শুফম সাহিত্য পত্রিকা
সম্পাদক (অনলাইন)
এস এস সম্পা দাস গুপ্ত
অক্টোবর সংখ্যার জন্য লেখা আহ্বান
প্রিয় লেখক/লেখিকা/কবি
আপনাদের এই মর্মে জানান যাচ্ছে যে, এখন থেকে আমাদের ওয়েবসাইটের (www.banglasahittos.blogspot.com) contact form এ লেখা পাঠাবেন। কারণ আপনাদের অনেক মূল্যবান লেখা আমাদের ইলেক্টিকাল মেশিনের প্রোগামে গ্রহণযোগ্য হয় না । সুতরাং আপনাদের লেখা আমরা গ্রহণ করতে পারি না ।
আমরা আরো আন্তরিক ভাবে দুঃখিত যে, কোন প্রকার সৌজন্য সংখ্যা দিতে না পারায় ।
ধন্যবাদান্তরে
সম্পাদক
শুফম সাহিত্য পত্রিকা
যোগাযোগ করুন
sufomsahittopotrika@gmail.com
মূল্য : ১০০ টাকা
লেখক তালিকা
মিজানুর রহমান মিজান
মোঃ হাসু কবির
জে জে জাহিদ হাসান
অলোক আচার্য
উজ্জ্বল কুমার মল্লিক
মাজরুল ইসলাম
রণজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায়
প্রিয়ব্রত চক্রবর্তী
অঞ্জলি দে নন্দী, মম
শুভদীপ পাপলু
মাহমুদ মুযযাম্মিল
রতন বসাক
অরুণ কুমার সরকার
শেখ সজীব আহমেদ
তীর্থঙ্কর সুমিত
অপর্ণা চক্রবর্তী
পুরুষোত্তম ভট্টাচার্য
বদরুদ্দোজা শেখু
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
পরেশ নাথ কোনার
সুনন্দ মন্ডল
ইমামুল ইসলাম
প্রতিমা পাল
অনিরুদ্ধ
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
দেবনাথ দাস
ফরিদ আহমদ ফরাজী
অর্ক রায়হান
আশাহত
মিজানুর রহমান মিজান
প্রতিটি মানুষ জন্মের পর থেকে কত বিচিত্র আশা-আকাঙ্খা, সাধ-আহলাদ মনের মণি কোটায় ধারণ করে এ অবিনশ্বর পৃথিবীর বুকে কুসুমাস্তীর্ণ পথ চলায় বিভিন্ন প্রকারে আশাহত বেদনায় বিদুরিত হয়। তার হিসেব মিলানো অনেক কষ্ট সাধ্য। আবার কেহবা আকাঙ্খা বাস্তবায়নে অতি উৎসাহে আনন্দ উল্লাসে জীবন সুখময় আনন্দে উদ্বেলিত। কিন্তু প্রত্যেকটি মানুষ সন্তানকে লালন করে ভবিষ্যত বংশধর হিসেবে তার আত্মার মাগফেরাত ও অন্তিম কালে সহযোগিতা, সহমর্মিতার প্রত্যাশায়।তাছাড়া সন্তানের প্রতি ভালবাসা প্রকৃতি প্রদত্ততায় সহজাত প্রবৃত্তি বলে জ্ঞাত। এখানে নেই কৃত্রিমতা। আছে স্নেহ, আদর মাখা সোহাগ মিশ্রিত জীবন উৎসর্গ। একজন পিতা অকাতরে বিলিয়ে দেয় সন্তানের জন্য সকল কিছু উজাড় করে, থাকে না কোন রুপ চাওয়া-পাওয়া। কিন্তু সন্তান থেকে যদি পিতা হয় বঞ্চিত?সেক্ষেত্রে পিতৃ-হৃদয়ের হাহাকার শুন্য হৃদয়ের আর্তি কত বেদনাদায়ক,সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
তপ্ত মরুভুমির ধূ ধূ প্রান্তরে থাকে না সবুজের সমারোহ। ক্ষেত্র বিশেষে মানুষের প্রচেষ্টায় অনেক সময় হয় পরিবর্তন। পায় সজীবতা, পেলবতা, সবুজ শ্যামলিমায় হয়ে উঠে ভরপুর। এখানে চাই মানুষের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা, আন্তরিকতা পূর্ণ প্রীতি, ভালবাসাসহ সদিচ্ছা।মানুষের যৌবন কাল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও মুল্যবান। এ সময় মানুষ যৌবনের প্রারম্ভিক উচ্ছ্বল, উচ্ছ্বাস, প্রেরণায় অনুপ্রাণিত। সত্যিকার মানুষ যারা সফলতার কাঙ্খিত ফসল সংগ্রহ করতে চায় বা অনুপ্রাণিত হয়ে আনন্দ বেদনার পাশাপাশি একটা সুস্থ, সুন্দর পরিবেশ, সমাজ, সামাজিকতা গঠনের অঙ্গিকারে দৃপ্ত পদক্ষেপে হয় অগ্রসর। কিন্তু এ শ্রেণির মানুষের দীর্ঘশ্বাসে বাতাস হয়ে উঠে ভারী অধিকাংশ সময় বা ক্ষেত্রে। “গাধার বোঝা বহনই সার” এরুপ তথ্যে ও তত্ত্বে জীবন ক্ষয়িষ্ঞতায় পরিপূর্ণতা পায়। ওদের জীবনে একটা নেই নেই এবং হতাশার বড় সকরুণ সুর ধ্বনিত প্রতিধ্বনির মত ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে।
বৈচিত্রময় পৃথিবীর বুকে বিচিত্র চিন্তা চেতনায় উদ্ভাসিত হয়ে মানুষ জীবন ব্যয়িত করে। হাসান পিতামাতার এক মাত্র পুত্র সন্তান হয়ে ছয় বোনের লেখাপড়া, মান-মর্যাদাসহ বিভিন্ন সামাজিকতায় সুন্দর, সুচারু ও সুষ্ঠু নৈতিকতায় দীক্ষা লাভের আশায় আত্ম-নিয়োগ করে পারিবারিক গন্ডির উৎকর্ষতায়। কিন্তু এ পথ কত বন্ধুর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবুও পিছপা হবার পাত্র নয় হাসান। দীপ্ত পদক্ষেপে উন্নত মন মানসিকতায় এগিয়ে চলে পারিবারিক বন্ধন অটুটত্বের সুস্পষ্ট স্বাক্ষর চিরজাগরুকের প্রত্যয়ী প্রত্যাশায়। সম্পূর্ণ নিজ প্রচেষ্টায় লেখাপড়ার পাশাপাশি বোনদের সাধ্যমত দীক্ষাদানের ক্ষেত্র তৈরীসহ বৃদ্ধ পিতামাতার সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা, সহমর্মিতা দানে কষ্ট লাঘবের উদ্দেশ্যে আত্ম-নিয়োগ করে। সুফল যথা সাধ্য বয়ে আনে। দায়িত্ববোধে সচেতন হাসান এর ঐকান্তিক পিতামাতা, বোন, স্ত্রী-সন্তান সবার প্রতি সমতাভিত্তিক।
জীবিকার্জনের অবলম্বন হিসেবে ছোট একটি ব্যবসা নিয়ে ভোর ছয়টা থেকে রাত নয়/দশটা পর্যন্ত থাকে কর্মে নিয়োজিত। ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন, হাত, মুখ ধুয়ে ব্যবসায় রওয়ানা হবার প্রাক্কালে এক কাপ চায়ের প্রত্যাশায় ঘরময় চোখের চাহনী প্রসারিত করে প্রাপ্তির মনোভাবে।দৃষ্টিতে বন্দি হয় বৃদ্ধা মায়ের দু’টো হাত নামাজান্তে উনুনে চড়িয়েছেন হাড়ি চা তৈরীর নিমিত্তে। হাসানের হৃদয় পিঞ্জর, আত্মাটা উঠে শিউরে যে সময় মা বসে এক কাপ চা পান করার কথা, সে সময়ে তীব্র শীতের মধ্যে চা তৈরী করে পানের দৃশ্য। স্ত্রী-কে ডেকে উত্তোলনে ব্যর্থ হয়ে বিনা চা পানে কাজে যোগদানের নিমিত্তে বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। বিবেকবোধ বাঁধা প্রদান করে হাসানকে মায়ের সারা জীবনের কষ্টময় দিন যাপনে আজ অতি বৃদ্ধ কালেও মা-বাবাসহ নিজে চা পান করতে। যে মা দিনভর অমানবিক তথা অন্যের বাড়ি ঝিয়ের কাজ করে হাসানকে লালন পালন করেছেন, বড় করেছেন নিজে না খেয়ে। সেই মায়ের বিশ্রম নেই, ছুটি নেই, নেই কাজের পরিসমাপ্তি। যে মা রোগাক্রান্ত থেকেও বিনা কাজে বসতে অভ্যস্ত নয়।সামর্থহীন নি:শেষিত জীবনে এসেও গ্রামের মায়েরা কাজ বিহীন বসা স্বভাবে বিলীন।রক্ষ্য করলে নিশ্চিত ধরা পড়বে মায়েরা এটা ওটা করছেনই। হাসানের চেতনায় বার বার উত্থিত হয় মায়ের কষ্ট মাখা মুখটির স্থির অবয়ব।
আধুনিক স্ত্রীর উদ্দেশ্য হল যদি সম্ভব হত কেহ ওর মুখে চারটি ভাত তোলে দিত, তাহলে জগতের সমস্ত চাওয়া-পাওয়ায় চরম উদ্বেলিত হতেন। কি পরিমাণ কাজের চাপ বর্তমানে প্রত্যেক পরিবারে তা বিজ্ঞজন জ্ঞাত।নেই পূর্বের মতো মরিচ বাটা, হলুদ বাটা ইত্যাদি। যে স্ত্রী স্বামীকে এক কাপ চা তৈরী করে হাতে তুলে দিতে অক্ষম।সে স্বামীর কাছ থেকে ভালবাসা প্রাপ্তিটুকু কি পরিমাণ নিখাদ তা বলা বাহুল্য।কারন পূর্বেকার দিনে গ্রামের বধুরা স্বামীকে এক খিলি পান মুখে তুলে বা এক কাপ চা দিয়ে তৃপ্ত হতেন অকৃত্রিম ভালবাসা পূর্ণতায় স্বামী সোহাগী রুপে। কিন্তু বর্তমান সময়, সমাজ ও সামাজিকতায় কৃত্রিমতা মিশ্রণে ভালবাসা প্রত্যাশিত কতটুকু সোহাগী তা প্রশ্ন সাপেক্ষ।মাতাপিতার কথা বাদ দিলে ও স্বামীর প্রাপ্তি পুরণে অক্ষমতা নয় কি?এ জগতে আদি থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রখ্যাত ব্যক্তিরা কাজ করেই হয়েছেন জগৎখ্যাত। এক্ষেত্রে বিন্দু বিসর্গ ব্যতিক্রম নেই। যা চরম সত্য ও প্রত্যক্ষ নিরেট সাফল্যের চাবিকাঠি। কিন্তু কর্ম বিমুখতা যদিও আরামদায়ক দৃশ্যত। কার্যত কিন্তু অন্তরে ধিকি ধিকি আগুনের লেলিহান শিখা প্রজ্জলিত উজ্জলতায় ভাষ্কর।এখানে প্রতিহিংসা বা বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাবেরই পরিচায়ক। এ মনোভাব কারো ও কোন কালে কাম্য হতে পারে না। সুখের পিছনে দৌড়াই আলেয়াকে ধরার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়। কিন্তু বার বার হই প্রত্যাখাত। কারন কর্ম বিহীন কিছুই সংগ্রহ করা সম্ভব নয় এ ধরণীর নাট্য মঞ্চে। স্ত্রী-কে কিছু বললে হবে নারী নির্যাতন। আর মায়ের মুখখানা মলিন দেখে না দেখার ভানে হবে আল্লাহর কাছে মহাপরাধী।যে মা দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে দু:সহ যাতনা ও বেদনা সহ্য করে প্রসবকালীন সীমাহীন কষ্ট সহ্যে নিজের জীবন বিপন্ন করে, তিলে তিলে যৌবনের দ্বার প্রান্তে এনে দাড় করালেন, সেই মায়ের কষ্ট স্বচক্ষে দর্শনে কি হৃদয় ও বিবেকবোধে বাঁধবে না? কোনটি করণীয় দ্বিধা-দ্বন্ধে ভোগে অবস্থা দৃষ্টে।স্ত্রী-কে বুঝালে, তার মায়ের কথা বললে স্বামীর সামনে এটা ওটা করবে। অনুপস্থিতে ধারে কাছেও যাবে না, এ কোন নীতি, এ কোন নিয়ম? অন্যনুপায় হয়ে হাসানের দু’চোখের তপ্ত অশ্রু দু’গন্ড বেয়ে ঝরে অনবরত।
আমাকে অনেকে হয়তো ভাববেন বা অপবাদে করবেন জর্জরিত নারী বিদ্বেষী বলে, নারীর সমানাধিকারে ঈর্ষান্বিত। করজোড়ে বলছি আমি নারী বিদ্বেষী নই। আপনি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন এ ধরনের ঘটনা কম বেশি আপনার দৃষ্টিতে দৃশ্যমান হয়নি।আমি সাত বোনের এক ভাই।সুতরাং নারীর সংখ্যাধিক্যতার সংস্পর্শ আমার কাছে অধিক। আমারই পরিচিত একজন প্রাইমারী শিক্ষক শিশুকালে মাকে হারিয়ে যৌবনে সহোদর তিন ভাই এবং সৎ মায়ের পাঁচ সন্তান তথা ভাইবোনকে তথা সম্পূর্ণ পরিবারের অর্থনৈতিক যোগানসহ সমাজ সামাজিকতায় আমিত্বকে বিসর্জন দেন প্রতিষ্টার নিমিত্তে। সফলতা আসে পরিপূর্ণতায় খোদার অপার মহিমায়। একটু দুরত্বে থেকে কেহ অতি সহজে বিশ্বাস করতে পারবে না বা আঁচ করা মোটেই সম্ভব নয় সৎমা ও ভাইবোন বেষ্টিত পরিবারটি।এ শিক্ষক আমার জ্ঞান বা বোধ শক্তি অর্জনের পর থেকেই দেখেছি আপনসহ সৎ ভাইবোনদের কাপড়-চোপড় ধৌত নিজ হাতেই করেছেন। এজন্য সৎমা অবশ্যই এ পর্যন্ত শিক্ষকের গুণাগুণ বলতে কার্পন্য করেন না। এমন কি আপন ছেলের মতো দেখেনও। কিন্তু বিয়ের পর স্ত্রী নামক ব্যক্তিত্বের কারনে সৎমা দুরে থাক সহোদর ভাইদের সাথে শালীনতাবোধ, শ্রদ্ধা, আদর, স্নেহ সামাজিকতা সব কিছুতেই বিমুখ। কিন্তু প্রত্যেকটি সদস্যের আন্তরিকতা পূর্ণ সদ্ভাব রয়েছে গোপনে। আর প্রকাশ্যে ওদের সাথে অমিল। মান-সম্মান, ইজ্জতের ভয়ে শিক্ষক সব কিছু ত্যাগের মাধ্যমে জীবন যাপন করে যাচ্ছেন স্ত্রীর কারনে। ঘর থেকে বের হলে হিসেব দিতে হবে টাকা এবং সময়ের। হিসেবের গরমিলে কথা আসে বোনকে টাকা দিয়েছ, ভাইকে সহায়তা করেছ, মাকে দেখতে গিয়েছিলে ইত্যাদি ইত্যাদি। টাকা এবং সময়ের গরমিলে মহাশোরগোল মানে দশ নম্বর মহাবিপদ সংকেত ঝড়ের বহমান। ঝড়ের তান্ডব সমাপ্ত হতে বা তার রেশ কাটতে অনেক অনেক সময়ের প্রয়োজন। ভেবে দেখুন একজনের যন্ত্রণায় কতজন কাতর। সমাজের এ দুষ্ট ক্ষত শেষ হবে কবে? এক পাত্র ঘিয়ে এক ফুটা বিষই যথেষ্ট। অতিরিক্ত নিষ্প্রয়োজন। ম্যাচের এক কাটির আগুন গৃহ থেকে গৃহান্তরে ছড়িয়ে লেলিহান শিখা ছাই করতে পারে। আবার এক গৃহ পোডাতে ম্যাচের পর ম্যাচ শেষ হবে অতিরিক্ত তথা এক গৃহই সম্ভব নয় পোডানো।
কবি যথার্থ উপলব্ধির মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন, নিজ অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেছেন,“ মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে”। প্রকৃত বাস্তবতার পরখে আপনি পরিস্থিতি সত্যের প্রতীক হলে দু:খ, কষ্ট, বেদনা সাময়িক কালব্যাপি বিস্তৃত। সূর্যালোক বা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট ঘোর অমাবস্যা কেটে ভোরের সূর্য পূর্বাকাশে উদিত হবে প্রখর দীপ্তির আভা, আলো ছড়িয়ে চতুর্দিকে। হয়তবা একটু বিলম্ব হতে পারে। পরিণাম ফল অবশ্যম্ভাবী। কৃত কর্মের ফলাফল হাতে হাতে প্রাপ্য। এ জগতে প্রবীনরা অনেকটা বলে গেছেন যা সুস্পষ্ট ভাবে চিন্তা করলে অতি সহজে বেরিয়ে আসে যা অমুলক নয়। কারন তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে ছন্দ বা গীতি কাব্য রুপে পরিগণিত।যেমন-“নদীর এপার ভাঙ্গে ওপার গড়ে ঠাকুর ও কানাই”, “ধন সম্পদ চিরস্থায়ী নয়” ও “রুপ যৌবন অটুট থাকে না চিরকাল” ইত্যাদি। সুতরাং আমি চাই সত্যাশ্রিত একটি আলোকিত সমাজ ব্যবস্তা যা মার্জিত, সুশীল শ্রেণিভুক্ত।অন্যায়, অত্যাচার, অনাচার, অনৈতিকতা বর্জ্য তুল্য। এটা আমাদের চরিত্র থেকে পরিহার করে ডাস্টবিনে তথা যথা স্থানে জায়গা করে ফেলতে হবে। মনের কলুষতাই সর্বক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা স্বরুপ। এ বর্জিত হলে সুন্দরতায় যাত্রা কোন কঠিন কাজ নয়।
সময়ের ব্যবধানে পরিবেশ সামাজিকতায় পরিবর্তন নিত্য নুতন কালচার যোগ-বিয়োগ অবশ্যম্ভাবী। পূর্বেকার মা চাচী, বধুরা হাতে তৈরী বা মরিচ বাটা, হলুদ বাটা, ঢ়েঁকিতে ধান বা গাইল ছিয়া সহযোগে ধান ভেঙ্গে রান্না-বান্না করাসহ দৈনন্দিন কার্য তালিকা রুটিন মাফিক চালিয়ে ও অন্যান্য কর্ম সম্পাদন করেছেন। তাদের মন মানসিকতা ছিল উন্নত ও প্রশস্থ। কিন্তু বর্তমান সময়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সকল কাজের প্রস্তুতিপূর্ণ পরিবেশ প্রাপ্তিতে ও কাজের চাহিদা অনেক অনেক সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকারে বিরাজমান থাকাবস্তায় ও সুখ, শান্তি যেন নাগালের বাইরে। কাজ করলে মনের তৃপ্তি, উৎফুল্লতা, প্রসন্ন ও ঝরঝরে হালকা অনুভুতি অবশ্যিই আসে, আসবে।পরিশ্রমে ব্যায়ামের অনেকটা সহযোগির কাজ করে থাকে।কাজে আত্ম-মর্যাদা, শরিরে সতেজতা বৃদ্ধি পায়। একটি মেশিন যদি অচল অবস্তায় দীর্ঘ দিন রাখা হয়, অচলতার কারনে অনেক প্রকার ক্রুটি বিচ্যুতি, গোলযোগ দেখা দেয়। আমাদের দেহ মেশিন অনুরুপ অলস জীবন যাপনে অভ্যস্ত হলে রোগ, ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক। অনেকটা রোগ প্রতিরোধ শক্তি অর্জিত হয় কাজের মাধ্যমে ব্যায়াম সংগঠিত হবার ফলে। ঔষধের কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রে নিষ্প্রয়োজন। ব্যায়াম বা কাজই হল মহৌষধ। সুতরাং চিন্তা চেতনায়, ধ্যান ধারণায় সীমিত হলেও কাজ করা জরুরী। আবার মাত্রাতিরিক্ত কাজ সুফল বয়ে আনতে অক্ষম।অলসতা যেমন কাম্য নয়, মাত্রাতিরিক্ততা ও কাম্য হতে পারে না। নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করাই সর্বোৎকৃষ্ট।
মিজানুর রহমান মিজান
পরিচালক চাঁন মিয়া স্মৃতি পাঠাগার,
রাজাগঞ্জ বাজার,
বিশ্বনাথ, সিলেট।
ফুলকুঁড়ি
মোঃ হাসু কবির
ছোট শিশু ফুলকুঁড়ি
নিষ্পাপ অতি
চাঁদমুখ জুড়ে তার
ভালোবাসা প্রীতি।
হাসিতে যেন মুক্তা
কান্নায় মায়া
চাহনিতে কী যে যাদু
স্নেহমাখা কায়া।
আধো আধো বোলে তার
ফোটে যেন খই
হাঁটি হাঁটি দুই পা'ই
স্বপ্নের মই।
মন তার কাঁদা মাটি
ছন্দের গতি
মনন বিকাশে দিও
উৎসাহ অতি।
মোঃ হাসু কবির
গভঃ প্রিন্টিং প্রেস
তেজগাঁও ঢাকা ।
পবিত্র বন্ধন
জে জে জাহিদ হাসান
ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি
এই একটা সংলাপে অজস্র প্রেমিক প্রমিকার শরীর ছুঁয়ে আসি,
ভালোবাসো ভালোবাসো ভালোবাসো
এই একটা সংলাপে অজস্র প্রেমিকা প্রেমিকের সর্বস্ব ছুঁয়ে আসো।
প্রেমিকের সর্বস্ব প্রেমিকার দেহ
এসব কিছু ভুলে ভালোবেসো মোরে কেহ,
ভালোবেসে তুমি চাঁদ হইয়ো আমি জমিন থেকে দেখবো
তোমার ঐ রাগিণী মায়াবী চোখে তাকিয়ে আমি আমার অস্ত্বিত আঁকবো।
জে জে জাহিদ হাসান
পেশাঃ শিক্ষার্থী
ঠিকানাঃবেলকুচি,সিরাজগঞ্জ ।
শুধুই অন্ধকার
অলোক আচার্য
এখন পৃথিবীর বুক জুড়ে শুধুই অন্ধকার
হাজার বছরের রাত এসেছে নেমে
সেদিন বিকেলগুলো ছিল নিস্পৃহ
সন্ধ্যার আকাশে ওড়েনি শঙ্খচিল
খোলা ছাদে বসে রোমাঞ্চিত হয়নি
সদ্য প্রেমে পরা কোনো প্রেমিক জুটি।
গোধূলির আলোয় হেঁটে চলা পথিক
পথ হারিয়ে হঠাৎ থমকে দাড়ায়।
যেন কতকাল ধরে থমকে আছে পৃথিবী
এ আঁধার শুরু হয়েছিল, যেদিন
যমুনার বুক জুড়ে নেমেছিল অমাবশ্যা
পথ হারিয়ে মাঝ নদীতেই এলোমেলো
ঘুরতে থাকে কয়েকটা জেলে নৌকা।
পৃথিবীর বুক জুড়ে তখন কেবলই অন্ধকার।
অলোক আচার্য
সাংবাদিক ও লেখক
পাবনা
হযবরল
উজ্জ্বল কুমার মল্লিক
হ চলে হকচকিয়ে হুন্ডা চেপে
য এর বাড়ি, ওধার খাল পাড়ি;
তা দেখে র বাবুর ভিরমি লাগে
বোঝা ফেলে ব সাজে,খায় আছাড়ি;
এঁকে বেঁকে ল এসে দেয় হাঁকারি
হযবরল সব, বলি হচ্ছে কী?
উদ্ধত উদ্ভটে সব রসাতলে
মিত্রতা ঠাঁই পায় কাল-কবলে।
উজ্জ্বল কুমার মল্লিক
জয়পুর, প্রফেসর-পাড়া
মগরা- ৭১২১৪৮
ব্যর্থ পোশাক
মাজরুল ইসলাম
নড়বড়ে দৃষ্টির বেজন্মা যে হাত
সে-ই কি তুমি
সব্বাইকে নির্বাক করে
নিজের হাতে সাজিয়েছ বেখাপ্পা পোশাক
রুটি মারতে
গরিব জনপদে আগুন দিতে
আমাজন জঙ্গলের আগুনে হাত গরম করে নিতে
থাকে থাকে সাজানো তোমার রহস্যালাপ
তোমার চুমকি বসানো গ্রিন রুমে ঢুকে পড়েছে
অদৃশ্য অকালের ড্রপ প্লেট
তাতে গ্রিন রুমের ছিরিছাঁদ ফিকে লাল
কীসের সর্বজ্ঞ বিদ্যা
ড্রপ প্লেটের খাড়া গাঁথুনির রাশ টানতে এখন ব্যর্থ কেন
মাজরুল ইসলাম
গ্রাম/ডাক:ছাতাই
মুর্শিদাবাদ -৭৪২৩০২
প,ব, ভারত
দহন কবির
রণজিৎ কুমার মুখোপাধ্যায়
না কোথাও যাবো না
গৃহে থেকেই করে যাব লঙ্কা জয় ।
তা বলে তোমরা ভেবোনা
নিত্যনৈমিত্তিক যে সব অঁ ঘটে চলেছে
তার থেকে আছি বন বাসে ।
আমার দিবস কাটে
রবীন্দ্রনাথ জীবনানন্দকে নিয়ে।
পৃথিবীর সব কিছুতেই নেই আমার অধিকার ;
কত সুন্দর পাহাড় নদী সাগর দেখেছি এ নয়নে,
কত প্রাণ চলে গেছে কুল বনে ।
প্রাচীন মন্দির দর্শনে ভাওয়াল সাহেব
প্রিয়ব্রত চক্রবর্তী
- কি ব্যাপার মৃত্যুঞ্জয় কোথায় চলেছ!
- হ্যাঁ, তুমি যে খুব বড় হয়ে গিয়েছ দেখছি!
ভাওয়াল সাহেব মহকুমা শাসকের অফিস থেকে বার হয়ে আসতে আসতে বললেন- এ প্রিয়, স্যার একা যাবেন না। সঙ্গে রায়বাবু যাবেন। আমি বললাম- ভালো তো! স্যার, মৃত্যুঞ্জয় বলছে কী, আমি নাকি বড় হয়ে গিয়েছি।
- কেন মৃত্যুঞ্জয়ের এমন ধারণা হল?
- স্যার, মৃত্যুঞ্জয়ের মনে হচ্ছে আমি কোনো ম্যাডামের সঙ্গে যাচ্ছি। আর আপনাদের সঙ্গে থেকে আমার নাকি একটা বড় লেজ হয়েছে!
- তা তোমার লেজটা কোথায় গজাল!
- মৃত্যুঞ্জয় আমার লেজটা পিছনে না সামনে!
- তুমি ইয়ারকি করছ না! হ্যাঁ, ঠাট্টার পাত্র হয়ে গিয়েছি না! তুমি এখন গাড়ি করে স্যারেদের সঙ্গে যাচ্ছ আর আমি!
- স্যার মৃত্যুঞ্জয় ছেলে হিসাবে খুব একটা খারাপ নয়! আপনি যদি বলেন, তাহলে ওকে নেওয়া যেতে পারে কি?
- না প্রিয়, যদি রায়বাবু না যেতেন, তাহলে..
- না, না স্যার আপনারা যান। প্রিয়দার সঙ্গে আমার এই রকমই হয়।
- তাহলে স্যার আমি যাব না। আপনারা যান। এই পাগলটার মাথাটা বিগড়ে গিয়েছে একটু ঝালাই মাজাই করি।
মহকুমা শাসক রায়বাবু আর ডেপুটি জর্জ সেন ম্যাডাম সঙ্গে মহকুমা শাসকের গার্ড অফিস হতে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে থমকে দাঁড়িয়ে আমার কথা শুনছিলেন। আমার তা খেয়ালে আসেনি।
কথা শেষ হতেই মহকুমা শাসক গর্জে উঠে বললেন- প্রিয়ব্রত তুমি কি বললে যেন!
রায়বাবু হেসে হেসে ব্যজ্ঞ সুরে বললেন- স্যার প্রিয়ব্রতর একটা লেজ সত্যিই গজিয়েছে। নাহলে দেখুন ও এমন কথা বলে! তা প্রিয় তুমি না গেলে আমরা যে যাব না।
- স্যার কি যে বলেন!
মহকুমা শাসক আরো গর্জে উঠে বললেন- তা তুমি না গেলে আমাদের কি যাওয়া হবে না ভাবছ!
-না স্যার, এমন কথা আমি বলেছি নাকি!
মহকুমা শাসক মৃত্যুঞ্জয়কে গম্ভীর সুরে বললেন- মৃত্যুন তুমি কি চাও, প্রিয়কে আমি গ্রেফতার করি! আমার কাজে বাধা দেওয়ার জন্য।
আমি বুঝতে পেরে মিচকি মিচকি হাসতে যাব কি, গ্রেফতারের কথা শুনে হাসি আমার পেটের মধ্যে ঢুকে গেল। মৃত্যুঞ্জয় সন্দিগ্ধ হয়ে গেল।
কিছুক্ষণ পর মৃত্যুঞ্জয় বলল- প্রিয়দা যাও তুমি। স্যার প্রিয়দা কোন বংশের ছেলে আপনার জানা নেই। দাঁড়িয়ার মধ্যে সবচেয়ে নামকরা পরিবারের ছেলে। আমার জন্য প্রিয়দা গ্রেফতার হবে আমি অন্তত চাই না। প্রিয়দা যাও। তবে সাবধানে!
মহকুমা শাসক বললেন- ও আমার তো জানা নেই। তবে জানো আমার কাজে বাধা দিলে আমি কী করতে পারি!
মৃত্যুঞ্জয় চলে গেল। চলে যাওয়ার পরে ভাওয়াল সাহেব বললেন- প্রিয়ব্রতর সাহসটা একবার দেখুন আমাকে বলে কিনা আমি যাব না।
মহকুমা শাসক মৃদু স্বরে বললেন- উঠুন, উঠুন দেরি হয়ে গিয়েছে খুব।
মহকুমা শাসকের গাড়িতে উঠতে উঠতে বললেন- আমার পাশে স্যার প্রিয় বসবে। ম্যাডাম আপনি জানালার ধারে বসুন।
ভাওয়াল সাহেব বললেন- আমিও যে প্রিয়র একপাশে বসব। ম্যাডামের কি অসুবিধা হবে?
সেন ম্যাডাম ইতস্তত বোধ করে বললেন- না, না আমার কোনো অসুবিধা হবে না।
গার্ড আর কয়েকজন পুলিশ আলাদা গাড়িতে উঠল। গাড়ি চলল বেশ গতিতে। গাড়ির মধ্যে আমাকে নিয়ে ঠাট্টা করতে করতে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে গাড়ি গিয়ে পৌঁছল জটিলেশ্বর মন্দিরে। মন্দিরের গেট বন্ধ। মহকুমা শাসক নিজের পরিচয় দিতেই কেয়ারটেকার গেট খুলে দিল। কেয়ারটেকার মন্দিরের প্রাচীনতার সম্পর্কে বলতে গিয়ে থমকে গেলেন। যখন মহকুমা শাসক বললেন- আমি জানি। আপনাকে আর কষ্ট করে বলতে হবে না। আপনি ভিতরে নিয়ে চলুন আমাদের বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। ভিতরে অনেক কিছু দেখার আছে সেগুলো আগে দেখেনি।
আমরা যখন জটিলেশ্বর মন্দিরে গিয়ে পৌঁছেছিলাম তখন তিনটে বাজে। আমার তাই যে ঐতিহাসিক বোর্ডটা টাঙানো ছিল সেটাও দেখা হল না। তাই জটিলেশ্বর মন্দিরের প্রাচীনতার সম্বন্ধেও জানা হল না। কি করব ওনাদের সময়ের দাম আছে আর আমার..। তবে মন্দিরের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে ভেতরে থমথমে ঘুটঘুটে অন্ধকারাচ্ছন্ন আবহাওয়া আমাকে শিহরিত করে তুলেছিল। মন্দিরটি টালি দিয়ে সিঁড়ি বানানো। মন্দিরের মধ্যে ঢোকার আগে মন্দিরের চারিদিকে টালি দিয়ে তৈরি করা বারান্দাটা দেখার খুব ইচ্ছা হল। মহকুমা শাসকের অনুমতি নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে মন্দিরটি লক্ষ্য করছিলাম। টেরাকোটা মন্দিরটি দেখে মনে হল এটা ইংরেজদের আমলে তৈরি করা নয়। সেনযুগের ঐতিহ্য খানিকটা যেন নজরে আসল। হতচকিত হয়ে গিয়েছিলাম। এই সময়ের মন্দির। অথচ কালক্রমে ক্ষয়ের কোনো চিহ্ন আমার চক্ষুগোচরে আসেনি। আর দেখে তো মনে হল এর রক্ষণাবেক্ষণ এখনো হয়নি। করতে পারবে কিনা আমার একটু আধটু সন্দেহ হয়েছিল। রায়বাবু যদি না অনুমতি চাইতেন আমার তাও বোধহয় জানার সৌভাগ্য হত না। যাহোক বারান্দা চারদিকে পাক খাওয়ার পর যখন মন্দিরের ঠাকুরের দেখার সাধ জাগল, তখন বাজে পাঁচটা। মন্দিরের মধ্যে ঢুকতে গিয়ে আমি তো আরও অবাক হয়ে গেলাম। দেখলাম বারান্দা দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছি তো নামছি। একটা করে ধাপ নামছি আর একটু করে দাঁড়াচ্ছি। কারণ মনে হল যেন একটু স্লিপ আছে। যদি সাবধানে না নামি তো সিঁড়ি দিয়ে মন্দিরের গহ্বরে ঢুকে যাব। বেশ পনেরো মিনিট ধরেই নামতে আমাদের দুজনের সময় লাগল। আর ভাওয়াল সাহেব, ম্যাডাম ও মহকুমা শাসক তো আগেভাগেই মন্দিরের গহ্বরে হাজির। মন্দিরের ভিতরে দেখি প্রদীপের আলোয় বেশ খানিকটা আলোয় আলোকিত। পূজারি আমাদের কাছে দক্ষিণা নিয়ে কপালে তিলক দিলেন। আমরা প্রণাম করলাম। বেশি কিছু দেখার সৌভাগ্য হল না। জটিলেশ্বর মূর্তিটা যতটুকু দেখলাম তাতে মনে হল মূর্তিটা গহ্বরের মধ্যে বেশ ছোটখাটো ও সিঁদুরের ন্যায় লাগছিল। ওখান থেকে সাড়ে পাঁচটার সময় বার হয়ে গেলাম। বেশ কিছুক্ষণ যাওয়ার পর হঠাৎ গাড়ির সামনে একটা গোসাপ। মহকুমা শাসক বললেন- জানেন তো ভাওয়াল সাহেব এটা প্রিয়ব্রতর এলাকা।
ভাওয়াল সাহেব বললেন- তাই স্যার! আমি সত্যিই জানি না। তা প্রিয়ব্রত তুমি কি সাপ দিয়ে পথ আটকানোর চেষ্টা করছ নাকি!
আমি মৃদু স্বরে বলে উঠলাম- তা করলে স্যার ক্ষতি কি! আপনারা তো স্যার পদবলে সব বাধা দূরীভূত করবেন! তাই না স্যার!
রায়বাবু হাস্যমুখে বলে উঠলেন- প্রিয়ব্রতকে যতটা বোকা ভাবছেন ঠিক ততটা নয়!
সেন ম্যাডাম হাসতে হাসতে বললেন- আপনি কী বলতে চাইছেন প্রিয়ব্রত বোকা!
রায়বাবু বললেন- কই আমি তাই বলেছি!
সেন ম্যাডাম আমার দুই গালে দুটো চুমু খেলেন। আমি লজ্জায় মাথা হেঁট করলাম।
ভাওয়াল সাহেব বললেন- ম্যাডাম আপনি দুই গালে চুমু খেলেন কেন? এক গালে তো খেতে পারতেন।
ম্যাডাম বললেন- না আমি দুগালে খেলাম কারণ এক গালে চুমু খেলে বিয়ে হবে না প্রিয়ব্রতর, কি তাই না!
মহকুমা শাসক বললেন- ও তাই নাকি! প্রিয়ব্রতর বিয়ে হবে!
ম্যাডাম মিচকি হেসে বললেন- স্যার আপনি আমার ভাইকে এই রকম বলতে পারেন না!
সবাইমিলে হো হো হো করে হাসলেন।
রায়বাবু হাসতে হাসতে বললেন- স্যার এখানে একটা প্রাচীন মন্দির আছে না!
মহকুমা শাসক বললেন- আমি ঠিক জানি না!
আমি মৃদু স্বরে বললাম- হ্যাঁ আছে।
মহকুমা শাসক বললেন- কোথায় প্রিয়ব্রত! ভাওয়াল সাহেব জানেন নাকি!
ভাওয়াল সাহেব বললেন- না স্যার, আমি ঠিক জানি না।
মহকুমা শাসক বললেন- প্রিয়ব্রত জায়গাটা কোথায়?
আমি বললাম- এই বারাসতে। আমরা বারাসতের পথ দিয়ে যাচ্ছি না ড্রাইভারদা!
ড্রাইভার বললেন- হ্যাঁ। আমরা বারাসতের পথ ধরব।
আমি বললাম- তাহলে স্যার এই মোড়টায় জিজ্ঞাসা করুন ময়দা কালীবাড়ি যাওয়ার রাস্তা কোনদিকে?
মহকুমা শাসক ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললেন- এই তুমি জিজ্ঞাসা করো তো!
ড্রাইভার বললেন- হ্যাঁ স্যার জিজ্ঞাসা করছি!
গাড়িটা সাইডে দাঁড় করিয়ে একটা চা ব্যাপারিকে জিজ্ঞাসা করলেন- ময়দা কালীবাড়ি কোনদিকটায় একটু বলবেন!
চা ব্যাপারি বললেন- এই তো এসে গিয়েছেন। আপনি এই রাস্তা সোজা ধরুন পাঁচ মিনিট পরেই পেয়ে যাবেন।
ড্রাইভার সোজা ধরে কিছুক্ষণ যেতেই বাজারের মধ্যেই ময়দা কালীবাড়ি দেখতে পেল। সেখানে আমরা সবাই নামলাম। সন্ধের সময়। সন্ধ্যায় যে সন্ধ্যারতি হয়ে থাকে আমাদের যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই সেটা হয়ে গিয়েছে। তাই সন্ধ্যারতি দেখার সৌভাগ্য আমাদের হল না। ভাওয়াল সাহেব, মহকুমা শাসক ও সেন ম্যাডাম ভিতরে ঢুকে প্রণাম সেরে নিয়ে যথারীতি বার হচ্ছেন। আমি আর রায়বাবু প্রসাদ কিনতে গিয়ে একটু দেরি হয়ে গিয়েছে। ওনাদের বার হওয়ার মুখে আমরা ঢুকছি। রায়বাবু পুজো দিলেন। আমি আর রায়বাবু দুজনেই পুষ্পাঞ্জলি দিলাম। দেওয়ার পরে প্রণাম করে বার হবো কি, রায়বাবু হাত ধরে টেনে বসিয়ে সাস্টাঙ্গে প্রণাম করতে বললেন। আমি উনি একসঙ্গে সাস্টাঙ্গে প্রণাম করলাম। প্রথামত যথারীতি ঠাকুরমশাই আমাদের মাথায় জল ছিটোলেন। আমরা দক্ষিণা দিয়ে বার হবো কি!
আমি রায়বাবুকে বলে উঠলাম- স্যার মন্দিরের ওপাশটা একটু দেখি চলুন।
রায়বাবু বললেন- চলো।
যেতে যেতে বিভিন্ন মূর্তি দেখতে লাগলাম। দেখতে দেখতে হঠাৎ রায়বাবু দাঁড়িয়ে গেলেন।
জিজ্ঞাসা করলেন- প্রিয়ব্রত এটা ভবানী পাঠক না!
আমি বললাম- হ্যাঁ স্যার!
রায়বাবু বলে উঠলেন- আরে ওনাদের ডাকো।
আমি মহকুমা শাসক সহ ভাওয়াল সাহেব, সেন ম্যাডামকে ব্যাপারটা বললাম। ওনারা উৎসুক হয়ে তাড়াতাড়ি দেখতে আবার মন্দিরের মধ্যে ঢুকলেন। ঢুকেই দেখে অবাক। আরে ভবানী পাঠক এখানে কীভাবে এসেছিলেন।
আমি বললাম- স্যার বরজায়! তখন এখানে গহন সুন্দরবন ছিল। সুন্দরবনেতে কখনও কখনও তিনি আস্তানা গেড়ে ছিলেন। যাতে কেউ সন্দেহ না করে!
দেখার পর মহকুমা শাসক বললেন- রায়বাবু দেরি হয়ে গিয়েছে। এবার তো যেতে হবে।
রায়বাবু বললেন- হ্যাঁ স্যার চলুন। রাস্তায় যেতে যেতে প্রিয়ব্রতর কাছে শুনে নেব।
বাইরে বার হয়ে গাড়িতে উঠলাম যথারীতি আমরা। গাড়ি ছেড়ে দিল। যেতে যেতে আমি গল্প করতে শুরু করে দিলাম। কীভাবে ইংরেজদের কাছ থেকে নিজেকে লুকোনোর জন্য এই জায়গাকে বেছে নিয়েছিলেন। ঐ ইতিহাস শোনার পর রায়বাবু বললেন- আচ্ছা প্রিয়ব্রত এর নাম কেন ময়দা কালীবাড়ি হল?
আমি বললাম- স্যার কথিত আছে পৌরাণিক যুগে এই জায়গাগুলোকে বলা হত পাতাল। রামায়ণের রাবণ ময়দানবের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন ঠিক এইখানে। আর ময়দানব ছিলেন কালী ভক্ত। পাতালে বসেই ইনি কালী সাধনা করতেন। ময়দানবের নামানুসারে এই কালীবাড়ির নাম ময়দা কালীবাড়ি। গল্প করতে করতে ভাওয়াল সাহেব আর সেন ম্যাডামকে বারুইপুরে রেলগেটে নামিয়ে দিয়ে বেশ কিছুদৃর ক্যানিংয়ের যেতেই আমার গন্তব্যস্থল পৌঁছে যেতেই মহকুমা শাসক বললেন- রায়বাবু দেখলেন আমি বললাম এই এলাকা প্রিয়র এলাকা।
রায়বাবু বললেন- দেখলেন প্রিয় এতকিছু জানে।
মহকুমা শাসক হাসতে বললেন- তাই নাকি!
ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে মহকুমা শাসক বললেন- এইখানে দাঁড়াও, প্রিয় নামবে।
ড্রাইভার বললেন- ঠিক আছে স্যার।
ড্রাইভার একটু পাশে দাঁড় করিয়ে আমাকে নামালেন।
মহকুমা শাসক আর রায়বাবু দুজনে হাসতে হাসতে বললেন- প্রিয় আবার দেখা হবে এ্যাঁ!
আমি নেমে বললাম- বায় বায় স্যার!
দূর থেকে হাত নাড়াতে নাড়াতে বললাম- টা টা স্যার!
গাড়িতে বসে ওনারা যে ভালোবাসা আর খাওয়া দাওয়া দিয়ে ছিলেন তা ভোলার মতো নয়! সে কথা মনে করে আমার চোখ থেকে আপনাআপনি জল পড়ে গেল।
শুনুন
অঞ্জলি দে নন্দী, মম
শুনুন শুনুন শুনুন
আসুন! কিনুন!
আমার এই চন্দ্রকিরণ উনুন।
হ্যাঁ, আবিষ্কার। আপনি একে
সারা রাতে
চন্দ্রের কিরণে রেখে
তার ওপরে পাত্র বসিয়ে
আপন হাতে
রেঁধে নিন কষিয়ে!
আমার উনুন কিনবে যে
অমৃত রান্না করবে সে।
দাম নয় বেশী এর।
দেরী ক্যানো ফের?
জলদী কিনে রান্না করুন!
খুশিতে মন ভরুন!
পত্রিকা কেনা কী বাধ্যতামূলক?
আমি কিনবো না ভাই।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে
শুভদীপ পাপলু
শিলাইদহে বৃষ্টি নেমেছে। স্রোতের গালে নাব্যতার বিশ্রাম।
ওপার বাংলার বর্ণমালা চুরি করে, এই সবেমাত্র জোড়াসাঁকোয় ফিরলাম...
কত মেঘ পথ দেখিয়েছে রাস্তায়; কত মেঘ আঘাত সয়ে উড়ে চলেছে, বরফের!
আজও একক ছাতিমতলার ঘাস। প্রসঙ্গতঃ বেশ বৈষয়িকী, অক্ষরে অক্ষরে।
উপন্যাস খুব স্বাধীনচেতা, তাই মাঝিদেরও আর ঘুম ভাঙেনি, নৌকাডুবির পরে।
প্রকৃতি এখন বিপক্ষ প্রশ্নপত্র, বাৎসরিক পরীক্ষার; অন্ধ আহত শ্রেণীকক্ষের!
সাইকেলে ঝুকিঁ ভাঙে, ঝুঁকি গড়ে। পাশাপাশি কতশত পাড় ভাঙে সহনশীলতার।
অহমিকারা জোগাড় করে দিয়ে গ্যাছে, সাপের খোলস আর বিষের দোঁহার।
যদি অভিজ্ঞ নখ দাগ কেটে চলে আকাশীনামতায়;তবে কে ওষুধ পাঠাবে, জ্বরের?
কোষ্ঠীর মধ্যযুগে টিপটিপ করে ঝরছে, রক্তমুখী নীলা; ভাগ্যরেখায় কবিতা লেখা বই...
মিছিল এগিয়েছিল মানচিত্রের দাগ ঘেঁষে, সীমানায় ছিল সাদা অতীতের খই।
জানি এ ভোর কোনও বসন্তের নয়; যেখানে কচিপাতা আদর পাবে উপনিবেশের!
আসা-যাওয়া তো অনিয়মের হেরফের।
লেখাটা কবেকার? বাইশ তারিখের?
শুভদীপ পাপলু
১৭/১০৪৮, আদর্শপল্লী, ধরমপুর
ডাক+থানা - চুঁচুড়া, জেলা - হুগলি
সকল নবীর ধর্মই ছিলো ইসলাম
—মাহমুদ মুযযাম্মিল
মানবসভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই মানুষ আল্লাহর দাসত্ব করবার শক্ত ও মজবুত ধর্মদেয়ালে গণ্ডিবদ্ধ ৷ প্রথম মানব ও প্রথম নবী পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালাম এ ধর্মবিধান স্বয়ং আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে নিয়ে আসেন ৷ যখন দুনিয়ার জমিনে তাঁর আগমন ঘটলো, সাথে সাথে আল্লাহর দাস ও ভৃত্য হয়ে জীবন পরিচালনা করবার ধর্ম তথা ইসলামেরও আগমন হলো ৷ পৃথিবীর এ মাথা ও মাথা— কোথাও অন্য কোনো ধর্মের অস্তিত্বও ছিলো না ৷ পরবর্তীকালে মনুষ্যজাতির বিস্তারের সাথে সাথে বিভিন্ন মতবাদ ও মতাদর্শেরও বিস্তার ঘটতে থাকে ৷ ভিত্তিহীন নানান কুসংস্কার ও কুপ্রথার জন্ম হতে থাকে ৷ যেমন বিভিন্ন দেব-দেবীর অর্চনা, অগ্নিপূজা, নক্ষত্রপূজা এবং অশরীরী আত্মার উপাসনা ইত্যাদি ৷ দেখা যাক কুরআন এ ব্যাপারে কী বলে?
আল্লাহ তা'আলার ইরশাদ— (প্রথমে) সমস্ত মানুষ কেবল একই দীনের অনুসারী ছিলো ৷ তারপর তারা (পরস্পরে মতভেদে লিপ্ত হয়ে) আলাদা আলাদা হয়ে যায় ৷ তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে পূর্ব থেকে একটা কথা স্থিরীকৃত না থাকলে তারা যে বিষয়ে মতভেদ করছে (দুনিয়াতেই) তার মীমাংসা করে দেয়া হতো ৷ (ইউনুস: ১৯)
অন্য আয়াতে এভাবে ইরশাদ হচ্ছে— (শুরুতে) সমস্ত মানুষ একই ধর্মের অনুসারী ছিলো ৷ তারপর (যখন তাদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিলো তখন) আল্লাহ তা'আলা নবী পাঠালেন, (সত্যপন্থীদের জন্য) সুসংবাদদাতা ও (মিথ্যাশ্রয়ীদের জন্য) ভীতি প্রদর্শনকারীরূপে ৷ আর তাদের সাথে সত্যসম্বলিত কিতাব নাযিল করলেন, যাতে তা মানুষের মধ্যে সেই সব বিষয়ে মীমাংসা করে দেয়, যা নিয়ে তাদের মধ্যে মতভেদ ছিলো ৷ আর (পরিতাপের বিষয় হলো) অন্য কেউ নয়; বরং যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিলো, তারাই তাদের কাছে সমুজ্জ্বল নিদর্শনাবলী আসার পরও কেবল পারস্পরিক রেষারেষির কারণে তাতেই (সেই কিতাবেই) মতভেদ সৃষ্টি করলো ৷ অতপর যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদেরকে তারা যে বিষয়ে মতভেদ করত, সে বিষয়ে নিজ ইচ্ছায় সঠিক পথে পৌঁছে দেন ৷ আর আল্লাহ যাকে চান তাকে সরল পথ প্রদর্শন করেন ৷ (বাকারা: ২১৩)
সূচনালগ্নে সকল মানুষ হযরত আদম আলাইহিস সালাম আনীত তাওহীদ ও সত্য দীনের একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলো, কিন্তু পরবর্তী সময়ে লোকসংখ্যা বাড়তে থাকে এবং বিভিন্ন ফেরকা ও উপদল জন্ম নিতে থাকে ৷ সত্য দীন পরিহার করে অনেকে মনগড়া ও যাচ্ছে তাই ধর্ম বানিয়ে নিয়ে উপাসনা শুরু করে ৷ এরপর থেকেই মূলত পৌত্তলিক ধর্মের বিস্তার এবং চন্দ্র-সূর্য, নক্ষত্র, বৃক্ষরাজি ও অগ্নিপূজার ইতিহাস শুরু ৷
তবে যতো যাইহোক, ইসলামধর্ম ছাড়া অন্য সব মানবসৃষ্ট ধর্মমত ও মস্তিষ্কপ্রসূত বিকৃত মতবাদ পরকালে ভ্রান্ত প্রমাণিত হবে এবং আল্লাহর কাছে ধরা খেয়ে চিরতরে জাহান্নামের অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হবে ৷
এ ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন— প্রত্যেকে অতীতে যা কিছু করেছে, সেই সময়ে সে নিজেই তা যাচাই করে নেবে ৷ সকলকেই তাদের প্রকৃত মালিক আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে এবং তারা যে মিথ্যা রচনা করেছিলো, তা তাদের থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে ৷ (ইউনুস: ৩০)
ইসলামই একমাত্র চিরসত্য ভাস্বর ও শাশ্বত জীবনবিধান ৷ এ বিধান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক স্বীকৃত মনোনীত ৷ যুগে যুগে, শতাব্দী পরম্পরায় লক্ষাধিক নবী আলাইহিমুস সালামের পৃথিবীতে আগমন এবং তাঁদের নিরলস ইসলামপ্রচার এ কথাই প্রামাণিক সূত্রে গ্রথিত ৷ সূরা হুদে আল্লাহ তা'আলা নূহ হুদ সালেহ ও শু'আইব আলাইহিমুস সালামের নিজ নিজ জাতিগোত্রকে পরম মমতাভরা ভাষায় আল্লাহর একত্ববাদ ও ইসলামের উদার উন্নত মানবিক ধর্মের প্রতি দাওয়াত দেয়ার ঘটনা বর্ণনা করেছেন ৷ গোত্র কর্তৃক নবীর দাওয়াত প্রত্যাখ্যান এবং তাদের ওপর আল্লাহর পূর্ব ঘোষিত শাস্তি আপতিত হয়ে নিশ্চিহ্ন হওয়ার কথাও এসেছে সাবলীলভাবে ৷ কুরআনের ভাষায়— তারপর আমি বিভিন্ন নবীকে তাদের স্ব স্ব জাতির কাছে প্রেরণ করেছি ৷ তাঁরা তাদের কাছে সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী নিয়ে এসেছিলো, কিন্তু তারা প্রথমবার যা প্রত্যাখ্যান করেছিলো তা আর মানতেই প্রস্তুত হলো না ৷ যারা সীমালংঘন করে তাদের অন্তরে আমি এভাবে মোহর করে দিই ৷ (ইউনুস: ৭৪)
সূরা রা'দের সাত নম্বর আয়াতাংশে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন— প্রত্যেক জাতিকে হেদায়েতের রাস্তা দেখানোর জন্য পথপ্রদর্শক এসেছিলো ৷ (রা'দ: ৭)
অন্য জায়গায়— প্রত্যেক জাতিকে ভয় প্রদর্শনকারী কেউ না কেউ ছিলো ৷ (ফাতির: ২৪)
সূরা ইউসুফে আল্লাহ তা'আলা ইউসুফ আলাইহিস সালামের দাওয়াত ও সংগ্রামমুখর জীবনের আগাগোড়া বর্ণনা করেছেন সবিস্তারে ৷ ফিলিস্তিনের ঊর্বর জন্মভূমি থেকে সৎভাইদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে কীভাবে তিনি মিসরে থিতু হয়েছেন এবং রাজকীয় অংশীদার তথা অর্থমন্ত্রীর পদে সমাসীন হয়েছেন, তাও বর্ণিত হয়েছে পুঙ্খানুপুঙ্খ ৷ সেকালে মিসরীয় সভ্যতা ছিলো পৃথিবীর উন্নত জ্ঞান-সংস্কৃতি ও আবিষ্কার-উদ্ভাবনের জন্য বিখ্যাত ৷ যেমন, প্রাচীন লেখ্যরীতি ও চিত্রকলার মূল আবিষ্কার হয়েছিলো মিসর, সুমেরিয়া ও ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় ৷ তাদের আবিষ্কৃত এসব লিখনচিহ্নকে 'কীলকাকার' বা 'কিউনিফরম' নাম দেয়া হয়েছে ৷ আশ্চর্য পিরামিড ও মানুষের মরদেহ অভিনব কায়দায় মমি করে রাখার এই বিরল জ্ঞান মিসরীয়দের মাথায়-ই ঢুকেছে প্রথম ৷ সেই জ্ঞানী ও বিজ্ঞজনদের দেশে ইউসুফ আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা'আলা নিয়ে গেছেন একত্ববাদ ও ইসলামের দাওয়াত পৌছে দিতে ৷ সুতরাং তাঁরও একটা মর্যাদা ও উচ্চাসন দরকার ৷ সেটাই করলেন আল্লাহ তা'আলা, ক্রীতদাস থেকে মিসরের অর্থমন্ত্রী, অতপর নবী হিসেবে সাধারণ প্রজাকুলের মাঝে দীনে এলাহির দাওয়াত পৌছে দেয়ার মহানকর্ম নিয়েছেন তাঁর গ্রহণযোগ্যতার মাধ্যমে ৷
মিসরের অবাধ্য স্বৈরাচারী রাজা ফেরাউনকে মুসা ও ভাই হারুন আলাইহিমাস সালামের অনবরত আল্লাহর একত্ববাদ ও ইসলামের প্রতি দাওয়াত দেয়ার ঘটনা কুরআনের বিভিন্ন স্থানে পষ্ট আকারে বর্ণিত হয়েছে ৷ ফেরাউন অহঙ্কার দেখিয়ে বলেছিলো 'আনা রব্বুকুমুল আ'লা' আমিই সবচে বড়ো খোদা, এভাবে মুসা আলাইহিস সালামকে প্রত্যাখ্যান ও তাঁর দাওয়াত গ্রহণ না করার অপরাধে আল্লাহ তা'আলা ফেরাউন ও তার গোটা বাহিনীর ওপর সকল লাঞ্ছনা অপদস্থতা ও অভিসম্পাত ঝেড়ে লোহিত সাগরে ডুবিয়ে মেরেছেন ৷ লূত আলাইহিস সালামের জাতি এবং তেরো জন নবীর দাওয়াত প্রত্যাখ্যানকারী কওমে সাবাও যে একই কারণে আল্লাহর আযাবের শিকার হয়ে চরমভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে— তাও কুরআনের মধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত আছে ৷ সুতরাং মানতে দ্বিধা থাকার কথা নয় যে, ইসলামই সর্বকালীন সার্বজনীন ও সর্বস্বীকৃত ধর্ম ৷
ইসলামের সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী প্রিয়তম রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়তি যিন্দেগির তেইশ বৎসর দাওয়াত ও সংগ্রামের মাধ্যমে ইসলামকে সর্বপ্লাবী ও সর্ববিস্তৃত করে গেছেন ৷ এবং এটা সেই ইসলাম-ই যা আদম থেকে ইসা রূহুল্লাহ পর্যন্ত সকল নবী ও রাসূল নিয়ে এসেছেন ৷ কুরআনের ভাষ্যে আল্লাহ তা'আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে জানাচ্ছেন— ইবরাহীম ইহুদিও ছিলো না খ্রিস্টানও নয়, বরং সে তো একনিষ্ঠ মুসলিম ছিলো ৷ সে কখনও মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো না ৷ (আলে ইমরান: ৬৭)
ইউসুফ আলাইহিস সালাম আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন— হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমাকে রাজত্বেও অংশ দিয়েছো এবং দান করেছো স্বপ্ন-ব্যাখ্যার জ্ঞান ৷ হে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর স্রষ্টা! দুনিয়া ও আখেরাতে তুমিই আমার অভিভাবক ৷ দুনিয়া থেকে আমাকে মুসলিম অবস্থায় তুলে নিয়ো ৷ আর আমাকে পূণ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত করো ৷ (ইউসুফ: ১০১)
ইউসুফ আলাইহিস সালাম কারাগারে অবস্থানকালে সঙ্গীদ্বয়কে বলেছিলেন— আমি আমার বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষ ইবরাহীম ইসহাক ও ইয়াকুবের দীন অনুসরণ করেছি ৷ (ইউসুফ: ৩৮)
যদি ইউসুফ আলাইহিস সালাম তাঁর পূর্বপুরুষ ইয়াকুব ইসহাক ও ইবরাহীম আলাইহিমুস সালামের দীন মেনে থাকেন, তবে নিঃসন্দেহে এটা আল্লাহর মনোনীত সেই দীন ইসলামই ছিলো, যা ইবরাহীমপুত্র ইসমাঈল আলাইহিস সালামের বংশপরম্পরায় এসে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ঠেকেছে ৷ এখান থেকে ইসলাম নবজীবন লাভ করে তার ঢেউ আছড়ে পড়েছে পৃথিবীর সবপ্রান্তে ৷
সর্বমান্য এই সত্য ধর্ম ইসলামের পরিচয় পষ্টভাবে জানা যায় এই আয়াতে, আল্লাহ বলছেন— এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করো যেভাবে জিহাদ করা উচিৎ ৷ তিনি তোমাদেরকে (তাঁর সত্য দীনের জন্য) মনোনীত করেছেন ৷ তিনি দীনের ব্যাপারে তোমাদের প্রতি কোনো সংকীর্ণতা আরোপ করেননি ৷ নিজেদের পিতা ইবরাহীমের দীনকে দৃঢ়ভাবে আকড়ে ধরো ৷ তিনি পূর্বেও তোমাদের নাম রেখেছিলেন মুসলিম এবং এ কিতাবেও (অর্থাৎ কুরআনেও), যাতে এই রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হতে পারে আর তোমরা সাক্ষী হতে পারো অন্যান্য মানুষের জন্য ৷ সুতরাং নামায কায়েম করো, জাকাত আদায় করো এবং আল্লাহকে মজবুতভাবে আকড়ে ধরো ৷ তিনি তোমাদের অভিভাবক ৷ দেখো কতো উত্তম অভিভাবক তিনি এবং কতো উত্তম সাহায্যকারী ৷ (হজ: ৭৮)
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নিজের বংশে অনুগত মুসলিম উম্মাহ পেতে কী সকাতর নিবেদন করেছেন আল্লাহর কাছে— হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে আপনার একান্ত অনুগত (মুসলিম) বানিয়ে নিন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্যেও এমন উম্মত সৃষ্টি করুন, যারা হবে আপনার একান্ত অনুগত (মুসলিম) এবং আমাদেরকে আমাদের ইবাদতের পদ্ধতি শিক্ষা দিন আর আমাদের তওবা কবুল করে নিন ৷ নিশ্চয় আপনি এবং কেবল আপনিই ক্ষমাপ্রবণ, অতিশয় দয়ার মালিক ৷ (বাকারা: ১২৮)
যখন তাঁর প্রতিপালক তাঁকে বললেন, 'আনুগত্যে নতশির হও', তখন সে (সঙ্গে সঙ্গে) বলল, আমি রাব্বুল আলামীনের (প্রতিটি হুকুমের) সামনে মাথা নত করলাম ৷ (বাকারা: ৩১)
কুরআন মাজীদের এস্থলে 'আনুগত্যে নতশির হওয়া'-এর জন্য 'ইসলাম' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে ৷ 'ইসলাম'- এর শাব্দিক অর্থ মাথা নত করা এবং কারও পরিপূর্ণ আনুগত্য স্বীকার করে নেয়া ৷ আমাদের ধর্মের নামও ইসলাম ৷ এ নাম এজন্যই রাখা হয়েছে যে, এর দাবী হলো— মানুষ তার প্রতিটি কথা ও কাজে আল্লাহ তা'আলারই অনুগত হয়ে থাকবে ৷ হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যেহেতু শুরু থেকেই মুমিন ছিলেন, তাই এ স্থলে আল্লাহ তা'আলার উদ্দেশ্য তাঁকে ঈমান আনার আদেশ দেয়া ছিলো না, আর এ কারণেই 'ইসলাম গ্রহণ করো' অনুবাদ করা হয়নি ৷ অবশ্য পরবর্তী আয়াতে সন্তানদের উদ্দেশ্যে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের যে অসিয়ত উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে 'ইসলাম'-এর ভেতর উভয় অর্থই অন্তর্ভুক্ত; সত্য দীনের প্রতি ঈমান আনাও এবং তারপর আল্লাহ তা'আলার হুকুমের প্রতি আনুগত্যও ৷ তাই সেখানে 'মুসলিম' শব্দই ব্যবহার করা হয়েছে ৷
(তাফসীরে তাওযীহুল কুরআন: ২য় খণ্ড)
লক্ষ্য করুন পরবর্তী আয়াতদ্বয়ে— ইবরাহীম তাঁর সন্তানদেরকে এ অসিয়ত করলো এবং ইয়াকুবও (তাঁর সন্তানদেরকে) যে, হে আমার পুত্রগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য এ দীনকে মনোনীত করেছেন ৷ সুতরাং তোমাদের মৃত্যু যেনো এ অবস্থায়ই আসে যখন তোমরা মুসলমান হয়ে থাকবে ৷
তোমরা নিজেরা কি সেই সময় উপস্থিত ছিলে, যখন ইয়াকুবের মৃত্যুক্ষণ এসে পড়েছিলো, যখন সে তার পুত্রদের বলেছিলো, আমার পর তোমরা কার ইবাদত করবে? তারা সকলে বলেছিলো, আমরা সেই এক আল্লাহরই ইবাদত করবো, যিনি আপনার মাবুদ এবং আপনার বাপ-দাদা ইবরাহীম ইসমাঈল ও ইসহাকেরও মাবুদ ৷ আমরা কেবল তাঁরই অনুগত (মুসলমান) ৷ (বাকারা: ১৩২-১৩৩)
সুতরাং বুঝতে আর বাকি থাকার কথা নয় যে, সকল নবী ও রাসূলের মত পথ ও দাওয়াত একই ছিলো ৷ তসবিহের শত শত দানা যেমন একই সুঁতোয় গাঁথা থাকে, একই নিয়মে যিকিরকারীর অঙ্গুলি মাথার চাপে গুণিত হয় ৷ ঠিক তেমনই নবী ও রাসূলগণও একই সিলসিলার ভিন্ন ভিন্ন রূপ ছিলেন ৷ তাই প্রত্যেক নবীর প্রতিটি উম্মতকে নিজের চেহারা লা-শারিক আল্লাহর দিকে নিবদ্ধ করার দাওয়াত এসেছে ৷ এ বিষয়ে কুরআনের সুস্পষ্ট বাণী হলো—
কেনো নয়? (নিয়ম তো এই যে) যে ব্যক্তিই নিজে মুসলিম হয়ে যাবে (আল্লাহর অনুগত হয়ে যাবে) এবং সে সৎকর্মশীলও হবে, নিজ প্রতিপালকের কাছে সে তার প্রতিদান পাবে ৷ আর এরূপ লোকদের কোনও ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না ৷ (বাকারা: ১১২)
ইসলাম দিয়েই পৃথিবীতে মানববংশের যাত্রা শুরু হয়েছে, ইসলামের শাশ্বত সুনিপুন সৌন্দর্যবিভা ও সরল সঠিক পথরেখার আলোকেই আবাদ হবে আগামীর পৃথিবী ৷ এটাই আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস ৷ ব্যক্তি-সংসার ও সমাজ-রাষ্ট্র ইসলামের সর্বকালীন ও সার্বজনীন নিয়মবিধি মেনে চললে অযুত শান্তির হাওয়া বয়ে বেড়াবে মানুষের যাপিত জীবনের বাঁকে বাঁকে৷ কারণ ইসলামই কিয়ামত পর্যন্তের জন্য পূর্ণাঙ্গ ও সুস্থির জীবনব্যবস্থা ৷ নবীজির বিদায় হজের ভাষণের এক পর্যায়ে এ মর্মেই কুরআনের শেষ আয়াতটি নাযিল হয়েছে— আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দীন হিসেবে ইসলামকে (চির দিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম ৷ (মায়িদা: ৩)
যেমন পূর্ণাঙ্গ দীন দিয়েছেন আল্লাহ, তেমনি প্রত্যেককে এই দীনে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশ করতেও বলা হচ্ছে ৷ ইরশাদ হয়েছে— হে মুমিনগণ! ইসলামে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না ৷ নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ৷ (বাকারা:২০৮)
ইসলাম নামক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা চৌদ্দশো বছর আগেও যেমন সজীব সবুজ ছিলো, আজও তা প্রাণময় বাঙময় ৷ ইসলামের আবেদন ফুরিয়ে যায়নি এবং ইসলামই উত্তরাধুনিক যুগের মূল প্রসঙ্গ ৷
মাহমুদ মুযযাম্মিল
কবি, প্রাবন্ধিক
শিবপুর, নরসিংদী
সার্থক হতে
রতন বসাক
সুন্দর জীবন গড়ে নিতে
মানতে হবে ধর্ম,
নিয়ম নীতি সবটা মেনে
করতে হবে কর্ম ।
ধর্ম গ্রন্থ মনটা দিয়ে
পড়ে বুঝতে হবে,
চলার পথে মানো যদি
শান্তি পাবে তবে ।
হিংসা ছেড়ে সবার সাথে
হৃদয় দিয়ে মেশো,
উঁচু নিচু বিভেদ ভুলে
সদা ভালোবেসো ।
গরিব দুখী দেখলে পরে
দানে কিছু দিও,
এমন কর্মে দোয়ার ঘড়া
ভরে তুমি নিও ।
পাপের কাজে রইলে পড়ে
জীবন হবে কালো,
ন্যায়ের পথে চলতে থেকে
কর্ম করো ভালো ।
জীবন সার্থক করার জন্য
মেনে চলো যুক্তি,
প্রভুর প্রতি বিশ্বাস রাখলে
পাবেই তুমি মুক্তি ।
নিজস্বতা
অরুণ কুমার সরকার
সবার একটা মন আছে, যা তাঁর নিজস্ব
সবার মধ্যে এক আগুন আছে
সেটাও তাঁর নিজস্ব
সে আগুন কখনও জ্বলে ওঠে
কখনও থাকে সুপ্ত;
সবার মধ্যে কিছু না কিছু গুণও থাকে, যা তাঁর
একান্তই নিজের
সবার মধ্যে কিছু দোষত্রুটিও থাকে
যেহেতু সে মানুষ।
বাতাসের একটা শনশন শব্দ আছে
সেটা কেবল বাতাসেরই
সমুদ্রের একটা গর্জন আছে
সেটা তার নিজস্ব;
সবার কিছু না কিছু নিজস্বতা থাকে
তাই নিয়ে কাল ছোটে কালের দিকে পৃথিবীর মতো
এরই মাঝে হিংসা গিলে খায়
অন্যের সুখ;
মানুষ দুখী হয় নিজস্বতা পুষে...
অরুণ কুমার সরকার
শিবমন্দির, বিধানপল্লী
শিলিগুড়ি
পাগল মন
শেখ সজীব আহমেদ
(মালদ্বীপ প্রবাসী)
এক.
নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করলাম।তার নাম সাবিনা আক্তার মৌ।
প্রথমে আমার ইচ্ছে ছিল না প্রাইভেট পড়ানো।
তার মায়ের অনুরোধেই পড়ানো শুরু করি।
তাকে রাতে পড়াতে হয়,বিকেলবেলায় পড়ানোর আমার সময় নেই।
কারণ আমি সকাল আটটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সিঙ্গাপুর যাওয়ার জন্যে আমাদের সুবচনি বাজারের সামনেই সিঙ্গাপুর স্কিল ট্রেনিং সেন্টারে ট্রেনিং দিচ্ছি ওয়াটারপ্রোফিং’র কাজে।
মৌকে পড়াতে পড়াতে একমাস হয়েগেল।
হঠাৎ একসময় ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পেলাম।হয়ত আজ পড়বে না।
আমি তার নাম ধরে ডাক দিলাম,ঘরের কেউ সাড়া দিল না।কিছু হলো কিনা চিন্তায়
পড়ে গেলাম।অবশ্যই কিছু একটা হয়েছে আমার মন বলছে।
সকালদিকে তার মায় আমাকে দেখেই
আজে -বাজে কথা বলতে থাকে।
আমি নাকি মৌকে বিয়ে করতে চাই-
প্রস্তাব পাঠিয়েছি,তার দাদি আর ফুফুর কাছে।
কথা শুনে আমার মাথাটা গরম হয়েগেল।
আমি চুপ হয়ে রইলাম।
মৌ’র মা আরও বললেন,
'আমার মাইয়ারে পড়াতে লাগব না।ঘরের ভিতর কাউকে ঢুকতে দিমু না।আমার মাইয়া কষ্টে পালি।যতন হউক,মতিন হউক,যেই হউক
আমি য্যান-ত্যান পোলাগো কাছে আমার
মাইয়া বিয়া দিমু না।’
আমি নিরবে শুধু শুনেই যাচ্ছি।
কথার কোনো জবাব না দিয়ে,
আমি মনটি খারাপ করে তার মায়ের কাছ থেকে চলে যাই মৌ’র দাদি ও ফুফুর কাছে-
সত্যি কি তারা এসব কথা বলছে কিনা জানতে।
হ্যাঁ,তারা বলেছে,স্বীকার করলেন।
আমি অবাক হয়ে বললাম,'আপনারা এসব কী বলছেন?ভুলেও আর এসব বলবেন না।
আমি অরে ছোটবোনের মতো জানি।’
তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি ট্রেনিং সেন্টারে চলে আসি।
আজকেই আমার সেমিফাইনাল পরীক্ষা দিতে হবে।ভালো করতে পারলেই ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারব।আমার প্রতিদ্বন্দী মাত্র একজন।ফাইনাল পরীক্ষার কোডাও এবার একটি।
যে ভালো করবে,সেই ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারবে।আমার প্রায় দেড় বছর চলছে।পরীক্ষার দেওয়ার কোনো সুযোগই পাইনি,আজ পেয়েছি।সবার আশা,আমি ভালো করব।এবার ফাইনাল পরীক্ষাটা আমি-ই দিতে পারব।
সকালবেলায় থিওরি পরীক্ষা দিলাম।তারপর
দুপুর দু'টায় ওয়াটারপ্রোফিং প্রজেক্টের কাজ শুরু করলাম।
আমার শুধু মৌ’র মায়ের কথাগুলো মনে পড়ছে।কাজের শুরুতেই ভুল করে ফেললাম।
কোনো মতো প্রজেক্টের কাজ শেষ করলাম।
তবে প্রজেক্টা ভালোভাবে করতে পারিনি বলে,
আমি ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারব না।
আমার মনটি খারপ হয়েগেল।
কিন্তু মা-বাবার কাছে কী জবাব দেব?নিজেই নিজের হাতের আঙুল কেটে বাড়িতে চলে আসতে থাকি।
মা-বাবাকে বলে দেব,আঙুল কেটে গেছে বলে পরীক্ষা থেকে বাদ পড়ে গেছি।
ঘরের ভিতর ঢুকে দেখি,মা মাগরিবের নামাজ পড়ে দোয়া করছেন আমার জন্য।যাতে আমার পরিক্ষাটা ভালো হয়।মা’র দোয়ার শেষে আমার
হাতের দিকে তাকালেন।[গায়ের জামা ছিঁড়ে হাত বেঁধে রেখেছি।]মা দেখে অবাক!
আমি মাকে মিথ্যা কথা বললাম-'মা,আমার পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে কিন্তু আঙুলটা একটুখানি কেটে গেছে বলে ফাইনাল পরীক্ষা
এবারও দিতে পারব না।
মা তেমন কিছু আমাকে বললেন না।
দুই.
মতিন হচ্ছে পাশের এলাকার ছেলে।মৌকে সে পছন্দ করে,ভালোবাসে।মৌকে দেখলেই তার দিকে শুধু চেয়ে থাকে।মৌ একদিন আমার কাছে বিচার দিল।আমি আর যতন মিলে মতিন যাতে মৌকে ডিস্টার্ব না করে,মানা করে দিলাম।কঠোভাবে শাসনও করে দিলাম।
এক সময় মতিন তার চাচত ভাইকে দিয়ে আমাকে মারবে বলে পদক্ষেপ নেয়।
আমিও মতিন এবং তার বন্ধুকে মারার পদক্ষেপ নেই।কেননা,ওরা আমাকে আর মৌকে নিয়ে আজে-বাজে কথা বলছে।অবশেষে যতন
তা সমাধান করে দেয়।
একদিন শুনতে পেলাম যতনও নাকি মৌকে ভালোবাসে।কিন্তু মৌ যতনকে ভালোবাসে না।মৌ ভালোবাসে আমাদের গ্রামে বেড়াতে আসা স্বপনকে।স্বপনের সঙ্গে প্রেম-পিরিতি ভালোই চলছে।তাদেন মা-বাবা কেউ জানেন না।
ধীরে ধীরে আমার মনটি কেমন জানি
হয়েগেল।মৌ’র প্রতি হয়ত দুর্বল হয়ে যাচ্ছি।
স্বপনের সঙ্গে কথা বলা আমার ভালো লাগছে না।
রাতের দিকে আমার এক চাচির ঘরের ভিতর দেখতে পেলাম তাদের দু’জনকে।বাতিটাও নিভে দিল।আমার মনে বাজে চিন্তা এসে পড়ে।
আমার দু’চোখ দিয়ে জল ঝরতে থাকে।বুক ফেঁটে কান্নাও আসছে।আমার কান্নার শব্দ হয়ত কেউ শুনতে পারে,তাই আমি অন্য কোথাও চলে গেলাম।চোখের জলে আমার মুখটি ধৌত করে ফেললাম।এতো জল ঝরছিল তা বলার মতো না।
জানি না,আমার কেনো কান্না পাচ্ছে?
নিজেকে আমি নেজেই
শান্তনা দিলাম।আমি তো মৌকে ভালোবাসি না।আমার কেনো কান্না আসবে?মনটি কেনো ছটপট করবে?আসলে আমি বুঝলেও,কিন্তু পাগল মন তো বুঝছে না।
একপর্যায় মৌ’র আর স্বপনের সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়।স্বপনের দোলাভাই জেনে গেছে তাই।
স্বপন চলেগেল তার নিজের বাড়ি।এখন মৌ’র সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই,হয় না কোনো কথাবার্তা।
অবশেষে যতনের সঙ্গেই মৌ’র মিল হওয়ার সম্ভবনা।যতনের সঙ্গে মৌ’র প্রেম-পিরিতি ভালোই চলছে।
আমার এখন কোনো খারাপ লাগে না।
নিজের মনটাকে সামলিয়ে নিয়েছি।
যতন যেহেতু আমার বন্ধু।যতনের সঙ্গে সম্পর্ক হয়েছে এতেই আমি খুশি।কিন্তু যতন আমাকে বলে,আমি নাকি মৌকে ভালোবাসি।আমি যতনকে বুকে হাত দিয়ে বললাম,'যা শোনছস সব মিছা।আমি অরে ভালোবাসি না।তুই মৌরে
বিয়ে করে ফেল।আমারে ভুল বুঝিস না।’
অবশেষে তারা বিয়ে করে ফেলল।
কিন্তু আমার পাগল মন এখন আবার নীরবে কেঁদেই যাচ্ছে।
টঙ্গীবাড়ি,মুন্সীগঞ্জ।
বিচ্ছিন্নতা
তীর্থঙ্কর সুমিত
না বলা কথা
সন্ধ্যার অস্তরাগে
নামিয়ে আনে একমুঠো বিষাদ
ফেলে আসা আত্মকথা
আমায় টেনে নিয়ে যায়
অনন্ত পৃথিবীর বুকে
অ এ অজগরের তাড়ায়
বেড়ে উঠছি প্রতিদিনের আমি
জল বাতাস
একের বিচ্ছিন্নতা
নিয়ে আসে সাজানো আমি তে
উপভোগের আর এক নাম বিচ্ছিন্নতা।
তীর্থঙ্কর সুমিত
মানকুন্ডু ব্রাম্ভন পাড়া
হুগলী।
জন্মভূমি
অপর্ণা চক্রবর্তী
অনেক ভাগ্য করে মাগো জন্মেছি এই দেশে
সার্থক হল জনম যে মোর তোমায় ভালোবেসে।
স্নিগ্ধ শীতল স্নেহ মমতায় হয়েছি বড়ো আমি
তোমার আকাশ তোমার বাতাস প্রাণের চেয়ে দামী।
তোমার সৌন্দর্য মুগ্ধ করে আমায় বার বার
তোমার গরবে গর্বিত যে হৃদয় স্পন্দন আমার।
জন্মভূমি মায়ের মতো শুনে হয়েছি আমি বড়ো
পাহাড় পর্বত নদী সমুদ্র সবই বক্ষে ধরো।
তোমার বক্ষে মাথা রেখে ঘুমাতে চাই ক্লান্তিতে
তোমার ঘ্রাণের শীতল স্পর্শে দেখব স্বপ্ন শান্তিতে।
আসতে চাই যে বারবার এই জন্মভূমির মাটিতে
জনম জনম বক্ষে ধরে চাই যে তোমায় রাখিতে।
অপর্ণা চক্রবর্তী
২এ হেমন্ত মুখার্জি রোড, কোলকাতা।
অচেনা ডাক
কবি পুরুষোত্তম ভট্টাচার্য
কে রে?
কে ডাকে আমারে?
হৃদয়ে কড়া নেড়ে,
ওগো! তুমি তো ভেতরে,
তবে কে দাঁড়িয়ে বাইরে?
যে ডাকে আমারে
একেবারে তোমার স্বরে।
একি আমার ভুল শোনা?
নাকি কবরে শোওয়া
আমার অতৃপ্ত প্রেমের,
প্রেতাত্মার আনাগোনা!
না তোমার দীর্ঘ ব্যর্থ
প্রতীক্ষার শুকিয়ে যাওয়া
প্রতিটি অশ্রুর অস্ফুট হাহাকার!
জানি না ,আমি জানি না,
শুধু মনে হয়
কে যেনো ডাকে বারে বারে
আমারে, ঐ কুশিয়ারার তীরে ।
ক্ষণজীবি
বদরুদ্দোজা শেখু
আগামী কাল বেঁচে থাকবো কিনা সংশয়ে আছি।
বিশ্বদেশে করোনার তীব্র কানামাছি
ছুঁইয়ে দিচ্ছে অগণিত কবর শ্মশান,
ত্রাসে মরি--- খুঁজে মরি আশু পরিত্রাণ ।
বান আসছে ঘূর্ণি আসছে, ধ্বংসস্তূপগুলো
অঙ্গের ধূলোর মতো ঝেড়ে ফেলি, চালচুলো
শূণ্য মুখে ব্যাদান ছড়ায়,
শবের আড়তে তবু জীবন কুড়াই
জীবনকে তীব্র ভালবেসে, আকাশ বাতাস পানি
ধান গম কান্নাহাসি সৌন্দর্য স্বপ্ন সুভ্হানী
ইন্দ্রিয়বোধকে ভালবেসে, শেষে কিনা
তারই অপমৃত্যু ? নিত্যদিন সইতে পারছিনা !
চীনা দৈত্যের কাছে ভৃত্য হয়না মন---
কাফন জোগাড় করবো ? নাকি চাল ডাল লবণ ?
মনে দ্বিধা , ভয়, সতর্কতা,---
কোথাও কাঁদছে যেন জীবন যৌবন প্রেম
আয়ুরেখা ক্ষণজীবি লতা !!
বদরুদ্দোজা শেখু
18 নিরুপমা দেবী রোড , বাইলেন 12 ,
শহর+পোঃ- বহরমপুর ,
জেলা: মুর্শিদাবাদ,
পঃ বঙ্গ , ভারত ।
মন ভালো নেই
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
মন ভালো নেই অবসরে
কর্মবিহীন থাকা
মন ভালো নেই ঘরের মাঝে
লাগে ফাঁকা ফাঁকা।
মন ভালো নেই যাওয়া যায় না
লোকের আড্ডা খানা
মন ভালো নেই মহামারী
কখন যে দেয় হানা!
মন ভালো নেই কি যে করি
লেখি বসে ছড়া
মন ভালো নেই সেরা শব্দে
হয় না ছড়া গড়া।
মন ভালো নেই শুয়ে বসে
কাটছে দিবা নিশি
মন ভালো নেই আবার কখন
কার সাথে যে মিশি।
মহিউদ্দিন বিন্ জুবায়েদ
মুহিমনগর, চৈতনখিলা, শেরপুর।
অগ্নিপরীক্ষা
পরেশ নাথ কোনার
তীব্র আর্ত চিৎকার ,
হৃদয়ের পাতাল থেকে উঠে আসা হাহাকার,
স্বজন হারানো সুতীব্র বেদনায় রচিত হয়
নদী গাঁয়ের মানুষের জীবন বেদ।
শ্রাবণে পূর্ণ যৌবনার মানসিক বিকারে
হতচ্ছাড়া মানুষগুলোর জীবনে নেমে আসে
অমাবস্যার নিকষ অন্ধকার, সর্বহারা মানুষের
কান্না ঢেকে যায় তীব্র জলোচ্ছ্বাসে।
যে নদীকে এতদিন ভালবেসেছি ,লালিত পালিত
করেছি আপন সন্তান সম, সে ভালবাসার মূল্য
দিয়েছে চুকিয়ে, ঘর বাড়ি,জমি, মন্দির, মসজিদ
অনায়াসে তলিয়ে গেছে নদী গর্ভে।
দিন যায় দিন আসে অজানা আশঙ্কা জড়িয়ে ধরে
পাইথনের মতো,ভেঙে দেয় মেরুদন্ড,সোজা হয়ে
দাঁড়াবার শেষ ইচ্ছে টুকু নিভে যায় তেল হীন
প্রদীপের মতো।
ওর আসে দেখে যায় মানুষের পরিণতি,রেখে
যায় ভাঙ্গন রোধের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি।
যার ঘর ভাঙেনি, নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় নি শৈশবের
লুকোচুরি খেলার ঠাকুর দালান কিম্বা আজানের
শব্দ ভেসে আসা সেই মসজিদ ,তাদের কাছে
ভাঙ্গন যেন পিচ ওঠা সড়ক , জোড়াতালি যার
ভবিষৎ।
নদী ভাঙ্গন অভিশাপের মতো নেমে আসে
গ্ৰামের নিকানো উঠোনে,নিমেষে নিশ্চিহ্ন
হয়ে যায় শত শত শৈশব।
নারী হোক কিম্বা পুরুষ ,সবার জীবনে নেমে
বৈধব্যের কঠিন অগ্নিপরীক্ষা।
পরেশ নাথ কোনার
নেতাজী সুভাষ পল্লী, রাসবিহারী স্ট্রীট দুর্গাপুর:০১
পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম বঙ্গ ।
ফাঁদ
সুনন্দ মন্ডল
দরজা খুলতেই চোখে পড়ল নিতার ঝুলন্ত দেহ। নিতার বাবা ও মা দুজনেই একমাত্র মেয়ের জন্য কান্নাকাটি শুরু করল। কাঁচা বয়স, মাত্র ১৪। ক্লাস নাইনের ছাত্রী। গৌরাঙ্গিনী বালিকা বিদ্যালয়ে কৃতি ছাত্রী নিতা। কারো সাথে ঝগড়া, দুস্টুমি ছিলনা। গলায় গলায় মিল সবার সাথেই।
হঠাৎ কেন নিজেকে শেষ করল কেউ জানেনা। ইতিমধ্যে পুলিশ এলো। নিতার বাবা-মা'কে অনেক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। কিন্তু সুরাহা হলো না। সঠিক তথ্য না পেয়ে নিতার মৃতদেহ নিয়ে পোস্টমর্টেম এর জন্য চলে গেল।
সারা হাতে পায়ে কাটা চিহ্ন। কোন খেলায় মেতেছিল কে জানে? ময়নাতদন্তের পর পুলিশের অনুমান আত্মহত্যা নিজের থেকে নয়। কেউ প্ররোচনা দিয়েছে। কিন্তু কে? নিতাকে জীবনের অন্তিমে পৌঁছে দিল কে?
নিতার বাবা মা কিছুই ভেবে পায়না। স্রোতহারা, ভাটার নদীর মতো শোকে শুকিয়ে যাচ্ছিল। তাদের একটাই দাবী, মেয়ে তাদের খুব ভালো ছিল। সবসময় তাদের কথা শুনত। বাবা-মায়ের বাধ্য সন্তান।
পুলিশ আবার নিতাদের বাড়ি এলো। নিতার বেডরুম সার্চ করে দেখল খাটের তলায় ব্লেড ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে। মোবাইল টাও বালিশের তলায়। পুলিশ ভাবল এই মোবাইলই অনেক তথ্যের সন্ধান দেবে। হলোও তাই। মোবাইলের সূত্র ধরে মিলে গেল এক ছেলের পরিচয়।
ছেলেটি নিতার সাথেই একসাথে পড়ত। তবে প্রেমের সম্পর্ক কিনা তা অনুমান নির্ভর। নিতার বাবা মা আর পুলিশ চলল ছেলেটির বাড়ি। দরজা খোলা দেখেই নিতার বাবা বাড়িতে ঢুকল। ছেলেটির বাবাও বেরিয়ে এলো। অতিথিদের দিকে এগিয়ে এলো। দেখল সঙ্গে পুলিশ। কিন্তু পুলিশ কেন সেবিষয়ে কিছুই জানেনা ছেলেটার পরিবার।
ছেলেটির মা ওপর থেকে কর্তাকে ডাকল,"তাড়াতাড়ি এস, ছেলে কেমন যেন করছে।"ছেলে ততক্ষনে বিষটা গলায় ঢেলেই দিয়েছে। পুলিশ সহ সবাই ছুটল ছেলেটির ঘরে। পুলিশ গিয়ে দেখল মোবাইল এক হাতে, অন্যটিতে বিষের শিশি। মোবাইলটা ঘাটাঘাটি করতেই চোখে পড়ল ব্লু-হোয়েল গেম। তৎক্ষণাৎ ছেলেটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো।
সুনন্দ মন্ডল
কাঠিয়া, মুরারই, বীরভূম।
বন্দুক ও সৌন্দর্য
ইমামুল ইসলাম
বন্দুকের বুলেটের তড়িৎ বর্ষণে,
বুকের ভেতরের কবিতার আনাগোনা,
চোখের লোলুপ চাহনি- সৌন্দর্যের কামার্ত খোঁপায়,
সবই চুবায় - নিকৃষ্ট নলের ডোবায়।
তৈলাক্ত, তেলতেলে, পিচ্ছিল,
বিশেষ বাসনায়, বামুনের হাতের ছোয়ায়;
নৃশংস মেধার প্রলেপ ধাতুর ধাতবে,
এ যে বিরাট বিষফল, শুধুই বিষ তার গতরে।
বৈশ্বিক ব্যবসার পালে অনুকূল ঢেউ,
বিশেষ বাহনে বৈধ-অবৈধ কামের কলতানে,
যোগান আসে - সুন্দরের শরীরে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে,
দ্রুততার ড্রিল মেশিনে।
বিশেষ বাহিনীর বাহুতে,
ঝুলে থাকে কৈফিয়তহীন উচুতে,
সময় হলেই তাক-পাখির নান্দনিক ডানাতে,
শিকারের সংখ্যা লেখা থাকে অটোমেটিক তার রিলেতে।
কৃতিত্বের কসাই, নেশা শুধুই জবাই,
সুন্দরের সচেতন মস্তিষ্কীয় তাল,
বেছে বেছে সাজায় - বিভৎসতার ঝুড়িতে,
কাতুকুতুর গুঁতোয়-অর্থহীন মুলোর খুশিতে।
কৃতিত্বের কলিযুগে, লাল শরাবের নেশায়,
সৌন্দর্যের শালাদের গন্ডায় গন্ডায় গলাধকরণ।
প্রশ্ন জাগে মনে
প্রতিমা পাল
কেমন আছো বসুন্ধরা?
জিজ্ঞেস করেছিলেম একদিন
বলেছিল —ভালো আছি।
কিন্তু বসুন্ধরা কি এখনো ভালো আছে—
প্রশ্ন জাগে মনে।
কি জানি, সে কি এখনো আকাশ দেখে,
এখনো কি দিশাহীন পথে বরিয়ে পড়ে
ঠিক আগের মতো।
প্রশ্ন জাগে মনে—
কেমন আছো বসুন্ধরা?
বলেছিল খুব— খুব ভালো আছি
কিন্তু বসুন্ধরা কি সত্যি খুব— খুব ভালো আছে,
ঠিক তখনকার মতো—
প্রশ্ন জাগে মনে।
সে কি এখনো গাছের ছায়ায় বসে আড্ডা দেয়,
নয়তো অন্য কোথাও
ঠিক সেই পুরানো হারিয়ে যাওয়া দিনের মতো,
প্রশ্ন জাগে মনে।
বসুন্ধরা কেমন আছো—
ছোট্ট প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিল—
ভালো—।
তার মধ্যে কি লুকিয়েছিল তার মনের আলো নাকি
প্রশ্ন জাগে মনে।
"সাড়া দাও হে নাথ"
অনিরুদ্ধ
কোথায় বিশ্বস্বামী?
হের নাকি তুমি দুঃখির দুঃখ কাঙ্গালের রাহাজানি?
এই দেখ চেয়ে কাঁদিছে কেমনে রোগাক্রান্ত বান্দা;
নাই ঔষধি, নাই সম্প্রীতি মরিতেছে ধুঁকে জেন্দা।
তুমি গিরিধারী আছ শুধু বসি আপনার বৈকুন্ঠে
হেথা মরি মোরা দুঃশাসনের গরল লইয়া কণ্ঠে।
জানি আমি প্রভু, এ তো নয় কভু তোমার ক্রোধের অগ্নি।
আমাদের হাতে সৃষ্টি এ প্রভু, আমাদের গড়া অগ্নি।
আর এ-ও জানি আমি জগতের মাঝে তুমি-ই বিঘ্ন-বিনাশ
তাই শঙ্কাহারক, শঙ্কা হরি দুঃখের কর অবসান।
তুমি যদি প্রভু, চোখ না চাও বলো, কোথায় আমরা যাব?
তোমার-ই কাছে আসিব তো প্রভু, আর তোমার -ই করুণা মাগিব।
ওঠ ওঠ প্রভু, যোগ লীলা ভাঙ্গ চলে এসো মোর সাথ
ঐ শঙ্খচক্র দ্বারা করোনারে মার - সাড় দাও হে নাথ।
কুড়িগ্রাম
অনিরুদ্ধ
স্বপ্নে দিন গুনতো
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
খোকা নামের সেই ছেলেটির কেউ কি বলো চিনতো,
স্বপ্ন ছিলো দু'চোখ জুড়ে গুনতো নতুন দিনতো।
মনের ভেতর আগুন ছিলো কেউ কি সেদিন জানতো,
ছোট বড় সবাই সেদিন তাকে নেতা মানতো।
লাল সবুজের আনবে সে দেশ বাঘের মত বলতো,
করবে লড়াই ওদের সাথে সেই সাহসে চলতো।
একাত্তরের সেই মার্চে মনের কথা বললো,
সারা দেশে ঘরে ঘরে তাইতো আগুন জ্বললো।
জাগলো সবাই করলো শপথ আনবে তারা দেশটা,
যাইনি বৃথা বীর বাঙালির তাদের প্রানের চেষ্টা।
পালিয়ে গেলো দস্যুরা সব নতুন স্বদেশ আসলো,
দেশ জুড়ে তাই এই বাঙালি আনন্দে সব ভাসলো।
খোকা নামের সে নেতা কে এবার সবাই জানবে,
দেখলে ছবি শ্রদ্ধা ভরে বুকের ভেতর টানবে।
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর দিলো শেষে রক্ত,
বুকের মাঝে থাকবে অমর আমরা যে তার ভক্ত।
চিত্তরঞ্জন সাহা চিতু
বড় বাজার, চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ
আমপান
দেবনাথ দাস
আমি ঝড়! আমি ঘূর্ণিঝড়!
তোমরা ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকছ,
পছন্দমত!
হারিকেন, টাইফুন, সাইক্লোন, ফণী, নার্গিস!
কত বাহানা!
আগাম দেয় আমার নাম!
বানিয়েছে এসক্যাপ!
এরা বাল্মীকি রামায়ণ থেকে শিখেছে!
দেখ না? আমার জন্ম দুইহাজার বিশ আর,
আর নাম তৈরি - দুই হাজার চার!
উন্নত বিশ্ব এখন! সব কিছুই উন্নত উন্নত!
উন্নত দেশ! উন্নত উষ্ণ বিশ্বায়ন!
কালো ধোঁয়া নির্গমন - বায়ু দুষণ, পানি দুষণ
পরিবেশ দুষণ - এই দেখ!
একটা বাদ গেল- মানুষের মনে দুষণ!
এরা পারে- সৃষ্টির সেরা জীব এরা!
আমার আবির্ভাব - এরাই কারণ!
দেবনাথ দাস
রাজবাটী, রাজবাটী
দিনাজপুর, বাংলাদেশ।
অামাদের গাঁ
ফরিদ আহমদ ফরাজী (সৌদি প্রবাসী)
আমাদের গাঁওখানি কতো সুন্দর
সারি সারি আধপাকা ছোট ছোট ঘর।
মাঠেমাঠে সোনালী ধানের দোলা
কৃষাণির মুখে হাসি, ভরায় গোলা।
রূপ- অপরূপে সাজে পৌষের মাঠ
সাধকের কাঁধে ভাড়া,সারা পথ ঘাট।
আমাদের গাঁওখানি ছবির মতোন
খেটে খাওয়া জনবলে করি যতন।
পূবে আছে কচা নদী তীরে সাদা কাশ
শুশুকেরা ডুব দেয় জলে বসোবাস।
জেলেদের জালে ধরে, ইলিশের ঝাঁক
গোধূলি লগ্নে শুনি শিয়ালের হাঁক।
গাঁয়ে বাসে সরল লোক, সবুজ পরিপাট
বালিপাড়া গাঁয়ে বসে শুক্কুরের হাট।
শীতসকাল ঝরে শিশির টুপটাপ তালে
পূবের কিরণ এসে চিক চিক জ্বালে।
সফেদ চাদর যেন কুয়াশার ভোর
গাঁও-গেরাম ঢেকে রাখে বন্ধ সব দ্বোর।
আমাদের গাঁয় আছে গাছিদের বাস
খেজুরের রস দেবো গাঁয় যদি অাস্
নাড়ার আগুন জ্বেলে দূর করি শীত
গাই জোড়ে জারি সারি হাঁড় কাঁপা গীত।
অাল খোবার,
দাম্মাম,
সৌদি অারব।
প্রতিবন্ধী ফুটবল কোচ
অর্ক রায়হান
তারপর কতো শুক্রবার এলো গেলো! শেষ কবে তুমি আমাকে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছিলে, আমি জানি না। তবে ঠিক জানি যে, আসছে শুক্রবার আমাকে মনে পড়বে। যদি পারো, সেদিন ভোরে উঠে, বাড়ির নিকটবর্তী রাস্তায় দাঁড়িয়ো। দেখবে, কী ভীষণ নির্জন চারপাশ! গুটিকয় লোক ইতিউতি। দুয়েকটি রিক্সা ভ্যান অতর্কিত সা করে ছুটে যাচ্ছে। ফুটপাত ধরে সাবধানে হেঁটো কিছুক্ষণ। ভালো লাগবে। সেদিন নির্ঘাত খুব শীত থাকবে শহরে। শীতে জবুথবু হবে সুদূরের কুনমিং শহরও। তুষারপাত হবে অলিম্পিক ভিলেজে। টিভিতে দেখাবে বিস্তারিত। জুম্মার নামাজের সময় বাইরে থেকো না। নেহাত দরকার হলে, পর্দা ক’রো। বিকেলে খেলার মাঠে যেয়ো। শুক্রবার সাধরণত দু’দলের মধ্যে ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ভাগ্য প্রসন্ন হলে, পেতে পারো। মাঠের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে উপভোগ ক’রো খেলা। আর ভিড়ের মধ্যে এদিকওদিক তাকালেই চোখে পড়বে, সেই প্রতিবন্ধী ফুটবল কোচকে। ভদ্রলোকের একটি হাত নেই। দেখবে, গভীর মনোযোগ দিয়ে খেলা দেখছে। অনুমেয় যে, নিজেও একসময় ফুটবলার ছিলো। ওই মাঠেই প্রতিদিন কিশোর ফুটবলারদের অনুশীলন করায়। ভীষণ পরিশ্রমী মনুষ। বল নিয়ে ষাঁড়ের বেগে ছুটতে পারে। আরও নানান কসরত দেখেছি। খুব জানতে ইচ্ছে করে, হাতটা কাটা পড়লো কি ক’রে! হয়তো কোনওদিন জিজ্ঞেসও করবো। যাই হোক, বিকেলে খেলার মাঠে যেতে ভুলো না। দারুণ রোমাঞ্চকর ফুটবল ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরবে। সন্ধ্যা হয়ে আসবে। সাবধানে ফুটপাত ধরে হেঁটো। তারপর রাতের খবরে দেখে নিয়ো, কী ভীষণ শীতকাল পৃথিবীতে। কী ভীষণ শীতকাল!
অর্ক রায়হান
প্রযত্নে- কেয়া
৫৪/১ নুরপুর, আলমনগর, রংপুর
No comments:
Post a Comment