Tuesday, April 7, 2020
গন্তব্য
নাসিমুজ্জামান নীরব
আজ আবার যাচ্ছি।ঠিক করেছিলাম না,আর কোন মতিভ্রমেই যাওয়া চলবেনা; কিন্তু না
গেলেও যে নয়।
বেতনটা পেলে পড়ানো বন্ধ;সেটি অবশ্য মুখে বলব না।আল্লাহর কসম বলছি আর কখনও
ওমুখো হব না,হাতে-পায়ে পড়লেও না।বহুবার কঠিন প্রতিজ্ঞা করেছি যে যাবনা কিন্তু
যেতে হয়েছে,তবে এই শেষ।প্রত্যেক মাস এরকম।কাল দেব,পরশু দেব, অথচ এক মাস শেষ
হয়ে আরেক মাস হতে চলল-- দেবার কথাই নেই।গত মাঘে পরীক্ষা চলছিল,পুরো মাসটা টানা
পড়িয়েছি,অথচ একশ টাকা বেশি দেওয়া দূরে থাক সামান্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেনি।
সালা ছোটলোক!আজ যাচ্ছি,বেতন আজকে চাই ই চাই।আমার হালাল টাকাটা;দেবেনা কেন?একটা
কুকুর হন্যে হয়ে রাস্তার ধারঘেঁষে কি যেন শুঁকতে শুঁকতে পাশ কাটিয়ে গেল,
অল্পের জন্য ধাক্কা লাগেনি।চিৎ হয়ে রাস্তার ধূলির মধ্যে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো যে
শ্বাস বের হবার জন্য অপেক্ষমান উদ্বাস্তু-উন্মাদ মাতালটা,তার নোংরা গায়ের উপর
দিয়ে হ্যাংলার মতো চলে গেল,সে টের পায়নি।
সপ্তাহ দুই পূর্বে দূরের এক বন্ধু ফোন দিয়ে বলেছিল --- একটি সার্টিফিকেট
বানিয়ে দিতে হবে,যে কোন প্রকারে;কত টাকা লাগবে জানাইয়ো।বছর খানেক পূর্বে একটি
বানিয়ে দিয়েছি,আত্নবিশ্বাস ছিল।নীলক্ষেতের কয়েকটি দোকানে খোঁজ করলাম কিন্তু
ডিবি পুলিশ মাঝেমধ্যে রেইড দেয়, এই ভয়ে কেউ কাজটা নিতে চাইলো না।পরে নিরাশ হয়ে
যখন চলে আসছিলাম--- 'কি কাজ বাইজান' বলে ডাক দিল এক অপরিচিতজন,আমি সার্টিফিকেট
উচ্চারণ করার পূর্বেই থামিয়ে দিল।এক হাজার টাকা লাগবে,করলে জিনিসটা মেইল কইরা
পাঠাইয়া দেন।আমি বললাম---কাজটা পারবেন তো?সে বললো -- ২ ঘন্টা পরে আইসা নিয়া
যাইয়েন।আমি দেরি না করে বন্ধুকে বলেছি দুই হাজার টাকা লাগবে, একদম সেম বানিয়ে
দিবে,এ ও বলতে ভুলিনি যে পূর্বের চেয়ে কাজটা নিখুঁত হবে,কারও বাপের টেংরি নেই
ধরার,যত তাড়াতাড়ি টাকা পাঠাবা ততই ভাল,কাজটা যে করবে সে চলে গেলে আর হবেনা ১
মাসের মধ্যে।বন্ধু সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাঠালো ঠিকই কিন্তু সে কাজটা আজ দিয়ে
অর্ধমাস হলো,তাকে পাঠাতে পারিনি।অথচ টাকাটা খরচ হয়ে গেছে।
বন্ধু যাতে ফোন দিয়ে না পায় সে ব্যবস্থা করেছি,মানে ফোন নাম্বারটা বদলেছি।আমার
তো দোষ নেই,সালার লোকটা যে পারবেনা তা তো জানতাম না।অ্যাডভান্স টাকাটাও আর
ফেরত নিতে যাইনি।মান-ইজ্জ্বত যা ছিল তা খুঁইয়েছি।ইহজীবনে সেই বন্ধুর সাথে দেখা
হবার সম্ভাবনাও কম।দৈবভাবে যদি কোনদিন দেখা হয়েই যায় তবে হাত পা ধরে মাফ চেয়ে
নেব।
যে লোকটা কাজটি নিয়েছিল তাকে মারব বলে শাসিয়েছিলাম একবার।যদিও সত্যিকার অর্থে
সে সামর্থ্য আমার ছিলনা,কারণ তার জন্য যথেষ্ট বুদ্ধির প্রয়োজন যা আমার মধ্যে
অনুপস্থিত;ডাকলে কেউ আসবেনা,উল্টো নিজেই মার খাব।অথচ লোকটা ভয়ে নিজের
স্যান্ডেল এগিয়ে দিয়ে বলেছিল--- এই স্যান্ডেলডা দিয়া আমারে মারেন ভাই,কাজডা
আপনার করুম বইলাই নিচিলাম।আপনে কম কইরা ১০০ বার আইচেন,আপনেরে দেইখা আমার মায়া
লাগচে।আমার প্রিন্টারের সমস্যা না থাকলে নিজেই করতাম।এক শুয়োরের বাচ্চারে দিচি
করনের লাইগা,সে বান্দা উধাও।ফোন ধরেনা,কেমুন ডা লাগে?পাইলে রক্তগঙ্গা বওয়াইয়া
দিমু।লোকটার চোখমুখ ক্ষোভে লাল হয়ে ওঠে।নামাজের সময় হইছে বাই,পইড়া আইতাছি,একটু
খারান বলে লোকটা টুপি হাতে বেরিয়ে পড়ে।
পাশ থেকে আরেক দোকানী কথাগুলো শুনছিল গোপনে,বলল --- হালার পুতেরে পুলিশ ধরছে
কাইল রাইতে,লোভ!ওহন বুজব ঠ্যালা....তার চোখেমুখে এক চতুর তৃপ্তির হাসি।
প্যাচাল বাড়িয়ে কোন কাজ হবেনা দেখে অপেক্ষা না করে চলে এসেছি। তওবা করেছি, এ
ধরনের কাজ আর দ্বিতীয়বার নয়।
আজ আর এই মেইন রোড দিয়ে যাব না,আজিজ মার্কেটের পাশের ওই নিরিবিলি রাস্তাটাই এর
চেয়ে ভাল।প্রচন্ড জ্যাম পড়েছে,ওটা ছাড়লেই ধূলিমেঘে গা গোসল হয়ে যাবে।একটু জোরে
পা চালিয়ে সামনের ওই নিরিবিলি রাস্তায় দ্রুত পৌঁছাতে হবে।ঠিক স্বাভাবিকভাবে
হাঁটার অভিনয় করতে হবে যেন লোকে মাতাল না ভাবে ।মাথা ঘোরালেও সমস্যা
নেই,টিউশনির বাসা পর্যন্ত আমাকে ধৈর্য ধরে যেতেই হবে।নাস্তাটা নিশ্চয় পাব
ওখানে।গতকাল রাতে আমার রুমমেট খেজুর খাবার সময় সামনে পড়ে যাওয়ায় সম্ভ্রম
রক্ষার্থে দুটি দিয়েছিল।সকালেই ওটা খেয়েছি,আজকে টিউশনির টাকা পেলে ষ্টার
কাবাবে যাব।এমন খাব যেন তিনদিন ক্ষুধা না লাগে।
ও....এক্স গার্লফ্রেন্ড মেসেজ দিয়েছে আজ সকালে।আমি খুব প্রবলেমে আছি,টাকাটা
ব্যক দিলে খুব হেল্প হতো;যদি পারেন এই নাম্বারে বিকাশ করে দিতে পারেন।নচ্ছাড়
মেয়েমানুষ;দুদিনেই তুমি থেকে আপনি শুরু করেছে।অন্যের টাকা আমি কখনই মেরে খাই
না,টাকাটা পেলে আজই তাকে ফেরত দিতে হবে।
আর একটু;সামনের ওই ঝুলে থাকা ডিস এন্টেনা তারের স্তুপ পার পেরোলেই নিরিবিলি
রাস্তাটা।সাঁঝ হয়ে অাসছে, নভেম্বর মাস তাই একটু শীত শীত।এইতো,চলে এসেছি।ঝুপড়ির
ভিতরের মহিলাটা আজও রাস্তার একপাশে আবর্জনায় আগুন লাগিয়ে ধোঁয়া করেছে,কুৎসিত
ভাষায় মশাকে গালিগালাজ করছে।পাশে এক দামি প্রাইভেট কারের ভেতর এসি চালিয়ে
আয়েশিভঙ্গিতে আইসক্রিম চাটছে এক ভদ্রলোক।আমি দ্রুত পা চালিয়ে সেই সাইকেল টায়ার
পোড়ার তীব্র গন্ধযুক্ত ধোঁয়া থেকে মুক্তি পেলাম।
সামনের অফিসার কোয়ার্টারটা পেরোলেই পৌঁছে যাব,আর মাত্র ২ মিনিট।গত পরশু ওখানে
একটা কুকুরছানা দেখেছিলাম,প্রথমে মৃত মনে হলেও পরে দেখি নিঃশ্বাস নিচ্ছে খুব
আস্তে আস্তে।বাচ্চাটার পিঠ কোন এক নিকৃষ্ট জানোয়ার খুবলেছে,মাছি পড়ছিল ভঁ
ভঁ,পোকা কিলবিল করছিল;চামড়ার ধার দিয়ে লাল পিঁপড়ার ঝাঁক কাঁচা মাংশ খাবার
মহোৎসবে মেতেছিল।অথচ প্রাণীটির মাঝে নিঃশ্বাস ব্যতীত সহজাত প্রাণপ্রাচুর্যের
চিহ্নটুকু দেখিনি।শুকিয়ে ওঠা মুখ সামনের দিকে প্রসারিত ছিল,মায়াবী কালো
চোখদুটো শুধু নির্লিপ্তভাবে নড়ছিল বাম থেকে ডানে।নিরুপায় মা কুকুরটি কি ভেবে
বারবার বাচ্চার পিঠ চাটছিল সেদিন।
দেখি আজ কি অবস্থা।রাস্তার এ অংশটা এখনও ফাঁকা আছে,রাত গভীর হবার সাথেসাথে
দু'একজন নিশীথিনীর তাঁবু শোভা পায় এখানে,যারা নিশীথে নির্দ্বিধায় আপন করে নেয়
রিক্সাচালক থেকে স্যুট-ব্যুট পরা ভদ্রলোককে।
চতুর্দিকে দৃষ্টি রেখে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তা অতিক্রম করে চলে আসলাম,বাচ্চা
কুকুরটি চোখে পড়েনি।শুধু দেখলাম মা কুকুরটি ডাস্টবিনের মধ্যে খাবার খুঁজছে।
ছাত্রীর বাড়িতে যখন পৌঁছালাম,মাগরিবের অাজান দিয়ে দিয়েছে।
ছাত্রীর মা মাঝবয়সী,গোলগাল-ফর্সা চেহারা,স্বাস্থ্য একটু বেজায় বেশি,ডায়াবেটিস
আছে।নামাজ পড়ছিল যখন,ফ্যান টা অফ করে দিয়েছে ছোট মেয়ে।নামাজ শেষে হাঁসফাঁস করে
নিঃশ্বাস টেনে চিৎকার জুড়ে দিল,শখের রাজকইন্যা আমার.....মনে হইতাসে নামাজ না,
আপগানিস্তানে যুদ্ধ করবার গেছি।তার শরীর ঘেমে ভিজে গেছে,শরীরের কাপড় এলিয়ে
পড়েছে।আমি চুপচাপ ঘরটি পেরিয়ে পড়ানোর টেবিলে গিয়ে বসলাম।ধপ করে একটি কিলের
শব্দ কানে আসে তখন।দেখি গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতে শুরু করেছে ছোট মেয়েটা।
কিছুক্ষণ পর আন্টি আমাকে নূডুলস খেতে দেয়।লজ্জ্বা মিশ্রিত হাসি দিয়ে বলে--
বাবা পেঁয়াজ ছাড়াই নূডুলসটা দিলাম,নতুন রেসিপি,ইউটিউব থাইকা শিখছি!গরম গরম
খাইয়া লও,পেঁয়াজে আগুন ধরছে।
নূডুলস আমার ভেতরে ঢোকে না। টাকাটা খুবই দরকার আন্টি....কিন্তু বলতে পারিনা।
ভেতরটা শুকিয়ে আসে,পানিতে পিপাসা মেটেনা।
আমি নাস্তা শেষ করে ছাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলাম।হঠাৎ একটি কাগজ হাতে আন্টি
টেবিলের সামনের বিছানাটায় ধড়মড় করে বসলেন,স্থান-সংকুলান না হওয়ায় এ ছোট
জাইগাতে আরও ছোট একটি বিছানা। তোমার ছাত্রীরে তো বাবা খুঁইজা পাইতাছি না।এক
পোলার লগে নাকি সেন্টমার্টিন গেছে,খোঁজ নাই,এই যে তার চিঠি;আমরা নাকি তার কোন
শখ-আহ্লাদ মিটাইতে পারি নাই।হুহু করে কেঁদে ওঠে মহিলাটি।আমার ভেতরটা ধক করে
ওঠে।আমি এতটাই মূর্খ যে ছাত্রী এমন কাজ করতে পারে তা আন্দাজ করতে পারিনি
একবারও!কেবল নাইনে উঠেছে মেয়েটা।
তার চেয়ে ভেতরে বেশি বাজছে টাকাটা।এই অজুহাতে যদি টাকাটা না দেয় তবে আজ উন্মাদ
হয়ে যাব।
নাস্তাটা শেষ করার পর কিছু টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে লম্বা গল্প জুড়ে দিলেন
ছাত্রীর মা,মেয়ে পালানোর গল্প।সে এক দীর্ঘ আখ্যান।যেন কথাগুলো বলার জন্য কতকাল
কোন শ্রোতাকে পাননি; বলার মধ্যেও কি এক অপূর্ব শান্তি!
কথার এক ফাঁকে শুরু করলেন---বাবা তোমার জন্য পুরা ট্যাকাডাই রাখছিলাম,হঠাৎ
মাইয়াডা এমুন কাম করলো।বাড়ি ভাড়ার ট্যাকাডাও সাথেই রাখছিলাম,লইয়া গ্যাছে।তুমি
কিছু মনে কইরো না,বাঁকীডা দুদিন পরেই আইসা নিয়া যায়ো।বিপদে পড়ছি বাবা।
কি আর করা!ভয়ানক রাগ উঠেছিল কিন্তু কিছু টাকা পেয়ে রাগের আগুন নিভেছে, তবে
বন্যায় ভেসে যায়নি।ভেতরে কি যেন খচখচ করছিল সেটা সাময়িক থেমেছে মাত্র।
বের হবার সময় আঙ্কেল মানে ছাত্রীর বাবার সাথে প্রায় মাথা ঠোকাঠুকি হয়ে গেল।
ভারী কিসের একটা ব্যাগ হাতে,ক্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলল--- লবনের দাম
বাড়ব,তাই কিইনা আনলাম।আইজ ডাবল হইছে,কাইল থাইকা পাওন ই যাইবনা বুঝি।
আমি ছালামের সাথে কৃত্রিম মৃদু হাসি দিয়ে সড়সড় করে সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসলাম।
বের হয়ে ওই একই পথ ধরে ফেরত যাত্রা।চারিদিক অন্ধকার,মেইন রোডের
স্ট্রিটলাইটগুলো জ্বলছে।এ রাস্তাটা নিরিবিলি হওয়ায় স্ট্রিলাইটের বালাই নাই।দু
একটি যা আছে তা সর্বশেষ কবে জ্বলেছিল বলা মুশকিল।আশপাশের বহুতল ভবনের আলোয় যে
একটু পথ চলা যায়।
এশার আজান হয়ে গেছে।দু'একজন ক্লান্ত শ্রমিক বা রিক্সাচালক নিরিবিলি রাস্তা
পেয়ে গাঁজায় আগুন ধরিয়েছে।রাস্তাটার শুরু না হতেই সে উৎকট গন্ধ নাকে লাগছে।
সেই অফিসার কোয়ার্টারের পাশে যখন এলাম, ক'জন অপরিচিত লোক আমাকে প্রায়
চ্যাংদোলা করে দেওয়ালে ঠেসে ধরল।সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়িতে অর্ধগলিত সেই
কুকুরের বা্চ্চাটা তখন চোখে পড়ে।ময়লার গাড়ির ড্রাইভার আতঙ্কিত ভঙ্গিতে চেয়ে
আছে।আমার পিঠের ডানদিকে নিচে জ্বলছে।লোকগুলো আমার পকেটগুলো হাতড়িয়ে নিমিষেই
উধাও।আমি কোন বাধা দেবার বৃথা চেষ্টা করিনি।
সঙ্গে সঙ্গে ময়লার গাড়ির ড্রাইভারটা নিচে নেমে এলো,হালকা রক্ত বের হওয়া দেখে
তাড়াতাড়ি করে তার গাড়িতে থাকা হেক্সানোল তুলাতে নিয়ে ক্ষতে লাগালো।কপাল ভাল
প্যাটে ঢুকায় নাই,দুনিয়্যাত বিচার-আচার নাইগো ভাই;লোকটার বলার ভঙ্গিতে কি এক
অসাধারণ মায়া।তার ভয়ার্ত গলার স্বর সবচেয়ে আপনজনের মতো কানে বাজলো।
কিছু পথ আসার পর দেখি ক্ষতটা যন্ত্রনা করছে,কেমন এক ভয়ানক তীব্র চীন্ চীন্
ব্যাথা।রাস্তা ঝাপসা হয়ে আসছে।পুরানো মদের ঘোরের মতো চারিদিক নিশ্চুপ হয়ে
যাচ্ছে।হাজারবার হাঁটা পথ কেমন বদলে গেছে,যেমনটা গিরগিটির গায়ের রং বদলায়।
কোনদিকে যাচ্ছি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।এতো অন্ধকার এ নিঃসঙ্গ রাস্তাটায় জানলে
তো আসতাম না,পরিচিত পথ ছেড়ে কে কবে অপরিচিত পথে পা বাড়ায়?কোনদিকে যাচ্ছি আমি?এ
পথ দিয়েই কি এসেছি?
রাস্তার অপরিচিত এক ভদ্রলোক শেষ প্রশ্নটা বুঝি শুনতে পেয়েছে।দেখছি এদিকেই তো
এগিয়ে আসছে শীর্ণ দেহে;কিন্তু অতটা দূর থেকে শুনতে পাবার তো কথা নয়।নিকটে এসে
সন্দেহভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো-- কই যাবেন?লোকটার দেহ হাড়জিরজিরে
ধূলিময়,চুলদাড়ি কাটার প্রয়োজন মনে করেনি,জন্মাব্ধি গোসলও করেনি হয়তো,কিন্তু
তাতে কি!সে বুঝি আমার বহু বছরের পরিচিত কোন লোক;আমি বললাম---জানিনা।ফ্যালফ্যাল
করে আমার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে।হাতে থাকা সবকটি পয়সা দিয়ে বললো--- রাইতে
খায়ো বাইজান,তারপর হো হো করে অট্রহাসি দিয়ে রাস্তার অন্ধকারে মিশে গেল।আমি
পয়সার মতো জিনিসগুলো ফেলে দিয়ে তার পিছু দৌড় দিলাম,সে ছাড়া আর সবকিছু স্নৃতি
থেকে মুছে গেছে তখন।তাকে আমার ভীষণ প্রয়োজন।সে বুঝি সবকিছু জেনে ফেলেছে,আমি
চিৎকার দিয়ে ডাকলাম অন্ধকারের লোকটাকে,এই শুনে যাও আমি বলছি।
দূর থেকে আবারও প্রশ্ন এলো -সত্যি করে বলো আগন্তুক,কোথায় যাচ্ছো?
অাঁ!আবার শুনতে পেয়েছে?বলছি তবে শোনো---- মনে হয় আমি অন্ধকারেই
যাচ্ছি,অন্ধকারে.........তোমার কাছে।কিন্তু লোকটাকে কোথাও খুঁজে পেলাম না।
Regards,
নাসিমুজ্জামান নীরব |
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment