করোনা যুদ্ধে দেশের প্রথম শহীদ চিকিৎসক ডাঃ মঈন উদ্দীন
মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন
ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক গরিবের ডাক্তার খ্যাত সুপরিচিত ডা. মঈন উদ্দীন (রহ)। ব্যক্তিগত ভাবে তার সাথে আমার কোন পরিচয় নেই, এমনকি কোনদিন দেখাও হয়নি। চলমান মহামারী করোনা ভাইরাসে সিলেটের প্রথম আক্রান্ত আক্রান্ত হিসেবেই অনেকের মতো আমিও তার সম্পর্কে সোস্যাইল ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে জানার সুযোগ হয়েছে। ডা. মঈন উদ্দীন (রহ) একদিনে তৈরী হয়নি। তাঁকে এই পর্যন্ত আসতে অবশ্যই অনেক দিন-রাত কষ্ট করতে হয়েছে। গরীবের ডাক্তার খ্যাত এই চিকিৎসক অন্যান্য চিকিৎসকের মতো নয়, সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি তাঁর পুরোটা জীবন মানবসেবায় উৎসর্গ করেন। যেমনি ঢাল কিংবা তলোয়ার বিহীন যুদ্ধে নামলে যে পরিণতি হবে। তেমনি চলমান এই সংকটে চিকিৎসা সামগ্রী ছাড়া চিকিৎসা দিলে নিশ্চিত করোনা আক্রান্ত আশঙ্কা হওয়ার সেটা জানার পরও গরীবের ডাক্তার খ্যাত ডা. মঈন উদ্দীন চিকিৎসা সেবা দিয়েছিলেন। চলমান প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে যখন কিছু স্বার্থপর চিকিৎসক ঘরে থাকার ঘোষণা দেয় তখন গরীবের ডাক্তার খ্যাত এই চিকিৎসক বরাবরের মত মানবসেবায় নিয়োজিত ছিলেন। মানবতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের ক্রান্তিলগ্নে এই চিকিৎসক নিজেকে গুটিয়ে না রেখে রোগীর সেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে গিয়ে করোনা আক্রান্ত হন। কিন্তু এই রাষ্ট্র থেকে তিনি আইসিউ অ্যাম্বুলেন্স কিংবা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সুযোগ সুবিধার আবেদন করার পরও পাননি। এখন প্রশ্ন তুলতেই পারি তিনি কেন সেই সুযোগ সুবিধা পান নি? তিনি কি কোন রাজনীতির অপহিংসার শিকার? যদি রাজনীতির অপহিংসার শিকার হন! তাহলে তিনি কোন ধারা রাজনীতি করতেন?? তিনি যে ধারা রাজনীতি করুক না কেন জাতি,ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এমন কি তাঁর বিপক্ষ ধারা রাজনীতি সমর্থক গোষ্ঠী সহ সবাইকে আমরণ চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন। গরীবের ডাক্তার খ্যাত এই চিকিৎসক আজ যদি চেতনার ফেরিওয়ালাদের কেউ একজন হতেন তাহলে আইসিউ অ্যাম্বুলেন্স কিংবা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স তাঁর কপালে জুটতো। এমন কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপও।
তিনি চলমান মহামারী করোনা যুদ্ধে দেশের প্রথম শহীদ চিকিৎসক। হাদীসের ভাষায়, মহামারিতে মারা যাওয়া ব্যক্তিও শহীদ। হাদীস শরীফে আছে, আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত শহীদ—মহামারিতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে শহীদ হলো। (সহীহ বুখারি, হাদিস : ২৮২৯)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, মহামারিতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (সহীহ বুখারি, হাদিস : ২৮৩০)
ডা. মঈন উদ্দীন (রহ) রাজনীতি বিভেদ ভুলে তিনি সবাইকে নিয়ে এক কাতারে এসে দাঁড়াতেন। তিনি নিজেকে একজন মানবতাবাদী মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। একজন দায়িত্বশীল ও জনদরদী চিকিৎসক হিসেবে তিনি অল্প সময়ে সিলেটবাসীর অত্যন্ত আপনজনে পরিণত হয়েছিলেন। তাই তো এই বীরের মৃত্যুর জন্য আওয়ামীলীগ-বিএনপি, ডান-বাম সকল ধারা রাজনীতি মতাদর্শ সহ সকল শ্রেণীর মানুষ কেঁদে ছিলেন।তিনি দেশের মানুষের হৃদয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন।তিনি চিকিৎসা সেবার জন্য বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম ডাক্তারদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁকে শাহাদাতের মর্যাদা দিয়ে জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান হিসেবে কবুল করুক। আমিন।
লেখক: কলামিস্ট।
লেখা প্রেরক :
মোহাম্মদ ইমাদ উদ্দীন
C/O,মাওলানা মন্জিল, চন্দনাইশ পৌরসভা, ওয়ার্ড নং ০২, পো: অফিস পূর্ব জোয়ারা (৪৩৮০), চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।
No comments:
Post a Comment