Saturday, May 11, 2019

এক অন্যস্বাদের প্রেম© (গল্প ) ঐশী চক্রবর্তী ভট্টাচার্য্য



এক অন্যস্বাদের প্রেম©






ঐশী চক্রবর্তী ভট্টাচার্য্য


আবির আর নিশা আমার এই গল্পের নায়ক নায়িকা। ওদের টানা 6 বছরের সম্পর্ক পরিণতি পেয়েছে গত চার বছর আগে।ক্লাস নাইনের নিশাকে সেকেন্ড ইয়ারের আবিরের ভালো লেগে যায় নিশার প্রাণোচ্ছলতা দেখে।নিশা ও শান্ত স্বভাবের সেই ছেলেটার প্রেমে পড়ে যায় একসময়। স্কুল ফেরত নিশাকে যেদিন আবির প্রথম বার প্রপোজ করে সেদিন নিশা ও আর নিজের মনের কথা চেপে রাখতে পারেনি। শুরু হয় ওদের প্রেম। ভালই কাটছিল ওদের সম্পর্কের দিনগুলো। আবির ও ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ভালো একটা চাকরি পেয়ে গেছিল। হঠাৎ বাদ সাধে ওদের বাড়ির লোক। নিশার বাড়ির লোক আবিরের সাথে নিশার সম্পর্কটা কিছুতেই মেনে নেয় না কারণ আবির হিন্দু ঘরের ছেলে। আর এই সম্পর্কে আবিরের বাড়ির লোক আপত্তি জানায় কারণ নিশা খ্রিষ্টান পরিবারের মেয়ে। তাই দুই তরফ থেকেই ওদের সম্পর্কটা মেনে নেয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে। নিশার পরিবার ওর জন্য অন্যত্র সম্বন্ধ দেখতে শুরু করে। কিন্তু ওদের ভালোবাসাটা এতটাই প্রচন্ড ছিল যে ওরা বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। রেজিস্ট্রি ম্যারেজ এর পর যখন ওরা বাড়ি ফেরে তখন দুই পরিবারের লোকজনই ওদের অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। অপমান সহ্য না করতে পেরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে ওরা একটা ভাড়া বাড়িতে ওঠে এবং সেখানেই ওরা ওদের কাঁচা হাতে সুখের সংসার গোছাতে শুরু করে। এভাবেই চার বছর কেটে গেছে। সুন্দর করে নিজেদের সংসার গুছিয়ে নিয়েছে ওরা। সংসারে কোন অভাব না থাকলেও শুধু একটাই অভাব একটা সন্তানের। সেই অভাবটা ওদের রোজ কুরে কুরে খায় । অনেক ডাক্তার বদ্যি করে ও কোন লাভ হয়নি। এভাবেই চলছিল ওদের জীবন। কিন্তু অদৃশ্য ওদের জীবনে অন্য কিছুই ঠিক করে রেখেছিল হয়তো। হঠাৎ একদিন নিশা মাথা ঘুরে পড়ে যায়। প্রথমটায় ওরা ভেবেছিল হয়তো নিশা মা হতে চলেছে, ওদের আনন্দ বাঁধ ভেঙে ছিল। কিন্তু ডাক্তারের রিপোর্টটা ওদের জীবন টাকে খাদের এক কোনায় দাঁড় করিয়ে দেয়। কারণ রিপোর্টে লেখা ছিল নিশার ব্রেন টিউমার হয়েছে এবং টিউমারটা ম্যালিগন্যান্ট। ফোর্থ স্টেজ এ রয়েছে। নিশার বাঁচার আশা খুব কম। ওদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। আবির ওদের বাড়ির লোককে খবরটা জানায়। খবর পেয়ে নিশার বাড়ির লোক ছুটে আসে নিশাকে দেখতে। আবিরের বাড়ির লোকেরা ও আবির এর পাশে দাঁড়ায় এই দুঃসময়ে। দুই পরিবারই নিজেদের ভুলটা বুঝতে পারে এবং ওদেরকে মেনে নেয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ক্যান্সারের সাথে লড়াইয়ে নিশা হার মেনে এই দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। আবিরের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। নিশা কে হারানোর শোকটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না আবির। ও যেন আজকাল পাথরের মতন হয়ে গেছে কোন কিছুতেই আর কিছু এসে যায় না ওর। বাড়ির লোকেরা অনেক চেষ্টা করেছে ওকে আবার জীবনের ছন্দে ফেরানোর কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হয়েছে। ওর জীবনে এখন শুধু অফিস আর বাড়ি এছাড়া ওর আর কোন জীবন নেই। সব সময় যেন গুমরে থাকে। একদিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরছিল আবির সেই সময় হঠাৎ আস্তাকুঁড়টার কাছে একটা আওয়াজ শুনতে পেয়ে এগিয়ে যায়। গিয়ে দেখে একটা সদ্যোজাতকে কে বা কারা যেন ফেলে রেখে গেছে। তাড়াতাড়ি ওকে কোলে তুলে নেয় ও । তারপর পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গিয়ে সমস্ত ফরমালিটি সেরে সদ্যোজাত টা কে বাড়ি নিয়ে আসে এবং বাড়ির লোককে সমস্ত ঘটনাগুলো বলে। খুদে টা ওর কাছেই বড় হতে থাকে। আবিরকে ছাড়া এক মুহূর্ত চলে না ঐ খুদে টার। আবির এর উপর যেন ওর একমাত্র অধিকার। আবিরের ও মায়া পড়ে যায় ওই দুধের শিশু টার ওপর। আবির ওই খুদে তাকে দত্তক নেয়। নিয়ম মেনে 6 ষষ্ঠীর দিন ওই ক্ষুদেটার নাম রাখে নিশা। আবির এখন আবার আগের মত হয়ে উঠছে ছোট্ট নিশা যেন ওর দুঃখের দিনে এক চিলতে রোদ হয়ে এসেছে ওর ঘরে। ওরা এখন অনেক কাজ অফিস থেকে ফিরেই ও মেতে উঠে ওর রাজকন্যার সাথে। এমন সময় হাল্কা বাতাস এসেই ওর কানে কানে বলে যায় ভালো থেকো আবির। ও চিনতে পারে ওই গলাটা, যেটাওর গত 10 বছরের অভ্যেস।

লেখা: ঐশী চক্রবর্তী ভট্টাচার্য্য ©


No comments: