Monday, April 27, 2020

বৃশ্চিক // বদরুদ্দোজা শেখু
------------------------------------------

ঘুমঘোরে জেগে উঠি , ঝিরিঝিরি ভোরের মলয়
শিরশিরে আমেজ দ্যায়, দেহমন বিরহী হৃদয়
আপ্লুত নন্দিত হয় , পাখিরাও শুনি অনুভব 
করে এই প্রসন্নতা , মৃদু মৃদু সুখী কলরব
ইতস্ততঃ ভেসে আসে, আশপাশে নীরব স্থবির
ঘরবাড়িগুলো ঢুলে দেউড়ির দরমা-টাটির
খিল তুলে, অনাবিল শান্তির প্রহর ঘুরে যায়
জগতের বিপন্ন সত্ত্বার  আতঙ্কিত অসহায়
জনপদ জুড়ে জুড়ে, ফুঁড়ে উঠে প্রাগৈতিহাসিক
মানব-সভ্যতা, প্রত্ন খায় বিশ্বত্রাস করোণা-বৃশ্চিক !!
( ১০ লাইন )
©  বদরুদ্দোজা শেখু
--------------------------------------------------------

কবিতা-২
-------------

ফুলদানিটা / বদরুদ্দোজা শেখু
-------------------------------------

ফুলদানিটা কিনেইছিলাম, ফুল কখনো হয়নি রাখা ,
সৌন্দর্যের কসাই হ'তে চাইলো না তো মনের চাকা 
এবং টাকা--- কেবল টাকার বাণিজ্যটায় রিক্ত আমি
সারা জীবন, থাকার জন্য নিজের কড়ি দেই সেলামী
বই গোলামী বাঁচার জন্য নথিপত্রের অফিসপুরে ,
হৃদয়-বৃত্তি  জীর্ণ হলো বাতিল ইচ্ছার আস্তাকুঁড়ে
অনুভূতির পাপড়িগুলোয় অস্তিত্ত্বের অমোঘ জরা,
ফুলদানিটা ফাঁকাই আছে, ফুল ফোটেনি স্বপ্ন-ঝরা  !!
বর্ষা-খরা অসুখবিসুখ ঘাতপ্রতিঘাত লেগেই থাকে
আমার মনে ফুলদানিটা পুষ্পভোরের স্বপ্ন আঁকে !
থাকে -- থাকে, ইচ্ছেগুলো চারিয়ে থাকে গোপন বুকে
ভরিয়ে তোলে জীবনতরী ভালবাসায় ও ভুলচুকে  ।।

  ( ১২ লাইন )
©  বদরুদ্দোজা শেখু

----------------------------------------

কবিতা-৩
-------------

ইটখোলা বস্তি //বদরুদ্দোজা শেখু
-----------------------------------

শহরের পাশে ওই ইটখোলা বস্তি :
সুখ আর দারিদ্রে অদ্ভুত দোস্তি
হয়েছে ওখানে , দেখি--- সকলেই কর্মী
ইট কাটে ছেলে মেয়ে স্বামী সহধর্মি' ;
বালি দিয়ে পানি সেঁচে মাটি ক'রে চূর্ণ
হলারে ঘুরিয়ে করে ফর্মায় পূর্ণ ।
খসাখস ইট কাটে দেখে লাগে অদ্ভুত ,
রোদে দ্যায় ফালি ফালি মনোরম প্রস্তুত ।
তারপর ব'য়ে ব'য়ে কাঁচা ইট শুকনো
কৌশলে সারি ক'রে ভাটা করে পূর্ণ ,
চিমনিতে ধোঁয়া উঠে , অবশেষে ইট হয় ।
মালিকেরা সেই ইট ছড়ায় শহরময় --
তারা পায় গোছা গোছা অর্থ আময়দা ;
শুধু সামান্য দিন-মজুরির ফয়দা
শ্রমিকের , এও এক শোষণের যন্ত্র
মজুরির মারপ্যাঁচে  বুর্জোয়াতন্ত্র ।
ঘরগুলো বিক্ষিপ্ত ও সংলগ্ন ,
ফুটোফাটা কাণাচটা বিদ্খুটে ভগ্ন 
ইট সাজানো দেয়াল , টাইলের ছাউনি---
জলা আর জংলায় ঝুপড়ির চাউনি ;
যেন ওই ইটখোলা নালন্দা-অস্থি ,
সরীসৃপ আস্তানা তার পাশে বস্তি ।
সারাদিন খাটে ওরা , লাল চা ও খাস্তা
আর পিস্-পাঁউরুটি সকালের নাশতা ,
দুপুর গড়ালে পরে দানাপানি নুনভাত
পেটে পড়ে , পোড়া রুটি আর চায়ে যায় রাত ।
মেয়েগুলো কালো কালো খেটে খেটে হাড়সার---
ইটের ভিটেয় টানে , ঘরে টানে সংসার ;
নামলে মাথার ইট , কাঁখে ভরা ঠিল্লা ।
কালবাউসী রূপের জৌলুস জেল্লা
যুবতীর দেহে ফোটে , তার সে সমস্ত
অল্পদিনেই যায় সহজেই অস্ত ।
বাচ্চাকাচ্চাগুলো পায় না তো শিক্ষা ,
মা'র কোল হ'তে নেয় জীবিকার দীক্ষা ;
ওদের জগতে কম বেকারির কিস্সা---
পেয়েছে ওরা বাঁচার ন্যূনতম হিস্সা :
শুধু ভাত-কাপড়েই চিরকাল তৃপ্ত
জীবন যেন ওদের তলোয়ার দৃপ্ত
দৈন্য করতে জয় , সর্বদা প্রস্তুত ;
সারাদিন শ্রম আর রাতে নিদ্রা নিখুঁত ।
তারি মাঝে বোল তোলে দ্রিমিকি-দ্রাক  মাদল
নাচ গানে জ'মে উঠে হাঁড়িয়ার শোরগোল ,
নিশ্চিত সেই সুখ-সংগ্রামে বন্দী 
আনন্দ-বেদনার বিপরীত সন্ধি ;
ইট না মানুষ--- কা'রা পোড় খেয়ে পোক্ত ?
---প্রতিটি ইটেই লাল শ্রমিকের রক্ত ।।
( ৪৬ লাইন )

©  বদরুদ্দোজা শেখু

-----------------------------------------------------------

কবির নাম-- বদরুদ্দোজা শেখু 
ঠিকানা-- 18 নিরুপমা দেবী রোড ,  বাইলেন 12 ,
        শহর+পোঃ-  বহরমপুর ,   জেলা--মুর্শিদাবাদ, 
        PIN -742101
         পঃ বঙ্গ , ভারত ।  

No comments: