Sunday, April 12, 2020


সেই একাত্তর আজও কাঁদায় !


---রমেন মজুমদার



১২/৪/২০


লাখ লাখ কষ্ট প্রাণ, ত্রাহি ভয়ে যায় মান
কাঁদা জলে ছুটে চলে বাঁচাতে জীবন।
গ্রাম-মাঠ-জঙ্গল পথে, অমঙ্গল রয় গেঁথে
ঘরবাড়ি ছেড়ে ভয়ে পলায় সকল ।

শত প্রাণ অনাহারী--লুট তরাজ কাড়াকাড়ি
কাদা মাখা পথে দৌড় কষ্টের ধক্কল !
দু'ধারে বসত বাড়ি,বাঁশ-মাটির ঘর ছাড়ি
ছুটে যায় মানুষের ঢল ।

জল কাঁদায় মাখামাখি,আটাআটি গাদাগাদি!
ক্ষুধার্থ মানুষ চায় সাহায্যের হাত!
অনাহারে ক্ষুধায় মরে, বৃদ্ধদের যায় ছেড়ে...
কেহ কাঁদে, কেহ পালায় সুদূর তফাৎ ।।

কাদামাখা শরীর খান,ক্ষুধা পেটে কাঁদে প্রাণ
ফ্যাল ফ্যাল মোটা চোখে আকাশটা দেখে,
কোথা হায় ঈশ্বর তুমি,নরকের যেন ভূমি !
নালিশ জানাই আজ কাকে ?

ঘরহীন ঘুমনেই--জলে ভরা রাস্তা ওই !
যুদ্ধে শেষ ঘরবাড়ি আর্মিরা পোড়ায়...
যেন মহামারী রাত, ভাঙে যেন বাঙালি হাত!
আকাশে বোমারু বিমান ওড়ায় ।

ঢাকা হতে কলকাতা,বুকে জমে কত কথা;-
কালোৱাত শেষ হবে কবে কে জানে ?
যশোরের রোড ধরি--শরণার্থী দেশ ছাড়ি
ছুটে আসে ক্যাম্পে ক্যাম্পে তখনে।

স্বাক্ষী থাকে পথ ধুলো,বড় বড় গাছগুলো,
এপ্রিল থেকে নভেম্বর মাস ,
একমুখো পথ ধরি--ধীর পায়ে মোষ গাড়ি ,
কাঁদা ঠেলে পথ চলে ছাড়ে দীর্ঘশ্বাস ।!

কত মানুষ ভাত হীনে--মরে ক্ষুধায় দিনে দিনে,
কত লাশ পড়ে থাকে ধান-পাটক্ষেতে,
বৃদ্ধা পিতা-মাতারে--যায় অনেক ত্যাজ্য করে,
বাড়তি বোঝা ফেলে যায় পথে।

ঘর হীন শত শত--কাঁদে মায় পথে কত !
পাগলের মত মাটিতে গড়ায়,
নাই খাবার কাছে তার--শুকনো রুটি করে ধার
রোগা শরীর হাড় গুলো দেখা যায়।

এদিক ওদিক গুলি শব্দ--কানে লাগে জোর স্তব্দ !
কোলের শিশুরা কাঁদে ক্ষুধায়,
রিফিউজির ঘরে নেই--ভালোমন্দ খাবার সেই !
দিশেহারা মানুষের বেঁচে থাকা দায়!

দুঃস্বপ্ন ছেড়ে আসা--ফসলের মাঠ চাষা
সেও ছুটে প্রাননিয়ে ভারত ভিটায়,
ঢাকা কিম্বা কুলিল্লা,সিলেট হতে চাটহিলা
রংপুর-ফরিদপুর,বরিশাল-খুলনায় !

পিঁপড়ার সারি যেমন,কালো মাথা লাইন তেমন
পায়ে হেঁটে শত শত মাইল ছুটে আসে,
আকাশে শকুন উড়ে--কয়খানা চক্কর মারে
দূর হতে দেখে লাশ নদীতে ভাসে ।

মিলিটারি পাক সেনা--বঙ্গের মুক্তি সোনা
দিকে দিকে যুদ্ধ করে মরে ও মারে,
দু'মুঠো ভাত-রুটি--কে দেয় কারে ছুটি
জীবনের হাহাকার চরকি হয়ে ঘুরে।

কার কাছে করি আবদার,বিশ্বেতে চলে দরবার
মৃত্যু যেন মিলিটারির শুকনো মুড়ি !
সারি সারি লাশ ফেলে,মিরপুর-মোহাম্মদ ঝিলে
হাহাকার বীরাঙ্গনা বঙ্গের নারী ।

শামসুন্নাহার-রোকেয়া হলে,ইজ্জতের লুট চলে!
রক্তে ভাসে মেঘনা আর পদ্মার জলে !
পুড়ে দালান বাড়িঘর,পোড়ায় মিলিটারি বর্বর !
কষ্টের করুন কথা কে কাহারে বলে ?


জননীর কোলে শিশু,আধ পেটা ক্ষুধা ইস্যু
বাঁচে কি মরে তার হিসাব নেই ;--
কাঁদে বৃক্ষ গাছপালা--শেয়াল কুকুর করুন গলা
গুলিতে ছিন্ন ভিন্ন দেহ খানা পাই ।

হায় মৃত্যু হায় শরণার্থী -ক্যাম্পে থাকা করুন আর্তি
যুদ্ধে যেমন সংসার স্বজন এলোমেলো,
লক্ষ চোখে আকাশ দেখে--মৃত্যু ভাগ্য কে লিখে?
সবে বলে সব বুঝি-- পুড়ে সব গেলো ।

বর্ষায় ভাসে দেশ,---কত কষ্ট নাই শেষ,
গাদাগাদি যশোর রোড যেন শ্মশান পুরি,
মাথা গোজার ঠাঁই নেই,ক্যাম্পেও দেখি তাই
কালোৱাত ভাগ্যালিপি কপালেতে ধরি।

দিলো ডাক শেখ মুজিব--স্বাধীনতা জ্বালো দীপ!
বিশ্বের মানবতা কেঁদে ওঠে প্রাণ !
আধমরা পূর্ববাংলা, পোড়া গাছ ডালপালা
সৃষ্টির কারুনাতে হবে বুঝি দান ?

বঙ্গদেশ যায় ছাড়ি--শরণার্থীদের ঘর বাড়ি
ভারতের ঘরে চাপে অতিরিক্ত বোঝা !
কলকাতা কৃষ্ণনগড়,--কল্যাণী ধোপাগুর !
সারিবদ্ধ গিজ গিজ মানুষের মৌজা।

ক্ষুধা পেটে দেয় ভাত--ইন্দিরা সেই মহৎ
নিজ পুত্র মনে করে লালন করে,
নয়মাস যায় ধীরে--স্বাধীনতা স্বীকার করে
দেশটারে স্বীকৃতি দেয় বিশ্ব জুড়ে।

হায় প্রাণ হায় শরণার্থী, শেষে ফিরে ইতিউতি
নিজ বঙ্গে খোলা মাঠে করুণা করে।
তারপরেও ভারত পাশে,চাল ডাল দেয় শেষে
আপনার স্বজন ভেবে করুণায় ভরে।।

No comments: