বাংলার স্থাপত্য শিল্পে ঐতিহ্যবাহী ভাস্কর্য -নৃপেন্দ্রনাথচক্রবর্তী
বাংলার প্রাচীনত্ব:
ইতিহাস, নানা উপাদানে প্রাচীন বাংলারঅবয়ব, আয়তন ও পরিধি সম্পর্কে যে তথ্যদিচ্ছে তা সত্যিই বিস্ময় জাগায়। আমরা যেবৃহৎ বাংলার কথা বলি, তা মূলতঃভারতবর্ষেরই বাংলা। বাংলার যেমনিপ্রাগৈতিহাসিক যুগ রয়েছে, তেমনি রয়েছেঐতিহাসিক যুগও। তবে অখন্ড প্রাচীনভারতের পূর্ব–পশ্চিম ও উত্তর ভারতেরসাথে প্রাচীন বৃহৎ বাংলার যে সম্পর্কলেনদেন, নৃতাত্ত্বিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসম্পর্কের পটভূমি, তা সমগ্র ভারতেরইতিহাসের একটি অংশ। বিগত হাজারহাজার বছরের সময় পরিধিতে, বাংলা ভাষাও বাঙালি জাতি সত্তা গড়ে উঠার বহু আগেএই বাংলার ভৌগোলিক সীমানা , আয়তন,পরিধিতে ক্রমাগত পরিবর্তন, বিবর্তনবাংলাকে নানা অবয়ব দিয়েছে। ভূমিজাগিয়ে বঙ্গোপসাগর ক্রমশঃ পিছিয়েছে।পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গঙ্গা কতো শতবার যেগতিপথ বদলেছে তার পুরো ইতিহাসওনথিবদ্ধ নেই। কতো নদী, জনপদ যে হারিয়েগেছে, সেগুলোর কোনো কোনোটির নামমিলে বেদ, পুরাণ, উপনিষদ, মহাভারত,রামায়ণ, সূত্র,শাস্ত্র কিংবদন্তি সহ নানানপ্রাচীন সাহিত্য, কাব্য, পুঁথি, শিলালেখ,তাপট্ট, স্তম্ভলেখ, কামশাস্ত্র ও শিল্পশাস্ত্রে।
উল্লেখ করা যেতে পারে খৃস্ট জন্মেরও বহুআগে থেকে এই বাংলা অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ,পুন্ড্র, সুৗ ইত্যাদি নামে অনেকগুলো জনপদরাষ্ট্রে বিভক্ত ছিলো। কোল, মুন্ডা, শবরইত্যাদি নামে নানা প্রাচীন নৃ–গোষ্ঠীরওআবাসভূমি ছিলো এই প্রাচীন বাংলা।আরো পুরাকালে শুধুমাত্র সুৗ অঞ্চল ছাড়াপূর্ববঙ্গের সিংহভাগই ছিলো সাগরজলেরনীচে। ধীরে ধীরে গাঙ্গেয় বাংলার মাটি সমুদ্রগর্ভ থেকে জেগে উঠতে থাকে। থেকে যায়হিমালয় ও সুউচ্চ উজান থেকে নেমে আসাবিভিন্ন নদ–নদী ও স্রোতস্বীনি। প্রকাশপেতে থাকে নরম পলিমাটি আর গাঢ় সবুজবৃক্ষ–লতাপাতার অরণ্যময় পূর্ববাংলা।পশ্চিমে বরেন্দ্র , রাঢ়, গৌড় ইত্যাদিঅঞ্চলেরও ভৌগোলিক বৈচিত্র্য প্রাচীনবাংলার অন্তর্গত। তারও বহু পরেযুক্তবাংলার যে সীমানা পাই তা গঠিতহয়েছিলো, বাংলা, বিহার,উড়িষ্যা ও আসামনিয়ে। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত বৃটিশ শাসনকালেবেঙ্গল প্রেসিডেন্সী যাকে বলা হয়, তারওসীমানা ছিলো একই। অতঃপর ১৯৪৭ হয়ে১৯৭১ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়নিয়ে এই বাংলার ভৌগোলিক চেহারায়নানা পরিবর্তন আমরা দেখি। ঐতিহাসিকবিশ্লেষণে একটি কথা তাৎপর্যপূর্ণ এই জন্যযে, আমরা জেনেছি এই ভূ–ভাগে বাঙালিজাতিসত্তা গড়ে উঠে দশম শতাব্দীরকাছাকাছি সময়ে। আজকের বিশ্বনন্দিত যেআধুনিক বাংলা ভাষা তারও আদিরূপ গড়েউঠে এই সময়কালটাতে। চর্যাপদ সাহিত্যতারই একটি অন্যতম সাক্ষ্য। আর এরইপ্রেক্ষাপটে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতিজাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানঐতিহাসিকভাবেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠবাঙালি।
বাংলার প্রাচীন ভাস্কর্য :
বাংলায় ভাস্কর্য গড়ার পাথর সহজলভ্যছিলো না। সে কারণে প্রাচীন বাংলায়সুপ্রাচীনকাল থেকে নরম আঁঠালোপলিমাটিই ছিলো স্থাপত্য ও ভাস্কর্যনির্মাণের প্রধান উপাদান। তারপরওবাংলায় পাথরে এবং ধাতু গলিয়ে নির্মিতহয়েছে অনেক ভাস্কর্য। বাংলার শিল্পীরাইসেসব গড়েছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারেদেখা যায় পোড়ামাটির ফলক, ইটে তৈরিবাংলার মন্দির, দেউল। আবার দেখা যায়পোড়ামাটির ফলকে গভীর রিলিফে করাটেরাকোটা ভাস্কর্য। এসবের বিষয়বস্তুছিলো দেব বিগ্রহ, বিভিন্ন প্রাচীন মহাকাব্যও পুরাণে বর্ণিত অতিমানব ও সাধারণনারী–
পুরুষের প্রতিমূর্তি, অলংকারিকভাবেগড়া ফুল, লতাপাতা, পশু–পাখি ইত্যাদি।প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা এবং মানুষেরধ্বংসলীলায় প্রাচীন বাংলার এসব ভাস্কর্যনিদর্শন পুরাকীর্তি চিরতরে হারিয়ে গেছে।যা আছে তার মধ্যে কিছু ভগ্ন মন্দির, দেউল,বিহার এবং সেসবে গড়া ভাস্কর্য, দেয়ালেভাস্কর্যখচিত পোড়ামাটির ফলক বাটেরাকোটা শিল্প। বাংলার প্রাচীন ভাস্কর্যএবং স্থাপত্য আবহাওয়া ও কালের নিঃসঙ্গঅপরিচর্যায় ব্যাপকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেওগত হাজার বছরের হিসেবে অন্ততঃভাস্কর্যের ক্ষেত্রে, গত দেড় দু’শ বছরেরউৎখনন ও অনুসন্ধানে যে সংখ্যায় মিলেছে,আশ্চর্যজনকভাবে তা ভারতের অন্যান্যঅঞ্চলের তুলনায় অনেকগুণ বেশি।বাংলার প্রাচীন ইতিহাস রচনায়, প্রাচীনভাস্কর্য এবং স্থাপত্য চাক্ষুষ সাক্ষী এবংউপাদান হিসেবে ব্যাপক সহায়তা করছেএবং করেছে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা যে, মৌর্য(৩২২–১৮৫ খৃস্টপূর্বাব্দ), সুঙ্গ (১৮৪খৃস্টপূর্বাব্দ থেকে–২০ খৃস্টাব্দ), কুশান(৫০–২৪১ খৃস্টাব্দ), গুপ্ত (৩২০–৫৪৪খৃস্টাব্দ) এবং পাল (অষ্টম–দ্বাদশ শতাব্দী,
No comments:
Post a Comment