Monday, May 6, 2019



বাংলার স্থাপত্য শিল্পে ঐতিহ্যবাহী ভাস্কর্য
                    -নৃপেন্দ্রনাথ চক্রবতী

বাংলার প্রাচীনত্ব:
ইতিহাস, নানা উপাদানে প্রাচীন বাংলার অবয়ব, আয়তন ও পরিধি সম্পর্কে যে তথ্য দিচ্ছে তা সত্যিই বিস্ময় জাগায়। আমরা যে বৃহৎ বাংলার কথা বলি, তা মূলতঃ ভারতবর্ষেরই বাংলা। বাংলার যেমনি প্রাগৈতিহাসিক যুগ রয়েছে, তেমনি রয়েছে ঐতিহাসিক যুগও। তবে অখন্ড প্রাচীন ভারতের পূর্ব–পশ্চিম ও উত্তর ভারতের সাথে প্রাচীন বৃহৎ বাংলার যে সম্পর্ক লেনদেন, নৃতাত্ত্বিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সম্পর্কের পটভূমি, তা সমগ্র ভারতের ইতিহাসের একটি অংশ। বিগত হাজার হাজার বছরের সময় পরিধিতে, বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতি সত্তা গড়ে উঠার বহু আগে এই বাংলার ভৌগোলিক সীমানা , আয়তন, পরিধিতে ক্রমাগত পরিবর্তন, বিবর্তন বাংলাকে নানা অবয়ব দিয়েছে। ভূমি জাগিয়ে বঙ্গোপসাগর ক্রমশঃ পিছিয়েছে। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গঙ্গা কতো শতবার যে গতিপথ বদলেছে তার পুরো ইতিহাসও নথিবদ্ধ নেই। কতো নদী, জনপদ যে হারিয়ে গেছে, সেগুলোর কোনো কোনোটির নাম মিলে বেদ, পুরাণ, উপনিষদ, মহাভারত, রামায়ণ, সূত্র,শাস্ত্র কিংবদন্তি সহ নানান প্রাচীন সাহিত্য, কাব্য, পুঁথি, শিলালেখ, তাপট্ট, স্তম্ভলেখ, কামশাস্ত্র ও শিল্পশাস্ত্রে।
উল্লেখ করা যেতে পারে খৃস্ট জন্মেরও বহু আগে থেকে এই বাংলা অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুন্ড্র, সুৗ ইত্যাদি নামে অনেকগুলো জনপদ রাষ্ট্রে বিভক্ত ছিলো। কোল, মুন্ডা, শবর ইত্যাদি নামে নানা প্রাচীন নৃ–গোষ্ঠীরও আবাসভূমি ছিলো এই প্রাচীন বাংলা। আরো পুরাকালে শুধুমাত্র সুৗ অঞ্চল ছাড়া পূর্ববঙ্গের সিংহভাগই ছিলো সাগরজলের নীচে। ধীরে ধীরে গাঙ্গেয় বাংলার মাটি সমুদ্র গর্ভ থেকে জেগে উঠতে থাকে। থেকে যায় হিমালয় ও সুউচ্চ উজান থেকে নেমে আসা বিভিন্ন নদ–নদী ও স্রোতস্বীনি। প্রকাশ পেতে থাকে নরম পলিমাটি আর গাঢ় সবুজ বৃক্ষ–লতাপাতার অরণ্যময় পূর্ববাংলা। পশ্চিমে বরেন্দ্র , রাঢ়, গৌড় ইত্যাদি অঞ্চলেরও ভৌগোলিক বৈচিত্র্য প্রাচীন বাংলার অন্তর্গত। তারও বহু পরে যুক্তবাংলার যে সীমানা পাই তা গঠিত হয়েছিলো, বাংলা, বিহার,উড়িষ্যা ও আসাম নিয়ে। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত বৃটিশ শাসনকালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সী যাকে বলা হয়, তারও সীমানা ছিলো একই। অতঃপর ১৯৪৭ হয়ে ১৯৭১ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিয়ে এই বাংলার ভৌগোলিক চেহারায় নানা পরিবর্তন আমরা দেখি। ঐতিহাসিক বিশ্লেষণে একটি কথা তাৎপর্যপূর্ণ এই জন্য যে, আমরা জেনেছি এই ভূ–ভাগে বাঙালি জাতিসত্তা গড়ে উঠে দশম শতাব্দীর কাছাকাছি সময়ে। আজকের বিশ্বনন্দিত যে আধুনিক বাংলা ভাষা তারও আদিরূপ গড়ে উঠে এই সময়কালটাতে। চর্যাপদ সাহিত্য তারই একটি অন্যতম সাক্ষ্য। আর এরই প্রেক্ষাপটে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিকভাবেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি।
বাংলার প্রাচীন ভাস্কর্য :
বাংলায় ভাস্কর্য গড়ার পাথর সহজলভ্য ছিলো না। সে কারণে প্রাচীন বাংলায় সুপ্রাচীনকাল থেকে নরম আঁঠালো পলিমাটিই ছিলো স্থাপত্য ও ভাস্কর্য নির্মাণের প্রধান উপাদান। তারপরও বাংলায় পাথরে এবং ধাতু গলিয়ে নির্মিত হয়েছে অনেক ভাস্কর্য। বাংলার শিল্পীরাই সেসব গড়েছেন। প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারে দেখা যায় পোড়ামাটির ফলক, ইটে তৈরি বাংলার মন্দির, দেউল। আবার দেখা যায় পোড়ামাটির ফলকে গভীর রিলিফে করা টেরাকোটা ভাস্কর্য। এসবের বিষয়বস্তু ছিলো দেব বিগ্রহ, বিভিন্ন প্রাচীন মহাকাব্য ও পুরাণে বর্ণিত অতিমানব ও সাধারণ নারী–পুরুষের প্রতিমূর্তি, অলংকারিকভাবে গড়া ফুল, লতাপাতা, পশু–পাখি ইত্যাদি। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা এবং মানুষের ধ্বংসলীলায় প্রাচীন বাংলার এসব ভাস্কর্য নিদর্শন পুরাকীর্তি চিরতরে হারিয়ে গেছে। যা আছে তার মধ্যে কিছু ভগ্ন মন্দির, দেউল, বিহার এবং সেসবে গড়া ভাস্কর্য, দেয়ালে ভাস্কর্যখচিত পোড়ামাটির ফলক বা টেরাকোটা শিল্প। বাংলার প্রাচীন ভাস্কর্য এবং স্থাপত্য আবহাওয়া ও কালের নিঃসঙ্গ অপরিচর্যায় ব্যাপকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও গত হাজার বছরের হিসেবে অন্ততঃ ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে, গত দেড় দু’শ বছরের উৎখনন ও অনুসন্ধানে যে সংখ্যায় মিলেছে, আশ্চর্যজনকভাবে তা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেকগুণ বেশি। বাংলার প্রাচীন ইতিহাস রচনায়, প্রাচীন ভাস্কর্য এবং স্থাপত্য চাক্ষুষ সাক্ষী এবং উপাদান হিসেবে ব্যাপক সহায়তা করছে এবং করেছে।
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা যে, মৌর্য (৩২২–১৮৫ খৃস্টপূর্বাব্দ), সুঙ্গ (১৮৪ খৃস্টপূর্বাব্দ থেকে–২০ খৃস্টাব্দ), কুশান (৫০–২৪১ খৃস্টাব্দ), গুপ্ত (৩২০–৫৪৪ খৃস্টাব্দ) এবং পাল (অষ্টম–দ্বাদশ শতাব্দী, এই সব যুগের প্রতিটি সময়েই প্রাচীন বাংলার শিল্পীরা ভাস্কর্য গড়ার ক্ষেত্রে নানাভাবে অবদান রেখে গেছেন। পাল আমলেই যেহেতু বাঙালি জাতিসত্তার উদ্ভব, কাজেই বাঙালি জাতিসত্তায় পূর্ববর্তীকালের প্রাচীন বাংলা ও প্রাচীন ভারতের ভাস্কর্যশৈলীর প্রভাব, অনুপ্রবেশ এবং ধারাবাহিক ক্রমবিকাশ অনিবার্যভাবে ঘটেছিলো পাল আমলের ভাস্কর্যে। যেমনটি দেখা যায়, হরপ্পা–মহেঞ্জোদারো সহ তারও পূর্ববর্তী কিছু প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার ভাস্কর্যশৈলীর প্রভাব, পরবর্তীকালের ভারতীয় ভাস্কর্যে অনিবার্যভাবে এসে পড়েছে।
প্রাচীন নানা শিল্পপর্বে গড়া যেসব উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য নিদর্শন বাংলায় আবিষ্কৃত হয়েছে তার কয়েকটির কথা তুলে ধরা যাক। কুশানপর্বে গড়া বুদ্ধমূর্তি যা আবিষ্কৃত হয়েছে চন্দ্রকেতুগড়ে, বগুড়ায় প্রাপ্ত অজ্ঞাত দেবতা, রাজশাহী বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি কর্তৃক সংগ্রহীত কুমারপুর ও নিয়ামতপুরে প্রাপ্ত দু’টি সূর্য বিগ্রহ, মালদহের হাঁকরাইলে প্রাপ্ত বিষ্ণুমূর্তি , এগুলো পাথরে তৈরি। এগুলোতে কুশান আমলের নৈপুণ্য দেখা যায়। ধারণা করা হয় এই পর্বেই সম্ভবতঃ তৈরি হয়েছিলো বগুড়ার মহাস্থানগড়ে প্রাপ্ত অষ্টধাতুর চমৎকার মঞ্জুশ্রী মূর্তি। প্রাপ্ত বুদ্ধ মূর্তিটি চূনারের লালপাথরে তৈরি। উত্তরবঙ্গে প্রাপ্ত কয়েকটি মূর্তির মাধ্যমও পাথর। ধারণা করা হয় এসব মূর্তি বাংলার বাইরে থেকে নিয়ে আসা হয়েছিলো।
বাংলাদেশে ভাস্কর্য বিকাশের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত পাল আমলকে কেউ কেউ চিহ্নিত করেন। নির্ম্মলকুমার ঘোষ ভারত শিল্প গ্রন্থে (কলকাতা, তৃতীয় সংস্করণ, ১৯৯৫, পৃ. ৯৫,৯৬) লিখেছেন, উত্তরবঙ্গের পাহাড়পুরে পাল যুগের অনেক ভাস্কর্য নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলোর একটি ধারা লোকায়ত এবং অপরটি ধ্রুপদি। প্রাচীন বাংলার নানা স্থানে আবিষ্কৃত লোকায়ত ধারার ভাস্কর্যের বিষয়ের মধ্যে ছিলো প্রাচীন পুরান ও মহাকাব্যে বর্ণিত বালি–সুগ্রীবের যুদ্ধ, সুভদ্রা–হরণ, কৃষ্ণলীলা, তৎকালিন প্রাচীন সমাজ। ধ্রুপদি ধারার ভাস্কর্যের নিদর্শনগুলোর মধ্যে ছিলো, শিব, ব্রহ্মা, গণেশ, ইন্দ্র, যমুনা, ইত্যাদি বিষয়ক ভাস্কর্য। এগুলোর নির্মাণরীতিতে গুপ্ত ও পাল উভয় যুগের শৈলী দেখা যায়। এছাড়া ইতিহাসে গুপ্ত যুগ ভাস্কর্য ও অন্যান্য শিল্প সৃজনে ধ্রুপদি যুগ হিসেবে চিহ্নিত।
পাহাড়পুরে পোড়ামাটির নিদর্শনগুলির মধ্যে ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ উভয় বিষয়ের ভাস্কর্য নিদর্শন দেখা যায়। তাছাড়াও ফুল, লতা, পাখী, কিন্নর, কিন্নরী ইত্যাদিও অলংকরণধর্মী আদলে দেখা যায়। পাহাড়পুরের দেয়ালে যুগল ও মিথুন মূর্তিও মিলেছে। তমলুকের দু’টি পোড়ামাটির নারীমূর্তিতে অপূর্ব শিল্পসুষমা সবাইকে বিস্মিত করে। অবশ্য এগুলো কবে নির্মিত হয়েছে তা স্থির করতে পারেন নি পন্ডিতবর্গ।
চট্টগ্রাম থেকে বাঁকুড়া, রংপুর থেকে তমলুক, বলা যায় বাংলাদেশের সর্বত্রই মাটি দিয়ে বাঙালি ভাস্কররা ভাস্কর্য গড়েছেন। রোদে শুকানো, চুলোয় পোড়ানো, ভাস্কর্যে রংয়ের প্রলেপ দেয়া সহ অনেক সৌন্দর্যবর্ধক কাজই বাংলার ভাস্কররা করেছেন।
বাংলার নিজস্ব প্রাচীন ভাস্কর্য সম্ভার আজও আবিষ্কৃত হচ্ছে নানা স্থানে। বিশেষ করে পুকুর খনন ও সংস্কার কাজে কালো পাথরের অনেক ভাস্কর্য মিলার ঘটনায় পন্ডিতরা মনে করেন, বাংলার ভাস্কররা বাংলার বাইরে থেকে পাথর সংগ্রহ করে এনেই এসব গড়েছেন অপূর্ব দক্ষতায়। বাংলায় বৃক্ষরাজিও সুলভ ছিলো। তাই ঘরবাড়ির অলংকরণ এবং ভাস্কর্যের কাজে কাঠ ব্যবহৃত হয়েছে বিস্তর। কাঠের ভাস্কর্য তাই দারুশিল্পেরই অন্তর্গত হয়েছে।
ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার তার বাংলাদেশের ইতিহাস গ্রন্থের প্রথম খন্ডে লিখেছেন ‘এই সমুদয় মূর্তি হইতে প্রমাণিত হয় যে, খৃস্টাব্দের আরম্ভ বা তাহার পূর্ব হইতেই বাংলায় ভাস্কর্যের চর্চা ছিল, এবং বাংলার শিল্পী গুপ্তযুগ পর্যন্ত ভারতের সাধারণ শিল্পধারার সহিত যোগাযোগ রক্ষা করিয়াই চলিত।’ (কলকাতা, ১৩৭৭, পৃ. ২২৪)
নীহাররঞ্জন রায় তার বাঙালির ইতিহাস/আদিপর্ব গ্রন্থে (ষষ্ঠ সংস্করণ, মাঘ ১৪১৪, কলকাতা, পৃ. ৬৩৫) বাংলার প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্প সম্পর্কে লিখেছেন, ‘মূর্তি–শিল্পে পাথরের তৈরি অর্থাৎ পাথরে খোদাই মূর্তি ইত্যাদি যাহা নির্মিত হইয়াছে তাহারই কিছু কিছু নমুনা আমাদের কালে আসিয়া পৌঁছিয়াছে নানা খনন ও অনুসন্ধানের ফলে। কিন্তু রাজমহল পাহাড় অথবা ছোটনাগপুরের পাহাড় হইতে পাথর আনাইয়া ভাস্করকে তাহার পারিশ্রমিক দিয়া মূর্তি নির্মাণ করাইবার মতো সামর্থ্য খুব বেশি লোকের ছিল না ; সম্পন্ন সমৃদ্ধ লোকেরাই তাহা করিতেন এবং তাহাও বিশেষভাবে মন্দিরসজ্জা এবং প্রতিমা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই। সেই জন্যই প্রস্তরভাস্কর্য–নিদর্শন যাহা পাওয়া গিয়াছে তাহার প্রায় সমস্তই জৈন, বৌদ্ধ এবং ব্রাহ্মণ্য দেব–দেবীর মূর্তি অথবা বিহার–মন্দিরসম্পৃক্ত অলংকরণ–ফলক, স্থাপত্যাংশ বা ধর্মগত পুরাণ কাহিনীর প্রস্তরীকৃত প্রতিকৃতি এবং সেই হেতু অল্পবিস্তর প্রতিমা–লক্ষণ শাস্ত্র বা ধ্যান–সাধনের সূত্রদ্বারা নিয়মিত। . . . কাঠেও প্রচুর তক্ষণ ও মন্ডন কার্য হইত, কিন্তু আমাদের হাতে যে কয়েকটি নিদর্শন আসিয়া পৌঁছিয়াছে তাহাদের ভিতরও একই ভাস্কর্য–লক্ষণ সুপরিস্ফুট।’ অর্থাৎ এ ধরনের ভাস্কর্যে প্রাচীন বাংলার প্রতিদিনের জীবনের নানা গতি–ভঙ্গী এবং লোকায়ত সাধারণ মানুষের চিত্র ফুটে উঠে নি, একথাই লেখক বলতে চেয়েছেন। লেখকের মতে মাটি দিয়ে গড়া ছোট ছোট প্রাচীন বাংলার মৃন্ময় পতুলবৎ ভাস্কর্যগুলোতেই লোকায়ত ও সাধারণ মানুষের প্রতিদিনের জীবন ও কামনা–বাসনার শিল্পরূপ থাকার কথা। কিন্তু সেই সব মাটির নিদর্শন বিনষ্ট হয়ে যাওয়ায় তার প্রমাণ্য পাওয়ার কোনো উপায় এখন নেই। তথাপি আজকের সময়ের বিভন্ন ব্রত অনুষ্ঠানের ছোট ছোট মাটির বিচিত্র মূর্তিতে, গ্রামের কুমোরের তৈরি নানা পুতুল খেলনা দেখে, প্রাচীন বাংলার মৃৎভাস্কর্যে কি বিষয় থাকতো তা ধারণা করা যায়। অবশ্য প্রাচীন বাংলার মাটির শিল্পরূপ বলে পন্ডিত ও ইতিহাসবেত্তাদের অনেকে প্রাচীন বাংলার পোড়ামাটির ফলকে হাতে কিংবা ছাঁচে চেপে উৎকীর্ণ টেরাকোটা ভাস্কর্যগুলোকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারেন নি। এগুলো দিয়ে গৃহসজ্জা হতো, ঘরের কুলুঙ্গি. মঞ্চ এবং দেয়ালে তা লাগানো হতো বলেও পন্ডিতরা জেনেছেন। আবার সেগুলো দিয়ে বড় বড় মন্দির , বিহারের বহিরঙ্গের যে সজ্জা বা অলংকরণ হতো তারও নিদর্শন মিলেছে। এগুলোকে শিল্পতাত্ত্বিকরা পোড়ামাটির ভাস্কর্য বলছেন। খৃস্টিয় শূন্য শতক থেকে অষ্টম ও নবম শতক অবধি নির্মিত পোড়া মাটির ফলক–ভাস্কর্য রাজশাহীর পাহাড়পুর, কুমিল্লার লালমাই বৌদ্ধবিহারের উৎখননে এবং বাংলার বিভিন্ন প্রত্নস্থানে অনুসন্ধানে প্রচুর সংখ্যক পাওয়ার কথা জানান নীহাররঞ্জন রায়।
দেখা গেছে প্রাচীন বাংলার নিউলিথিক ও মেসোলিথিক সময়কাল থেকে গড়ে উঠা সুপ্রাচীন বন্দর জনপদ তমলুক বা তাম্রলিপ্তি, চন্দ্রকেতুগড়, পান্ডুরাজার ঢিবি, বগুড়ার পুন্ড্রবর্ধন অঞ্চলের মহাস্থানগড় ও তার নিকটবর্তী ভাসুবিহার, রাজশাহীর পাহাড়পুর বা সোমপুর বিহার, কুমিল্লার ময়নামতি শালবন বিহার, দক্ষিণ ২৪–পরগণা, আটঘরা, হরিনারায়ণপুর, দেউলপোতা, বোরাল, বানগড়, মুর্শিদাবাদের কর্ণসুবর্ণ, দামোদর নদীর তীরবর্তী পোখরানা, দিহার জান্তা, বর্ধমানের মঙ্গলকোট, ফারাক্কা, মালদহের জগজীবনপুর ইত্যাদি অঞ্চলে অসংখ্য টেরাকোটা ভাস্কর্য, পোড়ামাটির নানা অলংকার, পটারি সহ ব্যবহার্য সামগ্রী প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননে উঠে এসেছে। এবিষয়ে বিস্তারিত গবেষণা তথ্য ও উপাদান তুলে ধরেছেন নিহার ঘোষ তার আর্ট অব এনশিয়েন্ট বেঙ্গল টেরাকোটাজ গ্রন্থে (কলকাতা গ্রন্থ উৎসব উপলক্ষে প্রকাশিত, কলকাতা, ২০০২)।
মণীন্দ্রভূষণ গুপ্ত তার শিল্পে ভারত ও বহির্ভারত গ্রন্থে (প্রথম প্রকাশ ১৯৭৫, দ্বিতীয় মুদ্রণ ২০০৭, আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা,পৃ. ৩৭,৩৮) বলেছেন, মৌর্যযুগ থেকে ভারহুত, সাঁচি এবং অমরাবতি (১৫০–২৫০ খৃস্টাব্দ) পর্যন্ত যেসব ভাস্কর্য ভারতের নানা স্থানে হয়েছে সেগুলোকে ভারতের আদিম শিল্প বলেছেন। গুপ্তযুগকেই বলেছেন সর্বভারতীয় ধ্রুপদিযুগ বা ক্লাসিক্যাল পিরিয়ড। ফলে এই যুগের ভাস্কর্যশৈলীর প্রভাব তৎকালিন বাংলায়ও যে এসেছিলো এব্যাপারে সন্দেহ থাকে না। শিল্পবিশ্লেষণে দেখা যায় প্রাচীন ভাস্কর্যে যেখানে আয়তনকে প্রধান্য দেয়া হচ্ছে, গুপ্তযুগে এসে ভাস্কর্য বক্রগতির প্রবহমান রেখায় ছন্দোময় হয়ে উঠছে। এসময়কার ভাস্কররা এই ছন্দ গ্রহণ করেছিলেন উদ্ভিদের বা গাছ–লতা–পাতার ছন্দ থেকে। ভাস্কর্যে দেয়া হলো আধ্যাত্মিক ভাব, চিরতারুণ্য, হাতের মুদ্রার ভাবপ্রকাশের অনন্য সব ভঙ্গী। গুপ্তযুগে হিন্দু, বৌদ্ধ এই দুই ধরনের মূর্তি বা ভাস্কর্যই পাওয়া যায়। এসব মূর্তি বা ভাস্কর্যের সংগ্রহ বিভিন্ন জাদুঘরে বা বিহার স্তূপে সংরক্ষিত আছে।
প্রাচীন বাংলার মগধ রাজ্যে (বর্তমান বিহারে) গুপ্ত যুগেই বিশ্বখ্যাত বৌদ্ধ মহাবিহার নালন্দা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। এই নালন্দা, বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে শুধু নয়, মহাযান বৌদ্ধ মতের সুবাদে বৌদ্ধ মূর্তি এমনকি হিন্দু দেবদেবির মূর্তি গড়ার কেন্দ্র হিসেবে প্রসিদ্ধ ছিলো। এখানে কালো পাথর এবং ব্রোঞ্জে ভাস্কর্য গড়ার কাজ করা হতো। এই ধারা পাল আমলে প্রাচীন বৃহৎ বাংলার বিহার, উড়িষ্যা (খিচিং), কুচবিহার এবং বাংলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিলো। ১৬০৮ খৃস্টাব্দে লিখিত তিব্বতীয় পরিব্রাজক লামা তারনাথের লিখিত বিবরণে পাল আমলের শিল্পকে ভারতের শ্রেষ্ঠ শিল্প হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে এই শিল্প ভারতের ইস্টার্ন স্কুল অব আর্ট বা পূর্ব শৈলী, যা বিকশিত হয়েছে প্রখ্যাত শিল্পী ধীমান এবং তার পুত্র বিটপালের হাতে। বাংলার সর্বত্র পুকুর খনন করতে গিয়ে পাল আমলের অসংখ্য ভাস্কর্য মিলেছে। শুধু ভারতে নয় পৃথিবীর নানা স্থানে, পশ্চিমা বিশ্বের জাদুঘরগুলোতে পাল আমলের ভাস্কর্যের সংগ্রহ সযত্নে রক্ষিত হচ্ছে। পাল আমলের ভাস্কররা ভারতীয় শিল্পশাস্ত্রে নির্দেশিত রীতিতে ভাস্কর্য বা মূর্তি গড়েছেন। এর ভেতরেও শক্তিমান সৃজনশীল ভাস্করদের অনেকেই অপূর্ব শিল্পনৈপুণ্য দেখাতে পেরেছিলেন বলে মনে করেন মণীন্দ্রভূষণ গুপ্ত।
পাল ভাস্কররা পাথরের ভাস্কর্যকে অপূর্ব মসৃনতা দিতে পেরেছিলেন। অনেক সময় সেগুলোকে মসৃনতার জন্য ধাতব মূর্তি বলে ভুলও করেছেন অনেকে। তারা ভাস্কর্যের কন্ট্যুর বা পরিকাঠামো রেখাকে সুস্পষ্ট করে তুলেছিলেন। তাদের বৌদ্ধ ধর্মীয় ভাস্কর্যের মধ্যে ছিলো বুদ্ধ, বোধিসত্ত্ব, অবলোকিতেশ্বর, বজ্রপাণি, তারা, মঞ্জুশ্রী ইত্যাদি। হিন্দু ধর্মীয় ভাস্কর্যের মধ্যে গড়েছেন– বিষ্ণু, বরাহ অবতার, মৎস্য অবতার, শিব, দুর্গা, উমা–মহেশ্বর, সূর্য, গণেশ ইত্যাদি। ভাস্কর্যগুলোর পেছনে স্টেলে বা প্রস্তরফলক আছে। রীতিতে ভাস্কর্যগুলো হাইরিলিফ ধরনের। পূর্ণাঙ্গ খোদিত ভাস্কর্যেও সংখ্যা কম। পাল আমলের ভাস্কর্যে কারুকার্য প্রথম দিকে কম দেখা গেলেও শেষদিকে অনেক বেড়ে যায়। তবে ভাস্কর্যের পূর্ণাবয়বে ভাস্কররা এক ধরনের কমনীয়তা ও লাবণ্যের যোজনা করেন। বিষয়টিকে পৌরুষব্যঞ্জক নয় বলে মনে করেন অনেক পন্ডিত। বাংলায় পাথরের অপ্রতুলতার জন্য পাল আমলে পাথরের ভাস্কর্যগুলো ছোট আয়তন পেয়েছে বলে মনে করা হয়। দ্বাদশ শতাব্দীতে বহিঃশত্রুর ধ্বংসলীলায় বাংলার পালযুগের ভাস্কর্য প্রয়াসের ইতি ঘটে।
বাংলার প্রাচীন স্থাপত্য:
পাথর দুর্লভ হওয়ায় বাংলায় পাথরের মন্দির–স্থাপত্য নেই। যা আছে তা ইটের এবং পোড়া মাটির ফলকের তৈরি। শিখর মন্দির যা বাংলায় দেখা যায় তা খড়ের ঘরের মতো আটচালা, দোচালা এবং বাংলার কাঠের রথের মতো করে নির্মিত। বাংলার শিব মন্দিরগুলো আটচালার রীতিকে অনুসরণ করে। বাংলার স্থাপত্য পোড়ামাটির মূর্তি বা টেরাকোটা ভাস্কর্যে শোভিত থাকতে দেখা যায়। বাংলার একটি রীতি উত্তর ভারত ও রাজপুতানার বহু স্থাপত্যকে প্রভাবিত করেছে। রীতিটি হলো ছাঁচ। বাংলার প্রাচীন মন্দির স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন পাওয়া যায় বাঁকুড়ায়। এখানকার মন্দিরগুলো টেরাকোটায় সজ্জিত। দিনাজপুর জেলার কান্তানগরের কান্তজির মন্দির একটি শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন। এটি কাঠের রথের আকারে নির্মিত। এছাড়াও বীরভূম, দিনাজপুর, পান্ডুয়া, হুগলি, কুমিল্লা, সহ বাংলার আরো অনেক স্থানে টেরাকোটায় অলংকৃত মন্দির, বিহার, দেউল বাংলার প্রাচীন স্থাপত্যের শিল্প সুষমাকে প্রকাশ করছে।
নির্ম্মলকুমার ঘোষ তার ভারত শিল্প গ্রন্থে লিখেছেন, হিন্দু শিল্প শাস্ত্রের অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থ মানসারে লেখা হয়েছে যে, প্রজাপতি ব্রহ্ম চারজন দেবশিল্পী সৃষ্টি করেছিলেন। তারা হলেন : বিশ্বকর্মা, ময়, ত্বস্ত্রি এবং মনু; এদের পুত্রদের নাম যথাক্রমে স্থপতি, সূত্রগ্রাহী, বর্ধ্বকী ও তক্ষক। স্থপতি প্রবর্তন করেছিলো স্থাপত্য, সূত্রগ্রাহী করেছিলো নকশা ও মাপজোক ভাস্কর্য ও স্থাপত্যের ব্যবহারিক বিষয়ের, বর্দ্ধকী করেছিলো চিত্র রচনার নীতি–রীতির প্রবর্তন এবং তক্ষক করেছিলো ধাতুময় শিল্পদ্রব্য কিভাবে উৎপাদন করা যায় তার উদ্ভাবন। মৌর্যযুগে বিভিন্ন শিল্প উপাদনে জড়িতদের শ্রেণী বিভক্তিও দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়া আরো যে কয়টি স্থাপত্য বিষয়ক ভারতীয় প্রাচীন গ্রন্থের নাম পাওয়া যায় সেগুলো হচ্ছে : কাশ্যপ, ময়মত, সারস্বাত্যং, পঞ্চরত্নং, বিশ্বকর্মীয়, মনুষ্যালয় এবং চন্দ্রিকা।
ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানের মতো প্রাচীন বাংলাতেও স্থাপত্যের সাথে অধ্যাত্ম্যচিন্তার এক ধরনের সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। মানুষের শরীরে যেমনি অদৃশ্য আত্মার বসবাস, তেমনি দেউল–মন্দিরেও চিত্তশুদ্ধকামি মানুষের বসবাস। তবে একথা সন্দেহাতীত ভৌগোলিক অবস্থা, আবহাওয়া, জলবায়ু পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের স্থাপত্যকে বিভিন্ন রূপদান করেছে। আবার এক দেশের স্থাপত্যকে অন্যদেশের স্থপতিরা সৌন্দর্য ও আরাম–আয়েশের স্বার্থে নিজেদের মতো করে তৈরি করেও নিয়েছে। স্বাতন্ত্র্য এবং মিথস্ক্রিয়া এদুটোই আবহমানকাল ধরে চলেছে।
প্রাচীন বাংলার পুন্ড্রবর্ধন, সমতট ও কর্ণসুবর্ণের যে যে স্থানে গৌতমবুদ্ধ ধর্মোপদেশ দিয়েছিলেন, সেই সেই স্থানে মৌর্য স্রাট অশোক স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন এরকম বর্ণনা চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ–এর রয়েছে বলে জানা যায়। পাহাড়পুরতো আছেই , সেই সাথে বাঁকুড়া জেলার বাহুলাড়া ও যোগী–গুম্ফায় কয়েকটি ইটে তৈরি স্তূপ বা স্তূপের নীচের অংশ আবিষ্কৃত হয়েছে। এগুলো আসলে স্তূপ, না কি জৈন, বৌদ্ধ কিংবা ব্রাহ্মণ্য মন্দির এ নিয়ে গবেষকদের সংশয় যায় নি।
বিভিন্ন গ্রন্থে বাংলাদেশের প্রাচীন মন্দির স্থাপত্যকে মৌলিকভাবে তিনভাগে ভাগ করতে দেখা যায়। এই ভাগগুলো হচ্ছে: ১. চালা মন্দির, যা বাংলার একচালা, দোচালা, চৌচালা, আটচালা ইত্যাদি আচ্ছাদনের বসতবাড়ির অনুকরণে তৈরি। ২. রত্ন–মন্দির, যা এক বা একাধিক চূড়া সম্বলিত এবং ৩.দালান মন্দির , যার সামনে থাকে খিলানযুক্ত বারান্দা এবং আরো থাকে বারান্দা সংলগ্ন সমতল ছাদের দেবালয়। চালা মন্দিরের উৎপত্তি হয়েছে বাঙালীর আবহমানকালের গ্রাম–বাংলার কুঁড়েঘরের আদলে। যদিও এই কুঁড়েঘর বর্তমান একুশ শতকের বাংলার গ্রামীণ জীবন থেকে দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে নানা আর্থ–সামাজিক ঐতিহাসিক কার্যকারণ নিশ্চয়ই আছে।
বাংলাদেশে প্রাচীন স্থাপত্যের ক্ষেত্রে আরো তিন রীতির কথাও বলা হয়ে থাকে। সেগুলো হচ্ছে: নিজস্ব, মিশ্র ও বহিরাগত। চালা ধরনের স্থাপত্যগুলো নিজস্ব রীতির। রত্ন শ্রেণির স্থাপত্যগুলো মিশ্র রীতির। আর বহিরাগত শ্রেণীর মধ্যে রয়েছে– কলিঙ্গ, দ্রাবিড়, আর্য–ভারতীয়, ইসলামিক বা মুসলিম এবং ইউরোপীয় পদ্ধতির স্থাপত্য সমূহ। বাংলায় এইসব রীতিতেই স্থাপত্য হয়েছে। আবার নানা কারণে ধ্বংসও হয়ে গেছে। এদেশে প্রত্ন–তাত্ত্বিক গবেষণা ও সংরক্ষণের উদ্যোগের অভাবে বহু স্থাপত্যিক নিদর্শন বিলীন হয়ে গেছে। অনেকগুলো এখনো বিলীন হওয়ার পথে। তবু সারাদেশের বিহার মন্দির, দেউল, ইত্যাদির যা কিছুরই সন্ধান মিলেছে তাতে বাংলার প্রাচীন স্থাপত্যের একটি ধারণা অন্ততঃ দাঁড়িয়ে গেছে।
প্রাচ্য–পাশ্চাত্যের শিল্প–তত্ত্ব এবং ইতিহাস আলোচনায় একটি সত্য সম্পর্ক নিঃসন্দেহ হওয়া যায় যে, মানুষের স্থাপত্যের সাথে ভাস্কর্যের সব সময়ই সম্পর্ক ছিলো। ভারতবর্ষে বাস্তুবিদ্যা বা স্থাপত্যের উপর যেসব গ্রন্থ রচিত হয়েছে– তার ভিতরেই শিল্প–তত্ত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। পরে সেগুলো সংকলন করেই অনেকগুলো শিল্পশাস্ত্র গ্রন্থ প্রণীত হয়েছে।

লেখক : নৃপেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, পুরাকীর্তি গবেষক /মুক্ত ফিচার লেখক ও কবি।
                           ই- মেল-cb nripen 921@ gmail.com
                           হোয়াটস অ্যাপ –7718298921
                            ফোন-+91-7718298921
                 ই-মেল-cbnripen921@gmail.com
লেখক পরিচিতি -
১৯৮০-সালের-২৫- অক্টোবর পশ্চিম বঙ্গের নদিয়া জেলার বালিয়া গ্রামে-জন্মগ্রহণ-করেন নৃপেন্দ্র নাথ চক্রবতী প্রকৃতির-রূপবৈচিত্রে-ঘেরা-গ্রামটিতেই-তার-বেড়ে-ওঠা--হলে-বাংলা-সাহিত্যে-রয়েছে-বিশেষ-ঝোঁক-ছাত্রজীবনে-দেশের-প্রথম-সারির-দৈনিকগুলোতে-লিখতেন-ফিচার-প্রবন্ধ-গল্প-ও-কবিতা-সে-থেকেই-যোগাযোগ-গণমাধ্যমের-সঙ্গে-একসময়-এই-সাহিত্যের-গলি-বেয়েই-ঢুকে-পড়েন-সাংবাদিকতায়-   বাংলার সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক, সকালের পৃথিবীর নিবাহী সম্পাদক, মাসিক শাপলা কুড়ির সম্পাদক, এই কাল পত্রিকার নিবাহী সম্পাদক বিভিণ্ন পত্রিকা গুলেতে বিভিণ্ন পদে দায়িত্ব-পালন-করছেন-পাশাপাশি-অব্যাহত-রেখেছেন-দৈনিক-পত্রিকাগুলোতে-লেখালেখি করে থাকেন।

No comments: