Saturday, August 31, 2019

Kobita

মান রেখো পাশে থেকো


মেহেদী   হাছান   মোল্লা


বিস্তারিত: www.banglasahittos.blogspot.com


সম্পর্ক গড়তে জানা নয়রে বড়
মান রাখতে, থাকবে হবে দৃড়।
যে নামে ডেকেছো তারে
নিয়েছো আপন করে
সে নামের মান দিয়ে রাখতে হবে ধরে।
মা-বাবা,ভাই-বোন,চাচা-চাচি,
খালা-খালু,নানা-নানি,দাদা-দাদি,
আরো যত নামে ডাকো
সত্যি যেন তাই মনে পুষো।
আপন হওয়া নয়রে কষ্ট
আপন থাক বড্ড কষ্ট
চন্দ্র সূর্যের মতো স্পষ্ট।



তাং : ০৩|০৮|১৯ইং // স মা প্ত।
রাত ১২:৫০ মিনিটে।।

দৈনিক জাতীয় পত্রিকাগুলো ইমেইল এবং লেখা পাঠানোর ঠিকানা ।

আরো সাহিত্য পাতার ইমেইল এড্রেস এবং সম্পাদকীয় পাতার ইমেইল এড্রেস এখানে ক্লিক করুন ।

লিখিয়ে বন্ধুদের জন্য

দৈনিক পত্রিকার ইমেইল

শনিবার

☞১. দৈনিক জনকণ্ঠ

edailyjanakantha.com

ঝিলিমিলি (শিশু-কিশোর পাতা)

jilimilijanakantha@yahoo.com

☞২. দৈনিক পূর্বদেশ (চট্টগ্রাম)

epurbodesh.com

ডানপিটে (শিশু-কিশোর পাতা)

utpalkanti59@gmail.com

☞৩. দৈনিক করতোয়া (বগুড়া)

ekaratoa.com

সবুজ আসর (শিশু-কিশোর পাতা)

sabujasor@gmail.com

☞৪. দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ

alokitobangladesh.com/epaper

আলোকিত শিশু (শিশু-কিশোর পাতা)

alokitoshishu2016@gmail.com

☞৫. দৈনিক ভোরের কাগজ

bhorerkagoj.net/print-edition

bhorerkagoj.net/epaper

পাঠক ফোরাম

pathokforum_bk@yahoo.com

☞৬. দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ

www.protidinersangbad.com/epaper

খেয়াল খুশি

khealkhushi@gmail.com

রবিবার

☞৭. দৈনিক ইত্তেফাক

epaper.ittefaq.com.bd

ittefaq.com.bd/print-edition

ঠাট্টা (ফান ম্যাগাজিন৷ রম্যছড়া)

ittefaq.thatta@gmail.com

☞৮. দৈনিক যুগান্তর

ejugantor.com

বিচ্ছু (ফান ম্যাগাজিন৷ রম্যছড়া)

bicchoo@jugantor.com

☞৯. দৈনিক প্রথম আলো

epaper.prothom-alo.com

বন্ধুসভা

bondhushava@prothom-alo.info

☞ ১০. দৈনিক সংবাদ

sangbad.com.bd/epaper

খেলাঘর

salamcr@yahoo.com

সোমবার

☞১১. দৈনিক সমকাল

esamakal.net

bangla.samakal.net

প্যাঁচআল (ফান ম্যাগাজিন৷ রম্যছড়া)

pachaal123@gmail.com

☞১২. দৈনিক প্রথম আলো

epaper.prothom-alo.com

রস+আলো (ফান ম্যাগাজিন৷ রম্যছড়া)

ra@prothom-alo.info

মঙ্গলবার

☞১৩. দৈনিক কালের কণ্ঠ

ekalerkantho.com

ঘোড়ার ডিম (ফান ম্যাগাজিন৷ রম্যছড়া)

ghorardim@kalerkantho.com

☞১৪. দৈনিক সমকাল

esamakal.net

bangla.samakal.net

ঘাসফড়িং (শিশু-কিশোর পাতা)

ghashforing007@gmail.com

সুহৃদ সমাবেশ

suhridsamabesh1@gmail.com

☞১৫. দৈনিক যায়যায়দিন

ejjdin.com/index.php

জেজেডি ফ্রেন্ডস ফোরাম

friendsforum@jjdbd.om

বুধবার

☞১৬. দৈনিক ভোরের কাগজ

bhorerkagoj.net/print-edition

bhorerkagoj.net/epaper

ইষ্টিকুটুম (শিশু-কিশোর পাতা)

istikutum_bkagoj@yahoo.com

☞১৭. দৈনিক যায়যায়দিন

ejjdin.com/index.php

হাট্টিমাটিমটিম (শিশু-কিশোর পাতা) hattimatimtim@jjdbd.com

☞১৮. দৈনিক মানবকণ্ঠ

emanobkantha.com

সেতুবন্ধন

mksetubondhon@gmail.com

বৃহস্পতিবার

☞২০. দৈনিক আমাদের সময়

epaper.dainikamadershomoy.com

ঘটাংঘট (শিশু-কিশোর পাতা)

ghatangghat@gmail.com

শুক্রবার

☞ দৈনিক ইত্তেফাক

epaper.ittefaq.com.bd

ittefaq.com.bd/print-edition

কচিকাঁচার আসর (শিশু-কিশোর পাতা)

editor.aashor@gmail.com

☞২২. দৈনিক প্রথম আলো

epaper.prothom-alo.com

গোল্লাছুট (শিশু-কিশোর পাতা)

gollachut@prothom-alo.info

☞২৩. দৈনিক কালেরকণ্ঠ

ekalerkantho.com

টুনটুন টিনটিন (শিশু-কিশোর পাতা)

tuntuntintin@gmail.com

☞২৪. দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন

bd-pratidin.com

ebdpratidin.com

ডাংগুলি (শিশু-কিশোর পাতা)

danguli71@gmail.com

☞২৫. দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ (চট্টগ্রাম)

esuprobhat.com

এলাটিং বেলাটিং (শিশু-কিশোর পাতা)

elating_belating@yahoo.com

☞২৬. দৈনিক বাংলাদেশ সময়

bangladeshshomoy.com

দিনের ছড়া (সমকালীন ছড়া)

(শুক্রবার একাধিক ছড়া ছাপানো হয়)

somoyedit@gmail.com

☞২৭. দৈনিক আমাদের সময়

epaper.dainikamadershomoy.com

সময়ের ছড়া (সমকালীন ছড়া)

(কোনো-কোনো দিন ছড়া ছাপা হয় না)

columnchaara@gmail.com

☞২৮. দৈনিক ইত্তেফাক

epaper.ittefaq.com.bd

ittefaq.com.bd/print-edition

এই সময়ের ছড়া (সমকালীন ছড়া)

letters.ittefaq@gmail.com

☞২৯. দৈনিক সমকাল

esamakal.net

bangla.samakal.net

সমকালীন ছড়া (সমকালীন ছড়া)

sarabela01@gmail.com


বৃষ্টির কথা

স্রান্তন হোসেন

বিস্তারিত: www.banglasahittos.blogspot.com



শহরটা যেন আজ বন্দী।ঘরের ভেতর থেকে জানালাটাকে দেখে তাই মনে হচ্ছে।শহরটা যেন এর লোহার শিকের মধ্যে আটকা পরে গেছে।
রাস্তা দিয়ে অসংখ্য গাড়ি চলছে।সাইকেল,রিক্সা,ভ্যান আরও কতো গাড়ি।
রিক্সা টিং টুং শব্দ করে চলছে অন্য দিকে রিম ঝিম শব্দ করে বৃষ্টি পড়ছে।রাস্তায় খুব অল্পই মানুষ দেখা যাচ্ছে।একেকজনের কাছে একেক রঙের ছাতা।সবাই খুব তারাতারি হাঁটছে।এই বৃষ্টির মধ্যে বাইরে থাকা যায়না যে।
আম্মুকে বললাম,
-“একটু নিচে যাবো।বৃষ্টির মধ্যে হাতার ইচ্ছা হচ্ছে।“
আম্মু রাজী হলো না।মন খারাপ করে জানালার পাশে গিয়ে বসলাম।
আমার মনে হয় সবচেয়ে আনন্দ হচ্ছে রিক্সা চালকদের জীবনে।তাদের কোন ছাতার প্রয়োজন হয়না।বৃষ্টির মধ্যে ভিজেই তারা যাত্রীদের নিয়ে যাচ্ছে।আর যাত্রীরা কি শান্তিতে রয়েছে।নীল অথবা সাদা পলিথিন দিয়ে তারা ঢাকা।বৃষ্টির কতো কাছে রয়েছে কিন্তু বৃষ্টি তাদের ধরতে পারছে না।অন্যরকম একটি আনন্দ।
এক বয়স্ক দাদুকে দেখলাম ধীরে ধীরে হেটে যাচ্ছে।তাঁর মাথার ওপর একটি ছাতা রয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটাকে ছাতা বলে চেনা যাচ্ছে না।ছাতার শিক গুলো ভেঙে কাপড় ওলট পালট হয়ে গিয়েছে।বৃষ্টি তাতে আটকাচ্ছে খুব সামান্যই।দাদুর মুখে বৃষ্টির পানি এসে লাগছে।
_”একী দাদু কি কান্না করছে?”
কেন আমার কাছে এমন মনে হলো?বৃষ্টির পানিও তো হতে পারে যা আমার কাছে চোখের পানির মতো লাগছে।
দাদু গুটি গুটি পায়ে কোথায় যেন চলে গেলো।তখনই একদল মেয়েকে দেখলাম লাফালাফি করে যাচ্ছে।তাদের কাছে কোন ছাতা নেই,গায়ে নেই কোন রেইনকোট।ছয়জন তরুণী,সকলের পরনে লালপেড়ে সাদা শাড়ি।
_”আজকে তো বৈশাখ,বসন্ত কোনটিই নয়?তাহলে তারা এই ধরনের শাড়ি পড়েছে কেন?”
যাই হোক অসাধারণ মানিয়েছে মেয়েগুলোকে।
আম্মুর কাছে গিয়ে সোহাগমাখা গলায় বললাম,
_”আম্মু না আমার কতো ভালো।আমার শোনা আম্মু আমায় যেতে দাও না নিচে।ছাতা নিয়ে যাবো তো”
আম্মু আমাকে নিচে যেতে দিতে রাজী হয়ে গেলো।
এলাকার রাস্তা থেকে বেড়িয়ে এসেছি।আমি হয়তো একমাত্র প্রাণী যে বিশ্ব রোডের মাঝখানে ছাতা হাতে এই বৃষ্টির মাঝে দাড়িয়ে রয়েছি।এলাকার রাস্তায় তাও দুই একজনকে দেখা যাচ্ছিলো কিন্তু এখানে একজনকেও দেখতে পাচ্ছি না।কি বিশাল রাস্তা কিন্তু জনোমানবহীন।
হঠাৎ হঠাৎ এক দুইটি গাড়ি ঝরের বেগে আসছে আবার ঝরের বেগে চলে যাচ্ছে।মন চাইছে রাস্তার মাঝে বসে পড়ি।
যদি দেখতাম আমার বয়সী কোন মেয়ে আকাশী রঙের শাড়ি পরে ছাতা হাতে রাস্তায় ঘুরতে বেড়িয়েছে,অবাক চোখে বৃষ্টির ফোটা গোনার চেষ্টা করছে।কতোই না ভালো হতো।দুজনে মিলে এই জনোমানবহীন এই বিশাল রাস্তা ধরে হাঁটতাম।
নিশ্চয়ই মেয়েটি আমার সাথে হাটতে রাজী হতো।কেনই বা হবে না?দুজন মানুষের মনের মিল যদি থাকে এতো তাহলে নিশ্চয়ই রাজী হতো।
এমন সময় সেই দাদুকে দেখলাম এক হাতে বাজারের ব্যাগ এবং অন্য হাতে ভাঙা ছাতা নিয়ে ফিরছে।দাদুতো পুরো ভিজে গিয়েছে।তাঁর ছাতা ধরার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ছাতাটি ধরে রাখার জন্য ধরে রেখেছে শুধু।বৃষ্টির হাত থেকে বাচার জন্য নয়।
আমি দাদুর দিকে এগিয়ে গেলাম।দাদু আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো।দাদুর পুরো মুখে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করেছে।হয়তো তাঁর মন চাইছে বিশ্রাম নিতে কিন্তু তাঁর কোন উপায় নেই।
_”আচ্ছা এই বৃষ্টির মধ্যে কোন দোকান খোলা থাকে?নিশ্চয়ই থাকে টা নাহলে দাদু বাজার করে আনলো কোথা থেকে।“
দাদুকে বললাম,
_”দাদু আপনাকে আপনার বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেই?”
দাদু আমার দিকে মমতামাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন।
আমি দাদুর হাতে আমার ছাতাটি ধরিয়ে দিয়ে দাদুর ব্যাগ এবং তাঁর ভাঙা ছাতাটি নিলাম।ভাঙা ছাতাটি বন্ধ করার চেষ্টা করছি কিন্তু বন্ধ হচ্ছে না।এবার আমি বুঝতে আপ্রছি কেন দাদু ছাতাটি অনিচ্ছা সত্যেও মাথার ওপর ধরে ছিল।কারন ছাতাটি তো বন্ধ হয় না।ছাতাটি পাশের ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম।
দাদুর ব্যাগটি নিয়ে তাঁর সাথে এগিয়ে যাচ্ছি।বৃষ্টিতে ভিজতে ভালোই লাগছে।দাদু আমাকে ছাতার নিচে নেয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু আমি যাচ্ছি না।
দাদুর বাড়ির সামনে চলে এসেছি।দাদু আমাকে ছাতাটি ফিরিয়ে দিতে চাইলে আমি নেইনা।
দাদু আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
_”দাদুভাই কোনোদিন বাবা মাকে কষ্ট দিয়ো না।ভালো থেকো”
দাদুর কথার মধ্যে কতোটা কষ্ট লুকিয়ে রয়েছে সেটি বুঝতে আমার কোন সমস্যা হলো না।
বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাড়ির দিকে যাচ্ছি।এখন এই বৃষ্টি আগের মতো ভালো লাগছে না।মেয়েগুলোকে দেখছি এখনো লাফালাফি করছে কিন্তু সেগুলো আমার কাছে অসাধারণ লাগছে না।
বাড়িতে গিয়ে কাপড় পরিবর্তন করে শুয়ে পড়লাম।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে,বৃষ্টি এখনো থামেনি।এতো ঠাণ্ডা লাগছে কেন আমার?
আম্মুকে দেখছি আমার মাথায় পানি ঢালছে।ঠিক মতো কথা বলতে পারছি না।কেমন যেন জড়িয়ে যাচ্ছে।ঘোরের মধ্যে শুধু একটি কথাই বলে যাচ্ছি,
_”আম্মু আব্বু তোমাদের আমি খুব ভালোবাসি।কোনোদিনও তোমাদের কষ্ট দিবো না।“


For our Bimol Sir



SraNton Hossain
14/A Gangadhar potti Manikganj

Tuesday, August 27, 2019

কলম ও চিঠি

      




         বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী 

          রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী

                     মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন

একজন সাদা মনের মানুষ ও সদা হাস্যোজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব ছিলেন রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী।দেশে যে কয়েকজন নাম করা চিত্র শিল্পীদের মধ্যে তিনি উল্লেখযোগ্য একজন ভাল চিত্র শিল্পী ছিলেন। তিনি ১৯৫৫ সালে চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া থানার চুনতী গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম  পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী সুবিখ্যাত ও সুপরিচিত পীরে কামেল হযরত শাহ সুফী আলহাজ মাওলানা আব্দুল হাকিম সিদ্দিকী (রহ.) (খলীফায়ে হযরত শহীদ সৈয়দ আহমদ বারীলভী (রহ.) যার নামানুসারে সুবিখ্যাত দ্বীনে প্রতিষ্ঠান চুনতী হাকিমিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসা) এর বংশধর। তাঁর পিতার নাম অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুন নূর সিদ্দিকী। তার পিতা একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন এবং অলীয়ে কামেল ছিলেন।মাওলানা আব্দুন নূর সিদ্দিকী সাবেক অধ্যক্ষ বাজালিয়া হেদায়াতুল ইসলাম সিনিয়ার মাদ্রাসা ও হুলাইন ইয়াছিন আউলিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসায় সুনাম ও দক্ষতার সহিত নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি চুনতী হাকীমিয়া আলীয়া মাদ্রাসায় ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত মুহাদ্দিস এবং পদুয়া হেমায়াতুল ইসলাম সিনিয়ার মাদ্রাসা (আল জামেউল আনওয়ার)’য় সাবেক মুহাদ্দিস ছিলেন। তিনি চুনতী মিয়াজী পাড়া হযরত শাহ আবু শরীফ জামে মসজিদে পেশ ইমাম ও খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি চন্দনাইশ সাতবড়ীয়া আরিফ শাহ পাড়া জামে মসজিদ এবং কুসুমপুরা জামে মসজিদ (জিরি) এ ইমাম ও খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এমন কি তিনি বাংলাদেশ ছাড়া বার্মা (মায়ানমার) এবং ভারতের কাশমীরী গেইট, উঁচী মসজিদ দিল্লী তে পেশ ইমাম ও খতীব হিসেবে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ভারতের দিল্লী প্রদেশে“শ্রেষ্ঠ খতীব” হিসেবে সম্মাননা সনদ এবং পুরস্কার লাভ করেন। এমন কি এই আলেমে দ্বীনকে অভিজ্ঞ অধ্যক্ষ ও প্রশাসক হিসেবে স্বীকৃতি স্বরুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্য্যায়ে “শ্রেষ্ঠ শিক্ষক” হিসেবে সম্মাননা প্রদান করেন । যিনি একই সাথে চুনতীর ঐতিহাসসিক ১৯ দিন ব্যাপী মাহফিলে সিরাতুন্নবী (সাঃ) এর প্রতিষ্ঠাতা হযরত শাহ হাফেজ আহমদ (রহঃ) এর শ্বশুর ছিলেন। তার মাতার নাম আয়েশা সিদ্দিকা। তার দাদার নাম মাওলানা আব্দুস সালাম (রহ)।
পারিবারিক পরিবেশে কুরআন শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ চুনতী হাকীমিয়া কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। এই প্রতিষ্ঠান হতে রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী প্রথম বিভাগে ১৯৬৮ সালে দাখিল, ১৯৭০ সালে আলিম ও ১৯৭২ সালে কৃতিত্ব সহিত ফাজিল পাশ করেন। অতঃপর তিনি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় কামিল প্রথম বর্ষে ভর্তি হন এবং ১৯৭৪ সালে কামিল (হাদীস)  বিভাগ হতে কৃতিত্ব সহিত উত্তীর্ণ হন। এইখানে তার বরণ্য হাদীসের উস্তাদদের মধ্যে ফখরুল মুহাদ্দেসিন শায়খ মুফতি মাওলানা আমিনুল মুহাদ্দিস (রহঃ),  শায়খ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী মুহাদ্দিস (রহঃ), মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাঈল আরকানী  (রহ:) , প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল মান্নান (রহ) ও মাওলানা নাওয়াব হোসাইন প্রমুখ অন্যতম ছিলেন।মাদরাসা শিক্ষা শেষ করার পর তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হন। ১৯৭৯ সালে অনার্স ও ১৯৮০ সালে এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮৪ সালে জার্মানি থেকে টেক্সটাইল ডিজাইন ও প্রিন্টিং এর উপর পোস্টগ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা অর্জন করেন।
রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী ছাত্র জীবনে যেমনিভাবে সুনাম ও খ্যাতি অর্জন করেছেন তেমনিভাবে কর্মজীবনেও ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনি একজন কীর্তিমান জননন্দিত চারুকলা শিল্পী হিসাবে সুখ্যাতি অর্জন করেন। সামজিক দায়বদ্ধতা ও রাষ্ট্রের অন্যায় ও প্রতিবাদ গুলি রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকীর  লেখালেখিতে ফুঠে উঠত। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ছাত্র, চাকসুর (১৯৭৯-৮০) সাবেক বার্ষিকী সম্পাদক ছিলেন। তিনি 'চিটাগাং ডায়িং এন্ড প্রিন্টিং', 'মোনাভী টেক্সটাইল', 'রিজেন্ট টেক্সটাইল' ও 'এইচ. এইচ টেক্সটাইল' এ জেনারেল ম্যানেজার পদে সুনাম সহকারে দায়িত্ব পালন  করেন। ২০০৭ সাল থেকে   ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত "শান্ত-মরিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজী (SMUCT)তে ফ্যাশন ডিজাইন ও টেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান  হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। পাশাপাশি নিজস্ব এ্যাড ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন।
রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী শুধুমাত্র একজন শিক্ষক কিংবা চিত্রশিল্পী ছিলেন না। একজন আদর্শ পিতাও ছিলেন। এমনকি একজন অভিভাবক বঠে। তিনি প্রত্যেকটি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিজ সন্তানের মত মনে করতেন। আর ছাত্র-ছাত্রীরাও তাঁকে পিতৃতুল্য স্থানে স্থান দিতেন।
রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী  একজন চিত্রশিল্পী হলেও কুরআন, হাদীস,  আরবী, উর্দু ও ফার্সি ইত্যাদি ইসলামী শিক্ষায় পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। তিনি উত্তম আদর্শ ও অনুপম চরিত্রের অধিকারী সুমহান ব্যক্তিত্ব ছিলেন। নম্রতা ও বিনয়বনতা, দানশীলতা প্রভৃতি গুণাবলীতে তিনি ছিলেন অনন্য ও অসাধারণ। ব্যবহার ছিল অমায়িক, সুমধুর এবং নিরহংকার। কোন দিন তিনি বংশীয় ঐতিহ্য এবং জ্ঞানের বাহাদুরী করতেন না। তিনি বড়দের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন এবং ছোটদের প্রতি স্নেহ করতেন। তিনি সত্য ভাষী, সহিষ্ণু, ধৈর্যশীল এবং অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছিলেন। তিনি সমাজসেবকমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথেও জড়িত ছিলেন। সাংস্কৃতিক জগতেও তার পদচারণ ছিল।
রফিকুল ইসলাম সিদ্দিকী ২৬ জুলাই ২০১৯ দিবাগত  রাত একটায় তার প্রভুর ডাকে সাড়া দেন। তিনি দীর্ঘদিন কিডনির জটিল রোগে ভুগছিলেন।  শুক্রবার সকাল ৭টায় "শান্ত-মরিয়ম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজীতে প্রথম জানাজা নামাজ, বিকেল ৩টায় চারুকলা ইনস্টিটিউটস্থ শিল্পী রশিদ চৌধুরী আর্ট গ্যালারি চত্বরে তার দ্বিতীয়  জানাজা নামাজ  এবং সবশেষে রাত ৮টায় চুনতীর ঐতিহ্যবাহী ১৯ ব্যাপী সীরাত মাঠ প্রাঙ্গনে পীরে কামেল মাওলানা আব্দুন নূর সিদ্দিকী (রহ)'র মেঝো ছেলে  তথা মরহুমের ভাই শিক্ষাবিদ মাওলানা জোবাইর হোসেন সিদ্দিকীর ইমামতিতে ৩য় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।পরে তাঁকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। মহান আল্লাহর কাছে এই মহান ব্যক্তিত্বর জান্নাত কামনা করছি।


লেখক : কলামিস্ট। 


   লেখা প্রেরক :
 মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন।  
C/O, মাওলানা মন্জিল, চন্দনাইশ পৌরসভা, ওয়ার্ড নং ০২, পূর্ব জোয়ারা (৪৩৮০),  চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম,বাংলাদেশ।

Monday, August 26, 2019

সাংবাদিক পেশার জন্য সি ভি । কীভাবে সাংবাদিক পেশার জন্য জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করবো? How to make a CV for Journalist .

সাংবাদিক পেশার জন্য সি ভি.Pdf দেখুন নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন👇





সাংবাদিক পেশার জন্য সি ভি একটি নমুনা ফটো আকারে নিচে দেওয়া হল ।


















অগ্রণী ব্যাংকসাহিত্য পুরস্কার-2019

সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি সাহিত্য পুরস্কার-2019

রচনা পুরস্কার-2019 

900000 (লাখ) টাকা জেমকন সাহিত্য পুরস্কার 2019


বিজ্ঞাপন আহ্বান: sufomsahittopotrika@gmail.com

Saturday, August 24, 2019

Kobita

বিস্তারিত:
www.banglasahittos.blospot.com


দোসর বৃষ্টি রাতে –
শম্পা মনিমা

এই অবেলায় প্রিয় ভালোবাসার শেষ ফুল দেবো
স্বয়ংক্রিয়ভাবে যা ছিল সবচেয়ে প্রয়োজনীয়
কেবল তোমার জন্য –
এই বনানী কাছে
এই প্রিয় সমুদ্র কাছে
ফুল পাখি গান বন্ধুত্ব নিয়ে আর লিখবোনা
শর্ত রাখলাম কেবল তোমার জন্য।

ঘূর্ণয়মান নির্দেশে ছুটি পাওয়া অহংকারে 
তল্লাশি করে শ্লেট রঙের আকাশ ছিঁড়ে 
আজ বৃষ্টি নিবিড়পথে নামে তছনছ করে
এত নির্জনতায়
পায়ের শব্দ ঘর ভিজে যায়
দাঁড়াবো কোথায়?

জানতে চাওনি
আমি কেন বদ অভ‍্যাসে যন্ত্রণা নিয়ে
আবশ্যক জীবনে গাঢ় স্বরে উদ্দেশ্যহীন দেহে
ছড়িয়ে যাওয়া বৃষ্টির রাতে অপেক্ষা গুনছি।

ক্রমশ সৃষ্টির প্রাগৈতিহাসিক উৎসব গিলছে
প্রবাহিত নীল ধাবমান অন্ধকারে
বুকের নির্বাচিত বৃষ্টি বিজনে থাকে ,অভিসারে 
তবুও জানতে চাওনি আসি কেন একাকী
একি শুধু ভুমিকা তোমাকে পাবার?

লিখবো না গান
শর্ত রাখলাম কেবল তোমার জন্য।

কীভাবে নগদের ব্যালেন্স দেখবো ? নগদের ব্যালেন্স দেখতে ডাইল করুন ।


নগদের ব্যালেন্স দেখতে ডাইল করুন: 👇

*167#





















.
.
.
.
.


.
.
.
.
.


.
.
.
.
.


.
.
.
.
.





আত্মগোপন 



সৌভিক রায়





কলকাতা বেতারবার্তা অফিস সেপ্টেম্বর,ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় বেতার সংস্থা বেতারবার্ত  আর তার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপস্থাপনা দূর্গাদুর্গতিনাশিনী প্রত্যেক বছর মহালয়ার দিন সরাসরি সম্প্রচার করা হয়,গত পঁচিশ বছর ধরে বাঙালির মহালয়ার সকল কাটে এই ভাবেই কিন্তু এ বছর চ্যানেল হেড পরিবর্তন হয়েছে তিনি নতুন কিছু একটা ভেবেছেন; তাই সকল কালকুশলী কে তিনি ডেকেছেন কনফারেন্স রুমে l নতুন চ্যানেল হেড তাও অবাঙালি প্রকাশ ধামেজা l
দূর্গাদুর্গতিনাশিনীর জনপ্রিয়তার অন্যতম আর একটি কারণ হলো রাজেন্দ্র লাল সেন  এর  অসাধারণ  স্তোত্র পাঠ,লোকে বলে ওনার কণ্ঠস্বর মানে জীবন্ত করে তোলে আর ওনার দূর্গা বন্দনা ছাড়া বাঙলির পুজো শুরু হয় না l এবং সাথে  মাহেন্দ্র কুমার মল্লিক এর সংগীত  আর  জীবন মুখার্জীর অসাধারণ নির্দেশনা l আমি হলাম প্রোগ্র্যাম ডিরেক্টর সোমেশ্বর রায় l
কনফারেন্স রুম,মিঃ ধামেজা: নামাস্তে! দেখেন আমার সোবাই জানি কে দূর্গা মা কা জো প্রোগ্র্যাম হাম টেলিকাস্ট করতে হায় ওহী হামারা সাবসে হিট প্রোডাকশন আছে লেকিন This year I want to change it.এক হি চিজ কিতনে শুনায়গে লোগো কো l
আমি :  সেকি স্যার  এটা কি করে হবে,This is our most popular producetion,and how we চেঞ্জ  it in such a short tiমে ? There is just one week left before the mahalaya and promotion has been started from last 2 weeks and every  thing has been announced, আর তা ছাড়া বাঙালির ইমোশন জড়িয়ে এর সাথে ………..
মিঃ ধামেজা: ও সব ইমোশন ছাড়ুন, only   the  think I care about it is bussiness only bussiness,আমার যা শুনাবো পাবলিক শুনবে আর চেঞ্জেস আছে বলে দেবেন;  আমি দুজন কে নিচ্ছি যারা সংস্কৃত মে ওসব মন্ত্র পড়েগা আপকে সাথ,আপকো স্রিফ শুরু মে 5 মিনিট বোলনা হো গা বাকি আপকা রেস্ট আর মিউজিক সেটআপ টোটাল চেঞ্জ, কাল সে নতুন করে রিহার্সাল শুরু করতে হবে l
 মাহেন্দ্র বাবু চলে গেলেন, মিঃ সেন : বুঝলাম মিঃ ধামেজা কিন্তু আমার মনে হয় এটা ঠিক হবে না আমরা এখন নতুন গবেষণার জন্য প্রস্তুত নই আর সে সময় আমাদের হাতে নেই ,রায় বাবু ঠিক বলছেন l
মিঃ ধামেজা: দেখেন রাজেন বাবু আমার চ্যাানেল ডিসিশন দেবে আর সে দিয়ে ভি দিয়েছে হামার কথাই শেষ কথা; হামরা ষ্টার বানাই,পাবলিক আমাদের চ্যানেল কে শোনে কোনো পার্টিকুলার ভয়েস নেহি,
তাহলে আমাকে ছেড়ে দিন এ বছরের মতো আপনার নতুনরাই করুক…… 
ধামেজা: না না ও বাত বললে কি করে হোবে,আপনার সাথে এগ্ররিমেন্ট আছে 
সেন:কিন্তু আমার মতামত বলেও তো একটা জিনিস আছে,
ধামেজা: নেহি ইস সাল আপনাকে আমাদের কথা কি মাফিক করতে হবে,নেহি এগ্রিমেন্ট লিয়ে কোর্ট যেতে হবে l একটাই ফেমাস প্রোগ্রাম আছে মন লাগিয়ে করেন l
সেন: ও ঠিক আছে,আমার কিছু বলার নেই আপনি রেডি করে স্ক্রিপ্ট দেবেন,আমি আজ চলি ,আসি রায় বাবু (আমার দিকে মুচকি হেসে রাজেন দা চলে গেলেন )
আমিও আসি স্যার আমার একটা কাজ আছে ,আসুন মিঃ রায় আর চেঞ্জেস গুলো প্রোমোশনে দিয়ে দিন!
আমি ঘর থেকে বাইরে এসে রাজেন দা কে ফোন করলাম বেজে গেলো কেউ ধরলো না l ওই দিন দুপুর থেকেই. নতুন প্রচার শুরু হল আর আমাদের ফোন আর মেইল আসতে শুরুকরলো; শুধু হুমকি যে তারা আর শুনবেন না আমাদের,মহালয়ার দিন অফিস ঘেরাও করবেন,অনুষ্ঠান আগের মতোই করতে হবে l
একদিন তো ধামেজা গাড়ি ভাংচুর হলো, মিঃ ধামেজার মাথা ফাটল আমি ভালো না বুঝে আমাদের বেতারবার্তার মালিক কে সব জানালাম উনি বললেন আমি তো শুনছেই রাজেন বাবু আর মহেন্দ্র বাবু নাকি শারীরিক অসুস্থতার জন্য অনুষ্ঠান থেকে সরে গেছেন,আচ্ছা রায় আমি কাল আসছি তুমি সবাই কে ডাক আর এই নতুন বিজ্ঞানপন টা বন্ধ করে পুরোনো টা চালাও ll
পরের দিন বেতার বার্তার মালিক যদুনাথ সরকার. এলেন কী ব্যাপার প্রকাশ কী সব শুরু করেছেন তোমাকে নিয়ে এইরকম হবে তা ভাবিনি, তুমি যদি আমার বন্ধুর ছেলে না হতে আমি তোমায় ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতাম, এই শেষ সুযোগ তোমায় দিলাম ,সবাই কে ডাকো রায়  আর তুমি প্রকাশ ক্ষমা চাইবে সবার. কাছে ,রায় প্রথমে রাজেন বাবু কে ফোন ধরো……হুঁ স্যার !
আমি ফোন করেই সার সর্বনাশ হয়ে গেছে,কি কি হলো আবার ?রাজেন দাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না ,সে কী কী বলছো তুমি রায়……..
আমি ফোন করলাম বাড়ির ল্যান্ডলাইনে ওঁর চাকর পুঁটিরাম বলল,চলো তো দেখি, পুলিশ এ খবর দিয়েছে?না মনে হয় 
চল দেখি ,গাড়ি বের করতে বলো না স্যার পুঁটিরাম বললো  ও তো এখন আসে পাশে খুঁজতে যাচ্ছে  এখন হয়তো ওকে আর বাড়ি তে পাওয়া যাবে না l
ও আচ্ছা দেখছি আমি আমার ক্লাস মেট কে একটা ফোন করি  ACP Crime লালবাজার বিজয় চ্যাটার্জীকে……
মিঃ চ্যাটার্জী :  আরে সরকার বাহাদুর যে ,কি করতে হবে হুজুর বলুন 
মিঃ সরকার :এখুনি আমার কলকাতার অফিসে একবার আসতে পারবি খুব দরকার l
মিঃ চ্যাটার্জী: সরকারের জরুরি দরকার,তা বিষয় টি শুনি
ফোন এতো কিছু হবে না তুই আয় খুব সিরিয়াস কেস 
সেই মহালয়া নিয়ে যা হচ্ছে তোর ওখানে সেই বিষয় ?
সেই বিষয় বলতে পারিস  আবার নাও,তুই আয়
আচ্ছা তুই থাক আসছি 
মিঃ সরকার :ও আসছে ,যা হয়েছে সব তোমার জন্য একটা অকৃত দায় লোক সে আবার কেন চলে যাবে ওঁর টাকা পয়সার তো কোনো অভাব নেই তোমার কথা অপমানে কোথায় চলে গেছে,আমি তোমায় পুলিশ এ দেব প্রকাশ  আমার চ্যানেল এর ষ্টার প্রোগ্রামের ষ্টার মিসিং এখন লোক কি শুনবে, ইডিয়ট!  তোমার জন্য সব হলো ওঁর কিছু হলে আমি স্ট্রেট পুলিশ কে বলে দেব যে তুমিই  যত নষ্টের মূল তোমার প্ররোচনায় সব হয়েছে 
প্রকাশ বাবু: (কাঁদো কাঁদো সুরে) আমি কীকিছু করেছি বলেন রায়দা,সব দোষ আমার লাগছে,আমি তো নতুন আছি গলতি হতে পারে l
মিঃ সররকার : নতুন যখন চুপ করে যা হচ্ছিলো হতে দিতে ই পারো এক্সপেরিমেন্ট  এর কি দরকার ছ ছিল ,ও রাজেন সেন. যেখানে যাবে ওকে লুফে নেবে তুমি তো যেন রায় আমাদের শুরু থেকে আছে রাজেন দা ষ্টার ভয়েস অফ বেঙ্গল ,কতো অফার পেয়েছে কোনো দিন যায়নি বেশি টাকা পর্যন্ত রিফিউজ করেছে ,আবার আমাকে কে মিথ্যে বলা হয়েছে উনি অসুস্থ 5 মিনিটের বেশি  on air করতে পারবে না 
আমি বলি কি স্যার এখন সে সব থাক আপনার বন্ধু যখন আসছেই,আগে রাজেনদা কে  খোঁজা হোক,ঠিক আছে রায় তাই হবে l
বলতে বলতে মিঃ চ্যাটার্জী এলেন ,সাড়ে ছয় ফুট লম্বা আর তেমন ব্যায়াম করা চেহারা ইউনিফর্ম পড়া,কি রে সাকার বাহাদুরের  আবার কি হলো ?
মিঃ সরকার :মন ভালো নেই ফাজলামো  ছাড় আমার ঘরে চল…..
আমি আর স্যার ওনাকে ঘরে নিয়ে বসিয়ে সব বললাম,উনি শুনে বললেন রাজেন বাবুর কোনো শত্রু ছিল,আমি বললাম দেখুন স্যার ওনার সাতকূলে কেউ নেই,কারোর সাথে কোনো দিন ঝগড়া হয়নি অফিস এ আসে কাজ আর বই পড়া আর বাড়ি তে শুধু রাতের খাওয়া আর বই পড়া সারাদিন পড়তেন  এমন মানুষের শত্রু হয় না,
ও তার মানে  কিডন্যাপ নয় তাহলে এতক্ষনে হয়তো মুক্তিপনের ফোন আসতো আর এমন লোক কে অপহরণ করবে আর কাকেই বা ব্ল্যাকমেল করে ফোন করবে কোথাও এক্সিডেন্ট হলো কিনা কে জানে ??আমি খবর নিচ্ছি 
মিঃ সরকার : বিজু  দেখ এটা তুই কেস হিসাবে দেখিস না তুই পার্সোনালি ওঁকে খুঁজে বার কর কাল সকালের মধ্যে আর আমার চ্যানেল টা বাঁচা এই অনুষ্ঠান না হলে বেতারবার্তা শেষ হয়ে যাবে,বিষয় টা গোপন থাক l
আচ্ছা দেখছি যদু  কী করতে পারি তবে ওঁকে খুঁজে বার করা টা আমাদের ডিউটি,after all he is pride of bengal but  কোনো দুর্ঘটনা হয়ে থাকলে…….আমি দেখি কী করতে পারি আমি ওঁর কাজের জায়গা টা একটু দেখবো আর ওঁর বাড়ির ঠিকানা টা দে ?
এই তো রায় সব করে দিচ্ছে,রায়  নিয়ে যাও বিজয় বাবু কে
আসুন মিঃ চ্যাটার্জী,চলুন 
আচ্ছা রায় বাবু ,রাজেন বাবু কি খুব ডিসটার্ব ছিলেন ? তাতো ছিলেনই ওই দিন; যা হলো সবই তো শুনলেন,আমি বললাম এই যে এখানে উনি বসতেন,সব ছোট. ছোটো কাগজে অনুষ্ঠানের  সব টাইম আর ডেট লেখা l  চ্যাটার্জী বললেন  দারুন হাতের লেখা তো , আমি বললাম উনি কিন্তু বা হাতে লিখতেন বাহ্
উনি সব দেখে বলেন ঠিকানা টা দিন আমি চেষ্টা করছি কি করা যায় ,আমি কি যাবো আপনার সাথে …….
না,তার দদরকার হবে না  আমি দেখে আসি বাড়ি টা আর কখন কি হলো শুনি আপনাদের পরে জানাচ্ছি  ওনার একটা ছবি আপনি আমায় পাঠিয়ে দিন  মেইল  করে l
যদু আমি চলি রে জানাচ্ছি কী হলো না হল,বেরিয়ে গেলেন মিঃ চ্যাটার্জী l
30বি; এম জি রোড!  এটাই হবে ! বাড়ি তে কে আছেন!!!  ঠক ঠক করতেই একজন মাঝবয়সী বেরিয়ে এল নাম বললো পুঁটিরাম!
মিঃ চ্যাটার্জী :আমি আপনার বাবুর অফিস থেকে আসছি 
পুঁটিরাম: রেডিও থেকে?
মিঃচ্যাটার্জী: হুম,বাবু কে কখন থেকে পাচ্ছেন না?খুঁজে দেখেছেন?
পুঁটিরাম: কাল রাত থেকে ,অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাই নি ,আমি তো বাবুর অফিস ছাড়া কারোর নম্বর জানি না আমি ঐখানেই ফোন করেছিলা, আমি ভাবলাম  বাবু বুঝি ওখানেই  গেছেন আমাকে বললেন আধ ঘন্টার মধ্যে আসছেন খাবার দিতে বলে গেলেন 
মিঃচ্যাটার্জী :  তা উনি হেঁটেই গেলেন ?কি পড়েছিলেন?আর কত রাত তখন ?
পুঁটিরাম: আপনি তো দেখি পুলিশের মতো জেরা করছেন আমার কি এতো মনে আছে নাকি !
মিঃ চ্যাটার্জী :আমি কেন জেরা করবো আমি শুধু প্রশ্ন করলাম,খারাপ লাগছে তাই বলছি 
পুঁটিরাম: তখন রাত 9টা হবে আর বাবু জামা পড়া ছিলেন আর কি যে সব গাড়ি ফোন দিয়ে বলেই হয় ডাকতে হয় না কি যে কয় ওরে তাতেই গেলেন 
মিঃ চ্যাটার্জী :আচ্ছা আপনার বাড়ি কোথায়?কত দিন আছেন ?
পুঁটিরাম:  আমি বাবুর সাথে 30 বছর আছি,আমার বাড়ি ববিহারl
মিঃ চ্যাটার্জী:  তা আপনি ভালো বাংা বলেনতো,আবার বাঙাল কথাও বলেন এত দিন থেকে শিখেগেছেন বলুন
পুঁটিরাম:  হু বাবু
মিঃ চ্যাটার্জী:  আপনার বাবুর ফোন নম্বর টা আমায় দিন আমার আগের ফোন টা চুরি হয়েগাছে,এতে নম্বর নেই l দেখি যদি খোঁজ পাই বাড়ির নম্বরে জানাবো এটা আছে আমার কাছে ,পুঁটিরাম বা হাতে দিয়ে লিখে দিলো একটা কাগজে মোবাইল নম্বরটা (দেখে সন্দেহ হলো মিঃ চ্যাটার্জীর আর চাকরের হাতে সোনার আংটি তাতে R লেখা ব্যাপারটা কি সন্দেহ বাড়লো  ) ,নম্বর টা নিয়ে আচ্ছা আজ আসি, বাবু ফিরলে অফিস এ একটা ফোন করে দেবেন l আপনি পুলিশে খবর দেন নি ? 
না বাবু ,পুলিশে আমার ভয় লাগে আমি বাবু কে ফোন না পেয়ে অফিসে ফোন করতে যাচ্ছিলাম  তখনি অফিস থেকে ফোন এলো বাবু ওখানেও নেই 
মিঃ চ্যাটার্জী বেরিয়ে গেলেন ,বাড়ির সামনে একটা পানের দোকানে গিয়ে ঠান্ডা মিনারেল. ওয়াটার চাইলেন,দোকানদার কি রাজেন দার কাছে এসেছিলান নাকি বাবু কোনো অনুষ্ঠান আছে নাকি?
হু অনুষ্ঠানই বটে ,কিন্তু দেখা পেলাম না ওনার চারক পুঁটিরাম এর সাথে কথা হলো l 
সেকি  রাজেন দা তো এই সময় থাকে, এই তো ককিছু ক্ষণ আগে  আমার কাছ থেকে সিগরেট নিলেন; আমায় জোরে ডাক দিয়ে বললেন আমার সিগারেট টা দিয়ে যা  l আমি বাইরের ঘরে রেখে দিয়ে বললাম এই যে রইলো উনি বললেন ঠিক আছে কাল টাকা দেবেন এখন উঠতে পাচ্ছেন না আর পুঁটিরাম নাকি এই হাওড়া গেছে ট্রেন ধরবে দেশে যাচ্ছে, আমি আবার বললাম রান্নার কি হবে উনি বললেন সব অর্ডার দেওয়া আছে  সব খাবার দিয়ে যাবে l
মিঃ চ্যাটার্জী :ও ঠিক আছে, বলেই গাড়িতে উঠে পড়লেন ;driver চলো লালবাজার সাইবার সেল,নেমেই দৌড়াতে দৌড়াতে দত্ত এই নম্বর টার ডিটেলস চাই লোকেশন ,কোথাও কোনো অর্ডার কোনো গাড়ি বুক দুদিনের মধ্যে কী  কী হয়েছে এই নম্বর  থেকে ….ফাস্ট.  দত্ত আমার টাইম নেই ফাস্ট আর ব্যানার্জী আছে আমার ঘরে পাঠাও  
ব্যানার্জী গত দুদিনের এক্সিডেন্ট আর বেওয়ারিশ লাশের রিপোর্ট চাই l
এদিকে মঃ চ্যাটার্জী আমার আর মিঃ সরকারের কোনো ফোন ধরছেন না ,মিঃ সরকারের তো টেনশনে প্রায় মূর্ছা যাবার উপক্রম l
(দত্ত স্যার লাস্ট লোকেশন এম জি রোড ওখানেই ফোন বন্ধ হয়েছে গত কাল রাত 10টা তে আর কোনো গাড়ি বুক হয়নি আর কোনো রকম কিছু অর্ডারও করা হয় নি আচ্ছা আর ব্যানার্জীর কি খবর না স্যার এক্সিডেন্ট ওই আপনি যে বয়সী লোকের কথা বলছেন  তেমন কারোর কিছু হয়নি আর দুটো লাশ পাওয়া গেছে  দুটোই মহিলা আর তেমন কোনো রিপোর্ট নেই ,ঠিক আছে আমি বেরোচ্ছি ,by the way happy puja কাল তো মহালয়া আমার কাল থেকে ছুটি আমি দেশের বাড়ি যাচ্ছি আবার পুজোর  পর দেখা হবে,
স্যার এই কেস টা কিসের ?কিছুই না জাস্ট আউট অফ কিউরিওসিটি,চলি,ভালো করে পুজো কাটিয় আনন্দ করে )
রাত 12টা মিঃ চ্যাটার্জীর ফোনে সরকার বাহাদুর নাকি টেনশন হচ্ছে না তো?বাড়ি তে না বেতারবার্তার অফিসে?
বিজু ইয়ার্কি ছাড়! আমি এখনো অফিসেই আছি, কি খবর হলো বল …….
আর কী সকালে দুর্গদূর্গতিনাশিনী তোরা রেডি তো আমি  ভয়েস অফ বেঙ্গল কে নিয়ে আসছি ………
সে কি পেয়েছিস;রাজেন্ দা কে………
মিঃচ্যাটার্জী: ফোন কেটে দিলেন…….
কি  হলো স্যার?রায় সব রেডি করে নাও রাজেন দা কে পাওয়া গেছে ওরা আসছে তুমি এদিক টা  দেখো,
আর?
আরতো কিছু বললো না বিজু তো এইরকমই ফোন কেটে দিলো এই টুকুই বললো,তুমি তাড়াতাড়ি নাও আমি সব রেডি করেদিছি এখনই দেখেছি স্যার ,আপনি বাড়ি যান l
না, একবারে কাল সকালে যাবো; তুমি  যাও সেটআপ রেডি করো l
(ওদিকে রাজেন বাবুর বাড়ির সামনে মিঃ চ্যাটার্জীর গাড়ি থামলো )
পুঁটিরাম বাবু বাড়ি আছেন নাকি,
কে ?
আমি আপনার  বাবুর রেডিও অফিসের লোক একটু আগে  এসেছিলাম না l
এতো রাতে,বাবুর কোনো খোঁজ পেলেন l
না, পুঁটিরাম বাবু পাই নি ,আপনার সাথে একটু কথা ছিল
আসুন ,ভেতরে
পুঁটিরাম বাবু একটা আবদার করবো,এক কাপ চা হবে নাকি?
দাঁড়ান আনছি, দাঁড়াবো কেন আপনি করুন আমি বসি l আপনার সাথে আপনার বাবুর কিন্তু অনেক মিল হাতের লেখা ,দুজনেই  বা হাতে লেখেন ,হাতে R লেখা সোনার আংটি আর একটা জিনিস আপনার বাবুর পোস্টার এর ছবি দেখলাম দু জনের কপালে একই জায়গায় লাল তিল,এর মধ্যেই  চা  রেখে গেলো পুঁটিরাম আরে আপনিও বসুন না,নিন সিগরেট  খান ……
না না, আমি খাই না,
আরে খান না রাজেনবাবু ,ধূমপান  করলে গলা খারাপ হবে না কাল তো আপনার আবার   মহালয়ার অনুষ্ঠান আছে , এটা কেন করলেন?আমি ACP ,ACP ক্রাইম চ্যাটার্জী নমস্কার 
নমস্কার;চ্যাটার্জী বাবু  আসলে কি জানেন আপনার তৈরী করা জিনিসের উপর কেউ যখন কর্তৃত্ব করে বা আপনার সৃষ্টি যখন নষ্ট করতে যায় তখন খুব খারাপ লাগে lওরা যখন আমায় ফোন করলো তখন আমি আর যেতে চাই নি আমি শিল্পী আমি কর্মচারী নই l
কিন্তু রাজেন বাবু আপনার সৃষ্টি তো আজ ধবংস হতে চলেছে,আপনি না গেলে বেতারবার্তা বন্ধ হয়ে যাবে আপনি চলুন,মাইক ভয়েস অফ বেঙ্গলের অপেক্ষায় আপনি না গেলে যে বাঙালির পুজো শুরু হবে না l
আমি যাবো ,আপনি আমায় নিয়ে চলুন………………ঠিক 4টে বাজতে 10 বেতার বার্তার অফিসে  এলেন সেই ধুতি আর পাঞ্জাবি পরা রাজেন্দ্র  লাল সেন সেই একই প্রতাপ নিয়ে নেমে এলেন যে ভাবে   সিংহ তার জঙ্গলে ফেরে l
 মিঃ সরকার ;রাজেন বাবু আমরা লজ্জিত এবং দুঃখিত আপনার কি হয়েছিল?
মিঃ চ্যাটার্জী :না ,এখন আর প্রশ্ন নয়, শুরু কর যদু দেরি হয়ে যাচ্ছে….
আমি: রাজেন দা আসুন ……..উনি শুধু  মেজা জীর দিকে হেসে বললেন মানুষ তাহলে ভয়েস ও শুনতে চায় কী বলেন??প্রকাশ জী
প্রকাশ জী নত মস্তক হয়ে রইলেন,আমি আর স্যার বিজয় বাবুর কাছে অভিমানী ভয়েস অফ বেঙ্গল এর গল্প শুনলাম আর শুনলাম  On air রাজেন বাবুর অদ্ভুত কণ্ঠস্বরে মাতৃ বন্দনা,দূর্গা দুর্গতি নাশিনী…………একই ভাবে শুরু হলো বাঙালির দেবীপক্ষ প্রতিবছরের মতোই l


Thursday, August 22, 2019

Kobita


বই পড়ো
কাজী তানভীর





বই পড়ে হও জ্ঞানী মানুষ
বন্ধু বানাও বইকে,
জ্ঞান সাধনে বন্ধু তোমার
বই ছাড়া হয় কে!
জ্ঞানের আলোয় আঁধার নেভাও
জ্ঞানী বানাও নিজকে,
বইয়ের মাঝে বুনছে লিখক
মনুষ্যতার বীজকে।
সভ্যতারই শ্রেষ্ঠ প্রদ্বীপ
বই বিনে হয় কে?
জ্ঞান সাধক আর পাঠক ছাড়া
এই সমাজে জয় কে!

Saturday, August 17, 2019

কবিতা

মানবিকতার শিক্ষা


সায়‍নদীপ  মাইতি





রাজপথের ধারে ধারে,আজ কত ভিখারী,দরিদ্র; পথচারীর পানে চেয়ে আছে-
দিনের সামান্য খাদ্যের প্রয়োজনে।
ব্যস্ত মানুষগুলি চেয়ে চেয়ে প্রস্থান করে
তখন কোথায় লুকিয়ে থাকে তার মানবিকতা?
এত ব্যস্ততা কেবল কি তার এ‌‍বং নিকটজনের- প্রয়োজনে?
সমাজ ও দেশ তাকে কী শিক্ষা দিয়েছে-
কুটিলতা,লোভ ও হিংসার প্রচার করুক তবে।
একদা নিজের সন্তানেরও যখন সমান আচরন- দেখবে;
সেদিনই প্রকৃত শিক্ষাটুকু তার হবে,
তখন ক্ষমা করার কেউ থাকবে না।
                                ----------------



কাঁথি  Pin code-721401 Sayandeep Maity
Son of-Kalipada  Maity Kishorenagar,Kishorenagar Garh

Friday, August 16, 2019

মেঘের নীড়ে লেখক: আনোয়ার সাদাৎ জাকি




এ শহরের মেঘগুলো ভীষণ দুরন্তদুর্বার,অদম্য- অনুশ্রী যোবন উল্লাসেনদীর বুকে অশান্ত ঢেউয়ের মতো যেন ইচ্ছে হলেই ছুটে চলে চারিদিকে।
প্রান্তর থেকে তেপান্তরেবায়ু তরীতে ভেসে হঠাৎ নীল আকাশপটেবিস্তর শুভ্রকেশ রচনায় এ শহরে অপ্রতাশ্যিত বৃষ্টি নামে।
উত্তরীর কল্লোলিত এলোকেশী ছন্দেঝরঝর বরষার এ বৃষ্টিতেমনের ক্যানভাসে স্মৃতির অগোচরেআজ শুধু তোমারেই পড়ে মনে।

sumobano@gmail.com



পূজোর গন্ধ

Sumit banerjee



ঢাকে কাঠি পড়লো যে ওই
পূজো আসার গন্ধে
খুঁটি পূজোর মন্ত্র শুনে
মন ভেসে যায় তরঙ্গে।
পাড়ায় পাড়ায় এবার শুরু
প‍্যান্ডালেরি কাজ
মাগো তুমি চলে এস
মন মানে না আর।
তোমার আসার দিনগুলি যে
বসে বসে গুনি
তোমার আশিষ পাবার আশায়
মাথা নত করি পায়ে।
প্রণাম তোমায় দূর্গা মাগো
ভালো রেখো বারে বারে
এ পৃথিবীর মঙ্গল করো মাগো
এই কামনাই করি।।।।

গল্প এবং পরিচয়



সিদ্ধার্থ সিংহের পরিচিতি



২০১২ সালের 'বঙ্গ শিরোমণি' সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে।  ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় 'দেশ' পত্রিকায়। প্রথম ছড়া 'শুকতারা'য়।  প্রথম গদ্য 'আনন্দবাজার'-এ। প্রথম গল্প 'সানন্দা'য়। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়। মামলা হয় পাঁচ কোটি টাকার। ছোটদের জন্য যেমন সন্দেশ, আনন্দমেলা, কিশোর ভারতী, চির সবুজ লেখা, ঝালাপালা, রঙবেরং, শিশুমহল ছাড়াও বর্তমান, গণশক্তি, রবিবাসরীয় আনন্দমেলা-সহ সমস্ত দৈনিক পত্রিকার ছোটদের পাতায় লেখেন, তেমনি বড়দের জন্য লেখেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ এবং মুক্তগদ্য। 'রতিছন্দ' নামে এক নতুন ছন্দের প্রবর্তন করেছেন তিনি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা দুশো একচল্লিশটি। তার বেশির ভাগই অনুদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বেস্ট সেলারেও উঠেছে সে সব। এ ছাড়া যৌথ ভাবে সম্পাদনা করেছেন লীলা মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, মহাশ্বেতা দেবী, শংকর, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে। তাঁর লেখা নাটক বেতারে তো হয়ই, মঞ্চস্থও হয় নিয়মিত। তাঁর কাহিনি নিয়ে ছায়াছবিও হয়েছে বেশ কয়েকটি। গান তো লেখেনই। মিউজিক ডিরেক্টর হিসেবেও কাজ করেছেন বেশ কয়েকটি বাংলা ছবিতে। তাঁর ইংরেজি এবং বাংলা কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে কয়েকটি সিনেমায়। বানিয়েছেন দুটি তথ্যচিত্র। তাঁর লেখা পাঠ্য হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদে। ইতিমধ্যে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ শিশু সাহিত্য সংসদ পুরস্কার, কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত পুরস্কার, কাঞ্চন সাহিত্য পুরস্কার, সন্তোষকুমার ঘোষ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা লোক সাহিত্য পুরস্কার, প্রসাদ পুরস্কার, নতুন গতি পুরস্কার, ড্রিম লাইট অ্যাওয়ার্ড, কমলকুমার মজুমদার জন্মশতবর্ষ স্মারক সম্মান, কবি সামসুল হক পুরস্কার, সুচিত্রা ভট্টাচার্য স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার, অণু সাহিত্য পুরস্কার, কাস্তেকবি দিনেশ দাস স্মৃতি পুরস্কার, শিলালিপি সাহিত্য পুরস্কার, চেখ সাহিত্য পুরস্কার, মায়া সেন স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার ছাড়াও ছোট-বড় অজস্র পুরস্কার ও সম্মাননা। পেয়েছেন ১৪০৬ সালের 'শ্রেষ্ঠ কবি' এবং ১৪১৮ সালের 'শ্রেষ্ঠ গল্পকার'-এর শিরোপা।




বোড়কি
সিদ্ধার্থ সিংহ






না। বোড়কিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না। ছলছল চোখে শিবকুমার এ কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল তার বউ। আর তার কান্না শুনে বইপত্র ফেলে পাশের ঘর থেকে ছুটে এসে মায়ের কাছ ঘেঁষে দাঁড়াল তাদের বাকি দুই ছেলেমেয়ে— মেজকি আর ছোটকা।
কান্না জড়ানো গলাতেই শিবকুমারের বউ বলল, তা হলে ও বোধহয় আবার পালিয়েছে। যাও, থানায় যাও। একবার গিয়ে বলো...
এর আগেও চার-চার বার ও পালিয়েছে। প্রথম বার যখন ওকে খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন গ্রাম থেকে অনেক দূরে, কালিন্দী থানায় মিসিং ডায়েরি করার সময় পুলিশ অফিসারটি বলেছিল, তেরো বছর বয়সেই পালিয়েছে! কার সঙ্গে?
শিবকুমার হাঁ করে তাকিয়ে ছিল। সেটা দেখে ওই পুলিশটি অফিসারটি বলেছিল, ও তো আর দুধের বাচ্চা নয় যে, কোনও তান্ত্রিক তুলে নিয়ে গিয়ে আর সব বাচ্চাদের মতো ওকেও মায়ের সামনে বলি চড়িয়ে দিয়েছে...
হ্যাঁ, এখানে মাঝে মাঝেই বাচ্চা খোয়া যায়। এবং খুঁজে পাওয়া না গেলে লোকেরা ধরেই নেয়, তাকে কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে বলি দিয়ে দিয়েছে। শোনা যায়, বহু বছর আগে ইংরেজ আমলে ছোট, মেজ, বড়, আরও বড় কর্তাকে বারবার অনুরোধ-উপরোধ করা সত্ত্বেও যখন হল না, তখন আশপাশের গ্রামের লোকেরা সবাই এককাট্টা হয়ে বড় রাস্তায় যাওয়ার একমাত্র বাধা, শীর্ণ নদীটার উপরে কাঠের পোল তৈরি করেছিল, সেটা যাতে ভেঙে না পড়ে এবং টেকসই হয়, সে জন্য নাকি ব্রিজ তৈরির আগেই ভাল দিনক্ষণ দেখে খুঁটি পোঁতা হয়েছিল। সেই খুঁটি পোঁতাকে ঘিরে পুজোআচ্চা, যাগযজ্ঞও হয়েছিল। এবং পূজারির বিধান অনুযায়ীই ধরিত্রী মাকে খুশি করার জন্য নাকি বিভিন্ন জায়গা থেকে তেরোটি বাচ্চাকে চুরি করে এনে রাতের অন্ধকারে বলি দেওয়া হয়েছিল। এখানকার লোকেদের বিশ্বাস, সেই জন্যই নাকি ওই ব্রিজটা এখনও এত শক্তপোক্ত।
তাই আজও অনেকেই বাড়ি তৈরি করার আগে ভিত পুজোর সময় যেমন পুজো করে, সেটা তো করেই, রাতের অন্ধকারে লোকচক্ষুর আড়ালে নাকি নরবলিও দেয়। তাই মাঝে মাঝেই হঠাৎ হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় এক-একটা বাচ্চা। তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। আশপাশের লোকেরা তাই সদা সতর্ক। কোনও বাচ্চাকেই একা ছাড়ে না। ছাড়লেও চোখে চোখে রাখে। কারণ কোনও বাচ্চাকে চোখের আড়ালে ছাড়াই মানেই নাকি ঘোরতর বিপদ ঘনিয়ে আসা। কিন্তু সে সব বাচ্চাদের বয়স অনেক কম হয়। চার-পাঁচ কিংবা ছয়। বারো-তেরো বছরের বাচ্চাদের সাধারণত কেউ বলি দেওয়ার জন্য নেয় না। ফলে ওই পুলিশ অফিসারটি ভ্রু কুঁচকে শিবকুমারকে জিজ্ঞেস করেছিল, আপনার কি মনে হয়? ও কার সঙ্গে পালিয়েছে?
শিবকুমার বলেছিল, তা তো জানি না।
— তা হলে যান। গিয়ে খোঁজ করুন আর কে পালিয়েছে...
শিবকুমার বলেছিল, আমি ওর সব ক’টা বন্ধুর বাড়িতেই গিয়েছিলাম। দেখলাম সবাই আছে। শুধু ও-ই নেই। সবাইকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিন্তু কেউই বলতে পারল না, ও কোথায় গেছে। ও নাকি কাউকেই কিছু বলে যায়নি।
— তা আবার হয় নাকি? কাউকে কিচ্ছু বলে যায়নি? এ সব ব্যাপারে জানবেন বন্ধুরাই সাঁটে থাকে। আচ্ছা বলুন তো, ও কার কার সঙ্গে মিশত?
— ও মিশত... ওই তো... বিন্দি, চান্দি, বুড়িয়া... এই তিন জনই তো ওর বন্ধু।
— আরে, আমি তা বলছি না। বলছি, ও কোন ছেলের সঙ্গে মিশত?
— ছেলে! শিবকুমার একেবারে আকাশ থেকে পড়েছিল।
হ্যাঁ, ওদের গ্রাম থেকে মাঝে মাঝেই ছেলেমেয়েরা পালায়। এই তো ক’বছর আগেই, সতেরো-আঠারো বছরের দু’-দুটো ছেলে বাবার মুদিখানা দোকান থেকে সব টাকা পয়সা নিয়ে কেউ কিছু টের পাওয়ার আগেই রাতের অন্ধকারে চম্পট দিয়েছিল সুরাটে। অনেক খোঁজখবর করার পরে পুলিশ যখন তাদের তিন মাস পরে উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে এসেছিল, তারা বলেছিল, আমরা ভাগ্যের সন্ধানে গিয়েছিলাম।
পরে জানা গিয়েছিল, কে নাকি তাদের বলেছিল সুরাটে গেলেই চাকরি পাওয়া যায়। পড়াশোনা কিছু লাগে না। ওরাই শিখিয়ে পড়িয়ে নেয়। প্রচুর টাকা মাইনে। তাই গরিব বাবা-মায়ের হাতে প্রতি মাসে মাসে কিছু টাকা তুলে দেওয়ার জন্যই নাকি ওরা সুরাটে যাবার জন্য পালিয়েছিল। কিন্তু ভুল করে অন্য ট্রেনে উঠে পড়ায় ওরা মজফ্ফরপুরে চলে গিয়েছিল। অচেনা-অজানা জায়গায় গিয়ে মহাবিপাকে পড়েছিল। যে ক’টা টাকা ছিল তা দিয়ে চার-পাঁচ দিন কোনও রকমে চলেছিল। কিন্তু তার পরেই দেখা দিয়েছিল বিপদ। কী খাবে, কোথায় থাকবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিল না। শেষ পর্যন্ত একটা ফাস্টফুডের দোকানে কাজে ঢুকেছিল তারা। এঁঠো থালাবাসন মাজা, দূরের টিউবওয়েল থেকে জল তুলে আনা, আনাচ কাটাই শুধু নয়, বাড়ির টুকিটাকি কাজ, মনিবের ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসা, বাজারের ব্যাগ বয়ে নিয়ে আসা থেকে ফাইফরমাস খাটা, কিছুই বাদ যেত না। এমনকী রাত্রিবেলায় যতক্ষণ না মনিব ঘুমিয়ে পড়ত, ততক্ষণ তার হাত-পা টিপে দিতে হত, মাথা ম্যাসাজ করে দিতে হত।
কেবল ছেলেরাই নয়, এই তো কিছু দিন আগে একসঙ্গে দল বেঁধে তেরো-চোদ্দো বছরের চার-চারটে মেয়েও উধাও হয়ে গিয়েছিল। চোখের ঘুম ছুটে গিয়েছিল গোটা গ্রামের। নড়েচড়ে বসেছিল লোকাল থানাও। সে দিনই মধ্যরাতে যখন তাদের রেল স্টেশন থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হল, তারা বলেছিল, আমরা মুম্বই যাচ্ছিলাম। সিনেমায় নামার জন্য।
শুধু কোনও বন্ধুর সঙ্গে কিংবা দল বেঁধেই নয়, একবার তাদের গ্রামেরই ষোলো বছরের একটি মেয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে বেমালুম ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিল। থানায় মিসিং ডায়েরি করতে গিয়ে তাদের বাড়ির লোকেরা জানতে পেরেছিল, পাশের গ্রামের বছর উনিশের একটি ছেলেকেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখনই পুলিশ দুয়ে দুয়ে চার করেছিল। এবং তখনই জানা গিয়েছিল, পুলিশের সন্দেহ খুব একটা অমূলক নয়। কারণ, বহু লোকই তখন জানিয়েছিল, ওদের দু’জনকে নাকি প্রায়ই এ দিকে ও দিকে ঘুরতে দেখেছে তারা। কিছু দিন আগে নাকি দু’জনে মিলে সিনেমা দেখতেও গিয়েছিল। অগত্যা সবাই নিঃসন্দেহ হয়েছিল, ওরা দু’জনে পালিয়েছে। কিন্তু অনেক খোঁজ করেও আজ অবধি তাদের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি।
মেয়ের বাড়ির লোকেরা অবশেষে দু’ক্রোশ দূরের নাবিক গ্রামের এক নামকরা বৃদ্ধ গুনিনের কাছে গিয়েছিল। আলো বাতাস-হীন দমবন্ধ হয়ে আসা একরত্তি ঘরে বসে সেই গুনিন নাকি বলেছিল, ওরা আছে। একসঙ্গেই আছে। ভাল আছে। ওদের একটা ফুটফুটে মেয়েও হয়েছে। এই দ্যাখ, বলে, একটা মন্ত্রপূত আয়না বের করে ওদের সামনে ধরেছিল। বলেছিল, সবাই নয়, যে কোনও একজন দ্যাখ। ওদের দেখতে পাবি। ওরা এখন কোথায় আছে। কী করছে। কে দেখবি, তোরা নিজেদের মধ্যে ঠিক কর।
তখন মেয়ের মা বলেছিল, আমি দেখব। আমি।
সেই আয়নায় ছায়া-ছায়া মতো সে নাকি কী একটা দেখেওছিল। স্পষ্ট কিছু দেখা না গেলেও গুনিন যখন বলেছে, ওটা তার মেয়ে, তা হলে নিশ্চয়ই ওটা তার মেয়েই। সে উপরের দিকে তাকিয়ে ঠাকুরের উদ্দেশে প্রণাম করে বিড়বিড় করে বলেছিল, ও যেখানেই থাক, ভাল থাক। ওকে ভাল রেখো ঠাকুর। ওকে ভাল রেখো…
ওই মেয়েটা ওই রকমই ছিল। কিন্তু তাদের মেয়ে বোড়কি তো ও রকম নয়। সে তো বাচ্চা। সবে সেভেনে পড়ে। ও কি ও সব বোঝে! তবু কেবল নিজেদের গ্রামেই নয়, আশপাশের সব ক’টা গ্রামে, এমনকী দূর-দূরান্তের স্কুলে গিয়েও শিবকুমার খোঁজ করেছিল, আর কেউ পালিয়েছে কি না...
কিন্তু না। সে রকম কোনও খবর জোগাড় করতে না পাড়ায় ফের থানায় গিয়েছিল সে। এবং থানাও সত্যি সত্যিই খোঁজখবর শুরু করেছিল। মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বোড়কিকে খুঁজে বের করে নিয়ে এসেছিল। ও নাকি রেল স্টেশনের একটা বেঞ্চে একা-একা বসেছিল।
তা হলে কি ওই মেয়েটার মতো ও-ও কারও সঙ্গে ট্রেনে করে পালিয়ে যাওয়ার মতলবে ছিল! তাই প্ল্যাটফর্মে বসে কারও জন্য অপেক্ষা করছিল! পুলিশ অফিসারটি অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। পুলিশ চলে যাওয়ার পরে তার বাবা-মাও। কিন্তু ও সেই একই কথা বলে যাচ্ছিল। বললাম তো, আমি ট্রেন দেখতে গিয়েছিলাম…
ওর বাবা অনেক বুঝিয়েছিল। বলেছিল, তুই যে ভরদুপুরে একা একা ঘুরে বেড়াস। তুই কি জানিস, এই দুপুরবেলায় বড় বড় গাছের মগডালে ভূত-পেত্মী-ব্রহ্মদত্যিরা মানুষের রক্ত খাওয়ার জন্য কী ভাবে ওত পেতে বসে থাকে। একবার পেলে একেবারে ঘাড় মটকে খায়, জানিস না? এই ভাবে কাউকে কিছু না বলে একা-একা কেউ বেরোয়? আর কোনও দিন এই ভাবে কোথাও যাস না, বুঝেছিস? বলেই, ওর বাঁ হাতের বালাটা দেখিয়ে বলেছিল, যদি না যাস, ভাল ভাবে থাকিস, তা হলে গত বার যেমন তোর নাম খোদাই করা রুপোর এই বলাটা বানিয়ে দিয়েছিলাম, ঠিক সেই রকম আর একটা বালা তোকে বানিয়ে দেব…
হ্যাঁ, বোড়কি বায়না করেছিল বলে বিয়েতে পাওয়া বউয়ের রুপোর টিকলি, গলার মোটা হার আর পাশের গ্রামের রথের মেলা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া বাচ্চাদের পায়ের এক পাটি তোরা ভেঙে গড়িয়ে দিয়েছিল ওটা।
বোড়কি বলেছিল, ওটার মধ্যে আমার নাম লিখে দিয়ো। না হলে, ওটা যদি হারিয়ে যায়, তা হলে তোরা হারানো মেয়েটার মতো আমিও আর ওটা ফেরত পাব না।
ওর বাবা বলেছিল, ঠিক আছে, তাই হবে। স্যাকরাকে বলব, তোর বালার মধ্যে বড় বড় করে ‘বোড়কি’ লিখে দিতে। কী? খুশি তো?
বোড়কি খুশি হয়েছিল। কিন্তু আজ ও রকমই আর একটা বালা গড়িয়ে দেওয়ার কথা বললেও, বোড়কির মুখে কিন্তু সে রকম কোনও খুশির ঝলক দেখতে পেল না শিবকুমার। শুধু ফ্যালফ্যাল করে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল সে।
দ্বিতীয় বার যখন ওকে খুঁজে পাওয়া গেল না, তখন তার বাবা প্রথমেই গিয়েছিল রেল স্টেশনে। এর আগের বার যেটায় বসেছিল, শুধু সেই বেঞ্চটাতেই নয়, গোটা স্টেশনের এই প্ল্যাটফর্মে ওই প্ল্যাটফর্মে যতগুলি বেঞ্চ ছিল, সিমেন্টের বাঁধানো বেদি ছিল, সব ক’টা তন্ন তন্ন করে খুঁজেছিল। কিন্তু না। বোড়কিকে সে পায়নি। অগত্যা কোনও উপায় না দেখে শেষ পর্যন্ত থানায় ছুটে গিয়েছিল।
সে বারও থানার লোকেরাই তার মেয়েকে উদ্ধার করে নিয়ে এসেছিল। ওকে নাকি একটা পুকুরের পাড়ে তন্ময় হয়ে বসে থাকতে দেখেছিল তারা।
— ওখানে কী করছিলি? জিজ্ঞেস করায় ও বলেছিল, আমি কচুরিপানার ফুল দেখতে গিয়েছিলাম। প্রতিটা পাপড়িতে কী সুন্দর ময়ূরের পেখমের মতো রং। চোখ ফেরানো যায় না...
— কচুরিপানার ফুল দেখতে গিয়েছিলি! তুই কি পাগল? জানিস, কত রকমের লোক ঘুরে বেড়ায়? তারা বাচ্চাদের বস্তায় ভরে নিয়ে গিয়ে হাত-পা ভেঙে, অন্ধ করে শহরের রাস্তায় রাস্তায় তাদের দিয়ে ভিক্ষে করায়। তুই কি সেই লোকগুলির খপ্পড়ে পড়তে চাস? তা হলে? অনেক বুঝিয়েছিল শিবকুমার। তবুও...
তৃতীয় বার যখন পালিয়ে গেল, প্রথমেই শিবকুমার গেল সেই পুকুরের পাড়ে। তার পরে রেল স্টেশনে। তার পর ওর বন্ধুদের বাড়িতে। কোথাও না পেয়ে অবশেষে থানায়।
তখনই পুলিশ অফিসারটা তাকে ধমকে বলেছিল, আপনারা কি ইয়ার্কি পেয়েছেন? আমাদের আর কোনও কাজ নেই? আপনাদের মেয়ে রোজ-রোজ পালিয়ে যাবে, আর তাকে খুঁজে খুঁজে আমাদের নিয়ে আসতে হবে? একটা মেয়েকে সামলে রাখতে পারেন না? যান, নিজেরা খুঁজে নিন।
কাঁচুমাচু মুখ করে থানা থেকে বেরিয়ে এলেও পুলিশ অফিসারটি যে ওগুলো শুধু কথার কথা বলেছিলেন, বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, আসলে সে থানা থেকে বেরিয়ে আসা মাত্রই মেয়েটিকে খুঁজে বের করার জন্য ফোর্স পাঠিয়েছিলেন, সেটা সন্ধে হওয়ার অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিল শিবকুমার।
সে বার স্কুলে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে বাঁদরখেলা দেখার পরে গ্রামের আরও অনেক বাচ্চাদের মতো সেই বাঁদরওয়ালার পিছু পিছু সেও নাকি গ্রাম ছাড়িয়ে অনেকটা পথ চলে গিয়েছিল। কিছুটা যাবার পরে বাকি বাচ্চারা ফিরে এলেও সে আর ফেরেনি। বাঁদরওয়ালার পিছু পিছু হেঁটেই যাচ্ছিল। সেটা দেখে নাকি বাঁদরওয়ালা বলেছিল, কী রে বেটি, আর কত দূর আসবি? এ বার যা।
বোড়কি নাকি বলেছিল, আমি যাব না। আমি তোমার সঙ্গে যাব।
বাঁদরওয়ালা নিতে চায়নি। তবুও পিছন ছাড়েনি ও। হাইওয়ের উপরে বাস স্টপেজের ধারে একটা ছোট্ট চায়ের দোকানে আড্ডা মারছিল কয়েকটি স্থানীয় ছেলে। তারা বাঁদরওয়ালার পিছনে পিছনে স্কুলের পোশাক পরা একটা মেয়েকে ওই ভাবে যেতে দেখে ভেবেছিল, বাঁদরওয়ালাটা নিশ্চয়ই ছেলেধরা। মেয়েটাকে নিয়ে যাচ্ছে। তাই তারা বাঁদরওয়ালাটাকে ধরে জিজ্ঞেস করেছিল, এই মেয়েটাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?
বাঁদরওয়ালা বলেছিল, আমি নেব কেন? ও-ই তো আমার পিছু ছা়ড়ছে না।
ওরা যখন বোড়কিকে জিজ্ঞেস করল, তুই কোথায় থাকিস?
ও সব বলেছিল। গ্রামের নাম। পাড়ার নাম। বাবার নাম। এমনকী স্কুলের নামও।
তখন ওই ছেলেদের মধ্যে থেকেই একজন তার বাইকে করে ওকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য রওনা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক খাতে বরাদ্দ টাকায় সদ্য তৈরি হওয়া কালো পিচের চওড়া হাইওয়েটা যতই মসৃণ হোক না কেন, হুসহাস করে ছুটে যাক না কেন দূরপাল্লার এক্সপ্রেস বাস, মাল-বোঝাই বড় বড় ট্রাক, তার পাশ দিয়ে নেমে যাওয়া গ্রামে ঢোকার সরু রাস্তাগুলি কিন্তু এখনও যে কে সে-ই। খোয়া বেছানো। গর্ত-গর্ত।
দু’ধারে কোথাও বড় বড়় গাছ, কোথাও আবার ঝোপঝাড়। জঙ্গল জঙ্গল মতো। সেই রাস্তার পাশেই কোথাও হিন্দুপাড়া, কোথাও মুসলমানপাড়া, কোথাও কৈবর্তপাড়া, নাপিতপাড়া, কোথাও আবার ব্রাহ্মণপাড়া।
এক সময় বেশির ভাগ বাড়িই মাটির ছিল। কিন্তু হাইওয়ে হওয়ার আগে থেকেই শুধু রাস্তার ধারের জমিই নয়, ভিতরের, আরও ভিতরের জমির দামও হু হু করে বাড়তে শুরু করেছিল। বাইরে থেকে লোকজন এসে বাড়িঘর করে বসে পড়ছিল। কেউ কেউ দোতলা-তিনতলাও হাঁকাচ্ছিল। আর তারা বাইরে থেকে এলেও, এখানে বাড়ি করার সময় কিন্তু এখানকার চিরাচরিত ধ্যান-ধারনা অনুযায়ীই কেউ কেউ বলিও চড়াতে শুরু করেছিল।
পিছনে বোড়কিকে বসিয়ে সেই রাস্তা দিয়েই ঝাঁকুনি খেতে খেতে ধুলো উড়িয়ে বাইক নিয়ে যাচ্ছিল ছেলেটা। কিন্তু তাকে আর বোড়কিদের বাড়ি পর্যন্ত যেতে হয়নি। মাঝপথেই দেখা হয়ে গিয়েছিল, বোড়কির খোঁজে বেরোনো কালিন্দী থানারই এক পুলিশ অফিসারের সঙ্গে। ওই পুলিশ অফিসারটিই তার জিপে করে বোড়কিকে শিবকুমারের হাতে তুলে দিয়ে বলেছিল, মেয়েকে দেখেশুনে রাখুন। ভাল করে বোঝান। কখন কোন বিপদে পড়ে যাবে, বলা যায়! সব ছেলে তো আর সমান নয়… দরকার হলে ভাল কোনও সায়ক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে যান। ও কেন বার বার বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে চাইছে, কাউন্সেলিং করান। এর পরে ও যদি আবার কোথাও চলে যায়, আমাদের কাছে আর আসবেন না। বুঝেছেন?
শিবকুমার বুঝেছিল। মেয়েকেও বুঝিয়েছিল, তুই কি জানিস এখন কত রকমের লোক রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়? তারা তোর বয়সি ছেলেমেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে কিডনি, চোখ, হার্ট— সব বের করে বিক্রি করে দেয়। এখনও সময় আছে। সাবধান হ। না হলে কিন্তু বিপদে পড়ে যাবি। আর তোর বিপদ মানে আমাদেরও বিপদ। তুই কি তোর বাবা-মাকে কাঁদাতে চাস, বল?
কিন্তু তার মেয়ে বোঝেনি। পর দিন স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরেছিল। সঙ্গে ছিল তার বোন মেজকি আর ছোট ভাই ছোটকা। ওরা তিন জন একই স্কুলে পড়ে। বোড়কি এ বার ক্লাস নাইনে উঠেছে। মেজকি ক্লাস সিক্সে পড়ে আর ছোটকা থ্রি-তে। বাকি দু’জন ঠিক থাকলেও বোড়কিটাই যেন একটু কেমন কেমন…
শিবকুমার জোগাড়ের কাজ করে। তার বউ নতুন গজিয়ে ওঠা কয়েকটা বাবুর বাড়িতে। কোথাও সপ্তাহে তিন দিন কাপড়় কাচার কাজ, কোথাও ঘরদোর মোছা-বাসন মাজার কাজ। কোথাও আবার রান্নার কাজ। তাদের কারও কারও বাড়ির মূলত কার্ড এন্ট্রি করার জন্যই রেশন তুলে দেয়। সবার বাড়িতেই গ্যাস আছে। তাই অনেকেই প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে কেরোসিন তোলে না। সেটা সে ধরে। এবং বেশ কিছুটা জমে গেলে পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে অনেক বেশি দামে বিক্রি করে। ফলে ফিরতে ফিরতে তার দুপুর গড়িয়ে যায়। এসে রান্নাবান্না করে।
সে দিন রান্নাবান্না করার পর হাতের কাজ নিয়ে বসেছিল। কক্ষনো চুপচাপ বসে থাকতে পারে না সে। গরম যাওয়ার আগেই নানান নকশার সোয়েটার বুনতে শুরু করে। মেয়ের জামায় নানা রঙের সুতো দিয়ে কলকা তুলে দেয়। স্বামীর রুমালে তো বটেই, নিজের রুমালেও চেকনাই সুতো দিয়ে নামের অদ্যাক্ষর লেখে। কারণ রুমালের প্রতি খুব ছোটবেলা থেকেই তার দুর্বলতা। সব সময় কোমরে একটা গোঁজা থাকে।
বড় মেয়েকে কাঁদতে দেখে সে ভেবেছিল, নিশ্চয়ই বোন বা ভাইয়ের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছে। এক্ষুনি হাতাহাতি লেগে যাবে। তাই হাতের কাজ ফেলে ত়ড়িঘড়ি উঠে এসে জিজ্ঞ়়েস করেছিল, কী হয়েছে রে?
বোড়কি কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল, আমি আর স্কুলে যাব না।
মা বলেছিল, এ আবার কী অলুক্ষুণে কথা! কেন? স্যার মেরেছে?
— না।
— কেউ কিছু বলেছে?
— না।
— তা হলে?
বোড়কি বলেছিল, আমার স্কুলে যেতে ভাল লাগে না। আমি আর স্কুলে যাব না।
— কেন যাবি না, সেটা তো বলবি।
— না। আমি আর স্কুলে যাব না।
ওর মা বলেছিল, তা হলে কি আমার মতো লোকের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করবি? তোর বাবা তোদের জন্য মুখে রক্ত তুলে কাজ করে। আর তুই বলছিস… আসুক তোর বাবা।
ওর বাবা বড় মেয়েকে ভীষণ ভাল বাসে। শত অন্যায় করলেও বকে না। বউ মারতে গেলেও আটকায়। সব সময় বলে, বড়় হোক। সব ঠিক হয়ে যাবে। সে-ই বাবাও বুঝতে পারছে, এই মেয়ে তার বাকি দুই ছেলেমেয়ের মতো নয়। তাই ওকে কাছে ডেকে আদর করে পাশে বসিয়ে বোঝাতে লাগল, এ রকম করতে নেই মা। তুই কেন বারবার পালিয়ে যাস?
বোড়কি বলেছিল, আমার বাড়িতে থাকতে ইচ্ছে করে না।
— কেন?
কোনও উত্তর না দিয়ে ও চুপ করে ছিল। তাতে আরও মেজাজ চড়ে যাচ্ছিল শিবকুমারের। তাই গলা চড়়িয়ে ফের জিজ্ঞেস করেছিল, কেন? কেন? কেন থাকতে ইচ্ছে করে না তোর?
বোড়কি বলেছিল, জানি না।
— তোর ভাইবোনেরা তো এ রকম নয়। তুই এ রকম করিস কেন?
বাবার কথার উত্তর না দিয়ে, উল্টে ও-ই প্রশ্ন করেছিল, সবাইকে কি একই রকম হতে হবে?
— তুই কি চাস?
— যে দিকে দু’চোখ যায়, আমি সে দিকে যেতে চাই।
একটুক্ষণ চুপ করে থেকে গলার স্বর একেবারে খাদে নামিয়ে শিবকুমার বলেছিল, এ রকম বললে হয় মা বল? তুই তো মেয়েমানুষ।
— আমি ছেলে মেয়ে বুঝি না। আমার যা মন চায় আমি তাই করব। আর কিছু বলবে?
মেয়ের বেয়াদব কথা শুনে মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল শিবকুমারের। মনে হচ্ছিল ঠাসিয়ে একটা চড় মারে। শেষ পর্যন্ত নিজেকে কোনও রকমে সামলে নিয়েছিল। সরে গিয়েছিল ওর সামনে থেকে।
না। সে দিন নয়। তার পর দিনও নয়। তার পর দিন ফের বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিল বোড়কি। সব জায়গায় খুঁজেছিল শিবকুমার। কিন্তু কোত্থাও পায়নি। বউ বলেছিল, একবার থানায় যাও। ওরা ঠিক আমার মেয়েকে খুঁজে এনে দেবে।
সে বলেছিল, কী করে যাব? এর আগের বার মেয়েকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে উনি কী বলে গিয়েছিলেন তোমার মনে নেই?
— আমার সব মনে আছে। তবু তুমি যাও।
— না। আমি যাব না।
— এই বারই শেষ বার। এর পরে ও গেলেও আমি আর কক্ষনো তোমাকে থানায় যেতে বলব না। যাও।
শিবকুমার গিয়েছিল। সে থানায় ঢুকতেই ওই পুলিশ অফিসারটি বলেছিল, কী হল? আবার থানায় কেন? আপনাকে বলেছিলাম না, থানায় আসবেন না। মেয়ে হারানো ছাড়া অন্য কিছু বলার থাকলে বলুন…
কোনও কথা নয়। ঝপ করে বসে তার পা জড়িয়ে ধরেছিল শিবকুমার। হাউহাউ করে কান্না জুড়ে দিয়েছিল। পুলিশ অফিসারটি বলেছিল, আরে, ছাড়ুন ছাড়ুন। পা ধরছেন কেন? ঠিক আছে ঠিক আছে, বলুন, কখন থেকে পাওয়া যাচ্ছে না?
শিবকুমার বলেছিল। এবং অবাক কাণ্ড, সে বারও সন্ধে নামার আগেই… না। মেয়েকে পৌঁছে দেয়নি। থানা থেকে লোক পাঠিয়ে তাকে আর তার বউকে ডেকে পাঠিয়েছিল ওই পুলিশ অফিসারটি।
মেয়েকে দেখে শিবকুমারের চোখ আনন্দে চকচক করে উঠেছিল। বলেছিল, কোথায় পেলেন ওকে?
পুলিশ অফিসারটি বলেছিল, আমাদের এক অফিসার গ্রামে টহল দিচ্ছিলেন। উনি হঠাৎ দেখেন, সুনসান রাস্তার ধারে ঢালু জমির নীচে একটি বাচ্চা কী যেন করছে। বাচ্চাটি কে! দেখতে গিয়ে দেখে— ও।
— কী করছিল?
— উবু হয়ে বসে এক হাত এক হাত করে রাস্তা মাপছিল।
— রাস্তা মাপছিল? শিবকুমার অবাক।
— তা হলে আর বলছি কী… ও নাকি ওই ভাবে হাত মেপে মেপে দেখতে চেয়েছিল আপনাদের বাড়ির সীমানা থেকে হাইওয়েটা কত হাত দূরে।
— সে কী!
— সে কী, সেটা আপনারাই বুঝুন। বলে, তাদের হাতে বোড়কিকে সঁপে দেওয়ার আগে রীতিমত বেশ কড়া ভাষাতেই ধমকেছিল সে। বলেছিল, একটা মেয়েকে দেখে রাখতে পারেন না? দেখুন তো, শুধু আপনাদের গ্রামেই নয়, আশপাশের কোনও গ্রামে এ রকম আর একটাও মেয়ে আছে কি না। তা হলে আপনাদের মেয়ে এ রকম কেন?
সে দিন দু’জনেই পুলিশ অফিসারটিকে কথা দিয়েছিল, এ বার থেকে মেয়েকে চোখে চোখে রাখব। ভাল করে বোঝাব। দরকার হলে দুটো বাড়ির কাজ ছেড়ে দেব। মেয়েকে আর পালাতে দেব না।
বাড়ি নিয়ে এসে মা-বাবা দু’জনেই খুব করে বুঝিয়েছিল। বোড়কিকে বলেছিল, তুই যদি এ রকম করিস, তা হলে তোর ভাইবোনেরা তোর কাছ থেকে কী শিখবে বল? তা ছাড়া, তুই বড় হয়েছিস। কোন ছেলে কী রকম তুই জানিস? চারিদিকে কত কী হচ্ছে। যদি সে রকম কোনও বিপদ হয়! তখন? তোকে বিয়ে দিতে পারব? না, আমরা কাউকে মুখ দেখাতে পারব? আমরা গরিব মানুষ মা। এ রকম করিস না।
সে দিন রাত্রে ওর দুই ভাইবোনকে পাশের ঘরে ঘুম পাড়িয়ে বোড়কিকে মাঝখানে শুইয়ে দু’পাশ থেকে দু’জন অনেক বুঝিয়েছিল। বোঝাতে বোঝাতে কখনও কখনও রেগে যাচ্ছিল ওর মা। রাগ সামলাতে না পেরে থেকে-থেকেই মেয়ের উপরে হাত ওঠাতে যাচ্ছিল। আর প্রতি বারের মতোই বউকে বিরত করছিল শিবকুমার। কারণ, আরও দুটো বাচ্চা থাকলেও এই বড় মেয়েটাই ছিল তার প্রাণ।
তবু মেয়েকে আগলে রাখা গেল না। পালিয়ে গেল। না। অনেক খোঁজ করেও তাকে কোথাও পাওয়া গেল না। ছলছল চোখে শিবকুমার এ কথা বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল তার বউ। আর তার কান্না শুনে বইপত্র ফেলে পাশের ঘর থেকে ছুটে এসে মায়ের কাছ ঘেষে দাঁড়াল তাদের বাকি দুই ছেলেমেয়ে।
ফের কান্না জড়ানো গলায় বউ বলল, যাও না… থানায় গিয়ে একবার বলো না… দরকার হলে হাতে-পায়ে ধরো। আমি যাব?
ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেও শিবকুমার নিজেকে কোনও রকমে সামলে নিয়ে এই প্রথম বার একটু কড়া গলাতেই বলল, না।
নিজে তো গেলই না। বউকেও যেতে দিল না।
বিকেল হল। সন্ধে হল। রাত্র হল। না। মেয়ে ফিরল না। সারা রাত স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই খাটের উপর ঠাঁয় বসে রইল। সকাল হল। শিবকুমার কাজে বেরোল না। বউও না। এমনকী তাদের যে আরও দুটো বাচ্চা আছে, সে কথাও যেন তারা বেমালুম ভুলে গেল। ভুলে গেল, নিজেদের জন্য না করলেও ওদের জন্য রান্নাবান্না করতে হবে। রেডি করে স্কুলে পাঠাতে হবে।
ছোটকা এসে মাকে বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগল, মা, দিদি কোথায়?
মেজকি ঘুরে ঘুরে এসেই তার বাবাকে বলতে লাগল, দিদিকে খুঁজতে যাবে না?
কিন্তু কারও কথাই যেন তাদের কানে ঢুকছে না। তারা যেন কেমন পাথর হয়ে গেছে।
সে দিন না। তার পর দিনও না। এমনকী তার পর দিনও তাদের মেয়ে বাড়িতে ফিরল না। চার দিনের দিন এল পুলিশ।
তারা যখন থানায় পৌঁছল, যে তাদের কখনও বসতে বলেনি, বরং দূর দূর করে প্রায় তাড়িয়ে দিত, সেই পুলিশ অফিসারটিই তাদের সঙ্গে অত্যন্ত ভাল ব্যবহার করল। টেবিলের উল্টো দিকের চেয়ারে বসতে বলল। তার পর জিজ্ঞেস করল, আপনাদের মেয়ে কোথায়?
— পেয়েছেন?
— না। আমি জিজ্ঞেস করছি, আপনাদের মেয়ে কোথায়?
স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইল।
— কী হল? তাকান আমার দিকে।
ওরা যখন মুখ তুলল, পুলিশ অফিসারটি দেখল, ওদের দু’জনের চোখই ছলছল করছে। তাই একটু থেমে ওদের কাছে জানতে চাইল, কবে পালিয়েছিল?
কাঁদো কাঁদো গলায় বোড়কির মা বলল, আজ চার দিন হয়ে গেল…
— থানায় মিসিং ডায়েরি করেননি কেন?
— আপনি বারণ করেছিলেন, তাই…
ড্রয়ার থেকে এক চিলতে কাপড়ে মো়ড়া একটা পুটুলি বের করে সামনের টেবিলে রেখে কাপড়টা খুলতে খুলতে ওদের দিকে তাকিয়ে বলল, দেখুন তো, এটা চিনতে পারেন কি না…
শিবকুমারের বউ দেখল, যেটা সে তার বিয়েতে পাওয়া রুপোর টিকলি, গলার মোটা হার আর পাশের গ্রামের রথের মেলা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া বাচ্চাদের পায়ের এক পাটি তোরা ভেঙে নিজের পছন্দ করা ডিজাইনে গড়িয়ে দিয়েছিল, স্যাকরাকে বলে যার মধ্যে বড় বড় করে ‘বোড়কি’ লিখে দিয়েছিল, এটা সেই বালা। সঙ্গে সঙ্গে সে বলল, এটা কোথায় পেলেন?
— আমরা আজ রাস্তার ধারের একটা ঝোপের আড়াল থেকে মুণ্ডুহীন একটা লাশ পেয়েছি। বারো-চোদ্দো বছর বছরের একটা মেয়ের। কিন্তু তার মুণ্ডুটা এখনও পাইনি। তল্লাশি চলছে। শরীরটাও এমন ভাবে ঝলসে গেছে যে, শনাক্ত করা মুশকিল। মনে হচ্ছে, বাচ্চা কাউকে না পেয়ে, একটু বড়় বয়সের মেয়েকেই বলি দেওয়া হয়েছে।
— বলি! আঁতকে উঠল স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই।
— হ্যাঁ, বলি। প্রাথমিক তদন্তে সেটাই মনে হচ্ছে। কারণ, ডেডবডির পাশে বিশাল ব়ড় একটা ফুলের মালাই শুধু নয়, অনেক কুঁচো ফুলও পাওয়া গেছে। আর যারা তাকে বলি দিয়েছে, সে যে কে, সেটা যাতে কেউ চিনতে না পারে, সে জন্যই সম্ভবত তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে জ্বালিয়ে দিয়েছে।
শিউরে উঠল শিবকুমার। এই ভাবে একটা বাচ্চাকে মেরেছে…
চোখ মুখ কুঁচকে শিবকুমারের বউ জিজ্ঞেস করল, কিন্তু তার সঙ্গে আমার মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার কী সম্পর্ক?
— কারণ, ওই ডেডবডির হাতেই এই বালাটা ছিল…
দু’জনেই থরথর করে কেঁপে উঠল। শিবকুমারের মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এল, মানে?
— চলুন, মর্গে যাই। দেখুন, আইডেনটিফাই করতে পারেন কি না…
উঠেপ়ড়ে লাগল পুলিশ অফিসারটি। যে ভাবেই হোক এর খুনিকে খুঁজে বের করতেই হবে। সে নানান সোর্স মারফত খবর নিতে লাগল, তিন-চার দিনের মধ্যে কারও বাড়িতে কোনও ভিত পুজো হয়েছে কি না… কেউ কোনও মানসিক পুজো দিয়েছে কি না… প্রথমে মনে হয়েছিল, যেখানে মৃতদেহ পাওয়া গেছে, তার আশপাশেরই কোনও বাড়িতে ওকে বলি দেওয়া হয়েছে। কারণ, বলি দেওয়ার পর সেই দেহ বেশি দূর থেকে বয়ে নিয়ে এসে ওখানে ফেলা চাট্টিখানি কথা নয়। তা ছাড়া, দূর থেকে নিয়ে এলে বস্তায় ভরে নিয়ে আসতে হত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। তবু চার-পাঁচ দিনের মধ্যে পুজো হয়েছে, কাছাকাছি এ রকম একটাও বাড়ি যখন পাওয়া গেল না, তখন খোঁজ শুরু হল এলাকার বাইরেও।
তল্লাশি করতে করতে পাওয়া গেল তিনটে বা়ড়ি। প্রথম বাড়িটির কর্তার রোগ কিছুতেই সারছিল না। তাকে রোগমুক্ত করার জন্যই বাড়িতে মহাধুমধাম করে যজ্ঞ করা হয়েছে। এবং সেখানে নাকি বলিও দেওয়া হয়েছে।
সঙ্গে সঙ্গে থানায় তুলে নিয়ে আসা হল সেই বাড়ির বড় ছেলেকে। জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেল, বলি দেওয়া হয়েছে ঠিকই, তবে নরবলি নয়, এমনকী ছাগ বলিও নয়, বলি দেওয়া হয়েছে একটা চালকুমরোকে।
দ্বিতীয় বাড়িটাতেও পুজো হয়েছিল। ধুমধাম করেই হয়েছিল। তবে সেখানে নাকি কোনও বলি-টলি দেওয়া হয়নি।
কিন্তু তৃতীয় বাড়িটার লোকজনদের সঙ্গে কথা বলে সন্তুষ্ট হতে পারেনি সেই পুলিশ অফিসারটি। তারা জানিয়েছিল, হ্যাঁ, আমরা বলি দিয়েছিলাম। তবে কোনও প্রাণ নয়, কাম-ক্রোধ-ঈর্ষা-লোভ-ভয়ের প্রতীক হিসেবে মাটি দিয়ে বানানো কয়েকটা পুতুলকে।
ওরা ও কথা বললেও, পুলিশ অফিসারটির কাছে কিছুতেই যখন সেটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছিল না, তখন আর এক ইনভেস্টিগেশন অফিসার বলল, আচ্ছা, বডির উপরে যে মালাটা পাওয়া গেছে, সেটা কিন্তু সব দোকানে সচরাচর পাওয়া যায় না। অত মোটা গোরের মালা! আমার মনে হয়, অর্ডার দিয়ে বানানো। এখানে তো ফুলের দোকান মাত্র কয়েকটা। হাতে গোনা। একবার খোঁজ করে দেখলে হয় না?
মাথা কাত করেছিল পুলিশ অফিসারটি।
ওরা যখন আলোচনা করছে, তখনই, যেখানে মৃতদেহটি পাওয়া গিয়েছিল, তার আশপাশে কাটা মুণ্ডুর তল্লাশি করতে থাকা তদন্তকারী এক অফিসার রাস্তার ধার থেকে কুড়িয়ে পেল একটা লেডিস রুমাল। আর ওটা দেখেই তার সন্দেহ হল, এই খুনের সঙ্গে কোনও মহিলা জড়িত। কোনও মহিলাই তাকে ফুঁসলে নিয়ে এসেছিল। আর সেই মহিলার সঙ্গে ও এসেছিল মানে, ও তাকে খুব ভাল করেই চিনত। সে তার মায়ের কোনও বন্ধু হতে পারে। কোনও আত্মীয়া হতে পারে। আবার তাদের পরিবারের কোনও পরিচিতাও হতে পারে। তবে যে-ই হোক, সে একজন মহিলাই। কারণ, রুমালটা কোনও পুরুষের নয়, মহিলার।
এ ক’দিন আর রান্নাবান্না হয়নি শিবকুমারের বাড়িতে। মুড়ি খেয়েই কাটিয়েছে বাচ্চা দুটো। কিন্তু কত দিন আর ওদের মু়ড়ি খাইয়ে রাখা যায়! তাই চুল্লি ধরিয়ে ভাতের সঙ্গে সেদ্ধ দেওয়ার জন্য আলু ফালি করছিল শিবকুমারের বউ। মেয়ের মৃতদেহ শনাক্ত করে আসার পর থেকে আর বা়ড়ির বাইরে বেরোয়নি সে। ক’দিন যাবদ বাড়িতেই আছে।
হঠাৎ কড়া নাড়ার শব্দ শুনে দরজার কাছে এসে দেখে শুধু ওই পুলিশ অফিসারটিই নয়, তার সঙ্গে আরও তিন-চার জন পুলিশ। তার মধ্যে দু’জন মহিলা পুলিশও আছে। গলির মধ্যে পুলিশের ভ্যান ঢুকতে দেখে আশপাশ থেকে বেরিয়ে এসেছে লোকজন। এত জন পুলিশ একসঙ্গে দেখে হকচকিয়ে গেল শিবকুমার। জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে বাবু?
— আপনার বউ কোথায়?
— ও তো ভিতরে। রান্না করছে।
ওটা শোনামাত্রই ধুপধাপ করে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ল তারা। দু’জন মহিলা পুলিশ রান্নাঘরে ঢুকে শিবকুমারের বউকে বের করে নিয়ে এল।
শিবকুমার আকাশ থেকে পড়়ল। হকচকিয়ে গিয়ে পাগলের মতো বারবার একই প্রশ্ন করে যেতে লাগল, কী হয়েছে বাবু, কী হয়েছে? ও কী করেছে? ওকে ধরছেন কেন?
মুখ ঝামটা দিয়ে উঠেছিল পুলিশ অফিসারটি। কেন? ও একটা খুনি। বোড়কিকে ও-ই খুন করেছে।
— না বাবু, না। ও খুন করতে পারে না।
পুলিশ অফিসারটি বলল, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। বোড়কির মৃতদেহের পাশে যে ফুলের মালা পাওয়া গিয়েছিল, সেটা আপনার বউই কিনে নিয়ে গিয়েছিল। আমরা ফুলওয়ালার কাছ থেকে জানতে পেরেছি। আর ও-ই যে গিয়েছিল, তার প্রমাণ— ওই মৃতদেহের খুব কাছেই পাওয়া গেছে আপনার বউয়ের একটা রুমাল।
— রুমাল? ওটা যে আমার বউয়েরই, সেটা বুঝলেন কী করে?
— ওটার এক কোনায় ছোট্ট করে লেখা রয়েছে আপনার বউয়ের নামের প্রথম অক্ষর।
— তবু আমি বলছি, ও খুন করেনি। বেশ জোরের সঙ্গেই বলল শিবকুমার।
— ও খুন করেনি?
— না। ও খুন করেনি।
পুলিশ অফিসারটি জিজ্ঞেস করল, তা হলে কে করেছে? কে?
শিবকুমার খুব ধীর-স্থির হয়ে বলল, আমি।
থানায় এনে জবানবন্দি নেওয়া হল শিবকুমারের। কেন আপনি মেয়েকে মারতে গেলেন? আপনি তো আপনার ছেলেমেয়েদের মধ্যে ওকেই সব থেকে বেশি বাসবাসতেন?
মাথা নামিয়ে ছলছল চোখে শিবকুমার খুব ধীরে ধীরে বলল, ভালবাসতাম দেখেই তো মেরেছি।
— মানে?
— আপনারা তো সবই জানেন, চারিদিকে কী হচ্ছে। এই তো সে দিন একটা মেয়েকে রাস্তার মধ্যে একা পেয়ে কতগুলো ছোকরা তুলে নিয়ে গিয়ে কী করল। তার পর তার রক্তমাখা দেহ পাওয়া গেল কাছেরই একটি নির্মীয়মান বাড়ির ভিতরে।
তেলেনি পা়ড়ার একটা বা়ড়িতে মা-বাবা না থাকার সুযোগে পা়ড়ারই একজন বাবার বয়সি মানুষ, ঘরে ঢুকে… সে সবাইকে বলে দেবে বলেছিল দেখে, হেঁসো দিয়ে তাকে কোপাতে শুরু করেছিল। তার পর তার চিৎকারে পা়ড়া-প্রতিবেশীরা ছুটে আসায় তাকে ওই রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখেই সে চম্পট দেয়… পাড়ার লোকেরা ধরাধরি করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার পরেই তার মৃত্যু হয়।
বুড়ো বটতলার ঘটনাটা তো আরও ভয়াবহ। মায়ের পাশে ঘুমিয়েছিল একরত্তি মেয়েটা। পর দিন সকালে তার বাবা বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দেখে, সামনের আমগাছে তার মেয়ের দেহ ঝুলছে। পরনে কিচ্ছু নেই। পরে জানা গিয়েছিল, কারা নাকি রাতের অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে তার মায়ের পাশ থেকে তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তার পর… পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে নাকি বলা হয়েছিল, ওকে কয়েক জন মিলে পর পর… ছিঃ… আর তার ফলেই নাকি তার মৃত্যু হয়েছে।
তাই অনেকেই সন্দেহ করেছিল, মরে গেছে বুঝতে পেরেই ওই ছেলেগুলি তার গলায় গামছা বেঁধে ওই ভাবে আমগাছে লটকে দিয়েছিল। কেউ যদি দেখে ফেলে! সেই ভয়ে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে তারা খেয়ালই করেনি, তার পা মাটি ছুঁয়ে আছে। যা সহজেই বুঝিয়ে দেয়, ওটা আত্মহত্যা নয়, খুন।
এ সব ওকে বলতে পারিনি। নিজের মেয়েকে কি এ সব বলা যায়! তবু নানা রকম ভাবে ভয় দেখিয়েছিলাম। যাতে ও ভুলভাল খপ্পড়ে না পড়ে। কিন্তু ও শোনেনি।
— কিন্তু ওকে মারলেন কেন? কী হয়েছিল?
— সে দিন ও স্কুলে যাওয়ার সময় দেখি ওর বইয়ের ব্যাগটা একেবারে ঢাউস হয়ে ফুলে আছে। দেখেই আমার সন্দেহ হয়েছিল। তাই বেরোবার আগে ও যখন খেতে বসেছিল, তখন চুপিচুপি ওর ব্যাগের চেন খুলে দেখি, তার মধ্যে বেশ কয়েকখানা সালোয়ার-কামিজ । বুঝতে পারলাম, ও আজ পালাবে।
ও বেরোতেই আমিও বেরোলাম। ওর পিছনে পিছনে খানিকটা গেলাম। হঠাৎ ও পিছন ফিরতেই আমাকে দেখে ফেলল। বলল, বাপু, তুমি আমার পিছু পিছু আসছ কেন?
আমি তখন ওকে বললাম, তোর সঙ্গে ক’টা কথা আছে মা। চল, ওই গাছতলায় গিয়ে একটু বসি।
ও বলল, আমার স্কুলের দেরি হয়ে যাবে।
আমি বললাম, তুই যে স্কুলে যাবি, তোর বইখাতা কোথায়— তোর ব্যাগে তো শুধু ক’খানা সালোয়ার-কামিজ।
ও খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমি স্কুলে যাব না।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
ও বলল, আমার ভাল লাগে না।
আমি জানতে চাইলাম, তা হলে তোর কী ভাল লাগে?
ও বলল, যে দিকে দু’চোখ যায়, সে দিকে চলে যেতে।
আমি ফের জিজ্ঞেস করলাম, তুই চলে যাবার জন্য বেরিয়েছিস?
ও বলল, হ্যাঁ। একেবারে চলে যাওয়ার জন্য। তোমরা কিন্তু আমাকে আর খুঁজো না।
আমি অনেক কাকুতি-মিনতি করে বললাম, মা, আমার কথাটা শোন…
ও বলল, না। আমি তোমাদের কারও কোনও কথা শুনব না। আমার ভাল লাগে না। দম বন্ধ হয়ে আসে। আমাকে আটকিয়ো না।
আমি আবার জানতে চাইলাম, তা হলে তুই ঠিকই করে নিয়েছিস, চলে যাবি?
ও বলল, হ্যাঁ, চলে যাব। চিরদিনের জন্য চলে যাব।
আমি আর মাথা ঠিক রাখতে পারলাম না। আমার চোখের সামনে একের পর এক ভেসে উঠতে লাগল এই বয়সি মেয়েদের উপরে ঘটতে থাকা একের পর এক ন্যক্কারজনক ঘটনা। ভাবলাম, মরার যখন জন্যই বেরোচ্ছে, তখন মরুক। আমি ওকে বললাম, যা। যাবিই যখন, যা। চিরদিনের জন্যই যা।
ও হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। আমিও উঠে দাঁড়ালাম। ও আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে বলল, যাব?
আমি বললাম, হ্যাঁ। যা। একেবারে যা। বলেই, আমার মধ্যে হঠাৎ কী হল বুঝতে পারলাম না, ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমি ওর গলা টিপে ধরলাম।
তদন্তকারি অফিসারটি জিজ্ঞেস করল, গলা টিপে? তা হলে ওর ধ়ড় থেকে মুণ্ডুটা আলাদা করল কে?
— আমিই।
— কখন?
— মারার পর আমি বুঝতে পারলাম আমি কী করে ফেলেছি। কিন্তু তখন আর কোনও উপায় নেই। নিজেকে পুলিশের হাতে সঁপে দিতেই পারতাম। কিন্তু দিলে, আমার সংসারটা ভেসে যাবে। আমার আরও ছোট ছোট দুটো বাচ্চা আছে। তারা না খেতে পেয়েই মরে যাবে। তাই নিজেকে কোনও রকমে সামলে ঝোপের আড়ালে ওর দেহটা লুকিয়ে রেখে বাড়ি ফিরে এলাম। বউকে সব বললাম। ও সব শুনে হাউহাউ করে কাঁদল। তার পর ও-ই বলল, পুলিশে ধরা পড়লে মুশকিল হবে। এমন একটা কিছু করতে হবে, যাতে তুমি ধরা না পরো। আমাদের কিন্তু আরও দুটো বাচ্চা আছে।
সে দিনই ঠিক করি, ধড় থেকে ওর মুণ্ডুটা কেটে ফেলব। যাতে লোকেরা ভাবে, আরও অনেক বাচ্চাদের মতো ওকেও কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে বলি দিয়ে দিয়েছে।
— মুণ্ডুটা আপনিই কাটলেন?
— হ্যাঁ। রাত্রিবেলায় ও দিকে খুব একটা কেউ যায় না। তাই রাতের অন্ধকারে আমিই কাটারি দিয়ে এক কোপে ওর দেহ থেকে মুণ্ডুটা আলাদা করে ফেলি।
— তা হলে মু্ণ্ডুটা কোথায়?
— ওর মুণ্ডু কাটার পর সেই মুণ্ডুটা খানিকটা দূরে নিয়ে গিয়ে একটা গর্ত করে তার মধ্যে আমি পুঁতে দিই।
— তা হলে ওর শরীরটা পোড়াল কে?
— ওর মা। মেয়েকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য ওর মা-ই দুপুরবেলায় অর্ডার দিয়ে ওই মালাটা বানিয়েছিল। সন্ধ্যার পর ওটা দিতে গিয়ে দেখে, মেয়ের দেহটা অনেকখানি ফুলে গেছে। কতগুলো পোকামাকড় ওকে খুবলে খুবলে খাচ্ছে। ও সেটা সহ্য করতে পারেনি। তাই বেশি দামে বিক্রি করার জন্য তিল তিল করে জমানো দশ লিটারেরও বেশি কেরোসিন ভর্তি জারিকেনটা নিয়ে ও হাঁটা দিয়েছিল। মেয়ের গায়ে পুরোটা ঢেলে দিয়ে দেশলাই জ্বালিয়ে কোনও রকমে ছুটে পালিয়ে এসেছিল।
— ও… তা হলে পালাবার সময়ই বোধহয় ওর রুমালটা পড়ে গিয়েছিল, না?
— হতে পারে। কারণ, ওর শরীরে আগুন লাগানোর সময় শক্ত থাকলেও তার পরেই ও খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। ছুটতে ছুটতে বাড়ি ফিরে এসেছিল। এসেই, আমার বুকের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ও ভীষণ কেঁদেছিল। মাঝে মাঝেই আঁচল দিয়ে চোখ-মুখ মুছছিল। ওর হাতে তখন কোনও রুমাল দেখিনি…
— প্রথমে যখন জেরা করেছিলাম, তখন এগুলো বলেননি কেন?
— বলিনি, কারণ, আমি এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না এটা ঘটেছে। এবং আমিই সেটা ঘটিয়েছি। তাই ওই ঘটনাটা আমরা দু’জনেই আমাদের জীবন থেকে একদম মুছে ফেলেছিলাম। এতটাই নিখুঁত ভাবে মুছেছিলাম যে, আমাদের মাথা থেকেই ওটা উবে গিয়েছিল। তাই ওই ঘটনা ঘটার পর দিনই, ও পালিয়ে গেছে মনে করে অন্যান্য বারের মতো ওকে খুঁজতে পর্যন্ত বেরিয়েছিলাম। এবং তার পরও, প্রতিদিনই, আজ এখানে কাল সেখানে ওকে খুঁজতে বেরোতাম। আর প্রত্যেক বারই বাড়ি ফেরার সময় দেখতাম, মেয়ের জন্য তার মা দরজার সামনে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে আসতে দেখলেই ও ছুটে এসে জিজ্ঞেস করত, ও কোথায়?
আমি ছলছল চোখে বলতাম, না। বোড়কিকে কোথাও খুঁজে পেলাম না।
কেন জানি না, আমার বারবারই মনে হত, এটা একটা দুঃস্বপ্ন। যে কোনও সময় ভেঙে যাবে। ঘুম থেকে উঠে দেখব, বোড়কি ছুটতে ছুটতে আমার বুকে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে… ওই তো বোড়কি… ওই তো… ওই তো ছুটতে ছুটতে আসছে… ওই তো…
শিবকুমার যখন জবানবন্দি দিচ্ছে, ওর বউ তখন ভাঙা রেকর্ডের মতো একটাই কথা বার বার বলে যাচ্ছে, সব দোষ আমার… সব দোষ আমার… সব দোষ আমার…
SIDDHARTHA SINGHA
27/P, ALIPORE ROAD,
KOLKATA 700027
(M) 9836851799 / 8777829784
E-MAIL : siduabp@gmail.com 
সিদ্ধার্থ সিংহ
২৭/পি,  আলিপুর রোড,
কলকাতা ৭০০০২৭