গল্প
অস্বীকার
মহিউদ্দীন আহমেদ
চাকরীর পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে কোচিং নিতে যায় মহিম। কোচিং ক্লাসের টিফিন আওয়ারে বাইরে বেড়িয়ে চা সিগারেট টানতে টানতে দেখে মধ্য বয়সী এক ব্যাক্তি এগিয়ে আসে মহিমের দিকে। প্রায় পিতৃতুল্য ব্যাক্তিকে কাছে আসতে দেখে সিগারেট ফেলে দেয় মহিম। মহিমের এই ভদ্র ব্যাবহারে মুগ্ধ হন আজিজ হোসেন।
বাবা যদি কিছু মনে না করো একটা কথা বলতাম।
বলুন। বলে সদুত্তোর দেয় মহিম।
বলছি বাবা, এখানে তোমরা কোচিং নিচ্ছ কেমন কোচিং দেয় স্যার রা? কৌতূহল নিয়ে জানতে চান আজিজ হোসেন।
দেখুন কাকা, পড়ান তো ভালো। চাকরী পাবার আশাই পড়তে এসেছি। এখন চাকরী পাব কি না জানি না। তবে স্যাররা ভালো পড়ান।
এভাবে কিছুক্ষণ কথা বলাবলির পর আজিজ সাহেবের সঙ্গে বেশ ভালোই ঘনিষ্ঠতা হয় মহিমের। আজিজ সাহেব ফোন নাম্বার নেয় মহিমের।
মহিম ফোন নাম্বার দিয়ে বলেন, কাকা প্রয়োজনে ফোন করবেন। আবার কথা হবে।
মধ্যবয়সী আজিজ সাহেব মহিমের সাথে কথা বলে বাড়ী চলে যায়। আজিজ বর্ধমানের গ্রামে থাকে। চাষীবাসী মানুষ। তার দুই মেয়ে। এক ছেলে। ছেলে নাইনে পড়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। ছোট মেয়ে রুপা সদ্য বি এ পাশ করেছে। আর্টস নিয়ে পড়লেও ফার্ষ্ট ক্লাস নাম্বার পেয়েছে। এখন কলকাতার নামী ইউনিভার্সিটিতে এমএ করছে। মহিমই পরামর্শ দেয় আজিজ সাহেবকে আপনার মেয়ে যখন পড়াশুনোতে ভালো তখন চাকরী ঠিকই পাবে। এখন এমএ টা কমপ্লিট করে নিক। পরে চাকরীর চেষ্টা করবে।
দিনকয়েক পর একটি আন-নোন নাম্বার থেকে মিসড্ কল আসে মহিমের নাম্বারে। মহিম কল ব্যাক করে। দেখে অন্য প্রান্তে এক তরুনীর কন্ঠ। পরিচিত বান্ধবীর মতো জিঙ্গাসা করে কোচিং কেমন হচ্ছে? পড়াশুনো ঠিক মতো করছেন তো ?
মহিম ভাবে হয়তো তারই কোন বান্ধবী। নাম না করে তাকে জিঙ্গাসা করছে।
কে তুমি ?
জিঙ্গাসা করে মহিম। ওপ্রান্ত থেকে আবার হেঁয়ালি গলা- ঠিক জানতে পারবেন, আমি কে। বলেই ফোন কেটে দেয়। মহিম আবার কল করে। কে তুমি? এবার বলে ও প্রান্ত থেকে...।
আমি রুপা।
বুৃঝতে পারছেন? আমি কে ?
হ্যাঁ, বুঝতে পারলাম। তোমার বাবার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে।
হ্যাঁ। আমি বাবার পকেটে থাকা নোটবুক থেকে আপনার নাম্বার পেয়েছি। তাই কল করলাম।
এখন তুমি কোথায়? জিঙ্গাসা করে মহিম।
আমি কলকাতায়। এমএ ভর্তি হয়েছি। মেসে থাকি। এটা আমার নাম্বার নয়। আমার বান্ধবীর মোবাইল। এই নাম্বার থেকে মিসড্ কল দিলে ফোন করবেন। বলে ফোন রেখে দেয় রুপা।
এভাবে দিন কয়েক কথা বলার পর দুজন দুজনের প্রেমে পড়ে যায়। তবে কেউ কাউকে দেখে নি। না দেখে প্রেম। দিন কয়েক ফোনে প্রেম করার পর মহিমকে নিজের ফটো পোষ্ট করে পাঠায় রুপা। মহিম রুপার ফটো দেখে। সে কল্পনার চোখ দিয়ে যে রুপাকে দেখেছিলো এ রুপা সে রুপা নয়। মহিম ভেবেছিলো, রুপা পাতলা ছিমছিমে হবে। গাঁয়ের রঙ হবে ফর্সা। ফটো তে রুপাকে ফর্সা দেখালেও পাতলা ছিমছিমে নয়। বেশ মোটাসোটা। এরপর রুপা - মহিম ঠিক করে তারা একদিন দেখা করবে। ফোনে কথা বলার পর একদিন রুপার সঙ্গে দেখা করার জন্য মহিম কলকাতা যায়। সেদিন সকাল থেকেই ঝিপঝিপে বৃষ্টি। মন মানে না প্রেমের টানে। বৃষ্টি ভেজা দিনেই মহিম রুপার সঙ্গে দেখা করতে যায়। মহিম রুপাকে ফটোতে দেখলেও রুপা মহিমকে দেখে নি। তবুও রুপা মহিমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে দেখা করে। মহিমের কথা মতো রুপা কলকাতার ধর্মতলায় নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। সময় মতো মহিম রুপার কাছে পৌছয়। মহিমের ড্রেস সহ কাছে থাকা কালো ব্যাগ থাকবে এরকম ইঙ্গিত দেয় রুপাকে। বাস থেকে নেমে মহিমকে চিনতে অসুবিধা হয় না। দুজনে দুজনকে আজ বৃষ্টিভেজা দিনে প্রথম দেখলো। এরপর তারা পার্কে যায়। রুপার চেহারা শ্যামবর্ণ। তবে যে দেখতে খুব খারাপ তা নয়। মোটাসোটা চেহারা। মহিম রুপার তুলনায় স্লিম। বৃষ্টিভেজা দিনে পার্কে সব জায়গা ভিজে। তারই মধ্যে গাছের গোড়ায় থাকা কংক্রিটের একটা বেঞ্চ সামান্য শুকনো। সেখানে প্লাস্টিক ক্যারি প্যাকেট ছিঁড়ে পাশাপাশি দুজনে বসে। দুজনে গল্প করতে করতে মহিম রুপার হাত দুটি ধরে। এরপর রুপার গলায় থাকা নেকলেসের একটা হার দেখতে দেখতে রুপাকে দু চোখ ভরে দেখতে থাকে মহিম। রুপা বেশ সেক্সি মেয়ে। মহিমের স্পর্শ পেয়ে রুপার বেশ ভালো লাগে। মহিম ধীরে ধীরে রুপার সঙ্গে গল্প করতে করতে রুপার পিছনে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে। মহিমের আচরন বেশ ভালো লাগছিলো রুপার। কোনরকম আপত্তি না করেই রুপা বলে ওঠে মহিমকে, হাতটা কোথায় যাচ্ছে।
কোথাও নয়। তোমার হৃদয়ের অন্তরালে।
এভাবে বলতে বলতে মহিম রুপার সারা শরীরে হাত বোলাতে থাকে । মহিমের আচরনে আপত্তি নেই রুপার। তবুও বলে কি করছো? হাতটা কোথায় যাচ্ছে ? তোমার হৃদয়ের অন্তরালে সোনা। তুমি আমার সোনা রুপা। এভাবে বলতে বলতে মহিমের হাত রুপার শরীর কে স্পর্শ করে যায়। আলতো করে হাত বোলাতে থাকে। রুপাও পাগল হয়ে যায় মহিমের প্রেমে। মহিম যেভাবে রুপাকে আদর করা শুরু করে তাতে রুপাও নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। মহিমের গায়ে এলিয়ে পড়ে। এভাবে কয়েক ঘন্টা কেটে মহিম রুপার প্রেম খেলা । এদিকে শরীরের উত্তেজনা বাড়ছে দুজনের। সকাল থেকেই ঝিপঝিপে বৃষ্টি। ঠান্ডা হাওয়া। মহিম রুপার স্বাদ পেয়ে শরীর দুর্বল হয়ে আসছে। বৃষ্টি ভেজা ঠান্ডা হাওয়াই মহিমের শরীরে কাঁপন ধরে। রুপা তার সোয়েটারটা মহিমকে খুলে দেয়। মনে মনে ভাবে, কলকাতার এত বড় বড় রাস্তা,বড় বড় বাড়ী - গাড়ী। আর তাদের দুজনে কয়েক ঘন্টা কাটানোর জন্য একটা জায়গা নাই। মহিম ও রুপা সকাল থেকে বিকেল এক জায়গায় প্রেম করার পর সন্ধ্যা নেমে আসে। মেঘ মাখা বৃষ্টি ভেজা দিনে আজ সন্ধ্যা যেন আগেই চলে এসেছে।
এবার রুপার তার হোষ্টেলে ফিরে যাবার পালা আর মহিমও তার ঠিকানায়। পার্ক থেকে দুজনে এবার বিদায় নেবে। মহিমের মন চায় না রুপাকে ছাড়তে। তবুও উপায় নেয়। রুপাকে বাসে চাপিয়ে দিয়ে বিদায় নেয়। মহিম এবার ভাবে রুপার সাথে তার প্রেমের পত্তন। আবারও দেখা হবে দুজনের। মহিমের কলকাতায় বন্ধু বান্ধব মোটামুটি আছে। ভাবে হয়তো একটা ঠিকানা ঠিক ম্যানেজ হবে যেখানে রুপা তার ডাকে আসবে। এসব ভাবতে ভাবতে রাত হয়ে আসে। রাতে মহিম ফোন করে রুপাকে।
কখন ফিরলে? কোন অসুবিধা হয় নি তো? ইত্যাদি বলে খোঁজ খবর নেয়। প্রেমে পড়ে প্রেমিক বেশীই খোঁজ খবর নেয় প্রেমিকার। এমন যেন সেই তার সব থেকে বড় গার্জেন।
রাত কেটে যায়। পরদিন সকাল। মহিম খুবই খুশী। সে নতুন প্রেমিকা পেয়েছে। আবার দেখা হবে, কথা হবে, দু জনে দুজনের মধ্যে মিশে যাবে প্রেম খেলায়।
সকাল সাতটা। মহিম ফোন করে রুপাকে।
- ঘুম থেকে উঠলে?
না।
কেন? তারাতারী ওঠ। আবার কি সকাল হয়েছে। মহিম তার দায়িত্ববান পুরুষ আর প্রেমিকের উপর যেন অগাধ অধিকার, এই ভাবে কথা বলছে। রুপা মহিমের কথা শোনার পরপর উত্তর দিচ্ছে কিন্তু নিজে থেকে কিছু বলছে না।
তুমি কিছু বলছো না কেন? শরীর খারাপ নাকি?
আজ এসো। কোথায় থাকবে বলো? আমি পৌছে যাব।
মহিম রুপাকে এমন ভাবে কথা গুলো বলে যেন রুপা তার নিজের হয়ে গেছে। মহিমের কথা শোনার পরই রুপা ফোন কেটে দেয়। কিছুক্ষণ পর মহিম আবার ফোন করে রুপাকে।
বলে, কি হোল ফোন কেটে দিলে? পাশে কেউ আছে নাকি?
না।
তবে কথা বলছো না? মহিম জানতে চায় রুপার কাছে।
স্যরি। কিছু মনে করো না। তুমি আমাকে আর ফোন করবে না। আমি কোথাও যেতেও পারবো না।
রুপার এহেন কথা শোনে হতাশ হয় মহিম।
কেন? এরকম বলছো? কি হয়েছে? আমি কি দোষ করলাম?
না। তোমার কোন দোষ নাই। তোমার সাথে দেখা করেছি। ঠিক আছে। বাট, কিছু মনে করো না। তোমাকে আমার পছন্দ হয় নি। আমি ভেবেছিলাম, তুমি আরো সুন্দর হবে। রুপ চেহারা তোমার আরো সুন্দর হবে। তুমি তা নও। তাই তোমার সঙ্গে কোন সম্পর্ক নাই । মুখের উপর সাফ বলে দেয় রুপা।
মহিম রুপার একথা শোনে ভীষন আঘাত পায়। যে মহিম রুপা কে এত ভালোবেসে ফেলেছিলো। দেখা করেছিলো। দু জনে দু জনে কাছাকাছি বসে শরীর নিয়েও খেলেছে মনের সম্পর্কের সেতু বন্ধনে সেই রুপা কেন অস্বীকার করছে মহিম কে তা ভেবে পায় না মহিম।
মহিম চোখের জল ধরে রাখতে পারে না, শুধু একটাই কথা বলে রুপাকে, রুপা তোমার যদি আমাকে পছন্দ নাইই হলো, তো কাল কেন এমন ভাবে এলে? তোমার শরীরে হাত দিতে দিলে? কেনই বা সারাদিন কাটালে? প্রথম দেখার পরই তো চলে যেতে পারতে।
মহিমের সব কথা শোনার পর রুপা চুপ করে থাকে। কথা বলে না।
মহিম শেষে একটাই কথা বলে- তুমি ভালো থেকো। সুখে থেকো।
No comments:
Post a Comment