Friday, January 24, 2020



ঝর্ণা  
সুদীপ্ত বিশ্বাস



ঝর ঝর করে ঝর্ণা নামছে মনে বড় খুশি তার
নদীকে সে আজ দিতে তো পারবে কিছু জল উপহার।
নুড়ি পাথরেরা নূপুর বাজিয়ে নাচতে নাচতে চলে
ছন্দে ছন্দে পরমানন্দে অগুনতি কথা বলে।
পাহাড়ি পাখিরা আপন খেয়ালে শিস দিয়ে গায় গান
মধু খেতে এসে ঝর্ণার জলে সেরে নেয় তার স্নান।
ঝর্ণার জলে সোনা রোদ্দুর চিক চিক করে ওঠে
সেই খুশি মেখে পাহাড়ের গায়ে রঙিন ফুলেরা ফোটে।
আকাশে বাতাসে যে দিকে তাকাই শুধুই খুশির হাওয়া
আহা! কি দারুণ, পাহাড়ের গায়ে ঝর্ণার বয়ে যাওয়া!





আগডুম বাগডুম
সুদীপ্ত বিশ্বাস



আগডুম বাগডুম ওই ঘোড়া ছুটল
ভোরবেলা চুপিচুপি ফুলটাও ফুটল।
বাগানেতে টুনটুনি টুই-টুই ডাকছে
গুনগুন মৌমাছি ফুলে মধু চাখছে।
ছপছপ দাঁড় টেনে নৌকারা চলছে
ছলছল কলকল নদী কথা বলছে।
আকাশের মগডালে ওই চিল উড়ছে
চিকচিক রোদ্দুরে পিঠ তার পুড়ছে।
চুপিচুপি মেঘ এসে সূর্যকে ঢাকল
তারপর রেগে-মেগে গুরগুর হাঁকল।
কড়কড় বাজ ফেলে মেঘ যেই থামল
টুপটাপ ঝিরঝির বৃষ্টিটা নামল...



কথাশোনা
সুদীপ্ত বিশ্বাস



পাহাড় বলে, “আয় না রে তুই”
চাঁদটা বলে উড়তে
পিঁপড়ে বলে, “দল বেঁধে চল
দেশ-বিদেশে ঘুরতে।”
কাদা বলে, “বানাও পাখি”
কাগজ বলে, “আঁকো”
হাত বাড়িয়ে আমায় ডাকে
চূর্ণি নদীর সাঁকো।
ফড়িং বলে, “চল না উড়ি ”
নৌকো বলে, “ভাসি”
কু-ঝিকঝিক কু-ঝিকঝিক
ডাকছে ট্রেনের বাঁশি।
লাটাই বলে, “ওড়াও ঘুড়ি”
ঘোড়া বলে, “চড়ো”
চোখ রাঙিয়ে বাবা বলেন,
“ মন দিয়ে বই পড়ো।”
কার কথাটা ফ্যালনা এবং
কার কথাটা দামি
ভেবে ভেবে কুল পাইনা
ছোট্ট মানুষ আমি।




আয় বৃষ্টি ঝেঁপে
সুদীপ্ত বিশ্বাস


বৃষ্টি রে তুই আয় না ঝেঁপে আমাদের এই গাঁয়ে 
দে ছুঁয়ে দে মিষ্টি ছোঁয়া রাঙা মাটির পায়ে।
ওই যে মাটি, মাটির ভিতর শিকড় খোঁজে জল
বল না বৃষ্টি ওদের সঙ্গে খুশির কথা বল।
টিনের চালে অল্প আলোয় যখন ঝরিস তুই
পুকুর ভরে শালুক ফোটে বাগান জুড়ে জুঁই ।
আকাশ তখন সাত রঙেতে রামধনুটা আঁকে 
সেই খুশিতে টুনটুনিটা টুটুর টুটুর ডাকে। 
রামধনুর ওই সাতটি রঙে মন হারিয়ে যায়
অনেক দূরে তারার দেশে মেঘের সীমানায়।
মাছের খোঁজে পানকৌড়ি ওই তো দিল ডুব 
বৃষ্টি নামুক  বৃষ্টি নামুক টাপুর টুপুর টুপ...




আঁকিবুঁকি

সুদীপ্ত বিশ্বাস


শালুক ফোটা বিল এঁকেছি
পাশে কাশের বন
বাগান ভরা গোলাপ দেখে
নাও ভরিয়ে মন।
মাটির উঠোন, ধানের গোলা?
হ্যাঁ, এঁকেছি তাও
ছোট্ট একটা  নদীর বাঁকে
ভাসিয়ে দিলাম নাও।
রং তুলিতে গাছ এঁকেছি
গাছে সবুজ পাতা
উথালপাতাল সাগর এঁকে
ফেলছি ভরে খাতা।
আলোর খোঁজে সূর্য এঁকে
গাছে দিলাম পাখি
বন্ধু তোমার লাগবে ভাল
তাই ত এঁকে রাখি।
নীল আকাশে মেঘের পাশে
উড়ছে দেখ ঘুড়ি
ঘুড়ির বুকে স্বপ্ন অনেক
মন গিয়েছে চুরি।
মেঘের পাশে চাঁদ এঁকেছি
চাঁদটা ভীষণ প্রিয়
ইচ্ছে হলেই বন্ধু তুমি
এই ছবিটা নিও।



বন্ধু
সুদীপ্ত বিশ্বাস



নদীর কাছে যেই গিয়েছি নদী বলল - শোনো
আমায় ভুলে থাকার কথা ভেব না কক্ষণো।

ঝর্ণা তলায় যেতেই রানী বলল আমায় ডেকে
তোমার বুকে খুশির পরশ দেবই দেব এঁকে।

মেঘের দিকে যেই চেয়েছি মেঘ বলল আয়
হাওয়ায় ভেসে চল না রে ভাই দূর বিদেশে যাই।

এই তো সেদিন ভোর বেলাতে বলল ভোরের পাখি
তোর জন্যই নতুন সুরে গানটা বেঁধে রাখি।

পাহাড়টা তো চুপচাপ খুব রাগ হয়েছে ভারি
সে বলল আসবি আবার নইলে দেব আড়ি।





কবি পরিচিতি -

 সুদীপ্ত বিশ্বাস,জন্ম ১৯৭৮,কবিতা লিখছেন ১৯৯২ সাল থেকে।কবিতার প্রথম প্রকাশ  ২০১০ সালে। কবির কবিতা প্রকাশিত হয়েছে শুকতারা, নবকল্লোল, উদ্বোধন, কবিসম্মেলন, চির সবুজ লেখা, তথ্যকেন্দ্র, প্রসাদ, দৃষ্টান্ত, গণশক্তি ইত্যাদি বাণিজ্যিক পত্রিকা ও অজস্র লিটিল ম্যাগাজিনে। কবিতার আবৃত্তি হয়েছে আকাশবাণী কলকাতা রেডিওতে। ঝিনুক জীবন কবির প্রথম বই। ২০১০ এ প্রকাশিত হয়। এরপর মেঘের মেয়ে, ছড়ার দেশে, পানকৌড়ির ডুব, হৃদি ছুঁয়ে যায়, Oyster Life বইগুলো এক এক করে প্রকাশিত হয়েছে। দিগন্তপ্রিয় নামে একটা পত্রিকা সম্পাদনা করেন। কবি পেশাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। নদিয়া জেলার রানাঘাটের বাসিন্দা। শিক্ষাগত যোগ্যতা বি ই,এম বি এ, ইউ জি সি নেট। স্বরবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্ত তিন ছন্দেই কবিতা লেখেন।বড়দের কবিতার পাশাপাশি ছোটদের জন্যও কবিতা লেখেন



Sudipta Biswas,Deputy Magistrate & Deputy Collector,(WBCS Exe.),
Nokari Uttar Para, PS-Ranaghat,Dist- Nadia,Pin- 741202

No comments: