে ও ইচ্ছে করেই মহাদেববাবুকে বলেনি।
ঋজু যেন কিছুতেই স্থির হয়ে বসতে পারছে না। প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে, পরমার্থ ওর পেছন পেছন এসে বলল, কণিকা তো? ঠিক আসবে। তুমি যাও, আমি দেখছি।
ঋজু হলে চলে এল। এল ঠিকই, তবে ও নয়, ওর দেহ। সিটে বসে ছটফট করছে আর ঘনঘন দরজার দিকে তাকাচ্ছে। খানিকক্ষণ পর দেখে কণিকাকে নিয়ে পরমার্থ ঢুকছে। ও উঠে দাঁড়াতেই, দূরে থেকেই পরমার্থ হাত দেখাল। বসো। ঋজু যে রো-য়ে বসে ছিল, তার ডাঁয়ে-বাঁয়ে পর পর কয়েকটা সিট খালি। ওরা ওর পাশে এসে বসে পড়ল।
ও যাদের যাদের বলেছিল, তারা সবাই এল। কিন্তু পুরস্কার-পর্বটা এতক্ষণ ধরে চলল এবং অতিথিরা প্রত্যেকেই এতক্ষণ ধরে বক্তব্য রাখলেন, আর বিধানদা সম্পর্কে এত মধুর মধুর কথা বললেন, এত ভূয়সী প্রশংসা করলেন যে, প্রায় ন’টা বেজে গেল। কবিতা পাঠের আসর আর করা গেল না।
বেরিয়েই, সি আর এভিনিউ আর মহাত্মা গান্ধী রোডের ক্রশিংয়ে আসতেই ২৩৯/এ বাস পেয়ে রিনা আর আশিস উঠে পড়ল। এই বাসটা একদম ওদের বাড়ির কাছে যায়। সেক্টর ফাইভের পেছনে, মহিষবাথানে। ওরা কণিকাকেও সঙ্গে নিতে চেয়েছিল। কাছাকাছি কোথাও নামিয়ে দেবে। কিন্তু তার আগেই ঋজু ওকে ইশারা করে বারণ করে দিয়েছিল ওদের সঙ্গে যেতে। রিনাদের বাস চলে যেতেই কণিকার কানের কাছে মুখ নিয়ে ঋজু বলল, আমি তোমাকে পৌঁছে দেব।
বাকিরা সবাই যখন যে যার মতো চলে গেল, তখন ওখানে দাঁড়িয়ে ও, কণিকা আর বোধিসত্ত্বদা। বোধিসত্ত্বদাই বলল, কোথায় যাবে?
ঋজু বলল, সল্টলেকে।
— সল্টলেকে কোথায়?
— কণিকা বলল, ভারতীয় বিদ্যাভবনের কাছে।
— এখান থেকে কত নম্বর যায়?
কণিকা বলল, এখান থেকে তো কোনও দিন যাইনি। আমি ঠিক জানি না। তবে কলেজ স্ট্রিট থেকে নাকি অটো যায়।
— তা হলে চলো কলেজ স্ট্রিটের দিকে যাই। বোধিসত্ত্বদা বলতেই কণিকা বলল, কাউকে জিজ্ঞেস করলে হয় না, ফুলবাগানের অটোগুলো কোত্থেকে ছাড়ে।
— ফুলবাগান?
— হ্যাঁ, এখান থেকে ফুলবাগান। ফুলবাগান থেকে আবার তেরো নম্বর ট্যাঙ্কের অটো। ওখান থেকে একটুখানি।
ওরা মহাত্মা গান্ধী মেট্রো স্টেশনের পাশ থেকে অটোয় উঠে পড়ল। পেছনের সিটের ও দিকে বোধিসত্ত্বদা, তার পরে ঋজু আর একদম এ দিকে কণিকা। চতুর্থ জন আসছে না দেখে, বোধিসত্ত্বদাই বলল, একজনের ভাড়া না-হয় আমরা দিয়ে দেব, চলুন।
অটো চলতে শুরু করল। রাজাবাজার ছাড়িয়ে মানিকতলার ব্রিজ পেরিয়ে যখন অটো ছুটছে, তখন লোডশেডিং। এতক্ষণ ঋজু ওর পায়ে পা ঘষছিল। পিঠের পেছন দিক থেকে হাত নিয়ে ওর কাঁধ ছুঁচছিল। ওর কাণ্ড দেখে মিটিমিটি হাসছিল কণিকা। ও-ও মুচকে মুচকে হাসছিল। এ বার কণিকার ডান হাতটা ধরে মুখের কাছে নিয়ে এসে ঝপ করে একটা চুমু খেয়ে নিল ও।
কণিকা ইশারা করল, পাশে উনি আছেন। ঋজু বলল, আরে বোধিসত্ত্বদা আমাদের লোক। উনি কিছু মনে করবেন না।
কথাটা শুনে বোধিসত্ত্বদাও বলল, চালিয়ে যাও, চালিয়ে যাও। এই তো বয়স।
শুনে কণিকা মুখ টিপে হাসল। ঋজু ওর দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বলল, দেখলে তো... তার পরেই চকাস করে ওর গালে একটা চুমু খেয়ে নিল। 
তার দু’দিন পরেই রবিবার। ওরা দেখা করল রবীন্দ্রসদন মেট্রো স্টেশনের সামনে। একটু আগেই পৌঁছে গিয়েছিল ঋজু। ও তখনও আসেনি। তাই, ও আদৌ আসবে কি আসবে না সে নিয়ে শংসয়ে ছিল। সেই উদ্বেগ থেকে দুটি লাইন মাথার মধ্যে ঘুরঘুর করতেই, ওর পকেটে যে ছোট্ট ডায়রিটা থাকে, সেটা বার করে লিখতে লাগল। লিখতে লিখতে হঠাত্‌ দেখে মাত্র কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে কণিকা। ও কাছে গিয়ে বলল, কখন এসেছ?
কণিকা বলল, এই তো কিছুক্ষণ আগে। দেখলাম তুমি লিখছ, তাই ডিসটার্ব করিনি। কী লিখছিলে?
— কবিতা।
— কী নিয়ে?
— তোমাকে নিয়ে।
— তাই? দেখি, কী লিখেছ?
— ছাপা হোক, তার পর দেখো।
— কী নাম দিলে?
— এখনও কোনও নাম দিইনি। দেখি, কী দেওয়া যায়! 
সে দিনই রাত্রে কণিকাকে ফোন করে ঋজু বলেছিল, আজকের দিনটা আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। রোজ যদি তোমার সঙ্গে এই ভাবে দেখা করা যেত!
— ইচ্ছে করলেই দেখা করা যায়। ও বলেছিল।
— কী ভাবে?
— আমার তো ছুটি হয় পাঁচটায়। তোমার তো ছ’টায় ঢুকলেও চলে। এক ঘণ্টা আমরা একসঙ্গে কাটাতেই পারি।
— ঠিক বলেছ তো! ঠিক আছে, কাল ঠিক পাঁচটার সময় আমি তোমার অফিসের গেটে চলে যাব। কেমন?
— না না না না। অফিসের গেটে না। আমাদের অফিসের সবাই তখন বেরোয় তো। কে কী ভাববে। কী দরকার? তার চে’ বরং ডালহৌসির মিনিবাস স্ট্যান্ডের কাছে থেকো। আর তুমি যদি পাঁচ-দশ মিনিট আগে চলে আসো। তা হলে নীচ থেকে একটা ফোন কোরো। আমি নেমে আসব। 
সেই রাতে কিছুক্ষণ পর পর আরও তিন-চার বার ফোন করেছিল ও। এমনকী, অফিস থেকে বেরোবার সময়ও। তাই মাথার মধ্যে নম্বরটা একদম গেঁথে গিয়েছিল। ফলে, পর দিন ও যখন টেলিফোন ভবনের সামনে ফোন করার গুমটি থেকে এক টাকার কয়েন ফেলে নম্বর টিপল, সেটা চলে গেল কণিকার বাড়িতে। যে মেয়েটি ধরল, সে বলল, মা তো অফিসে। 
শুধু সে দিনই নয়, তার পরেও বেশ কয়েক দিন ওর এই একই ভুল হয়েছিল। আর এই ভুলের জন্যই ঋজুকে খুব ভাল ভাবে চিনে গিয়েছিল কণিকার দুই যমজ মেয়ে। ছোট বাবি আর বড় বাবি।
প্রথম যে দিন ওদের নাম শোনে, ঋজু একেবারে চমকে উঠেছিল। ছোট বাবি! বড় বাবি! তার ছেলের নামও তো বাবি। সত্যিই, কী কাকতালীয় মিল, না! একেই বোধহয় বলে প্রেম! তার পরেই মনে হল, কিন্তু কোথায়, সে দিন যখন কথায় কথায় কণিকাকে ও বলেছিল, তার ছেলের নাম বাবি। ও তো এক বারও বলেনি, আমার মেয়েদের নামও বাবি। বড় বাবি, ছোট বাবি। নাকি সে সময় প্রেম।