Saturday, June 25, 2022

বাঙালি জাতীয়তাবাদী

 ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষও ঘটে ঔপনিবেশিক আমলে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে। এক ভাষা ও সংস্কৃতির একদল মানুষ দীর্ঘ সংগ্রামে একত্রে আনতে সক্ষম হয় বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে। সেখান থেকে বাঙালি জাতীয়তাবাদের শুরু। কিন্তু ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা কিংবা তারও আগে ১৮৮৫ সালে কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা দুই ধরনের জাতীয়তাবাদের ধারক- বাহক রূপে আত্মপ্রকাশ করতে থাকে; যদিও কংগ্রেসের মধ্যে কিছুটা উদারতা ছিল অন্যান্য সম্প্রদায়ের ব্যাপারে। এক সময় এদের অবস্থান দুই বিপরীত মেরুতে চলে যায়। মুসলিম জাতীয়তাবাদের নেতা মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ’র দ্বিজাতি তত্ত্ব ও লাহোর প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করে মুসলিম জাতীয়তাবাদের সৃষ্টি হয়। ১৪ আগস্ট ১৯৪৭ সালের মধ্যরাতে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষ  ভেঙে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।  এর পূর্ব অংশ বাংলা একটি প্রদেশ হিসেবে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং পূর্ব  পাকিস্তান নামে পরিচিত হয়।  মূল পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু শুরু হতেই পাকিস্তানের শাসন ব্যবস্থা পশ্চিম পাকিস্তানের এলিটদের হাতে ন্যস্ত ছিল। ফলস্বরূপ, পূর্ব পাকিস্তানের সংস্কৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থার উপর পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ছড়ি ঘুরাচ্ছিল। সমস্ত অন্যায় ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার জনগণ কথা বলতে গিয়ে সবাই এক প্লাটফর্মের যাত্রী হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় বাঙালি স্বাজাত্যবোধ ও তার পরিণাম গণ আন্দোলন ও মুক্তির আকুতি। 

বাঙালির মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রাম হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালির অধিকার সচেতনতার  প্রথম ধাপ; পর্যায়ক্রমে যা বিকশিত হয়ে ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচন, ছয় দফা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, সাংস্কৃতিক আধিপত্য বিরোধী সংগ্রাম, গণ অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের উন্মেষ ঘটায়। 

বাংলা ভাষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে ভিত্তি করে জাতীয় এ ঐক্যের নামই বাঙালি জাতীয়তাবাদ।