Thursday, May 23, 2019

Mending Wall BY ROBERT FROST in bangla. ম্যান্ডিং ওয়াল রবার্ট ফ্রস্ট । Mending Wall বাংলা অনুবাদ। Mending Wall bangla onubad


ম্যান্ডিং ওয়াল

রবার্ট ফ্রস্ট 



এমন কিছু আছে যা দেয়াল পছন্দ করে না,
এটি এর নিচে হিমশীতল-স্থল-স্ফীতিকে প্রেরণ করে,
এবং রোদে উপরের পাথর ছড়িয়ে দেয়;
এবং ফাঁক তৈরি করে এমনকি দু'জন সমুদ্রের নিকটে যেতে পারে।
শিকারিদের কাজ অন্য জিনিস:
আমি তাদের পিছনে এসে মেরামত করেছি
যেখানে তারা পাথরের উপরে একটিও পাথর রাখেনি,
তবে তারা খরগোশকে লুকিয়ে রাখত,
ইয়েলপিং কুকুরকে খুশি করার জন্য। ফাঁকগুলি আমি বলতে চাইছি,
কেউ এগুলি তাদের তৈরি বা শুনে দেখে নি,
তবে বসন্তের সংস্কারের সময় আমরা তাদের সেখানে পাই।
আমি আমার প্রতিবেশীকে পাহাড়ের ওপারে জানাই;
এবং একদিন আমরা লাইনটি হাঁটার জন্য দেখা করি
এবং আমাদের মাঝে আবার প্রাচীর সেট করুন।
আমরা যেতে যেতে আমাদের মাঝে প্রাচীর রাখি।
প্রতিটি যে পাথর পড়েছে তাদের কাছে।
এবং কিছু রুটি এবং কিছু তাই প্রায় বল
তাদের ভারসাম্য বজায় রাখতে আমাদের একটি স্পেল ব্যবহার করতে হবে:
‘আমাদের পেছন ফিরে না আসা পর্যন্ত আপনি যেখানেই থাকুন!’
আমরা আমাদের আঙ্গুলগুলি তাদের পরিচালনা করার সাথে মোটামুটিভাবে পরিধান করি।
ওহ, অন্য ধরণের বাইরের গেম,
একদিকে। এটা আরও কিছু আসে:
সেখানে যেখানে আমাদের প্রাচীর প্রয়োজন নেই:
তিনি সব পাইন এবং আমি আপেল বাগান।
আমার আপেল গাছগুলি কখনই পার হবে না
এবং তার পাইনের নীচে শঙ্কু খাও, আমি তাকে বলি।
তিনি কেবল বলেছেন, ‘ভালো বেড়া ভাল প্রতিবেশী করে তোলে।’
বসন্ত আমার মধ্যে দুষ্টামি, এবং আমি অবাক হই
আমি যদি তার মাথায় ধারণা রাখতে পারি:
‘কেন তারা ভালো প্রতিবেশী করে? তাই না
গরু আছে কোথায়? তবে এখানে কোনও গরু নেই।
আমি একটি প্রাচীর নির্মাণ করার আগে আমি জানতে চাই
আমি যা প্রাচীর করছিলাম বা দেয়াল করছিলাম,
এবং যার কাছে আমি অপরাধ দিতে চাই।
এমন কিছু আছে যা দেয়াল পছন্দ করে না,
এটি এটিকে চায় ’'আমি তাকে' এলভেস 'বলতে পারি,
তবে এটি সঠিকভাবে নয়, বরং আমি চাই
তিনি নিজের জন্যই বলেছিলেন। আমি ওকে সেখানে দেখছি
শীর্ষে দৃ firm়ভাবে আঁকড়ে ধরে একটি পাথর এনে দেওয়া
প্রতিটি হাতে, পুরানো পাথরের মতো বর্বর সজ্জিত।
আমার কাছে যেমন মনে হয় সে অন্ধকারে চলে আসে,
কেবল কাঠের নয় এবং গাছের ছায়া নয়।
সে তার বাবার পিছনে পিছনে যাবে না,
এবং এটি এত ভাল করে চিন্তা করা পছন্দ করে
তিনি আবার বলেছেন, ‘ভালো বেড়া ভাল প্রতিবেশী করে তোলে।’


Mending Wall
BY ROBERT FROST


Something there is that doesn't love a wall,
That sends the frozen-ground-swell under it,
And spills the upper boulders in the sun;
And makes gaps even two can pass abreast.
The work of hunters is another thing:
I have come after them and made repair
Where they have left not one stone on a stone,
But they would have the rabbit out of hiding,
To please the yelping dogs. The gaps I mean,
No one has seen them made or heard them made,
But at spring mending-time we find them there.
I let my neighbor know beyond the hill;
And on a day we meet to walk the line
And set the wall between us once again.
We keep the wall between us as we go.
To each the boulders that have fallen to each.
And some are loaves and some so nearly balls
We have to use a spell to make them balance:
‘Stay where you are until our backs are turned!’
We wear our fingers rough with handling them.
Oh, just another kind of out-door game,
One on a side. It comes to little more:
There where it is we do not need the wall:
He is all pine and I am apple orchard.
My apple trees will never get across
And eat the cones under his pines, I tell him.
He only says, ‘Good fences make good neighbors.’
Spring is the mischief in me, and I wonder
If I could put a notion in his head:
‘Why do they make good neighbors? Isn't it
Where there are cows? But here there are no cows.
Before I built a wall I'd ask to know
What I was walling in or walling out,
And to whom I was like to give offense.
Something there is that doesn't love a wall,
That wants it down.’ I could say ‘Elves’ to him,
But it's not elves exactly, and I'd rather
He said it for himself. I see him there
Bringing a stone grasped firmly by the top
In each hand, like an old-stone savage armed.
He moves in darkness as it seems to me,
Not of woods only and the shade of trees.
He will not go behind his father's saying,
And he likes having thought of it so well
He says again, ‘Good fences make good neighbors.’


🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄🎄




বিষয় :  পৌষ পার্বণ
বিভাগ : গল্প
গল্পের নাম : ক্ষীরপুলি
লেখক : কবিরুল হোসেন মল্লিক  (রঞ্জিত মল্লিক)
  তারিখ :    17/01/19


  কলেজের নবীন বরণের দিন থেকেই বিদিশা আর দিগন্তের মধ্যে রচিত হয়েছিল এক বৈরীর প্রাচীর। সেই থেকে দুজনের মুখ দেখা দেখি বন্ধ । হয়ত খুব প্রয়োজন হলে বছরে অল্প বিস্তর হাই হ্যালো । শহরের নামী শিল্পপতি বাবা আর অধ্যাপিকা মায়ের একমাত্র কন্যা দিশার অহংকারও ছিল গগনচুম্বী। দামী গাড়ি , নিপুন তুলির টানে সাজানো ফ্ল্যাট,   বিত্ত বৈভবে নিমজ্জিত দিশা সেরকম কাউকে বিশেষ পাত্তা দিত না।

      কলেজ এর ইতি টানার পর আমাদের সকলের আবার দেখা এক নাটকের দলে -  "ছন্নছাড়া"। ছন্নছাড়া দলকে টিকিয়ে রেখেছেন বিদিশার বাবা।  সিংহভাগ অর্থ সাহায্য আসে বিদিশার বাবার ঘর থেকে।নাটকের দলের মূল কাণ্ডারী বিদেশদা হলেও চালিকাশক্তির মূল password কিন্তু দিশার হাতে।দলটি বছরে বেশ অনেক কটাই শো করে। বেশ কিছু মূল্যবান পুরষ্কার ও জুটেছে। এবারের শো বোলপুর , শান্তিনিকেতনে - রাঙা মাটির দেশে।
      
  পৌষের মিঠে রোদ বিরাট কোহলির মতন বেশ ভালই ব্যাটিং দাপট দেখিয়ে আর দু এক দিন পরে চলে যাবে। লাজুক রোদের ঘোমটা পড়ে পৌষ মেলা ক দিন আগেই শেষ তুলির ছোপ মেরে চলে গেছে। বিদেশদা সকাল থেকেই ব্যাস্ত তার টিম কে নিয়ে। শেষ সময়ে তুলির টান দিচ্ছেন। সকলেই যাবার জন্য প্রস্তত।দিগন্তের দেখা নেই।বিদিশার চোখ জ্বলজে রাগে।
    " দেশ দা দিগন্তকে কি নেওয়া খুবই জরুরী ", কথা গুলো বলেই দিশা রাগে গজ গজ করতে করতে  গাড়িতে উঠল।
       "না রে তা হয় না। ছন্নছাড়া একটা পরিবারের মতন, এখানে কাউকে একা ফেলে......"
    বিদেশদার কথা শেষ না হতেই দিগন্ত স্কুলে হোম টাস্ক করে না আসা ছেলের মত মাথা নিচু করে গাড়িতে উঠল।
    আমাদের গাড়ি যখন কলকাতা ছাড়ল, তখন হাড় কাঁপানো শীত ভালই T 20 খেলছে।গোটা গাড়ি গানের আবেগে ভাসছে। ইন্তাজ গিটার টা একবার ' টং ' করতেই আরো বেশী চাঙ্গা হলাম। দিশা গুনগুন করে গাইছে। দিশ (দিশা/বিদিশা) কে আজকে দারুন লাগছে। নীল শালোয়ার, বহুদিনের যত্নে লালিত সোনালী চুলের ঝালর, নোখে বাহারী নেল পালিশের এর বসন্ত, ফাটা ঠোঁটের আঁকাবাঁকা জ্যামিতি।দিগন্ত গুম মেরে আছে। দিশ গান করলে ও যেন কোথায় হারিয়ে যায়।
    আমরা যখন শান্তিনিকেতনের মাটি টাচ করলাম তখন সবুজের মখমলে শিশিরের চন্দন, নিকানো উঠোনে সোনারোদের দস্যিপনা। চারিদিকে পিঠেপুলির গন্ধ। রাত পোহালেই পৌষ পার্বণ। গ্রামের মেয়ে ,  বৌ রা খুব সুন্দরভাবে ছন্দে দুলে দুলে নেমে পড়েছে চাল গুড়োঁ করার কাজে। আকাশে   বাতাসে শিল নোড়া ঠোকাঠুকির দুরন্ত শব্দ এক আলাদা আবেগে মায়াবী  পরিবেশ তৈরী করেছে। আলাস্কার বরফের চাদরে মোড়া লেকের মত খেজুরের গুড় জমে রয়েছে পাত্রে পাত্রে। সব বাড়িতেই পাটালী গুড়ের  কম বেশী ছোট বড় চাঁই। ছেলে বুড়ো খোকা সবাই মেতে উঠেছে আনন্দে।  
  নেমে গিয়েই নিজেদের দায়িত্বটা বুঝে নিলাম।বিদেশদার কড়া বার্তা ," এবারের শো কিন্তু বিশাল হাই প্রোফাইল"। চারিদিকে যুদ্ধকালীন মেজাজ। লাল মাটির ধুলোই ভরে উঠল শাড়ি আর পাঞ্জাবীর রঙ। এবার দিশারও solo performance রয়েছে। ও খুবই টেন্সড।

     সব কিছুই ঠিক ছিল , বিনা মেঘের বজ্রপাতের মতন সংবাদটা যখন পেলাম তখন শো শুরু হতে আর কুড়ি মিনিট বাকি। আমাদের মেল  lead singer আসতে পারবে না, ওর ছেলে হসপিটালে ভর্তি।আসিফই শেষে একটা উপায় বাতলে দিল। কিন্ত ভয় ছিল শুধু দিশ কে নিয়ে। দেশদাই বলল দিশ কে জানানো হবে পরে। আসিফের টোটকাটা যখন ঠিক সময়ে কাজে লাগল তখন ঘড়িতে পুরো সন্ধ্যা সাতটা।  গীতাঞ্জলী অডিটোরিয়াম ভিড়ে থিক থিক করছে। বিদিশা স্টেজের দিকে পা মেলল। ওর বেশ কিছু নাচ আছে রবীন্দ্র সঙ্গীতের তালে , শেষে নৃত্য নাট্য।

    পর্দা শিথিল হতেই একটি ছেলে দেখলাম গান করার জন্য খুব  কাশতে কাশতে স্টেজের পিছনের বাঁ দিকে চলে গেল। দিশের হাতে কডলেশ।count down শুরু
    .........three two one
    গোটা হল মোহিত হয়ে উঠল এক সুরের জাদুতে। সঙ্গে বিদিশার অসাধারণ নৃত্য।
   " পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে চলে আয় আয় আয়
      ডালা যে তোর ভরেছে...........
             হায় হায় "।
 কবিগুরুর এই অমর শব্দ জাদুর মায়া অডিটোরিয়াম ছাড়িয়ে বহু দূর পাড়ি দিল। পৌষ পার্বণের আবেগ কে করল আরো বেশী মোহময়। কাঠের উনুনে চড়ানো খাঁটি দুধ মিশ্রিত চালের হাঁড়িতে পাটালী গুড়ের ছোটো ছোটো টিলা গানের তালে তালে নৃত্য নাট্য শুরু করেছে।  
    রবি ঠাকুর ঠিকই বলেছেন, 'ডালা ভরেছে'। শো তে অনেকের ডালা ভরবে , দিশা, বিদেশদা , দিশার অর্থ পিচাশ বাবা। হলের উপচে পড়া ভিড়, টিকিট বিক্রি সব কিছুই মুনাফার পারদ কে উর্ধগামী করবে।  শুধু একজনের নয়। দিগন্ত। আমি দিগন্তের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিভার বিচ্ছুরণ দেখছি। কি সুন্দর গাইছে। ও যে ভাল গান গায় সেটা আমরা তিন জন জানতাম।  শস্তা ধার করা পাঞ্জাবীটা ঘামে ভিজে গেছে। জমা ঘাম গুলো হলুদ সুতোর পাঞ্জাবীতে  একটা একটা  করে  ম্যাপ একে চলেছে -  কোনোটা না খেতে পাওয়া বুরুুণ্ডি, কোনোটা ইয়েমেনের অপুষ্টি, কোনোটা ভিজে জলের দুর্ভিক্ষ, কোনোটা আবার আরব বেদুইনদের খোলা আকাশের নীচে নির্মম লড়াই। 
     আমি দেখছি আর অবাক হয়। চাপ দাড়ির গালের নিকানো আঙিনার নীচে লুকানো ক্লান্ত ঠোঁটের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে ভিসুভিয়াসের লাভা। লাল পাটালীও গ্রামের মেয়েদের নিপুণ জাদুতে দুধের সাথে মিশে ছোট ছোট লাভা স্রোত তৈরী করছে। দিগন্তর জমাট বাঁধা দুঃখগুলো এই পৌষ পার্বণে ঝরাপাতার মতন খসে খসে পড়ছে। দিদির বিয়ে ভাঙ্গা, বোনের SSC প্যানেল থেকে নাম বাতিল, দাদার বাইক এক্সিডেন্টে প্রচুর টাকার দেনা, বাবার বন্ধ জুটমিল , মায়ের বাতের ব্যথার যণ্ত্রণার ফিক্সড ডিপোজিট। অবলম্বণ বলতে কিছু টিউশন, আর বাড়ি বাড়ি পেপার দেওয়া।
    গোটা হল করতালিতে ফেটে পড়ল। বিদিশাও ভীষণ ভাল আজ পারফর্ম করেছে। ওর wh app এর সবুজ গালিচায় ফুল ফুটতে শুরু করেছে sms এর। বিদেশদা একটা সিগারেট ধরাল। সাদা রিং এর ধোঁয়া গুলো গ্রাম মাঠ ছাড়িয়ে বহু দূরে যেন দিগন্তের ঝুরঝুরে টিনের চালের বাড়িতে কড়া নাড়তে গেল। একটু দম নিয়ে দিগন্ত আবার শুরু করল - 
    " গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গা মাটির... 
     ...............ভুলাই রে
    সে যে .........  করে
     .............." ।
    বিদেশদা দরাজ কণ্ঠে ঘোষণা করল , পরবর্তী অনুষ্ঠান ' চণ্ডালিকা '। আমরা সবাই ভীষণ একসাইটেড। খুব টাফ নৃত্য নাট্য। বনশ্রী বলল, " বিদেশ দা ও পারবে তো?"
    অল্প একটু ব্রেক নিয়ে শুরু হল বহু কাঙ্খিত dance drama।বিদিশা জানতেও পারল না আসল কারিগর কে।ভিসুভিয়াস আবার জেগে উঠল স্বমহিমায়। এবার লাভা স্রোত আরো দামাল। পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে ছন্নছাড়ার সমস্ত ইউনিট দরদর করে ঘামছি। গোটা অডিটোরিয়াম একেবারে pindrop silence। পুরুলিয়ার মাওবাদী অধ্যুষিত বান্দোয়ান ব্লকের অখ্যাত  এক গ্রাম থেকে নিংড়ে উঠে আসা এক তরুণ তুর্কী সমস্ত দর্শক কে বিমোহিত করেছে।
    
    "............................
    ...........................
     ছুঁয়োনা ছুঁয়োনা  .......ও যে চণ্ডালিকা. "
    .........
    .........
    ." জল দাও , জল দাও ......"
    
    আমাদের অনুষ্ঠান শেষ হতেই আমরা গেস্ট হাউসে ফিরে গেলাম। দিশার ইচ্ছা সিঙ্গারের সাথে মিট করবে। আমিই বললাম উনি এখন বকুলতলায়। দিগন্ত দাড়িয়ে সুখটান দিচ্ছিল। দীর্ঘ 11 বছর পরে একটা শীতল অথচ দাম্ভিক হাত দিগন্তের হালকা  ঘামে সিক্ত শরীর স্পর্শ করল। বেশ কিছুক্ষণের নীরবতা। যেন টেলি ফিল্ম দেখছি। দিগন্ত পকেট থেকে একটা ঠুনকো টিফিন বক্স বের করে দিশার হাতে দিল,
  " মা পাঠিয়েছে , তোমার জন্য"।
   " কাকিমা ভাল আছে? গোপা দি? শীতল দা, কাকু? "
" হ্যা "
   দিগন্তের চোখে পৌষের চুয়ে পড়া খেজুর রস। দিশার ও চোখে বিন্দু বিন্দু বাষ্প।

"তোমার বোন তুলির স্কুলের চাকরিটা হল? "
" না।" 
 " আমি চলি "
" দিগন্ত! দাড়ও!" দিগন্ত!
 দিগন্ত চলে যেতেই ওর পকেট থেকে খসে পড়া একটা কাগজ সমস্ত সমীকরণ বদলে দিল। নেল পালিশ শোভিত নরম ম্যানিকিওরড্ আঙুল ডুবল টিফিন বক্সের ক্ষীর পুলিতে।  কি অপৃর্ব স্বাদ! পৌষের অহংকার যেন উপচে পড়ছে বাতের ব্যথায় কাবু জীর্ণ আঙুলের মায়াবী জাদুতে। রোগাটে চাঁদের আলোয় ক্ষীরপুলির স্বাদ নিতে নিতে দিশা যখন দিগন্তের পকেট থেকে পড়ে যাওয়া প্রেসক্রিপশনটায় চোখ বোলাল,  কাগজের ভিতর থেকে বেরলো একটা ছেলের জীবন্ত অথচ সমাধিস্থ কংকাল।বেশ বড় করেই লেখা,  
'Chronic Lukaemia '।
  দিগন্ত! 
 সকল মান অভিমানের ও পৌষ পার্বণ  চিরদিনের মত বিদায় নিল।

  আমাদের নাটকের দলের এবারের সমস্ত রকম performance ছিল thunderous। বেশ কিছু নামী খবরের কাগজে স্থান পেল আমাদের নজরকারা অনুষ্ঠান।  তবে একটা নতুন script তৈরী হল। যা আমাদের কিছু মানুষের কল্পনার বাইরে। পৌষ পার্বণের ক্ষীরপুলি নিয়ে আসল দুটো সজীব  হৃদয়ে প্রেমের দাবানল। সমস্ত অভিমান বিসর্জন দিয়ে দিশা দিগন্তকে সারা জীবনের মতন আঁকড়ে ধরল। শিল্পপতি বাবার উন্নাসিকতা আদুরে মেয়ে দিশার  ভালবাসা কে স্বীকৃতি দিলেও , চুয়ে পড়া খেজুর রস আমাদের সকলের চোখে পাকাপাকি বাসা বাঁধল। চোখের কোণে কান্নার জল ক্ষীর হয়ে জমাট বাঁধল।

 দিগন্তের এই ভয়ানক রোগের কথা আমি একমাত্র জানতাম। শেষবারের মত ভিসুভিয়াসের লাভা আমরা দেখলাম Apollo Hospital এর তিন তলার ছ নম্বর ঘরে। কোনো sound system নেই, মিউজিক  নেই, তবে উপচে পড়া কান্নায় ডোবা প্রচুর নীরব শ্রোতা আছে। শুধু একজন আনমনে চোখের জলের বেহালা বাজিয়ে চলেছেন -  চিরকালের অভিমানী, অহংকারী , বিদূষী, নৃত্য পটিয়সী গল্ফ গ্রীনের - বিদিশা মিত্র। আসিফের কাঁধে ভর করে আমি যখন দিগন্তকে শেষবার দেখি ওর মুখ দিয়ে সত্যি করে লাভা বেরোচ্ছে - লাল লাল লাভা। মনে পড়ল সেই ভুবন ভোলানো গান 
" গ্রাম ছাড়া ঐ রাঙ্গা........
............... "
ওর পাজামা রক্তের লাল মাটির পথ তৈরী করল।

  দিগন্ত চির জীবনের মত  চলে যাবার পর আমাদের নাটকের দল শুকিয়ে গেল। আমরা রিয়েলি ছন্নছাড়া হয়ে গেলাম। দিগন্তের অপ্রকাশিত বহু কবিতা আমি বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় পাঠানোর জন্য তোড়জোড় শুরু করলাম। দিশাও এই ব্যাপারে অনেক হেল্প করল। কিন্তু কোন ভাল উত্তর পাওয়া গেল না।
  এরপর বহু বছর কেটে গেল। বহুদিন কোনো যোগাযোগ নেই কারুর সাথে। আমাদের শরীরে , চুলে বার্ধক্য থাবা বসাল।
  বছর ঘুরে পৌষ মাস আবার নতুন করে উঁকি মারল। আমার মেয়ে বায়না করল পৌষ মেলায় যাবে।অগত্যা দুই বুড়ো বুড়ি মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। 32 বছর পরে সেই লাল মাটির মেঠো স্বাদ। চোখে জলের বিন্দু বিন্দু স্পন্দন। পুরানো স্মৃতির ঝাঁপি আবার টাটকা হতে শুরু করল। স্টল গুলো ঘুরে ঘুরে দেখছি। একটা স্টলের সামনে উপচে  পড়া ভিড় দেখে এগিয়ে গেলাম।স্টলের নাম " ক্ষীরপুলি "। বেশ কিছু কবিতার বই আর ম্যাগাজীন এ ভর্তি। তার মধ্যে একটা পত্রিকা - ' ক্ষীরপুলি ' উজ্জ্বলডাবে প্রতীয়মান। সেখানে জ্বল জ্বল করছে সম্পাদকের নাম - বিদিশা মিত্র , গল্ফ গ্রীন , কলকাতা। স্টলে বসে দিগন্তের একটার পর একটা কবিতা পড়ছি যার কিছু চেনা কিছু অজানা; আর ভিতরে ভিতরে ভিসুভিয়াসের উত্তাপ উপলব্ধি করছি। 

  বিদিশাকে পাওয়া গেল অনেক পরে।মাথার চুলে সাদা রেখার ছোপ ছোপ সরলরেখা, সিঁথি লাল বসন্তহীন।পরম মমতায় দিগন্তের ছবি মালার আদরে মুড়ে দিচ্ছে। ছবির নীচে নিপুণ যত্নে শোভা পাচ্ছে ছোট একটা টিফিন বক্স - যা দুটি চির পিপাসিত কোমল হৃদয়ের পৌষ পার্বণের সোহাগে ডোবা ভালবাসার আজও স্বাক্ষ্য বহন করে চলেছে।সন্ধ্যা নামতেই একটা গান আমার দু চোখের কোণে শ্রাবণধারা নামাল , যে গান আমার বহুকালের চেনা , আমাদের বেঁচে থাকার রসদ - 

 " পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে

     ................     আয় "

No comments: