Monday, November 7, 2022

শাবলু শাহাবউদ্দিন

 পানি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ ?



পানির অপর নাম জীবন, সেই জীবনের সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের সাধারণ মানুষ। পানির সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর আকারে ধারণ করেছে বাংলাদেশের এই উত্তরবঙ্গে। উত্তরবঙ্গের কোনো কোনিা গ্রামে শতকরা অর্ধেক টিউবওয়েল দিয়ে পানি উঠছে না। সরেজমিন দেখা গেছে, যেসব এলাকায় জলাশয় কিংবা পুকুর সংখ্যা যত কম, সেসব এলাকায় পানির সংকট তত তীব্র থেকে তীব্রতর আকারে ধারণ করেছে। বিশেষ করে বিল কিংবা চর এলাকায় বড় বড় পুকুর এবং জলাশয় খুব একটা দেখা যায় না, সেসব এলাকায় এখন পানির সংকট সবচেয়ে বেশি। বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকায় প্রচুর পানি থাকলেও, শুকনো মৌসুমে এসে সৃষ্টি হয় আহাকার। কারণ ওই একটাই পানি সংরক্ষণের জন্য কোনো পুকুর কিংবা জলাশয় নেই এসব এলাকায়।কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে ভূগর্ভের পানি নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ প্রকল্প পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে; ফলে শত শত বিঘা জমির ধান এই শুকনো মৌসুমে এসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে দেখা দেবে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের মানুষের চরম খাদ্য সংকট।

আজ থেকে ১০ বছর আগেও এমন পানির সংকট দেখা যায়নি বলে দাবি করেছে অনেক এলাকার মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে এই শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে কৃষিকাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেক প্রবীণ কৃষক। পানির অভাবজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক হারে বৃদ্ধি পাবে; এমনকি কোনো এক সময় এই এলাকা অর্ধ-মরুভূমিতে রূপান্তরিত হবে বলে দাবি অনেকের। পানির সংকটে কৃষিকাজসহ গবাদিপশু পালন এবং গৃহস্থালির সব কাজ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি উত্তরবঙ্গের এসব এলাকার মানুষের। পানির এই তীব্র সংকট থেকে তারা মুক্তি চায়। কিন্তু মুক্তি দেবে কে?

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা, তিস্তা, করতোয়া, মহানন্দা, পদ্মা, বড়াল, ইছামতী, ইরাবতি, আত্রাই, ধরলা, বাঙ্গালী, নাগর ইত্যাদি নদ ও নদী। পদ্মা এবং যমুনা নদী ব্যতীত অধিকাংশ নদীতে পানি নেই। পানি না থাকার কারণ হলো উত্তরে বাঁধ নির্মাণ এবং নদীর গভীরতা কমে যাওয়া। বর্ষা মৌসুমে পলি জমে নদীর গভীরতা কমে গেছে, এখন ওইসব নদীর গভীরতা বৃদ্ধি করা বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

ভূগর্ভস্থ পানি সংকটের অনেকগুলো কারণের মধ্যে প্রধান কারণ হলো নদী-নালায় পানি না থাকা, পলি জমে নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, অসচেতনভাবে পুকুর এবং জলাশয় ভরাট, ভূগর্ভের পানির অপচয়, নদী-নালা দখল করে ভরাট, ইউক্যালিপটাস বৃক্ষ অধিক হারে রোপণ, জনসচেতনতা কমে যাওয়া ইত্যাদি।

শুকনো মৌসুমে ভূগর্ভের পানির গভীরতা নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক টিউবওয়েল আর্সেনিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। পানির গভীরতা যেসব এলাকায় যত কমে যাচ্ছে, সেসব এলাকায় এই আর্সেনিক সমস্যা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ যে সব এলাকায় আর্সেনিক আছে সেসব এলাকার ভূগর্ভের পানির ব্যবহার তত কম, ফলে অন্য এলাকার পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় এই আর্সেনিক এলাকার পানি ওই এলাকায় ভূগর্ভে স্রোতের সৃষ্টি করছে, ফলে আর্সেনিকযুক্ত পানি ভূগর্ভে ছড়িয়ে যাচ্ছে নানা দিকে। ভবিষ্যতে এটা একটা চরম সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে বলে মনে করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

ভূগর্ভস্থ পানি সংকট মোকাবিলায় সরকারকে প্রস্তুত হতে হবে। সব ধরনের পুকুর এবং জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হবে। নদী-নালার গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারি সব খাস জমিতে নতুন নতুন পুকুর এবং জলাশয় কাটতে হবে। সব ধরনের রাস্তার পাশ দিয়ে পানি প্রবাহের জন্য নালা তৈরি করতে হবে, যাতে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় এবং শুকনো মৌসুমে খুব সহজে পানি পাওয়া যায়। এখনই সময়, পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে; নতুবা আগামী ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ভূগর্ভের পানির সংকট কী হতে পারে তা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কারও জানার থাকবে না। সরকারকে বলব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভূগর্ভস্থ পানির সংকট নিরসনে পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করুন।

পানি

  ভূগর্ভস্থ পানি এবং আমাদের ভবিষ্যৎ

শাবলু শাহাবউদ্দিন

কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে ভূগর্ভের পানি নিচে নেমে যাওয়ায় সেচ প্রকল্প পর্যন্ত বন্ধ হয়ে গেছে; ফলে শত শত বিঘা জমির ধান এই শুকনো মৌসুমে এসে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভবিষ্যতে দেখা দেবে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের মানুষের চরম খাদ্য সংকট।

আজ থেকে ১০ বছর আগেও এমন পানির সংকট দেখা যায়নি বলে দাবি করেছে অনেক এলাকার মানুষ। এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে এই শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গে কৃষিকাজ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেক প্রবীণ কৃষক। পানির অভাবজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব অনেক হারে বৃদ্ধি পাবে; এমনকি কোনো এক সময় এই এলাকা অর্ধ-মরুভূমিতে রূপান্তরিত হবে বলে দাবি অনেকের। পানির সংকটে কৃষিকাজসহ গবাদিপশু পালন এবং গৃহস্থালির সব কাজ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি উত্তরবঙ্গের এসব এলাকার মানুষের। পানির এই তীব্র সংকট থেকে তারা মুক্তি চায়। কিন্তু মুক্তি দেবে কে?

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ দিয়ে বয়ে গেছে যমুনা, তিস্তা, করতোয়া, মহানন্দা, পদ্মা, বড়াল, ইছামতী, ইরাবতি, আত্রাই, ধরলা, বাঙ্গালী, নাগর ইত্যাদি নদ ও নদী। পদ্মা এবং যমুনা নদী ব্যতীত অধিকাংশ নদীতে পানি নেই। পানি না থাকার কারণ হলো উত্তরে বাঁধ নির্মাণ এবং নদীর গভীরতা কমে যাওয়া। বর্ষা মৌসুমে পলি জমে নদীর গভীরতা কমে গেছে, এখন ওইসব নদীর গভীরতা বৃদ্ধি করা বাংলাদেশ সরকারের একমাত্র দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

ভূগর্ভস্থ পানি সংকটের অনেকগুলো কারণের মধ্যে প্রধান কারণ হলো নদী-নালায় পানি না থাকা, পলি জমে নদীর গভীরতা কমে যাওয়া, অসচেতনভাবে পুকুর এবং জলাশয় ভরাট, ভূগর্ভের পানির অপচয়, নদী-নালা দখল করে ভরাট, ইউক্যালিপটাস বৃক্ষ অধিক হারে রোপণ, জনসচেতনতা কমে যাওয়া ইত্যাদি।

শুকনো মৌসুমে ভূগর্ভের পানির গভীরতা নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক টিউবওয়েল আর্সেনিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। পানির গভীরতা যেসব এলাকায় যত কমে যাচ্ছে, সেসব এলাকায় এই আর্সেনিক সমস্যা তত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ যে সব এলাকায় আর্সেনিক আছে সেসব এলাকার ভূগর্ভের পানির ব্যবহার তত কম, ফলে অন্য এলাকার পানির গভীরতা কমে যাওয়ায় এই আর্সেনিক এলাকার পানি ওই এলাকায় ভূগর্ভে স্রোতের সৃষ্টি করছে, ফলে আর্সেনিকযুক্ত পানি ভূগর্ভে ছড়িয়ে যাচ্ছে নানা দিকে। ভবিষ্যতে এটা একটা চরম সমস্যা হিসেবে দেখা দেবে বলে মনে করেছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

ভূগর্ভস্থ পানি সংকট মোকাবিলায় সরকারকে প্রস্তুত হতে হবে। সব ধরনের পুকুর এবং জলাশয় ভরাট বন্ধ করতে হবে। নদী-নালার গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারি সব খাস জমিতে নতুন নতুন পুকুর এবং জলাশয় কাটতে হবে। সব ধরনের রাস্তার পাশ দিয়ে পানি প্রবাহের জন্য নালা তৈরি করতে হবে, যাতে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় এবং শুকনো মৌসুমে খুব সহজে পানি পাওয়া যায়। এখনই সময়, পরিকল্পনা মাফিক কাজ করতে হবে; নতুবা আগামী ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ভূগর্ভের পানির সংকট কী হতে পারে তা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কারও জানার থাকবে না। সরকারকে বলব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভূগর্ভস্থ পানির সংকট নিরসনে পরিকল্পনা মাফিক কাজ শুরু করুন।